বিবর্তনবাদ তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত চার্লস ডারউইন৷ পরবর্তীতে তাঁর নামে একটি ব্যাঙের নামকরণ করা হয়, কারণ তিনিই প্রথম চিলিতে ব্যাঙটি আবিষ্কার করেছিলেন৷ তিন সেন্টিমিটার লম্বা এই ব্যাঙ তার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত৷
বিজ্ঞাপন
‘ডারউইনস ফ্রগ’-দের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
03:27
আর্জেন্টিনা ও চিলির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পাতাগোনিয়ায় অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে৷ সেখানকার প্রকৃতি এখনও ধ্বংসের মুখে পড়েনি, কেননা খুব কম লোকের বাস সেখানে৷ প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র দুই জন৷ তাই প্রাণীরা এখনও সেখানে বেশ আরামেই থাকতে পারছে৷ যেমন ‘ডারউইনস ফ্রগ'৷ মাত্র তিন সেন্টিমিটার লম্বা হলেও প্রকৃতি গবেষক চার্লস ডারউইনের চোখ এড়িয়ে যায়নি ব্যাঙগুলো৷
ব্যাঙও এখন বিলুপ্তির হুমকির মুখে
ব্যাঙ ডাকলে একসময় মানুষ বুঝে নিতো বৃষ্টি হবে৷ গ্রামে তো বটেই, শহরেও ছিল ব্যাঙের ছড়াছড়ি৷ সেই দিন আর নেই৷ অনেক ব্যাঙ এখন কমতে কমতে বিলুপ্ত৷ আসুন, দেখে নিই টিকে থাকা ব্যাঙরাজ্যের বর্ণময়তা৷
ছবি: picture-alliance / dpa
ছিল কাতারে কাতার, এখন বিপদ অপার
লাল-চোখ তাদের৷ নাম ডুলেমানোহিলা৷ এ ধরণের ব্যাঙ এখন উভচর (অ্যাম্ফিবিয়ান) প্রাণীদের ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলার উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত৷ নিশাচর এই প্রাণীদের এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যেতো কোস্টারিকা এবং পানামায়৷ এখন থাকার জায়গা কমছে, ছত্রাকজনিত বিশেষ ধরণের ভয়াবহ রোগও হানা দিচ্ছে৷ ফলে লাল-চোখা ব্যাঙেরাও এখন বিলুপ্তির পথে৷সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৬৫টি প্রজাতির ব্যাঙ পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে৷
ছবি: Andreas Hertz
মরছে কেন?
কাইট্রিড এক ধরণের ছত্রাক৷ তাদের কারণে ব্যাঙদের যে রোগ হয় সেই রোগের নাম কাইট্রিডিওমাইকোসিস৷ ব্যাঙ কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাসে তাদের গায়ের চামড়া ব্যবহার করে৷ কাইট্রিডিওমাইকোসিস হানা দেয় সেই চামড়ায়৷ পরিণাম- অবধারিত মৃত্যু৷ এমন রোগের কারণও কিন্তু ব্যাঙ৷ আফ্রিকার এক ধরণের ব্যাঙের দেহে এই ছত্রাক আবার নিরাপদে বাস করে৷ ১৯৫০ সালের দিকে মানুষের প্রেগন্যান্সি টেস্টে ব্যবহার করা হতো এই ছত্রাক৷
ছবি: Andreas Hertz
অনিশ্চয়তার পথে এগিয়ে চলা
পানামার এই ব্যাঙটির মতো অনেক ব্যাঙ আছে যারা রেইনফরেস্টে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়ায় বলে একটু বেশি নজর কাড়ে৷ বেশিদিন হয়তো এ অবস্থা থাকবেনা৷ মানুষ গাছ কেটে কেটে বন উজাড় করে দিচ্ছে৷ গাছ না থাকলে ব্যাঙগুলো কোথায় থাকবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং গাছে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারও ব্যাঙের বেঁচে থাকা অসম্ভব করে তুলছে৷
ছবি: Andreas Hertz
‘পরিবেশবিদ’ ব্যাঙ
ব্যাঙওপরিবেশবিদ৷ কথাটা মজা করে বললেও, ভেতরে বড় একটা সত্যি লুকিয়ে আছে৷ বিশ্বের অন্য সব প্রাণীর তুলনায় পরিবেশ-প্রকৃতি সম্পর্কে ব্যাঙ অনেক বেশি স্পর্শকাতর৷ পরিবেশের অনেক পরিবর্তন অনেক আগে টের পায় তারা৷ অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর আগেভাগে পেয়ে ডেকে ডেকে সবাইকে জানিয়ে দেয়৷ তাই তো ব্যাঙের আরেক নাম, ‘কয়লাখনির খুদে গায়কপাখি’ (ক্যানারিজ ইন দ্য কোলমাইন)৷
ছবি: picture-alliance / dpa
মানুষের বন্ধু
ধেড়ে ব্যাঙ, কুনো ব্যাঙ, গিরগিটিসদৃশ ব্যাঙ, গোলাপি ব্যাঙ- কত রকমের ব্যাঙ যে আছে বলে শেষ করা মুশকিল৷ প্রকৃতির খাদ্যপ্রবাহে ভূমিকা রাখে প্রত্যেকে৷ ব্যাঙ পোকামাকড় খায়, ব্যাঙকে খায় সাপ, পাখি, এমনকি মানুষও৷ মানুষ কি শুধু খায়? কিছু ব্যাঙের শরীরে এমন কেমিক্যাল রয়েছে যা কিনা মানুষের অনেক জটিল রোগ সারাতে সহায়তা করে৷ ছবির এই ব্যাঙের দেহে তো এমন ধরণের বিষ রয়েছে যা মানুষ বহুবছর তিরের ফলায় ব্যবহার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্যাঙ দেয় রং
অনেক ব্যাঙ বিলুপ্ত হচ্ছে, পাশাপাশি নতুন কিছু খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে৷ গতবছর জার্মানভিত্তিক প্রাণীবিজ্ঞানী আন্দ্রেয়াস হেয়ার্টস পশ্চিম পানামায় খুঁজে পেয়েছিলেন ছবির এই ব্যাঙটিকে৷ অদ্ভুত ধরণের প্রাণী৷ গায়ের রং হলুদ, ধরলে আপনার হাতও হলুদ হয়ে যাবে!
ছবি: picture-alliance/dpa
‘অ্যাম্ফিবিয়ান আর্ক’
উভচর এবং সরিসৃপ প্রাণীদের নিয়ে কাজ করেন এমন বিজ্ঞানীদের বলা হয় ‘হারপেটোলজিস্ট’৷ পিএইচডির ছাত্র আন্দ্রেয়াস হেয়ার্টসও একজন হারপেটোলজিস্ট৷ ‘অ্যাম্ফিবিয়ান আর্ক’ নামের এক প্রকল্পের অধীনে কাজ করছেন ল্যাটিন অ্যামেরিকা অঞ্চলের উভচর এবং সরিসৃপ নিয়ে৷ তাঁদের কাজ হলো, কাইট্রিডে আক্রান্ত হওয়ার আগেই ব্যাঙকে বন থেকে তুলে এনে বাঁচিয়ে রাখা৷
ছবি: Sebastian Lotzkat
পুনরাবিষ্কার
ছয় দশক আগে মনে হয়েছিল চোখ ধাঁধানো রঙে রাঙানো এই ব্যাঙগুলো বুঝি চিরতরে হারিয়ে যাবে৷ হারিয়েই গিয়েছিল প্রায়৷ ২০১১ সালে ইসরায়েলের এক রাস্তায় দেখা গেল এমন একটা ব্যাঙ লাফিয়ে বেড়াচ্ছে৷ সযত্নে ধরে আনা হলো৷ সেই থেকে তাদের খোঁজার চেষ্টা আরো প্রবল হয়েছে৷ পাওয়াও গেছে বেশ কিছু৷ এরা কিন্তু আকার-আকৃতিতে একটুও বদলায় না৷ তাই এদের নাম দেয়া হয়েছে, ‘জীবন্ত ফসিল’৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Mickey Samuni-Blank
ফুসফুসহীন উভচর
এই ব্যাঙগুলোর ফুসফুস বলতে কিছু নেই৷ ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও এলাকার রেইনফরেস্টের খরস্রোতা ঝরনায় এদের বাস৷ পরিবেশ দূষণের কারণে এই ব্যাঙগুলোও এখন বিলুপ্তির পথে৷
ছবি: picture-alliance / dpa
9 ছবি1 | 9
তবে তারা এখন হুমকির মুখে৷ পশু চিকিৎসক কার্লোস বারিয়েন্তোস দোনোসো বলছেন, ‘‘এই জাতের ব্যাঙ এখন হুমকির মুখে রয়েছে৷ এর একটি কারণ মাটিতে পরিবর্তন৷ এছাড়া তাদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে৷''
চিলির অন্যতম বড় শহর কনসেপসিওন-এ এই জাতের ব্যাঙের ব্রিডিংয়ের জন্য একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ ‘‘এই কেন্দ্রের লক্ষ্য প্রজননের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করিয়ে সেগুলোকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া৷ এভাবে আমরা প্রাণীদের সাহায্য করতে চাই, কেননা তারা বিপদে আছে'', জানান দোনোসো৷
একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা ঐ কেন্দ্রে কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জার্মানির লাইপশিগ শহরের চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ৷
ডারউইনস ফ্রগ সাধারণত খয়েরি, হলুদ আর সবুজ রঙয়ের হয়ে থাকে৷ কিছু প্রজাতি তাদের জীবদ্দশায় রং পরিবর্তন করে থাকে৷ তবে কী কারণে তা এখনও জানা যায়নি৷ এই জাতের ব্যাঙের অনেক বৈশিষ্ট্য এখনও বিজ্ঞানীদের অজানা৷
ব্রিডিং কেন্দ্রে কখনও কখনও এক টেরারিয়ামেই পুরুষ ও নারী ব্যাঙদের রাখা হয়৷ ডারউইনস ফ্রগদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দিতে বাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ ডিম ফোটার আগ পর্যন্ত পুরুষ ব্যাঙ তার গলার বিশাল ঝিল্লিতে নিষিক্ত ডিমকে ধরে রাখে৷