ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাকসিন টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটতে চলেছে। ছাড়পত্র দিতে পারে ডাব্লিউএইচও।
বিজ্ঞাপন
ভারতে প্রাথমিক ভাবে দুইটি করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল। সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড এবং হাদরবাদের ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাকসিন। কোভ্যাকসিন নিয়ে গত কয়েকমাস ক্রমশ বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বহু মানুষ এই টিকা পেয়েছেন, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকাটিকে অনুমোদন দেয়নি। ফলে এই টিকা নিয়ে বিদেশ যাওয়ার ছাড়পত্র মিলছিল না। অবশেষে কোভ্যাকসিন নিয়ে মুখ খুলল ডাব্লিউএইচও। সংস্থার মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন জানিয়েছেন, করোনার প্রতিরোধক হিসেবে কোভ্যাকসিন যথেষ্ট কার্যকর। ডাব্লিউএইচও এখনো ছাড়পত্র না দিলেও অচিরেই যে তারা কোভ্যাকসিনকে সার্টিফিকেট দেবে, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
করোনার ভারতীয় রূপ কতটা ভয়ংকর?
প্রায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে ভারতে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের ভূমিকা থাকতে পারে৷ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
বি.১.৬১৭
এমন নামেই পরিচিত করোনার নতুন ভারতীয় ধরনটি৷ দেশটিতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ এটি কীনা সেটি অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ তবে সম্ভাব্য একটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে এই ভ্যারিয়েন্টকে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
কখন থেকে?
গত মার্চে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ প্রথম এই ভ্যারিয়েন্টের কথা জানায়৷ ভাইরাসের এই ধরনটি দুইবার রূপ বদলেছে বলে সেসময় জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা সেটি এখন তৃতীয়বারের মতো রূপ বদলেছে৷ জিনগত উপাত্তের উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডার জিআইএসএইড-এর (GISAID) তথ্য অনুযায়ী ভারতে বিদ্যমান করোনা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩ ভাগই এখন বি.১.৬১৭৷
ছবি: Adnan Abidi/REUTERS
কতটা উদ্বেগের?
প্রথম রূপটি (E484Q) অনেকটা ব্রাজিলে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটানো ভ্যারিয়েন্টের মতো৷ দ্বিতীয়টি (L452R), এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাওয়া গেছে৷ এই ধরনটি টিকার রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে৷ আর তৃতীয় রূপটি (P681R) উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টটির কাছাকাছি৷
ছবি: picture-alliance/M. Schönherr
কতটা ছড়িয়েছে?
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যাচ্ছে৷ শুধু ভারত নয় এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্য দেশগুলোতেও৷ জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও দেশগুলোতে বি.১.৬১৭ শনাক্ত করেছে৷
ছবি: Xavier Galiana/AFP
মানবদেহে কী করছে?
একাধিক রূপ বদলের কারণে ভাইরাসটি শরীরে দ্রুত ছড়াতে পারে৷ বিশেষ করে এর পক্ষে শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও এই ভ্যারিয়েন্টে নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: AFP/National Institutes of Health
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ তালিকায় রেখেছে৷ অর্থাৎ, তারা ভাইরাসটি নজরদারিতে রেখেছে, তবে এখনও সেটি বড় ধরনের উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছালে এটিকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করা হতে পারে৷
ছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images
বেশি সংক্রামক নয়?
ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই রয়েছে মতপার্থক্য৷ যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ জেনোমিকস ইনিশিয়েটিভ এর পরিচালক ড. জেফারি ব্যারেট এর মতে গত কয়েক মাসে ভ্যারিয়েন্টটি বেশ ধীর গতিতে ছড়িয়েছে৷ আর এজন্য তিনি এটিকে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৭ এর মত সংক্রামক নয় বলে মনে করছেন৷
ছবি: PAWAN KUMAR/REUTERS
উপাত্ত কী বলে?
জিনগত বিশ্লেষণে মহারাষ্ট্রে ৬০ শতাংশের বেশি করোনা আক্রান্তের নমুণায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে৷ তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তারা যত নমুনা পরীক্ষা করেছেন সেটি উপসংহারে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Pradeep Gaur/ZUMA Wire/imago images
টিকায় কি কাজ হচ্ছে?
অন্তত দুইটি গবেষণা বলছে ভ্যারিয়েন্টের এল৪৫২আর রূপটি অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়িয়ে যেতে পারে৷ তবে এর একটি এখনও অপ্রকাশিত এবং অ্যাকাডেমিকভাবে পিআর রিভিউ সম্পন্ন হয়নি৷
ছবি: Anindito Mukherjee/Getty Images
অতিরঞ্জন হচ্ছে?
অনেকে অবশ্য বলতে চাইছেন ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় যেসব তথ্য আসছে তার মধ্যে অতিরঞ্জন রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিয়োনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি পি কামিল তাদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন কোন নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেই যেখানে বলা হয়েছে এল৪৫২ রূপটি সব ধরনের ইমিউনিটি বা অ্যান্টিবডিকে এড়াতে পারে৷’’ সেটি সম্ভব নয় বলেও মত তার৷
সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌম্যা জানিয়েছেন, কোভ্যাকসিনের করোনা প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশ ভালো। তবে ডেল্টা প্রজাতির করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে ততটা কার্যকরী নয় এই ভ্যাকসিন। কোভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের রিপোর্ট তাদের হাতে পৌঁছেছে। সেই রিপোর্ট দেখেই ডাব্লিউএইচও-র মনে হয়েছে, এই টিকাটি যথেষ্ট কার্যকরী।
বস্তুত, গত ২৩ জুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হয় ভারত বায়োটেকের। সেখানেই নিজেদের সমস্ত রিপোর্ট ডাব্লিউএইচও-র হাতে তুলে দেয় তারা। পরে সেই রিপোর্ট প্রকাশ করে ভারত বায়োটেক দাবি করে, করোনার উপসর্গযুক্তদের ক্ষেত্রে ৭৭ দশমিক আট শতাংশ কার্যকর কোভ্যাকসিন। অতিমাত্রায় উপসর্গ যাদের, তাদের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন ৯৩ দশমিক চার শতাংশ কার্যকরী। ডেল্টা প্রজাতির ক্ষেত্রে কোভ্যাকসিন কাজ করবে ৬৫ দশমিক দুই শতাংশ।
কোভ্যাকসিনের পাশাপাশি করোনার দ্রুত টিকাকরণ নিয়েও ভারতকে পরামর্শ দিয়েছে ডাব্লিউএইচও। দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের টিকাকরণের কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে দুইটি টিকার কথা বলা হয়েছে। পরে প্রয়োজনে বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। বস্তুত, সরকারও টিকাকরণের গতি আগের চেয়ে বাড়িয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।