ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগোতে জার্মানির নতুন পরিকল্পনা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রকৌশলখাতে বিশ্বখ্যাত জার্মানি ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে আছে৷ এ থেকে বেরিয়ে আসতে তিন বছরব্যাপী একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার৷
আগামী তিন বছরের জন্য ডিজিটালাইজেশন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে জার্মান সরকারছবি: Sean Gallup/Getty Images
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রকাশিত সূচক ‘ডিজিটাল ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইনডেক্স’ অনুযায়ী ২৭ দেশের মধ্যে জার্মানির অবস্থান ১৩ নম্বরে৷
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জন্য যেসব প্রযুক্তি প্রয়োজন সেগুলো তৈরি করে মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন৷ ফলে ডিজিটাল ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের জন্য জার্মানি সেসব দেশের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল৷
ডিজিটাল ব্যবস্থায় এগোতে জার্মানি ২০১৪ সালে একটি ‘ডিজিটাল অ্যাজেন্ডা’ প্রকাশ করেছিল৷ এরপর আরও কয়েকবার কৌশলগত পেপার প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু সেগুলো থাকা লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি কিংবা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে৷
ডিজিটাল অবকাঠামোর জংশন গড়ছে জার্মানি
04:49
This browser does not support the video element.
এবার বুধবার আবারও তিনবছরব্যাপী একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সরকার৷ এসব পরিকল্পনার মধ্যে আছে-
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও মাইক্রোচিপ উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানো
আরও বেশি মোবাইল টাওয়ার স্থাপন, যেন ২০২৬ সালের মধ্যে জার্মানির সব জায়গায় নিরবচ্ছিন্নভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়
স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যাবলী ডিজিটাইজেশন করা
পরিচয়পত্র, গাড়ির নিবন্ধন জাতীয় কাজ অনলাইনে করার মতো ব্যবস্থা করা ইত্যাদি
‘এসোসিয়েশন অফ দ্য ইন্টারনেট ইন্ডাস্ট্রি’ বলছে, সরকার যেসব পরিকল্পনা করেছে সেসব বাস্তবায়ন করে জার্মানির পক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানে পৌঁছানো সম্ভব নয়৷
২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে সরকার তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কতদূর এগোলো, তার মূল্যায়ন করবে বলে জানানো হয়েছে৷
ইয়ানশ ডেলকার/জেডএইচ
জার্মানিতে ভিডিও নজরদারি বিতর্ক
বিভিন্ন দেশে নিরাপত্তার খাতিরে ভিডিও নজরদারি যন্ত্র ব্যবহার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী৷ জার্মানিতেও স্বল্পমাত্রায় চালু আছে এমন ব্যবস্থা৷ কিন্তু চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে কি যাবে না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
ভিডিও নজরদারি
জার্মানির বিভিন্ন রেল স্টেশনে ভিডিও নজরদারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে অনেক দিন থেকেই৷ তবে তার পরিসর বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার৷ ২০২৪ সালের মধ্যে প্রধান সব রেল স্টেশনগুলোকে এই ধরনের নজরদারির আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ শুধু সিসি ক্যামেরা দিয়েই নয় তার সাথে চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিও যোগ করতে চান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schreiber
চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি
বার্লিনের সুডক্রয়েজ রেল স্টেশনে সম্প্রতি চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প শেষ হয়েছে৷ এই স্টেশন ব্যবহারকারী ৩০০ স্বেচ্ছাসেবী এক বছরের জন্য তাদের চেহারা শনাক্ত করার অনুমতি দেয় সরকারকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Schreiber
যেভাবে শনাক্ত করা হয়
প্রকল্পটি শুরুর আগে স্বেচ্ছাসেবীদের ছবি পুলিশের ডেটাবেজে দেয়া হয়েছে৷ ট্রেন স্টেশনে বসানো ক্যামেরা যখনই তাদের চিহ্নিত করে সেই তথ্য পুলিশের কাছে চলে যায়৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
কতটা সঠিক?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রযুক্তিটি ৮০ ভাগ সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম হয়েছে৷ অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি ৫ জনের চারজনকে শনাক্ত করতে পারছে সিস্টেমটি৷ অন্যদিকে এক হাজার জনে একজনকে ভুলভাবে শনাক্ত করেছে এই সফটওয়্যার৷
ছবি: DW/J. Chase
ভুলের মাশুল
প্রযুক্তিটির ভুলের সংখ্যা কম হলেও তা নিয়ে উদ্বেগ আছে৷ কেননা শতভাগ নির্ভুল না হলে যেকোন একজন নিরপরাধী ব্যক্তিও হয়রানির শিকার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগ্রহী পুলিশ
জার্মানির পুলিশ চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে৷ ফেডারেল পুলিশ বিভাগের প্রধান ডিয়েটার রোমান মনে করেন, এর ফলে বিশেষ পুলিশি অভিযান ছাড়াই দ্রুত অপরাধীকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে, যা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় অর্জন হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Sparta
আইনি বাধা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আগ্রহ থাকলেও জার্মানিতে এখনই চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার চালু করা সম্ভব না৷ কেননা এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির ভিডিও নজরদারি ব্যবস্থা চালুর জন্য এখনও আইনী কাঠামো নেই দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/picturedesk/H. Ringhofer
আদালতের রায়
আইনি কাঠামো না থাকলেও আদালতের সাম্প্রতিক একটি রায় অবশ্য পুলিশের পক্ষে গেছে৷ গত বুধবার হামবুর্গের প্রশাসনিক আদালত ২০১৭ সালে জি টুয়েন্টি সম্মেলনের বিক্ষোভে অংশ নেয়াদের ছবির বিতর্কিত তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণের অনুমতি দিয়েছে পুলিশকে৷ স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেহারা শনাক্তকরণ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঐ ঘটনায় সহিংসতায় জড়িতদের চিহ্নিত করে৷
ছবি: picture-alliance /dpa/B. Thissen
উদ্বেগও আছে
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন নেতারা এ ধরনের প্রযুক্তির পক্ষে যেমন আছেন তেমনি বিপক্ষে থাকা রাজনীতিবিদের সংখ্যাও কম নয়৷ পুলিশ ও গোয়ান্দা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট ছবি অনুসন্ধানের বিষয়ে গত জুলাইতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে বেসরকারি সংগঠন সোসাইটি ফর সিভিল রাইটস৷