ডার্ক ম্যাটার: এখনও খোঁজ চলছে, তবে অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে
৯ আগস্ট ২০২২
গত ১২ জুলাই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি প্রকাশের ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ এমনই এক ছবিতে রহস্যময় কিছুর দেখা পেয়েছেন জার্মানিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান স্পেস অবজারভেশন সেন্টারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী কায় নোয়েস্কে৷
ছবি: NASA via AP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
পাঁচটি ছায়াপথের গ্রুপ ‘স্টেফানস কোয়েনট্যাটের’ ঐ ছবি দেখে নোয়েস্কে বলেন, ‘‘সেখানে এমন কিছু আছে যার সম্পর্কে আমরা জানি না... এর মধ্যে একটি ডার্ক ম্যাটার হতে পারে৷’’
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ উপাদান হয়ত ডার্ক ম্যাটার দিয়ে তৈরি৷ যদিও বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটার যে আসলে কী, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি৷ এমনকি এখনও পর্যন্ত ডার্ক ম্যাটার খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
দৃশমান আলো, এক্সরে কিংবা বেতার তরঙ্গের মতো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সের সঙ্গে ডার্ক ম্যাটারের সংযোগ না ঘটায় ডার্ক ম্যাটারকে এখনও দেখা কিংবা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বিজ্ঞানীরা৷ তবে ডার্ক ম্যাটারের মহাকর্ষীয় বলের কারণে এর প্রভাব সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় বলে জানান তারা৷
দূর মহাবিশ্বে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম ছবি
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া মহাবিশ্বের প্রথম ছবিগুলি এর আগে দেখা যায়নি। নক্ষত্রখচিত মহাকাশের ছবি দেখে মুগ্ধ সকলেই। সবচেয়ে শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপ প্রথম কী কী দেখল, জেনে নিন ছবিঘরে
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, and The ERO Production Team
যেখানে নক্ষত্রের জন্ম
সাদার্ন রিং নেবুলা হলো একটি গ্রহের নীহারিকা। এটি আসলে একটি মৃত নক্ষত্রকে ঘিরে রাখা বর্ধিত গ্যাসের মেঘ। এটির ব্যাস প্রায় অর্ধ আলোকবর্ষ এবং এর কেন্দ্রে অনুজ্জ্বল নক্ষত্রটি হাজার হাজার বছর ধরে চারদিকে গ্যাস এবং ধুলোর বলয় পাঠাচ্ছে। নক্ষত্রের জন্ম হয় নীহারিকাতেই।
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, and The ERO Production Team
অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা
ছবিতে যেটি দেখে আলো ঝলমল পাহাড়ের দৃশ্যের মতো মনে হচ্ছে তা আসলে ক্যারিনা নেবুলা থেকে একটি নতুন নক্ষত্র সৃষ্টির প্রান্ত। এটির নাম এনজিসি ৩৩২৪। ওয়েব টেলিস্কোপ চিত্রটি প্রথমবার নক্ষত্রের জন্মের নানা দিক তুলে ধরেছে, যা আগে কেউ দেখেনি।
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, Webb ERO Production Team
দূরবর্তী ছায়াপথের একটি লেন্স
এসএমএসিএস ০৭২৩ হলো গ্যালাক্সি ক্লাস্টার বা একগুচ্ছ ছায়াপথ। এগুলি ছায়াপথের পিছনে থাকা বস্তুর আলোকরশ্মি বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার আলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতাও রয়েছে। দূরবর্তী নক্ষত্রগুলিকে এবং ক্ষীণ হয়ে আসা ছায়াপথগুলির গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, Webb ERO Production Team
নক্ষত্রের ঘরবাড়ি
স্টেফানস কিনটেট হলো পাঁচটি ছায়াপথের একটি দল। ওয়েব টেলিস্কোপের ছবিগুলিতে লাখ লাখ নতুন ঝকঝকে নক্ষত্রগুচ্ছ দেখা গিয়েছে। এছাড়া নতুন নক্ষত্রের জন্মের সময় "স্টারবার্স্ট" এলাকার ছবিও ধরা পড়েছে। বিভিন্ন ছায়াপথে "স্টারবার্স্ট" এলাকায় বিপুল হারে নক্ষত্র জন্মের প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, Webb ERO Production Team
গ্যাসের বিশাল বল
ডাব্লিউএএসপি-৯৬বি হলো পৃথিবীর সৌরজগতের বাইরে একটি বিশাল গ্রহ। ২০১৪ সালে এটি আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। এটি মূলত গ্যাস দিয়ে তৈরি, পৃথিবী থেকে প্রায় এক হাজার ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত (এক আলোকবর্ষ অর্থাত্ ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার)। গ্রহটির ভর বৃহস্পতির প্রায় অর্ধেক। প্রতি ৩.৪ দিন অন্তর এটি নিজের তারাকে প্রদক্ষিণ করে।
ছবি: NASA/ESA/CSA & and STScI
5 ছবি1 | 5
ডার্ক ম্যাটারের খোঁজে
সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত ‘ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ’ বা সার্নের ‘লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার' বা এলএইচসির বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা হচ্ছে এলএইচসি৷
প্রায় এক দশক আগে এলএইচসি দিয়ে হিগস বোসন পার্টিকল খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল৷ এই পার্টিকলের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে ধারণা করলেও অতীতে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ হিগস বোসন পার্টিকল খুঁজে পাওয়ায় পার্টিকল ফিজিক্সের ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল' প্রমাণ করা গেছে৷
এলএইচসির বিজ্ঞানী টেভং ইউ মনে করেন, ডার্ক ম্যাটার রহস্যের সমাধান করতে পারে এলএইচসি৷ যদিও এখনও তার ধারণা, ডার্ক ম্যাটার হয়ত স্ট্যান্ডার্ড মডেলে যে মৌলিক কণাগুলোর কথা বলা আছে, সেগুলোর মতোই হতে পারে৷
ব্ল্যাক হোলের রহস্য উন্মোচনে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ
04:15
This browser does not support the video element.
এলএইচসিতে যেভাবে ডার্ক ম্যাটার পাওয়া যেতে পারে
দুটি আপেলের মধ্যে একসঙ্গে জোরে সংঘর্ষ লাগালে আপেল দুটো ভেঙে সেগুলোর টুকরো আশেপাশের দেয়ালে লেগে যায়৷ পরে সেই টুকরোগুলো জড়ো করে হয়ত (তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব) আবারও দুটো আপেল বানানো সম্ভব৷
এমন উপায় ব্যবহার করেই এলএইচসিতে নতুন কণা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা হয়৷ কোলাইডারে মৌলিক কণা চূর্ণবিচূর্ণ করার পর সেগুলো ডিটেক্টরে আটকে যায়৷ পরে সেগুলো জোগাড় করে একত্র করার চেষ্টা করা হয়৷ এই সময় যদি দেখা যায়, কিছু এনার্জি হারিয়ে গেছে তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে, ঐ এনার্জি ডার্ক ম্যাটারে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে৷
অবশ্য কিছু বিজ্ঞানী এখনও মনে করেন ডার্ক ম্যাটার যদি আসলেই থাকতো তাহলে এতদিনে তা খুঁজে পাওয়া যেত৷
সুষ্মিথা রামাকৃষ্ণান (সার্ন, জেনেভা)
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আরও চমক
মহাকাশে নিজস্ব অবস্থানে পৌঁছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এমন সব অসাধারণ ছবি পাঠিয়ে চলেছে, যেমনটা মানুষ আগে কখনো দেখে নি৷
ছবি: NASA/ESA/CSA/STScI/CNP/picture alliance
ঘূর্ণায়মান ওয়ার্মহোল
রহস্যময় ‘ফ্যান্টম’ বা ভৌতিক গ্যালাক্সির মধ্যে সম্প্রতি এক ‘ওয়ার্মহোল’-এ উঁকি মেরেছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেই গ্যালাক্সির মধ্যভাগে এক ব্ল্যাক হোলের মধ্যে পেঁচানো ধুলিকণার স্তম্ভ চালিত হচ্ছে৷
ছবি: NASA/ESA/CSA/Judy Schmidt
গ্যালাক্সির সংঘাত
পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে কার্টহুইল গ্যালাক্সির আকার বেশ অদ্ভুত৷ বিশাল সর্পিল গ্যালাক্সির সঙ্গে ছোট এক গ্যালাক্সির সংঘাতের কারণে এমনটা ঘটেছে৷ এই ছবির মাধ্যমে সেই গ্যালাক্সির অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷
ছবি: NASA/ESA/CSA/STScI/CNP/picture alliance
অদৃশ্যও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে
দেখলে চকচকে পাহাড়ি নিসর্গ মনে হলেও এটি আসলে মহাকাশের এমন এক এলাকা, যেখানে নক্ষত্রের জন্ম ঘটছে৷ ক্যারিনা নেবুলার এনজিসি ৩৩২৪ নামের সেই অঞ্চলের ছবি তুলে জেমস ওয়েব এই প্রথম নক্ষত্রের আঁতুড়ঘর মানুষের কাছে দৃশ্যমান করে তুলেছে৷
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, Webb ERO Production Team
দূরের গ্যালাক্সি ধরার লেন্স
এসএমএসিএস ০৭২৩ এমন একগুচ্ছ গ্যালাক্সির এক সমারোহ, যেটি তার পেছনের মহাজাগতিক বস্তুগুলির আলো বড় ও বিকৃত করার ক্ষমতা রাখে৷ ফলে বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত দূরের ও ক্ষীণ গ্যালাক্সিগুলি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন৷
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, Webb ERO Production Team
নক্ষত্রের আঁতুড়ঘর
সাদার্ন রিং নেবুলা আসলে এমন এক নীহারিকা, মৃতপ্রায় এক নক্ষত্রকে ঘিরে যার মেঘ সম্প্রসারিত হচ্ছে৷ প্রায় অর্ধেক আলোকবর্ষ ব্যাসের এই নীহারিকার মাঝে নিষ্প্রভ নক্ষত্রটি হাজার হাজার বছর ধরে সব দিকে গ্যাস ও ধুলিকণার বলয় পাঠিয়ে চলেছে৷ নেবুলার মধ্যেই নক্ষত্রের জন্ম হয়৷
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, and The ERO Production Team
লাখ লাখ নক্ষত্রের বাসা
পাঁচটি গ্যালাক্সির এক সমষ্টির নাম স্টেফান্স কুইন্টেট৷ লাখ লাখ তরুণ নক্ষত্র ও নক্ষত্রের জন্মের এই এলাকার এত স্পষ্ট ছবি এর আগে কখনো দেখা যায় নি৷ জেমস ওয়েব সেই অসাধ্যসাধন করেছে৷
ছবি: NASA, ESA, CSA, STScI, Webb ERO Production Team
গ্যাসের বিশালাকার গোলক
ডাব্লিউএএসপি ৯৬ আমাদের সৌরজগতের বাইরে বিশাল এক গ্রহ৷ ২০১৪ সালে সেটি আবিষ্কৃত হয়৷ মূলত গ্যাস দিয়ে গঠিত সেই গ্রহ পৃথিবী থেকে ‘মাত্র’ প্রায় ১,১৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত৷ জুপিটারের প্রায় অর্ধেক আয়তনের গ্রহটি তিন দশমিক চার দিনেই নক্ষত্র প্রদক্ষিণ করে৷