ডারবানে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে আশানিরাশার দোলাচল
২৯ নভেম্বর ২০১১![South African President Jacob Zuma speaks during the opening ceremony of the climate conference in the city of Durban, South Africa, Monday, Nov. 28, 2011. International negotiations have opened under the U.N. climate treaty to seek ways to curb ever-rising emissions of climate-changing pollution. South African President Jacob Zuma is to address delegates from more than 190 countries who will try to resolve differences between rich and poor countries on responsibilities for emissions cuts.(Foto:Schalk van Zuydam/AP/dapd)](https://static.dw.com/image/15562620_800.webp)
১৯৯০ সালে কিয়োটো প্রটোকল গৃহীত হয়৷ সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে শিল্পোন্নত ৩৭টি দেশকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে হবে৷ পৃথিবীকে বাঁচাতে, আরো সবুজ রাখতে, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে গৃহীত হয়েছিল কিয়োটো প্রটোকল৷ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ুতে এসেছে বিশাল পরিবর্তন৷ সমুদ্রের পানি বেড়েছে, উত্তর মেরুর বরফ গলতে শুরু করেছে, সময়ে-অসময়ে দেখা দিচ্ছে খরা, বৃষ্টি এবং বন্যা৷ বেড়েছে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা – এসবই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদীরা৷
এত ঢাক-ঢোল পেটানোর ফলেও তেমন কোন কাজ হয়নি৷ ডারবানে এই সম্মেলন চলবে ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত৷ রাজনীতিক, পরিবেশবাদী, বিজ্ঞানী এবং কূটনীতিকরা প্রশ্ন করছেন ডারবানে কী আদৌ কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যাতে করে পৃথিবীকে রক্ষা করা যায়৷
কার্বন নির্গমন বন্ধ করতে হবে ছোট বড় সবগুলো দেশকেই
দরিদ্র দেশগুলোর যুক্তি হল - শিল্পোন্নত দেশগুলো কয়লা, তেল এবং গ্যাস যথেচ্ছ ব্যবহার করে ধনী হয়েছে৷ ফলে তাদেরকেও একইভাবে উন্নতির পথ ধরে দরিদ্রদশা থেকে বেরিয়ে আসতে দিতে হবে৷ অন্যদিকে উন্নত দেশগুলো বলছে, জলবায়ুর বিপজ্জনক পরিবর্তন রোখার সুযোগ যদি বিশ্বকে আদৌ পেতে হয় তাহলে দ্রুত উন্নতির পথে যাত্রা করা বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল, চীন এবং ভারতকেও কার্বন নির্গমন রুখতে হবে৷
এ মাসেই জাতিসংঘের দুটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছে গেছে৷ এবং ক্রমশ উষ্ণ হতে থাকা এই পৃথিবীতে দেখা দেবে আরো বেশি বন্যা, অনেক বেশি জোরালো ঘূর্ণিঝড় এবং তীব্রতর খরা৷
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা ওইসিডি জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশের সরকাররা যদি কার্বন নির্গমন কমাতে ব্যর্থ হয় তাহলে এই শতাব্দীর শেষে বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা তিন থেকে ছয় ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে৷ তার ফল হতে পারে মারাত্মক৷ হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে এবং সমুদ্র স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ঘটবে অবর্ণণীয় ক্ষয়ক্ষতি৷
কিয়োটো প্রটোকল নবায়ন নিয়ে সন্দেহ
কিয়োটে প্রটোকলে যে সব শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছিল তার মোদ্দা কথা ছিল - উন্নত দেশগুলোকে এই গ্রহকে উষ্ণ করে তোলা গ্রিন হাউস গ্যাস'এর নির্গমন কমানোর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে এবং তা আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে৷ প্রটোকলের প্রথম পর্যায় শেষ হবে ২০১২ সালে৷ তার আগে আরো কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করার সর্বশেষ সুযোগ রয়েছে ডারবানের বৈঠকেই, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর নির্বাহী সচিব ক্রিস্টিনা ফিগেরেস অবশ্য এখনও আশাবাদী৷ তিনি বলছেন: ‘‘ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হতে পারে৷ কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হতে পারে৷''
বাংলাদেশের মত জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার যে-সব বিকাশমুখী দেশ তাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিল্পোন্নত দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ কিন্তু অ্যামেরিকা এবং সৌদি আরব এই গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের কিছু দিক নিয়ে আপত্তি তুলেছে৷ ইউরোপ এবং অ্যামেরিকা ঋণ সংকটের কারণে আরো বেশি করে অর্থ বরাদ্দ করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷
এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড নামের প্রতিষ্ঠানের পরিচালিকা জেনিফার হাভারকাম্প বলেন,‘‘বর্তমান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে কিয়োটে প্রটোকলের নবায়ন ঘটবে এমন আশা করা যায়না৷ তবে তাই বলে কিছু না করে চুপ করে বসে থাকলে চলবেনা৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক