তথ্য-প্রযুক্তি ছাড়া আজকের জীবনযাত্রা প্রায় অচল৷ অতএব পরবর্তী প্রজন্মকেও এই দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত করাও জরুরি৷ জার্মানিতে এক উদ্যোগের মাধ্যমে ঠিক সেই চেষ্টাই চলছে৷
বিজ্ঞাপন
‘কোড উইক' সপ্তাহ উপলক্ষ্যে খেলাচ্ছলে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখছে ৬০ জন শিশু৷ এভাবে তারা ইন্টারনেট-কে আরও চেনার সুযোগ পাচ্ছে৷ গেশে ইয়োস্ট এই কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তা৷ গোটা জার্মানিতে তিনি শিশুদের জন্য একশ'রও বেশি এমন ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সি প্লাস প্লাস বা পিএইচপি-র মতো জটিল প্রোগ্রামিং পদ্ধতি শেখার প্রয়োজন নেই৷ শুধু ব্যবহারকারী হিসেবে নয়, সহজ উপায়ে ইন্টারনেটে সৃজনশীলভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার উপায়ও রয়েছে৷ আজকের যুগে এটা জানা জরুরি৷ কারণ আমাদের তথ্য নিয়ে সেখানে কী ঘটছে, তা জানা দরকার৷ অ্যালগোরিদম কী, সে বিষয়েও প্রাথমিক ধারণা থাকা উচিত৷''
ইউরোপের বাকি অংশের তুলনায় জার্মানির শিশুরা তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে৷ বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও বাল্টিক দেশগুলি এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রয়েছে৷
কম্পিউটার ব্যবহারের সময় যা খেয়াল রাখবেন
তথ্য-প্রযুক্তির যুগে সব জায়গাতেই কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে৷ তবে কম্পিউটারের পর্দা থেকে কতটা দূরে বসা উচিত বা কতটা আলো দরকার আর সঠিকভাবে তা না হলে কী সমস্যা হতে পারে – এ সব নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: imago/McPHOTO
কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য
আজকের যুগে অফিস-আদালতের কাজ কম্পিউটার ছাড়া যেন ভাবাই যায় না৷ আর বাড়িতেও কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত মানুষ৷ মনিটর থেকে ঠিক দূরত্বে না বসা কিংবা অতিরিক্ত বা কম আলো থেকে হতে পারে চোখের নানা সমস্যা, এমনকি ঘাড় ব্যথাও৷ ‘‘কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে এ সব সমস্যার কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়’’, বলেন চক্ষু বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Colourbox
কতটা দূরত্বে বসবেন?
কম্পিউটারের বেশি কাছে বসে কাজ করলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, বিশেষকরে চোখের৷ বেশিরভাগ মানুষই কম্পিউটারের পর্দা থেকে ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বসে কাজ করেন৷ এই দূরত্ব ৭৫ সেমি. হলে সবচেয়ে ভালো হয়৷ পরামর্শ দিয়েছে জার্মানির পেশাদারী নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের৷বিগ হাই রেজোলিউশন কম্পিউটারের ক্ষেত্রে অবশ্য এই দূরত্ব ১০০ সেন্টিমিটার হতে পারে৷
ছবি: DW
প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভিন্ন
সব কিছুই নির্ভর করে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ওপর৷ কারণ প্রতিটি মানুষের বসা, স্ক্রিনের দিকে তাকানোর অভ্যাস, স্বভাব ইত্যাদি সবকিছুই আলাদা৷ তাই আলাদাভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কে, কীভাবে পর্দার সামনে বসে কাজ করতে আরাম বোধ করেন৷ সঙ্গে যাতে হাত নাড়াচাড়া করার ভালো সুবিধা, যথেষ্ট জায়গা থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে৷ তাছাড়া টেবিল এবং চেয়ারের উচ্চতাও লক্ষ্য রাখা জরুরি৷
ছবি: Fotolia/Syda Productions
আলো বা লাইট নির্বাচন
অনেকেই কম্পিউটারের কাজ করার সময় অভ্যাসবশত ঘরের লাইটটি জ্বালিয়ে রাখেন৷ বাইরে যথেষ্ট আলো থাকলে তো আর ঘরের আলোর প্রয়োজন হয় না৷ তাই নিজেকেই দেখে নিতে হবে কতটা আলো রয়েছে৷ অনেক অফিসেই মাথার ওপরে বিশাল টিউব লাইট থাকে, যাতে অনেকেরই অসুবিধা হয়৷ এক্ষেত্রে টেবিল লাইট ব্যবহার করুন৷ পরামর্শ কোলনন শহরের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রাল্ফ ক্রট-এর৷
ছবি: DW/O. Klimtschuk
মনিটরের ব্যাকগ্রাউন্ড লাইট
মনিটরের পর্দাটি সবসময় পরিষ্কার রাখুন৷ মনিটরের ব্যাকগ্রাউন্ড আলোটি হালকা নীল হলে ভালো৷ তাছাড়া কম্পিউটারে লম্বা টেক্স পড়া বা কম্পোজ করতে গেলে সবচেয়ে ভালো হয় যদি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর কালো রং দিয়ে লেখা হয়৷ এতে চোখের ওপর চাপ কম পড়ে৷ প্রয়োজনে অক্ষরের সাইজ বড় করে নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: Munir Hasan
বিশ্রাম
অনেকেই কাজ করার সময় এত ব্যস্ত থাকেন যে চোখ বা ঘাড়ের বিশ্রামের কথা ভুলে যান৷ এর ফল অবশ্য পাওয়া যায় কিছুক্ষণ পরেই৷ তাই একবারে লম্বা বিশ্রাম না নিয়ে ঘণ্টাখানেক পর পর কয়েক মিনিট করে বিশ্রাম নেওয়া ভালো৷ অর্থাৎ দু-চার মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকা এবং জানালা দিয়ে অনেক দূরে তাকিয়ে থাকা আর ঘাড়টাকে একটি এদিক-সেদিক ঘোরালে আরাম পাওয়া যায়৷ এছাড়া সম্ভব হলে দাড়িয়ে একটু হাঁটাচলাও করা যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Dan Race
6 ছবি1 | 6
গেশে বলছেন, ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রে জার্মানিতে এখনো অনেক কিছু করার রয়েছে৷ হয়ত স্কুলেই শিশুরা কিছুটা শিখেছে, যদিও সেখানে সুযোগ হয়ত কম৷ বর্তমান পরিস্থিতি বদলাতে জার্মান সরকার প্রায় দেড় বছর আগে গেশে ইয়োস্ট-কে জার্মানির ডিজিটাল রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঘোষণা করেছে৷
কিন্তু তিনি প্রাইমারি স্কুলেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত শিক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার পথে বাধাও কম নয়৷ জার্মানির ডিজিটাল রাষ্ট্রদূত গেশে ইয়োস্ট বলেন, ‘‘জার্মানিতে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন ব্যবস্থা আমার জন্য একটা সমস্যা৷ শিক্ষা রাজ্যের এক্তিয়ারে পড়ে৷ রাজ্য সরকার বলছে, ইচ্ছা আছে কিন্তু এর জন্য অর্থ নেই৷ অথবা ক্লাসে কীভাবে ডিজিটাল শিক্ষা দেওয়া হবে, তা জানি না৷ বেশ কঠিন অবস্থা, কারণ সবাই একে অপরকে দোষ দেয়৷ সবাই বলে, করতে তো চাই, কিন্তু কীভাবে করবো তা জানি না৷''
জার্মানিতে বার্লিন শহরেই সবচেয়ে বেশি স্টার্ট আপ কোম্পানি রয়েছে৷ শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাইন গবেষণার অধ্যাপক হিসেবেও কাজ করছেন গেশে৷ ইন্টারনেট রাষ্ট্রদূতের কাজটি স্বেচ্ছাসেবি হিসেবে নিয়েছেন তিনি৷ ডিজাইনার, তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে মিলে তিনি এমন ডিজিটাল প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যা দৈনন্দিন জীবন সহজ করে তুলবে৷ যেমন কাপড়ের মধ্যে সেন্সর বসানো রয়েছে৷ স্পর্শ করলে অ্যালার্ম বেজে উঠবে৷ কাপড়ের মধ্যেই ডিজিটাল প্রযুক্তি৷ গেশে ইয়োস্ট বলেন, ‘‘আজকের নেটওয়ার্ক জগতকে সব রকম মানুষের আওতায় আনাই আমাদের লক্ষ্য৷ যেমন স্মৃতিভ্রষ্ট রোগী অথবা বধির ও অন্ধ মানুষ৷ নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে কাজ করে বোঝার চেষ্টা করছি, কীভাবে এই নেটওয়ার্ক-সর্বস্ব জগতে তাদের শামিল করা যায়, প্রযুক্তি কীভাবে সেতুবন্ধনের কাজে লাগানো যায়৷''
ভবিষ্যতের কাজের জায়গা কেমন হবে, সে বিষয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন গেশে ইয়োস্ট৷ আজকের তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেটের পরিবেশেই বড় হয়ে উঠছে৷ এই প্রজন্মের কাছে সর্বদাই ল্যাপটপ থাকে৷ তারা কাজের ক্ষেত্রে বাঁধন চায় না, কোনো নির্দিষ্ট প্রকল্পের জন্য কাজ করতে চায়৷ তারা স্বাধীনতা চায়, নিজস্ব আইডিয়া কাজে লাগাতে চায়৷
ডিজিটাল রাষ্ট্রদূত হিসেবে গেশে মনে করেন, এই মানুষগুলি রাজনীতি ও অর্থনীতির জগতেও নতুন উদ্দীপনা আনতে পারেন৷ গেশে বলেন, ‘‘রাজনীতি জগতে এমন বিকল্প চিন্তার তরুণ মানুষ দেখা যায় না বলে আমার রাগ হয়৷ কারণ ইন্টারনেটের জগতে তাদের জন্য অনেক বেশি উত্তেজনা রয়েছে৷ সেখানে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ হয়৷ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভবিষ্যৎ স্থির করা হয়৷''
প্রোগ্রামিং ওয়ার্কশপে ফেরা যাক৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল অর্থনীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনরের সঙ্গে ভিডিও আলাপ চলছে৷ গোটা ইউরোপ জুড়ে প্রায় ৫,০০০ এমন ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হচ্ছে৷ এভাবে গেশে ইয়োস্ট শিশুদের ডিজিটাল জগত সম্পর্কে আরও জ্ঞান বিতরণ করতে চান৷
ওরা ইন্টারনেটে যা দেখে
জার্মানির মাইনৎস মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোদৈহিক বিভাগের একটি জরিপের ফলাফলে জানা গেছে, আজকের কিশোর-কিশোরীরা অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে৷ কী দেখে তারা? ছবিঘরে পাবেন...
ছবি: Pub Crawl Cologne
অতিরিক্ত ইন্টারনেট টিন-এজারদের নিঃসঙ্গ করে তোলে
সম্প্রতি ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি ২,৪০০ কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে একটি জরিপ করা হয়েছিলো৷ যারা দিনের ৬ ঘণ্টাই কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল বা ট্যাবলেটের সামনে বসে সময় কাটায়, তাদের সমবয়সি বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেশার তেমন কোনো আগ্রহ নেই৷ কারণ সামনে থাকা যন্ত্রটিই তাদের বড় বন্ধু ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
কম্পিউটার গেম
যখন মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার সবচেয়ে ভালো সময় ঠিক সেসময়ই যদি তারা দিনের এতটা সময় কম্পিউটার গেম বা যৌন বিষয়ক ওয়েবসাইট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় তাহলে কারো সাথে বন্ধুত্ব হওয়া খুব কঠিন৷ এ কথা বলেন গবেষক টিমের প্রধান ডা.মানফ্রেড বয়টেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেশা
যাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়, তাদের মধ্যে শতকরা ৩.৪ শতাংশই ইন্টারনেটে নেশাগ্রস্ত৷ অর্থাৎ তারা দিনে ৬ ঘণ্টার বেশি অনলাইনে থাকে, অন্য কিছুর প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই৷ ১৩.৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরীদের নেশা না হলেও তারাও ইন্টারনেটের প্রতি খুবই আগ্রহী৷ সময়ের দিক থেকে ছেলেমেয়ে সমানভাবেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
ছেলে-মেয়ের পার্থক্য
সময়ের দিক থেকে পার্থক্য না থাকলেও ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে৷ যেমন মেয়েরা বেশি সময় কাটায় সামাজিক যোগাযোগ এবং অনলাইন শপিং-এ, আরা ছেলেরা বেশি সময় খরচ করে কম্পিউটার গেম এ, এবং যৌনআনন্দে৷
ছবি: Fotolia/apops
বন্ধু চাই
যেসব টিন-এজ বা কিশোর-কিশোরীরা সমাজে ভালোভাবে মেলামেশা করতে পারেনা, তারা এমন অনলাইন কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকে যেগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ কম হয়৷ এ তথ্য জানান ড.বয়টেল তাঁদের ক্লিনিকের আউটডোর পেশেন্ট হিসেবে আসা কম্পিউটারে ‘নেশা’ টিন-এজারদের সম্পর্কে৷
ছবি: Fotolia/Doreen Salcher
সামাজিকভাবে মেলামেশার পরামর্শ
এরকম ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা এবং শিক্ষকদের প্রতি ডা.মানফ্রেড বয়টেলের পরামর্শ, টিন-এজারদের প্রযুক্তির উন্নয়ন ব্যবহারের পাশাপাশি সামাজিকভাবে মেলামেশার বিষয়টির দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া এবং লক্ষ্য রাখা উচিত৷