ডায়াবেটিস আজ দক্ষিণ এশিয়ার ঘরে ঘরে৷ হতাশার কারণ নেই, কেননা আছে ইনসুলিন নামের একটি পদার্থ৷ নিয়মিত ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিলে ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায় সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/Dmitry Lobanov
বিজ্ঞাপন
মানুষ না খেয়ে বাঁচতে পারে না৷ অথচ কিছু কিছু মানুষের শরীর শর্করা ‘হজম' করতে পারে না৷ তাদের যে রোগ, তার নাম ডায়াবেটিস, বাংলায় যাকে বলে বহুমূত্র৷ ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিবার খাবার আগে একটি হরমোন ইঞ্জেকশন নিতে হয়, যার নাম ইনসুলিন৷ ইনসুলিন আবিষ্কৃত হবার আগে ডায়াবেটিস ছিল একটি মারাত্মক রোগ৷ মানুষ ডায়াবেটিসের লক্ষণ চেনে হাজার হাজার বছর ধরে৷ অতীতে কমবয়সিরাই এই রোগে আক্রান্ত হত৷ লক্ষণ ছিল তেষ্টা আর পেট-জ্বলে-যাওয়া খিদে৷ পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া সত্ত্বেও রোগীরা অপুষ্টিতে মারা যেতো৷
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে কুকুরদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, ডায়াবেটিক-দের যে পদার্থটির অভাব, সেটির উৎস হল পাকস্থলীর কাছে পরিপাকরস নিঃসরণকারী গ্ল্যান্ড প্যানক্রিয়াস৷ প্যানক্রিয়াস নিঃসৃত নির্যাস দিয়ে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করার প্রচেষ্টা চলে৷ কিন্তু সেই নির্যাস বার করার সময় প্যানক্রিয়াসের পরিপাক এনজাইম-গুলি বাকি সব পদার্থ বিনষ্ট করে ফেলে৷ চূড়ান্ত সমাধানটি দেন ক্যানাডা-র দুই চিকিৎসাবিদ: ফ্রেডেরিক ব্যান্টিং এবং চার্লস বেস্ট৷ তাঁরা ইনসুলিন আবিষ্কার করেন ১৯২০ সালে৷
চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন খাওয়া কতটা যুক্তিযু্ক্ত?
ডায়বেটিস রোগীদের মধ্যে অনেকেই চা বা কফিতে স্যাকারিন খান৷ কিন্তু এটা খাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন৷ তাছাড়া বেশিদিন স্যাকারিন খেলে নাকি ডায়বেটিস বেড়েও যেতে পারে৷ এ সব বিষয়ই থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: dpa
স্যাকারিন
ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সেই হারে বেড়ে চলেছে স্যাকারিনের ব্যবহারও৷ স্যাকারিন খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ না বাড়লেও, দীর্ঘদিন স্যাকারিন খেলে কিন্তু ডায়বেটিস আরো বেড়ে যেতে পারে৷ তাই কৃত্রিম উপায়ে তৈরি স্যাকারিন মুখে মিষ্টির স্বাদ এনে দিলেও, তা আদৌ কতটা গ্রহণযোগ্য – তা সত্যিই প্রশ্নসাপেক্ষ৷
ছবি: Fotolia/Monika Wisniewska
চিনি ছাড়া খাবার?
ডায়বেটিস রোগীদের রক্তে যদি চিনির পরিমাণ একদম ঠিক থাকে, তাহলে চিনি পুরোপুরি বাদ দেয়ার প্রয়োজন হয় না৷ এক্ষেত্রে তাঁরা দিনে ৫০ গ্রাম বা তিন চামচ চিনি খেতে পারেন৷ তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি রোগী চিনি সরাসরি না খেয়ে বিভিন্ন খাবার, অর্থাৎ আঁশযুক্ত খাবারের সাথে তা মিশিয়ে খান৷
ছবি: bit24 - Fotolia
অর্গার্নিক উপায়ে তৈরি স্যাকারিন
ডায়বেটিস রোগীর অনেকেই চিনি ছাড়া একদমই খেতে পারেন না৷ তাঁরা স্যাকারিনযুক্ত মিষ্টি খাবার নিশ্চিতে খেয়ে ফেলেন৷ ভাবেন এ সব খাবার চিনির বিকল্প কারণ এ খাবার স্যাকারিন দিয়ে তৈরি৷ কাজেই এতে ডায়বেটিস বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়৷ অবশ্য কৃত্রিম উপায়ে তৈরি স্যাকারিনের চেয়ে অর্গার্নিক উপায়ে তৈরি স্যাকারিনযুক্ত খাবার তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: mdorottya - Fotolia.com
হঠাৎ করে চিনির পরিমাণ কমে গেলে
অনেক ডায়বেটিস রোগীর শরীরে হঠাৎ করে চিনির পরিমাণ কমে গেলে তাঁরা দ্রুত চিনির পরিমাণ বাড়াতে চা, কফি, চিনি বা স্যাকারিন রয়েছে এমন পানীয় পান করেন৷ এমনকি অনেক সময় তাঁরা সরাসরি চিনি খেয়ে ফেলেন৷ এর ফলে খুব দ্রুত রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায় ঠিকই, কিন্তু এতে ফল হতে পারে ভয়ংকর৷ তাই ডায়বেটিস রোগীদের এ কাজ একেবারেই করা উচিত নয়৷
ছবি: Fotoimpressionen/Fotolia
ডায়বেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ খাবার
জার্মানিতে ২০১২ সালের শেষ দিক থেকে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য তৈরি আলাদা বা বিশেষ খাবার, অর্থাৎ যাতে লেখা থাকতো ‘ডায়বেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ খাবার’ – তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ কারণ এ সব খাবারে যে চিনি দেওয়া হতো, তা বেশিরভাগই থাকতো ফ্রুক্টোজ মিশ্রিত৷
ছবি: anyaberkut - Fotolia
চিনির বিকল্প
ডায়বেটিস রোগীর কেউ কেউ আবার চিনির পরিবর্তে মধু, মিষ্টি ফল, সিরাপ বা অন্য কিছু খান৷ এ সবেও কিন্তু রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়৷ তাই কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণের ব্যাপারটাও কিন্তু বিবেচনায় রাখতে হবে!
স্যাকারিন হচ্ছে চিনির বিকল্প উপকরণ৷ তবে ডায়বেটিস রোগীদের ভালো করে বুঝে এই বিকল্প জিনিসটি পরিমাণমতো খেতে হবে৷ এমনই পরামর্শ জার্মানির লাইপসিগ শহরের খাদ্য বিশেষজ্ঞ সিবিলে কাপেলেন-এর৷
ছবি: dpa
7 ছবি1 | 7
ইনসুলিনের কল্যাণেই দেহের কোষগুলি খাদ্য থেকে রক্তে যে শর্করার অণুগুলি ঢোকে, তা শুষে নিতে পারে৷ শর্করার অণু থেকে শরীরের যাবতীয় প্রক্রিয়া তাদের জ্বালানি পায়৷ ইনসুলিন না থাকলে দেহের কোষগুলি বাস্তবিক না খেয়ে মরে – তা রোগী যতোই খাদ্য গ্রহণ করুক না কেন৷ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যাপক হানি ঘটে৷ ব্যান্টিং ও বেস্ট মৃত পশুর প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন সংগ্রহ করেছিলেন৷ সেই ইনসুলিন দিয়ে তাঁরা প্রথমে পশুর ও পরে মানবের শরীরে সফলভাবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করেন৷ মৃত পশুর প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন বার করা ছিল যেমন কঠিন তেমনই ব্যয়সাপেক্ষ৷
সস্তার ওষুধ
গত শতাব্দীর আশির দশকের আগে সস্তায় ইনসুলিন উৎপাদনের কোনো প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়নি৷ সেই সময় ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুতে মানুষের ইনসুলিন জিনটি ঢুকিয়ে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ইনসুলিন উৎপাদন করা হয়৷ কাজেই ইনসুলিনই প্রথম ওষুধ, যা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়েছে৷ ইনসুলিনের কল্যাণে ডায়াবেটিসের রোগীরা আজ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন৷
অথচ সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ এর কারণ হল বেশি খাওয়া ও কম দৌড়ঝাঁপ বা হাঁটাচলা করা৷ যার ফলে ডায়াবেটিস আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ সারা বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন৷ তবে খাওয়াদাওয়া ঠিক রাখলে আর নিয়মিত ব্যায়াম করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷
গর্ভাবস্থার ডায়বেটিস? জেনে নিন কারণ ও উপায়
আপনি ‘মা’ হতে যাচ্ছেন – ডাক্তারের দেয়া এই খবরটি নারীর জন্য সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর৷ তবে গর্ভকালীন জটিলতা বা ডায়বেটিস হওয়ার কথাও শোনা যায় মাঝেমধ্যে৷ এ সব সত্ত্বেও কিভাবে সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়া সম্ভব, জেনে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হবু ‘মা’
নারী পূর্ণতা পায় মা ডাক শুনে৷ কিন্তু সেকথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই৷ মা ডাক শোনার আগেই, অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় থাকে হবু মায়ের নানা প্রশ্ন৷ পেটের শিশুটির সব ঠিক আছে তো? কী করলে সন্তানটি সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে? আরো কত কিছু৷ গর্ভাবস্থায় অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তারই একটি মায়ের ডায়বেটিস হওয়া, যা সব সময় বোঝা যায় না৷ তাই প্রয়োজন কিছু সতর্কতা বা বিশেষ চেকআপ৷
ছবি: bilderbox
‘গ্লুকোজ টেস্ট’
গর্ভবতী হওয়ার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের সময় একটি বিশেষ পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যাতে বোঝা যায় ডায়বেটিস আছে কিনা৷ ‘গ্লুকোজ টেস্ট’-এর মাধ্যমে শরীরের কতটুকু গ্লুকোজ গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে কিংবা সুগার কমানোর জন্য শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করছে কিনা – ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়৷ তবে এই গ্লুকোজ টেস্টের যে বিশেষ নিয়ম রয়েছে, ঠিক সেভাবেই করতে হবে৷ একমাত্র তাহলেই সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হরমোনের তারতম্য
গর্ভাবস্থায় নানা রকম হরমোন শরীরের বিপাকক্রিয়াকে ওলট-পালট করে দেয়৷ আর এ সব কারণে অনেক নারীর পাঁচ থেকে সাত মাসের সময় ডায়বেটিস দেখা দেয়৷ যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশু জন্মের পর তা আস্তে আস্তে চলে যায়৷ অতিরিক্ত মোটা মায়েদের ক্ষেত্রে অবশ্য ভিন্ন কথা৷
ছবি: picture alliance/empics/N. Ansell
দু’জনের খাবার?
প্রায়ই গর্ভবতী নারীদের দু’জনের খাবার খেতে বলা হয় যা মোটেই ঠিক নয়৷ অনাগত সন্তান এবং মা – এই দু’জনের খাবার একসঙ্গে খাওয়ার পরিবর্তে মাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা৷ যথেষ্ট শাক-সবজি, ফল, আঁশযুক্ত খাবার এবং সঙ্গে কম চিনি এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়াই স্রেয়৷ সোজা ভাষায়, সুস্থ মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত৷ আসলে মায়ের খাওয়া নির্ভর করবে তিনি কতটা শারীরিক পরিশ্রম করছেন তার ওপর৷
ছবি: Fotolia/Karyna Chekaryova
হাঁটাচলা বা ব্যায়াম
গর্ভাবস্থায় হাঁটাচলা খুবই জরুরি৷ বিশেষজ্ঞের মতে, যে নারী গর্ভবতী হওয়ার আগে ব্যায়াম করতেন তাঁকে সেভাবেই ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে৷ তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে৷ এই যেমন, গর্ভাবস্থায় সাঁতার কাটা খুবই ভালো একটা ব্যায়াম, যা মা ও শিশুকে সুস্থ রাখে৷ গর্ভকালীন ডায়বেটিস হয়েছে, এমন রোগী জন্য যথেষ্ট ব্যায়াম এবং পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খুব জরুরি৷ এর সঙ্গে প্রয়োজনে ইনসুলিন থেরাপিও নেওয়া যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thomas Uhlemann
গর্ভাবস্থায় ডায়বেটিসের ঝুঁকি যাঁদের
আগে থেকেই কি আপনার ওজন বেশি? আপনার বাবা, মা, ভাই-বোনদেরও কি ডায়বেটিস আছে? এর আগেরবার যখন গর্ভবতী হয়েছিলেন, তখন কি আপনার ডায়বেটিস ছিল? আগে কি আপনার কোনো বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে? কিংবা আগের কোনো সন্তান জন্মের সময় কি ওজন বেশি ছিল? আপনি কি কোনো ওষুধ খেতেন বা খান, যাতে ডায়বেটিসের ঝুঁকি আছে? এর মধ্যে কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
ছবি: picture alliance / dpa Themendienst
পরামর্শ
অতিরিক্ত ওজনের নারী যাঁরা আগামীতে সন্তান চান, তাঁদের জন্য পরামর্শ: ‘‘আগে থেকে ওজন আয়ত্বে আনার চেষ্ট করুন৷ জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাস বদলান, নিজে সুস্থ থাকুন ও সুস্থ সন্তানের জন্ম দিন৷’’ এ কথা জার্মানির মিউনিখ শহরের স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সেবাস্টিয়ান রাইকের৷