ডারবান বৈঠকের সাফল্যের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা
১১ ডিসেম্বর ২০১১বিশ্বের উষ্ণতা নির্দিষ্ট মাত্রায় নামিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ আর প্রস্তাবনা তুলে ধরছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আর বিজ্ঞানীরা৷ বিশ্বের প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের অস্তিত্ব রক্ষায় সেসব পদক্ষেপের ব্যাপারে কারোই দ্বিমত নেই৷ কিন্তু সকল জটিলতা কার্বন নির্গমনের হার নির্দিষ্ট মাত্রায় নামিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা নিয়ে৷ এছাড়া রয়েছে অধিক কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রশ্ন৷ তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের শেষে এসে এসব প্রশ্নের সমাধান সূত্রের ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ক্ষেত্রে আলোচনার বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছেন জলবায়ু বিষয়ক প্রতিনিধিরা৷
বিশেষ করে ১৯৯৭ সালে গৃহীত কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১২ সালে৷ ফলে এর পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য চাপ দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির শিকার গরিব দেশগুলোর সাথে ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশগুলোও৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবনায় কিয়োটো প্রটোকলের ধারাবহিকতা নিশ্চিত করার দাবি স্পষ্ট৷ কিন্তু ধনী দেশগুলো এটিকে ‘অন্যায্য' বলে বেঁকে রয়েছে৷ বিশেষ করে এখন পর্যন্ত কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করেনি যুক্তরাষ্ট্র৷ তবুও ইইউ প্রস্তাবনা অনুসারে ২০১৫ সালের মধ্যে ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ তথা ইউএনএফসিসিসি'কে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তিতে পৌঁছতে হবে৷ আর সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত, উন্নয়নশীল ও গরিব সকল অর্থনীতির দেশগুলোকে একই কাঠামোর আওতায় আনার প্রচেষ্টা থাকতে হবে৷
তবে এমন ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছনো কবে নাগাদ সম্ভব হবে তা ডারবান সম্মেলনের শেষে এসেও অজানাই রয়ে যাচ্ছে৷ অবশ্য, ইউরোপের মহাপরিকল্পনাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ৯০টি আফ্রিকান রাষ্ট্রের একটি জোট, স্বল্পোন্নত দেশগুলো, ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো এবং উন্নয়নশীল দেশ ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা একই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে৷ তবে এই সারিতে এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতকে ভেড়ানো যাচ্ছে না৷ এই সমঝোতার আওতায় ইইউ ২০১২ সালে কিয়োটো প্রোটোকলের প্রথম মেয়াদ শেষ হলেও সেটিকে কার্যকর রাখতে উদ্যোগী৷ কিন্তু ক্যানাডা, জাপান এবং রাশিয়া এটিকে অসম এবং অন্যায্য বলে ভিন্নমত পোষণ করে৷ তাদের কথা বড় মাপের কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা না আনা পর্যন্ত এটা ন্যায্য হতে পারে না৷
তবে ১৭তম কনফারেন্স অফ পার্টিস বা কোপ এর সমাপ্তি লগ্নে অনেকে হতাশা প্রকাশ করেছেন যে, গরিব দেশগুলোকে রক্ষায় দক্ষিণ আফ্রিকা সকল পক্ষকে যে সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছতে চেয়েছিল তাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা৷ এছাড়া এমন কঠিন সমঝোতায় পৌঁছনোর জন্য যে নেতৃত্বের দক্ষতা প্রয়োজন তেমন ভূমিকা দেখাতেও আয়োজক দেশ ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্মেলনে উপস্থিত এক প্রতিনিধি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘অল্পের জন্য সমঝোতা চুক্তির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে৷ আর চলমান প্রক্রিয়াতে যদি কোন অর্জন হয়, সেটার ক্ষেত্রেও দক্ষিণ আফ্রিকার কৃতিত্ব নেই৷''
অবশ্য, অক্সফ্যাম এর টিম গোর এর মন্তব্য, ‘‘একটি সমঝোতা চুক্তির কাঠামো ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে এবং তাতে একদিন আগের ঠিক এ সময়ের চেয়ে আরো বেশি প্রতিশ্রুতি যুক্ত হয়েছে৷'' যাহোক, শনিবার দিনের শেষে ডাব্লিউডাব্লিউএফ এর পরিবেশবিদ লো লিউনার্দ এর মতোই অনেকের মন্তব্য, ‘‘ডারবানের শেষ ফলটিও অতীতের অন্যান্য সম্মেলনের মতোই হবে৷ আর তা হলো সবাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বিদায় নেবে৷'' আর গ্রিনপিসের জার্মান শাখার জলবায়ু বিষয়ক প্রধান মার্টিন কায়জারের মন্তব্য, ‘‘এখন একটিই মাত্র পন্থা কার্যকর হতে পারে - তা হলো যদি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এ ব্যাপারে আহ্বান জানান৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: জাহিদুল হক