সাইবার অপরাধ দমনে নতুন আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ আর তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ পাঁচটি ধারা বাতিল করা হয়েছে৷ তবে ডিজিটাল আইনও এবার সমালোচনার মুখে৷ এই আইন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আরো সংকুচিত করবে৷
বিজ্ঞাপন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ – শিরোনামের সাইবার অপরাধ দমন আইনটিতে মোট ৪৮টি ধারা আছে৷ এর মধ্যে ১৭ থেকে ৪৮ ধারায় বিভন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার ফলে, সংসদে এই আইন পাসে আর কোনো বাধা থাকলো না৷ তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ আরো কিছু ধারা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ায়, ঐ আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বাতিলে করার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷
নতুন আইনের ১ থেকে ১৬ ধারায় ডিজিটালের সংজ্ঞা, ডিজিটাল ফরেন্সিক ল্যাব, এমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে৷
ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে সেই ব্যক্তি ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷
২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাতকরে, তাহলে তার ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা হবে৷
২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ মানহানিকর কোনো তথ্য দিলে সেই ব্যক্তির তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে৷
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া
এই আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো ধরনের ‘প্রোপাগান্ডা' চালান, তাহলেও ১৪ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নতুন ডিজিটাল নিরপত্তা আইন তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ ঐ আইন বাতিল করে এবার যা করা হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা আরো সংকুচিত হবে৷ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে এবং সাংবাদিকদের তথ্য-সংগ্রহ আরো কঠিন হয়ে পড়বে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, ছবি তোলা, ভিডিও করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ এখানে বেআইনি শব্দটি ব্যবহার করে সাংবাদিকদের তথ্য-সংগ্রহ এবং ফটো বা ভিডিও-চিত্র ধারণকে বন্ধ করাই উদ্দেশ্য৷ এ ধরনের কাজকে গুপ্তচর বৃত্তি বা রাষ্ট্রদ্রোহ বলে তথ্য-সংগ্রহের কাজটি আরো কঠিন করে ফেলা হলো৷ এটা সাংবাদিকতার জন্য চরম হুমকি৷''
নূর খান বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ বা সংবাদমাধ্যমে নানা শ্রেণির মানুষ এখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, আলোচনা করেন৷ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা, মানহানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ব্যাখ্যা কী? এতে করে সাধারণ মানুষ ভয়ে থাকবে এবং মুক্ত আলোচনা বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে আলোচনা করতে আর সাহস পাবে না৷''
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিসভার বৈঠকের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘‘পেনাল কোডে ধর্মীয় অনুভূতির যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, সেটা এই আইনেও প্রযোজ্য হবে৷''
নূর খান
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাই ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা হিসেবে ফিরে এলো কিনা – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, এ আইনে কোথাও কোনো ধারায় সাংবাদিকদের ‘টার্গেট' করা হয়নি৷''
বেআইনিভাবে কারুর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে তাকে সাত বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে৷ এছাড়া বেআইনিভাবে অন্য সাইটে প্রবেশ করার পর যদি কেউ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে৷
কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ডিভাইসে প্রবেশ করেন, তাহলে এক বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে৷ কেউ যদি কারও ডিভাইসে প্রবেশে সহায়তা করেন, তাহলে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয় দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করেন, তাহলে তিনি ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷
২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখান, তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
৩০ ধারায় বলা হয়েছে, না জানিয়ে কেউ যদি কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করেন, তাহলে তাকে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে৷
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে তাকে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে৷
এই আইনের ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারার সব অপরাধ জামিন অযোগ্য৷ তবে ২০, ২৫, ২৯ এবং ৪৮ ধারার সব অপরাধ জামিনযোগ্য৷
ডিজিটাল আইনের খসড়া তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যা প্রস্তাব করেছি, তা রাখা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে নতুন ডিজিটাল আইনে বিতর্কিত তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নতুন আইনের ১৮ এবং ১৯ ধারায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ৩২ ধরায় যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র এবং স্বাধীনতা আরো সংকুচিত হবে৷''
বাংলাদেশে আইনের কিছু ফাঁকফোকর
বাংলাদেশের প্রায় সব আইনেই আছে ফাঁকফোকর৷ এ কারণে প্রকৃত অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার নজিরও অনেক৷ অপরদিকে আইনের এই ফাঁকফোকরের কারণে নিরীহ মানুষও অহরহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ফাঁকের কারণে মূল আসামীরা প্রায় সবসময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়৷ এ আইনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আলামত জব্দ করা৷ অর্থাৎ কার দখলে কিংবা কোন জায়গা থেকে মাদক জব্দ করা হয়েছে সেটাই প্রধান বিবেচ্য৷ তাই এ ধরনের মামলায় মাদক দ্রব্যের বাহক, অর্থাৎ চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও আসল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে৷
ছবি: picture-alliance/epa/Barbara Walton
যৌতুক নিরোধ আইন
যৌতুক নিরোধ আইনে নানান ফাঁকের কারণেও অনেকক্ষেত্রেই পার পেয়ে যায় অপরাধী৷ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ২ ধারায় বলা হয়েছে, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গে পরিপন্থি না হলে এ আইনে যৌতুক বলতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রদত্ত যে কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বোঝাবে৷ তবে কোনো উপঢৌকন যৌতুক হিসেবে গণ্য হয় না এ আইনে৷ ফলে হালে সমাজে উপঢৌকন বা উপহারের নামেও যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
নারী ও শিশু নির্যাতন আইন
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে, তা বলা নেই৷ তবে এরপর মামলার বিচারকাজ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী চলার কথা৷ তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচারকাজ বা তদন্ত শেষ করতে না পারলে আসামিরা জামিন পেতে পারে – উচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্তও রয়েছে৷ এ সিদ্ধান্তের কারণেও এ আইনে তৈরি হয় ‘ফাঁক’ আর সেই ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায় আসামীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
অর্থঋণ আইন
অর্থঋণ আইনেরও সমালোচনা রয়েছে৷ আইনে ফাঁক থাকায় ঋণখেলাপিরা ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েও তা পরিশোধ করেন না বা করতে চান না৷ বাংলাদেশে আইনের ফাঁক গলে ঋণখেলাপিদের পার পেয়ে যাওয়ার নজির অনেক৷ উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের অর্থঋণ আইনে ঋণখেলাপির কোনো সংজ্ঞাই নেই৷
ছবি: Reuters/A. Rahman
অস্ত্র আইন
বাংলাদেশে যে অস্ত্র আইন প্রচলিত আছে, তা ১৮৭৮ সালে প্রণীত৷ বিভিন্ন ধারায় সরকারি অনুমোদন ছাড়া অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার, প্রদর্শন, ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধ করা এ আইনের ১৯এ আর ১৯এফ ধারায়ই সাধারণত অবৈধ অস্ত্র দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ তবে যারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না৷
ছবি: Getty Images/AFP
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন
পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যু নিবারণের উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন’৷ এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ তবে এ আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কারাদণ্ড অথবা জরিমানা করতে পারবেন আদালত৷ ফলে হেফাজতে নির্যাতন করে মৃত্যু ঘটিয়েও শুধু জরিমানা দিয়েই মুক্তি পেতে পারবে অপরাধী৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Z. Chowdhury
6 ছবি1 | 6
তাংর কথায়, ‘‘বিনা অনুমতিতে অফিসে ঢুকে কেউ যদি তথ্য নেন, সেজন্য অন্য আইন আছে৷ কেউ যদি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ফাইল পাচার করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করেন, তার জন্য ‘অফিসিয়িাল সিক্রেট অ্যাক্ট' আছে৷ কিন্তু নতুন আইনে আবার তা ঢোকানো হয়েছে৷ কোনো সাংবাদিক ‘স্টিং অপারেশন' কেন চালায়? ঘুস বা দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করতে৷ এই আইনের ফলে তা আর পারা যাবে না৷ অন্যদিকে সাধারণ মানুষ যদি কোনো সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ঘুস দিতে বাধ্য হন আর তা যদি তিনি তার মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে আনেন, তবে তা প্রকাশ করতে পারবেন না৷ অর্থাৎ ঘুস খেলেও তার তথ্য প্রকাশ করা যাবে না৷ তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? আমার মতে, এটা সুশাসনের পথে বাধা৷ সাংবাদিকতা সত্যিই এবার অসুবিধার মুখে পড়বেন৷''
৫৭ ধারার মামলাগুলো চলবে
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ পাঁচটি ধারা বাতিল হলেও এ ধারায় যে মামলাগুলো চলমান, সেগুলো চলবে৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে৷ তবে যেহেতু ধারাটি থাকবে না বিচারকের রায়ই এখানে চূড়ান্ত৷''
সাইবার সিকিউরিটি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সারাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে ৭৪০টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ মামলা করা হয় ৫৭ ধারায়৷
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আটটি ছবি
তেসরা মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস৷ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বহু সাংবাদিক সংগ্রাম করেছেন৷ তাদেরই কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র৷
ছবি: Bild: BR/Wiedemann & Berg Film
রেজর’স এজ
২০১৬ সালে নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে ডয়চে ভেলের বব্স পুরস্কারে ভূষিত হয় এই তথ্যচিত্র৷ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও লেখকরা বিশেষভাবে বিপন্ন: ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের আক্রমণে শুধুমাত্র গত পাঁচ সপ্তাহে এদের চারজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ ‘ক্ষুরধার’ ছবিটি সেই পরিস্থিতির দিকে নজর দিচ্ছে৷
ছবি: Nastiker Dharmakatha
ফ্রেম বাই ফ্রেম
‘এক একটি ছবি’ শীর্ষক দিয়ে চারজন তরুণ আফগান ফটো জার্নালিস্ট বা সংবাদধর্মী আলোকচিত্রশিল্পীর কাহিনি বলা হয়েছে৷ ফটোগ্রাফি বহুদিন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকার পর এই সব আফগান ফটোগ্রাফার আবার ছবি দিয়ে কাহিনি সাজাতে শিখছেন৷ কাবুলের মার্কিন দূতাবাসে ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার পর স্থানীয় টিওএলও নিউজ সংস্থার সাতজন সাংবাদিক একটি আত্মঘাতী বোমা আক্রমণে নিহত হন৷
ছবি: Film Fprout
অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন
‘প্রেসিডেন্টের সাঙ্গপাঙ্গ’ নামের ছবিটি ওয়াটারগেট কেলেংকারি নিয়ে৷ ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টাইনের খোঁজখবরের ফলে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হয় ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন শেষমেষ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ছবিটি তৈরি করেন রবার্ট রেডফোর্ড৷
ছবি: Warner Bros./dapd
গুড নাইট অ্যান্ড গুড লাক
‘‘শুভরাত্রি, তোমার মঙ্গল হোক’’ শীর্ষক সাদা-কালো ছবিটিতে বেতার সাংবাদিকতার গোড়ার দিকের পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সেনেটর জোসেফ ম্যাককার্থি ১৯৫৩ সালে তাঁর ‘লাল আতঙ্ক’ অভিযানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও সেলিব্রিটি মহলে তথাকথিত কমিউনিস্টদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন৷ সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর. বারোস ম্যাককার্থি আমলের সেই সব কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: Kinowelt
পিপল ভার্সাস ল্যারি ফ্লিন্ট
যাজক জেরি ফলওয়েল প্রাপ্তবয়স্কদের ম্যাগাজিন ‘হাসলার’-এর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে ১৯৯৬ সালের কথাচিত্র ‘সরকার বনাম ল্যারি ফ্লিন্ট’৷ পর্নোগ্রাফির প্রকাশক ল্যারি ফ্লিন্ট বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারের কোপে পড়েন৷
ছবি: dpa
ফর্বিডেন ভয়েসেস
জুরিখের চিত্র পরিচালক বার্বারা মিলার-এর ২০১২ সালে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নিষিদ্ধ কণ্ঠ’ কিউবা, চীন ও ইরানের তিন ব্লগারের জীবন তুলে ধরেছে৷ ইওয়ানি সাঞ্চেজ, জেং জিনিয়াং ও ফর্নাজ সঈফি স্বদেশে স্বৈরাচারী শাসন সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে চান৷ তাদের কাজ এতটা কৌতূহল সৃষ্টি করে যে, তারা নিজের জীবন বিপন্ন করে এই সব কাহিনি দেশের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Das Kollektiv
বার্মা ভিজে
বর্মা, অর্থাৎ মিয়ানমারে ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নামেন৷ সেই নাটকীয় ঘটনাবলী নিয়ে ডেনিশ চিত্রনির্মাতা আন্ডার্স ওস্টারগার্ড-এর ছবি ‘বর্মার ভিডিও জকি’৷ ভিক্ষুদের প্রতিবাদ দেশের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রূপান্তরিত হওয়ায় বিদেশি সাংবাদিকদের বর্মা থেকে বহিষ্কার করা হয় ও শুধু গোপনে ছবি তোলার পথই বাকি থাকে৷
ছবি: flickr/Steve Rhodes
দ্য স্পিগেল অ্যাফেয়ার
১৯৬২ সালে জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল’ সংবাদ পত্রিকায় পশ্চিম জার্মানির সামরিক বাহিনীর দৈন্যদশা নিয়ে একটি রচনা প্রকাশিত হয়৷ ফলে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্রানৎস ইওসেফ স্ট্রাউস ‘স্পিগেল’ পত্রিকা অফিসে পুলিশি তল্লাসির নির্দেশ দেন৷ কিছু স্পিগেল সম্পাদকদের গ্রেপ্তারও করা হয়৷ জনসাধারণ এই ঘটনাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বলে গণ্য করে৷ ‘স্পিগেল কেলেঙ্কারি’ টিভি ছবিটিতে সেই মুড ধরে রাখা হয়েছে৷