প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের বাইরে গিয়ে ‘লিব্রা' নামে ক্রিপটোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা আনার ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক৷ এর মাধ্যমে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ছাড়িয়ে ই-কমার্স ও বৈশ্বিক লেনদেনে পা রাখতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি৷
বিজ্ঞাপন
এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মঙ্গলবার লিব্রা মুদ্রা আনার বিষয়ে বিস্তারিত জানান ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গ৷ ২০২০ সালের প্রথমভাগে ডিজিটাল মুদ্রাটি চালুর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি৷
নতুন এই ক্রিপ্টোকারেন্সি আনার ক্ষেত্রে ২৮টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ‘লিব্রা অ্যাসোসিয়েশন' গঠন করেছে ফেসবুক৷
লিব্রা মুদ্রা জমা, খরচ ও লেনদেনের জন্য ‘ক্যালিব্রা' নামে নতুন ডিজিটাল ওয়ালেট তৈরি করেছে ফেসবুক৷ ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে এটাকে সংযুক্ত করা হবে৷
লিব্রা চালুর ঘোষণা দেওয়ার পরপরই তথ্যের গোপনীয়তা এবং সরকারি রেগুলেশনের বাইরে চলে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান৷ কারণ, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাসহ বিভিন্ন কাণ্ডে তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছে ফেসবুক৷
তবে ফেসবুক বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিতি ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের মধ্যে লেনদেন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে তারা৷ একইসঙ্গে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকেও আর্থিক সেবায় অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্য তাদের৷
বিটকয়েন সম্পর্কে যা জানা দরকার
বেশ কিছু দিন ধরেই বিশ্ব গণমাধ্যমে ‘বিটকয়েন’ বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে৷ হঠাৎ করে এই ডিজিটাল মুদ্রার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এই আলোচনার কারণ৷ কিন্তু বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
শুরুর কথা
২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী যে আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল তার পরের বছর বিটকয়েনের যাত্রা শুরু৷ মন্দার কারণে প্রচলিত মুদ্রাব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসে যে ফাটল ধরেছিল তাকে পুঁজি করে ডিজিটাল এই মুদ্রা চালু করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
যেন সোনা
বিটকয়েনের স্রষ্টা বা স্রষ্টারা একে সোনার মতোই মূল্যবান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন৷ তাই এটি যেন বিশাল পরিমাণে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এবং সেটি হচ্ছে দুই কোটি ১০ লক্ষ৷ শুরুতে এক বিটকয়েনের মূল্য এক সেন্টেরও কম ছিল৷ ২০১১ সালে এটি এক ডলার সমমানের হয়৷ পরবর্তীতে দাম বেড়ে গতমাসের মাঝামাঝি সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৮০০ ডলার হয়েছিল৷
ছবি: DW/M. Sevcenko
দাম বাড়া-কমা
তবে শেয়ার মূল্যের মতোই প্রতিক্ষণে বিটকয়েনের মূল্য ওঠানামা করে৷ তবে পার্থক্য হচ্ছে, শেয়ার মূল্যের কমা-বাড়ার ব্যাখ্যা হয়ত বিশেষজ্ঞরা দিতে পারেন, কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে সেটি এখনও সম্ভব নয়৷
ছবি: Imago/imagebroker/M. Weber
নিয়ন্ত্রণহীন
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কিন্তু বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই৷
ছবি: Reuters/D. Ruvic
পরিচয় গোপন
বিটকয়েনের মালিকরা পরিচয় গোপন রেখে লেনদেন করতে পারেন৷ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বিটকয়েন তৈরি করা হয়৷ এই মুদ্রা লেনদেনে কোনো খরচ নেই৷
ছবি: Getty Images/D. Kitwood
দেখা যায় না
ডলার, ইউরো বা টাকার মতো এই মুদ্রা দেখা যায় না৷ কারণ এই অর্থ জমা হয় ডিজিটাল ওয়ালেটে৷ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১,৯০০ বিটকয়েন এটিএম (২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) থেকেও এটি কেনা যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
উদ্ভাবক কে?
বিটকয়েনের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সাতোশি নাকামোতো নামে এক ত্রিশোর্ধ্ব জাপানি নাগরিকের নাম জড়িয়ে আছে৷ তবে সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয়, কয়েকজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডিজিটাল মুদ্রার পেছনের প্রযুক্তিটি তৈরি করেছেন৷ মার্কিন কোম্পানি টেসলা’র প্রধান এলোন মাস্ক-ই (ছবি) আসলে সাতোশি বলে একটি গুজব রয়েছে৷ অবশ্য তিনি তা অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: Reuters/AAP/B. Macmahon
সাফল্যের অন্য কারণ
পরিচয় গোপন রেখে বিটকয়েনের লেনদেন করা যায় বলে মানি লন্ডারিংসহ অবৈধ পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়৷ এটিও এই মুদ্রার সাফল্যের আরেকটি কারণ বলে মনে করা হয়৷ সাইবার অপরাধীরাও এটি ব্যবহার করে৷ তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএসও বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/M. Dairieh
অন্য ডিজিটাল মুদ্রা
বিটকয়েনের সাফল্য অনুপ্রাণিত হয়ে আরও প্রায় এক হাজারের বেশি ডিজিটাল মুদ্রার আবির্ভাব ঘটেছে৷ এর মধ্যে সফল হওয়া কয়েকটি হচ্ছে ইথেরিয়াম, জেডক্যাশ, বিটকয়েন ক্যাশ, রিপল ও লাইটকয়েন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এক বিটকয়েনের মূল্য ছিল এক হাজার ডলারের সমপরিমাণ৷ ১২ মাস পর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সেটি হয় সাড়ে ১৯ হাজারের বেশি৷ ফলে শঙ্কা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিটকয়েন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Astapkovich
বিটকয়েনের ক্রেতারা ‘বোকা’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপিমর্গান চেজ এর প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমোন বলেছেন, যাঁরা বিটকয়েন কেনেন তাঁরা ‘বোকা’৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎসও (ছবি) বিটকয়েন সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিখ্যাত বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, বিটকয়েনের মালিকরা শেষ পর্যন্ত দুর্যোগে পড়বেন৷
ছবি: World Economic Forum/Benedikt von Loebell
11 ছবি1 | 11
ফেসবুক লিব্রা প্রকল্পের প্রধান ডেভিড মারকাস জানান, রোমান আমলের পরিমাপক যন্ত্র ‘লিব্রা', জ্যোতিষশাস্ত্রে ন্যায়বিচারের প্রতীক এবং ফরাসি ভাষায় লিব্রা অর্থ ‘স্বাধীনতা'- এই তিন বিষয় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নামটি নেওয়া হয়েছে৷ ‘‘স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও অর্থ- এগুলোই মূলত আমরা করতে চাচ্ছি এখানে,'' বলেন তিনি৷
লিব্রা মুদ্রা আনার মাধ্যমে ম্যাসেজিং সার্ভিস থেকে গুটিয়ে লেনদেনের ব্যবসার দিকে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ যেটি এর মধ্যে চালু করেছে ‘উইচ্যাট'-এর মতো চীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম৷
২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী যে আর্থিক মন্দার প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে পরিচিত ক্রিপ্টোকারেন্সি ‘বিটকয়েন' এর যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ প্রচলিত মুদ্রাব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসে ফাটল ধরায়, সেটাকে পুঁজি করে ডিজিটাল এই মুদ্রা চালু হয়৷
পরিচয় গোপন রেখে লেনদন করতে পারায় মানি লন্ডারিংসহ অবৈধ পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়৷ এছাড়া, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগকারীরা লাখ লাখ ডলার খুইয়েছেন হ্যাকারদের কবলে পড়ে৷
বিটকয়েনের সাফল্য অনুপ্রাণিত হয়ে আরও প্রায় এক হাজারের বেশি ডিজিটাল মুদ্রার আবির্ভাব ঘটেছে৷ এর মধ্যে সফল হওয়া কয়েকটি হচ্ছে ইথেরিয়াম, জেডক্যাশ, বিটকয়েন ক্যাশ, রিপল ও লাইটকয়েন৷ ২০১৭ সালে হঠাৎ করে বিটকয়েনের অস্বাভাবিক লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছিল৷