ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের কি কোনো নিশ্চিত প্রমাণ আছে?
১০ জুন ২০২৫
আমরা যা কিছু দেখতে পাই তা মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র৷ বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, প্রায় ৮০ শতাংশ পদার্থ দেখা যায় না, যাদের তারা ‘ডার্ক ম্যাটার' নামে ডাকেন৷
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাবিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশই আমরা দেখতে পাই নাছবি: Nadja Wohlleben/REUTERS
বিজ্ঞাপন
কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, কারণ, আমরা মহাকাশে যা দেখি তা দৃশ্যমান পদার্থের সাথে যোগ হয় না৷
ছায়াপথের চারপাশে আলো প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিচ্যুত হয়, যা ইঙ্গিত দেয় যে, দেখা যায় না এমন অতিরিক্ত ভর, একে প্রভাবিত করছে৷
আর আমরা যদি শুধু দৃশ্যমান পদার্থের কথা বিবেচনা করি, তাহলে তারারা তাদের ছায়াপথগুলিকে যেভাবে প্রদক্ষিণ করে, তা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না৷ কিছু একটা নিশ্চয়ই ছায়াপথগুলিকে একত্রে ধরে রেখেছে, অনেকটা অদৃশ্য আঠার মতো - ডার্ক ম্যাটার৷ এটি কী দিয়ে তৈরি, তা এখনও এক রহস্য৷
কিন্তু আমরা এর প্রভাব পরিমাপ করতে পারি৷ ডার্ক ম্যাটারের মাধ্যাকর্ষণ আলোকে বেঁকিয়ে বাঁকা পথে যেতে বাধ্য করে৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একে তাদের সুবিধার্থে ব্যবহার করেন৷
মহাবিশ্বের ডার্ক ম্যাটার রহস্য
03:11
This browser does not support the video element.
টেলিস্কোপের সাহায্যে তারা মহাকাশের নির্দিষ্ট অংশ বিশ্লেষণ করে আলো কীভাবে কোটি কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করেছে, তা ট্র্যাক করেন৷ এটি তাদের কোথায়, কত ডার্ক ম্যাটার আছে, তার মানচিত্র তৈরিতে সাহায্য করে৷ আগের চেয়ে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাওয়ায় মানচিত্রের মানের ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে৷
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউরোপের মহাকাশ টেলিস্কোপ ‘ইউক্লিড' আকাশ স্ক্যান করছে৷ এর উদ্দেশ্য, গত ১০ বিলিয়ন বছর ধরে ডার্ক ম্যাটারের বিস্তারের তালিকা তৈরি করা - অভূতপূর্ব নির্ভুলতার সাথে৷
তত্ত্ব অনুসারে, ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের গঠনকে রূপ দিয়েছে৷ ডার্ক ম্যাটার যেখানে ঘনীভূত হয়েছিল, সেখানে তার মাধ্যাকর্ষণ সাধারণ পদার্থকে আকর্ষণ করেছিল, যার ফলে তারা, ছায়াপথ এবং বিশাল ছায়াপথের গুচ্ছ তৈরি হয়েছিল৷ এখনও পর্যন্ত, ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে আমাদের পরিমাপ এই ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷
কম্পিউটার সিমুলেশন পরোক্ষ প্রমাণের আরেকটি স্তর যোগ করে৷ সিমুলেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি বছর ধরে ছায়াপথ ও গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলি কীভাবে বিবর্তিত হয়েছিল, তা মাত্র কয়েক সেকেন্ডে দেখানো যায়৷ ফলাফল স্পষ্ট: ডার্ক ম্যাটার ছাড়া মহাবিশ্ব দেখতে আজকের মতো হত না৷
ডার্ক ম্যাটার খুঁজবে সার্ন
পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে অন্যতম বিস্ময় ‘ডার্ক ম্যাটার’৷ বিস্ময়কর এই পদার্থের সন্ধান পেতে বিশ্বের তাবৎ বিজ্ঞানীরা কোনো চেষ্টাই বাকি রাখেননি৷ কিন্তু এখনো তার দেখা পাওয়া যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার কাছে বিস্ময়
পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে অন্যতম বিস্ময় ‘ডার্ক ম্যাটার’৷ বিস্ময়কর এই পদার্থের সন্ধান পেতে বিশ্বের তাবৎ বিজ্ঞানীরা কোনো চেষ্টাই বাকি রাখেননি৷ কিন্তু এখনো তার দেখা পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Reuters/NASA-JSC/Handout
সার্নে গবেষণা
গড পার্টিকল বলে পরিচিত হিগস কণার সন্ধান পাওয়া ইউরোপের সার্ন ল্যাবরেটরি ২০১৫ সালে ডার্ক ম্যাটারের খোঁজ করবে৷ এ জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে লার্জ হেডরন কোলাইডার বা এলএইচসি৷ ছবিতে এলএইচসি টানেলের ভেতরটা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/F.Schmidt
হিগসের চেয়েও বড়
হিগস আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. লস্কর মোহাম্মদ কাশিফ৷ তিনি বলেন, ডার্ক ম্যাটারের সন্ধান পাওয়া গেলে সেটা হবে হিগস কণা আবিষ্কারের চেয়েও বড় সাফল্য৷ ছবিতে ড. কাশিফকে দেখা যাচ্ছে (বামে)৷
ছবি: Lashkar Kashif
সার্নে ড. কাশিফের কাজ
এলএইচসির সাতটি ডিটেক্টরের মধ্যে একটি অ্যাটলাস৷ হিগস আবিষ্কারের সঙ্গে যে দুটো ডিটেক্টর জড়িত ছিল এটি তার মধ্যে একটি৷ ছবিতে অ্যাটলাসের একটি কম্পোনেন্ট মিউয়ন চেম্বার দেখা যাচ্ছে৷ পিএইচডি করার সময় এসব ইনস্টল ও পরীক্ষা করে দেখার কাজ করেছেন ড. কাশিফ৷
ছবি: Lashkar Kashif
অ্যাটলাসের আকার
৪৬ মিটার দীর্ঘ, ২৫ মিটার ব্যাস ও সাত হাজার টন ওজনের অ্যাটলাস ডিটেক্টর ইনস্টল করার সময়কার ছবি এটি৷ খেয়াল করলে দেখবেন মাঝখানে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন৷ এর মাধ্যমে অ্যাটলাস ডিটেক্টর যে কত বড় তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে৷
ছবি: Lashkar Kashif
সার্নের বড় সাফল্য
১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ’ বা সার্নের এখন পর্যন্ত বড় সাফল্য হলো হিগস কণার আবিষ্কার৷ ২০১২ সালে সার্ন এই কণার সন্ধান পাওয়ার ঘোষণা দেয়৷
ছবি: 1997 CERN
বহু দেশের বিজ্ঞানীর সমাগম
সার্ন ল্যাবরেটরিটা ইউরোপের হলেও সেখানে কাজ করেন বিশ্বের অনেক দেশের বিজ্ঞানী৷ বাংলাদেশের ড. কাশিফ তাঁদের মধ্যে একজন৷ ছবিতে চতুর্থ সারিতে ডান থেকে দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হলেন তিনি৷
ছবি: Lashkar Kashif
বাংলাদেশ-সার্ন সহযোগিতা
এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন সার্নের মহাপরিচালক জার্মান কণা পদার্থবিদ অধ্যাপক রল্ফ-ডিটার হয়ার৷ সে সময় বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সার্নের সহযোগিতামূলক কাজ নিয়ে আলোচনা হয়৷ এর প্রেক্ষিতে চলতি বছর সার্নের ‘সামার প্রোগ্রাম’এ অংশ নিচ্ছেন ঢাবির এক শিক্ষার্থী৷