সাড়ে ৪ ঘণ্টা৷ ২২৪ কিলোমিটার৷ বদলে দিতে পারে মানসিকতা৷ বদলে দিতে পারে জীবনের চালচিত্র৷ বেঙ্গালুরুর অঙ্কিত ভাটির চেয়ে ভালো আর কে-ই বা জানে সে কথা৷
বিজ্ঞাপন
২০১০ সালের গোড়ার দিকে বেঙ্গালুরু থেকে বন্দিপুর যাচ্ছিলেন অঙ্কিত৷ পাড়ার ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে ভাড়া করেছিলেন একটি গাড়ি৷ কিন্তু মাঝ রাস্তায় পৌঁছে ড্রাইভার অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন৷ অঙ্কিত স্বভাবতই তা দিতে রাজি হননি৷ অগত্যা মাঝরাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেন ওই চালক৷ অঙ্কিত জড়িয়ে পড়েন তর্কাতর্কিতে৷ ভারত-বাংলাদেশে এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন অনেকেই৷ কিন্তু মুম্বই আইআইটি'র ছাত্র অঙ্কিত সেই ঘটনাটিকেই জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন৷
চ্যালেঞ্জ থেকে স্টার্ট আপ
অঙ্কিত অবশ্য চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন আগেই৷ বড় চাকরির মোহ ছেড়ে ডিজিটাল স্টার্ট আপের পরিকল্পনা আগেই ছিল তাঁর৷ সেই মতো সেট আপও তৈরি করছিলেন৷ কিন্তু বেঙ্গালুরুর ঘটনার পর তিনি ঠিক করে ফেলেন যে, পরিবহন ক্ষেত্রেই স্টার্ট আপ তৈরি করবেন৷ আরও পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো অঙ্কিতের পরিবারও এই ভাবনায় খুশি হয়নি৷ আইআইটি পাশ ছেলে শেষ পর্যন্ত ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট'? কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে সরেননি অঙ্কিত৷ পুরনো স্টার্ট আপের সেট আপেই ট্যাক্সি অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেন৷ সঙ্গে পেয়ে যান বন্ধু ভবিশ আগরওয়ালকে৷ পরিবহনের ব্যবসায় নিজেদের গাড়ি না কিনে অঙ্কিত এবং ভবিশ একটি অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেন৷ অনেকটা পশ্চিমা দেশে প্রচলিত ‘উবার'এর মতো৷ কিছুদিনের মধ্যেই দু'জন বিনিয়োগকারীও পেয়ে যান তাঁরা৷ ফলাফল, ভারত জুড়ে ‘ওলা ক্যাব', এই মুহূর্তে যার বার্ষিক টার্ন ওভার ৫ বিলিয়ন ডলার৷ শুধু তাই নয়, ভারত জুড়ে ১১০টি শহরে ৬লক্ষ গাড়ি এখন ওলার দখলে৷ ট্যাক্সি থেকে শুরু করে অটো পর্যন্ত নানা ধরনের গাড়ির স্টিকারে এখন ‘ওলা'৷
বিশ্বের সবচেয়ে সফল ১০টি স্টার্টআপ
বিলিয়ন ডলার ক্লাবের তালিকায় উবার, এয়ার বিএনবিসহ যেসব স্টার্টআপ আছে, তাদের মূল্যমান কত, কবে এগুলোর প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কে প্রতিষ্ঠাতা– জানতে পারবেন এই ছবিঘরে৷ তথ্য নেয়া হয়েছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এ বছরের প্রতিবেদন থেকে৷
ছবি: picture alliance /abaca/D. van Tine
উবার
মূল্যমান ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০০৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ট্রাভিস ক্যালানিক৷ উবার হলো বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান স্টার্টআপ৷ কোনো গাড়ির সেবা পেতে স্মার্টফোনে অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয় উবার৷
ছবি: picture alliance/dpa/Imaginechina/Da Qing
ডিডি চুঝিং
ডিডি কুয়াইদি আবার ডিডি চুঝিং নামেও পরিচিত৷ এটি চীনের সর্ববৃহৎ গাড়ি সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান৷ ২০১২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর মূল্যমান ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ সিইও ওয়েই চেং৷
ছবি: picture-alliance /MAXPPP/VCG
শাওমি
শাওমি কর্পোরেশনের সদরদপ্তর চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে৷ বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ স্মার্টফোন তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান এটি৷ এর মূল্যমান ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর সিইও জুন লেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wu Hong
এয়ারবিএনবি
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টার্টআপ কোম্পানিটি মূলত একটি সোশ্যাল ওয়েবসাইট৷ কোথাও বেড়াতে বা কাজে গেলে এয়ারবিএনবিতে মানুষ থাকার জায়গা খোঁজে৷ ১৯০টি দেশের ৩৪ হাজার শহরে এটি কাজ করে৷ প্রতিষ্ঠাতা সানফ্রান্সিস্কোর ব্রায়ান চেস্কি, জো গেবিয়া এবং নাথান ব্লেচারজিক৷ এর মূল্যমান ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: Imago/STPP
স্পেসএক্স
স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন বা স্পেসএক্সের সদরদপ্তর ক্যালিফোর্নিয়ার হাওথ্রোনে৷ এটি মহাকাশ যান, রকেট উৎক্ষেপণ– এই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও নকশা তৈরি করে৷ ২০০২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ প্রতিষ্ঠাতা এলোন মাস্ক৷ এর মূল্যমান ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance /dpa/Press Association Images/@alias_Amanada
উইওয়ার্ক
বিভিন্ন পেশার মানুষ এই স্টার্টআপের সাহায্যে একই অফিসে বসে কাজ করতে পারেন৷ উত্তর অ্যামেরিকা, ইউরোপ এবং ইসরায়েলের ২০টিরও বেশি শহরে এটি চালূ আছে৷ এর ভোক্তা হলেন স্টার্টআপ, ফ্রিল্যান্সার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যারা মাসিক ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে এক বা একাধিক অফিসে কাজ করতে পারেন৷ এর মূল্যমান ২০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১০ সালে নিউইয়র্কে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷
ছবি: WeWork Europe
প্যালানটির
প্যালানটির টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন একটি বেসরকারি অ্যামেরিকান সফটওয়্যার এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, যারা মূলত তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন সিআইএ, এফবিআই– এদের সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণের জন্য৷ এর মূল্যমান ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০০৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ (ছবিতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী আলেকজান্ডার কার্প)
ছবি: picture-alliance/newscom/A. Lohr-Jones
লুফ্যাক্স
এই স্টার্টআপের পুরো নাম লুজিয়াসুই ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যানশিয়াল অ্যাসেট এক্সচেঞ্জ করপোরেশন লিমিটেড৷ এটি একটি অনলাইন ইন্টারনেট ফিন্যান্স মার্কেট প্লেস, যার সদরদপ্তর সাংহাইয়ের লুজিয়াসুই এ৷ ২০১১ সালে এর পথচলা শুরু হয়৷ এর মূল্যমান ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/Guo Hui
মেইতুয়ান-ডিয়ানপিং
মেইতুয়ান-ডিয়ানপিং চীনের সর্ববৃহৎ ‘গ্রুপ ডিল ওয়েবসাইট’৷ অর্থাৎ এই কোম্পানি আপনাকে কেনাকাটার জন্য ভাউচার, স্থানীয় নানা সেবা, বিনোদনের ভাউচার, যেমন সিনেমার টিকেট এবং রেস্তোরাঁর বুকিং– এসব সেবা দেয়৷ চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ২০১৫ সালে এটির প্রতিষ্ঠা হয়৷ এই কোম্পানির মূল্যমান ১৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina/R. Weihong
পিনটারেস্ট
পিনটারেস্ট একটি ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন কোম্পানি, যারা সফটওয়্যার সিস্টেমের নকশা করে, যাতে তথ্য উদঘাটন করা যায় পুরো বিশ্বের ওয়েব থেকে৷ এজন্য তারা ছবি, গিফ এবং ভিডিও ব্যবহার করে৷ এর মূল্যমান ১২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০০৮ সালে সানফ্রান্সিস্কোতে এটির প্রতিষ্ঠা হয়৷
ছবি: Pinterest
10 ছবি1 | 10
ভারত তিন নম্বরে
ইউরোপ এবং আমেরিকায় স্টার্ট আপের রমরমা শুরু হয়েছিল একুশ শতকের গোড়ার দিকেই৷ ‘অরকুট' ‘ফেসবুক'এর মতো বহু সংস্থাই কাজ শুরু করেছিল স্টার্ট আপ হিসেবে৷ ‘ফেসবুক'পরবর্তী ভারতেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ডিজিটাল স্টার্ট আপ তৈরির উৎসাহ এখন চোখে পড়ার মতো৷ হিসেব বলছে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ডিজিটাল স্টার্ট আপ তৈরির নিরিখে ভারতের স্থান ৩ নম্বরে৷ অ্যামেরিকা এবং ব্রিটেনের পরেই৷ এই মুহূর্তে দেশের নথিভুক্ত টেক স্টার্ট আপের সংখ্যা ৪,৭৫০৷
আমুল-আম্বানি
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেন, ভারতে স্টার্ট আপ ভাবনা আগে থেকেই ছিল৷ যদিও ‘স্টার্ট আপ' শব্দটির অস্তিত্ব ছিল না তখন৷ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কো-অপারেটিভ মুভমেন্টকে অনেকেই স্টার্ট আপের পূর্বসুরী বলে মনে করেন৷ ‘আমুল' যেভাবে শুরু হয়েছিল, অনেকেই তাকে স্টার্ট আপ বলতে চাইছেন ইদানীংকালে৷ বস্তুত, মধ্য প্রাচ্য থেকে ফিরে এসে অতি সামান্য অর্থ নিয়ে ধীরুভাই আম্বানি যেভাবে রিল্যায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাকেও একপ্রকার স্টার্ট আপই বলা যায়৷ তবে ডিজিটাল স্টার্ট আপ শুরু হয়েছে ফেসবুক পরবর্তী সময়েই৷ ‘ওলা', ‘ফ্লিপ কার্ট', ‘বিগ বাস্কেট'কে যার পথিকৃৎ বলা চলে৷
স্টার্ট আপ ইন্ডাস্ট্রি
বর্তমান ভারতে স্টার্ট আপ একটি ইন্ডাস্ট্রি৷ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিও স্টার্ট আপে আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছে৷ সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবও খানিক সেরকমই৷ ২০১৫ সালে সারা ভারতে স্টার্ট আপে বিনিয়োগ হয়েছিল ৪ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১৭ সালে অঙ্কটি এক লাফে গিয়ে পৌঁছেছে ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ান ডলারে৷তবে সংখ্যাতত্ত্ব বলছে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে অনেক বেশি স্টার্ট আপ কোম্পানি ফান্ড পেয়েছিল৷ ২০১৬ সালে পেয়েছিল ১,০৩৪টি কোম্পানি৷ ২০১৫ সালে পেয়েছিল ৯১৩টি কোম্পানি৷ ২০১৭ সালে সেই সংখ্যাটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮২০৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন স্টার্ট আপের চেয়ে প্রতিষ্ঠিত স্টার্ট আপগুলিতেই বিনিয়োগকারীরা টাকা ঢেলেছেন বেশি৷ তাঁরা বলছেন, মোট বিনিয়োগের ৭০ শতাংশ গেছে মাত্র ১০টি কোম্পানির কাছে৷
ফ্লিপ কার্ট, ওলা কিংবা পেটিএমের মতো কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগকারীরা আরও টাকা ঢালতে আগ্রহী৷ যদিও তাঁদের মতে, এই কোম্পানিগুলিকে আর স্টার্ট আপ বলা যায় না৷ কারণ বিপুল পরিমাণ ব্যবসার মুখ ইতিমধ্যেই কোম্পানিগুলি দেখে ফেলেছে৷
তবে একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ভারতে ডিজিটাল স্টার্ট আপের সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়বে৷ কারণ, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি স্টার্ট আপ তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছে৷ দু'টি বিষয় সরকারের কাছে স্পষ্ট৷ আগামী কয়েকবছরের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার একটা বড় শতাংশ হবে তরুণ প্রজন্ম৷ বিশ থেকে ত্রিশের কোঠায় যাঁদের বয়স৷ তাঁদের জন্য কর্মসংস্থান করতে হলে নতুন নতুন কোম্পানি দরকার৷ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কেবলমাত্র বড় কারখানা এবং শিল্পেই গুরুত্ব দিয়েছিল তৎকালীন সরকার৷ কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে বর্তমান সরকার বুঝে গেছে যে, স্টার্ট আপই ভবিষ্যৎ৷ শুধু তাই নয়, দেশে আইটি প্রফেশনালের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ তাঁদের যদি দেশে রাখতে হয়, তাহলে স্টার্ট আপ তৈরির পরিবেশ তৈরি করতে হবে দেশ জুড়ে৷ গড়ে দিতে হবে কাজের পরিসর৷
ডিজিটাল বিশ্ব
আরও একটি বিষয় সরকার বুঝে গেছে৷ বিশ্ব এখন ‘ডিজিটালাইজড'৷ পরিষেবা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে দ্রুত ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন৷ ছোট ছোট স্টার্ট আপ সহজেই এই ডিজিলাইজেশনের কাজ করতে পারে৷ সুতরাং, পরিষেবা ক্ষেত্রে ডিজিটাল স্টার্ট আপকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷
কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই স্টার্ট আপ তৈরির জন্য তরুণ এবং যুবকদের উদ্দীপিত করছে৷ কর ছাড়ের সুবিধাসহ আরও বেশ কিছু সুযোগের কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ যদিও স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলির বক্তব্য করের ক্ষেত্রে আরও কিছু সুবিধা পেলে স্টার্ট আপের সংখ্যা বাড়বে৷
এবং পশ্চিমবঙ্গ
পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও৷ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, রাজ্য সরকার স্টার্ট আপ তৈরির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ সম্প্রতি স্টার্ট আপের জন্য একটি বড় ফান্ডও তৈরি করা হয়েছে৷ নতুন নতুন কোম্পানি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এই ফান্ডের জন্য দরখাস্ত করতে পারে৷
ব্রিটেনের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ রায় ভারতের স্টার্ট আপ নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেছেন৷ তাঁর মতে, দেশের মানসিকতার মধ্যেই এখন ডিজিটাল হাওয়া৷ বিষয়টিকে তিনি দু'দিক থেকে দেখতে চাইছেন৷ ছোট ছোট এলাকাতেও যুবকেরা ছোট ছোট ব্যবসা তৈরির পরিকল্পনা করছেন৷ এই চেষ্টা আগেও ছিল৷ কিন্তু এখন আর সাধারণ একটি ট্র্যাভেল এজেন্সি খুলে খরিদ্দারের অপেক্ষায় কেউ বসে থাকছেন না৷ বাড়িতে বসে ট্র্যাভেল এজেন্সি খুলে কোনও ডিজিটাল স্টার্ট আপকে সেই এজেন্সির ডিজিটাল পোর্টাল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাতে বাড়িতে বসেই অনেক বড় পরিসরে ব্যবসা চালানো যায়৷ ইন্দ্রজিত রায়ের মতে, এর ফলে দু'দিক থেকে স্টার্ট আপের রমরমা বাড়ছে৷ ডিজিটাল স্টার্ট আপ নিয়ে কথা বলতে হলে তাই অন্যান্য ক্ষেত্রের স্টার্ট আপগুলিকেও মাথায় রাখতে হবে৷ তাঁর বিশ্বাস, এভাবে চললে আগামী ১০ বছরের মধ্যে স্টার্ট আপ ইন্ডাস্ট্রিতে ভারত বিশ্বের দরবারে আরও বড় জায়গা করে নেবে৷ তিনি মনে করেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি ইতিমধ্যেই স্টার্ট আপ তৈরির জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ প্রয়োজন সরকারের সেই সুযোগ সুবিধাগুলি সকলের কাছে পৌঁছানো৷ অনেকেই সেই বিষয়ে এখনও অবগত নন৷
ওলার কর্ণধার অঙ্কিত বলেছিলেন চ্যালেঞ্জের কথা৷ চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বলে আম্বানির সংস্থা এখন পৃথিবীর অন্যতম ধনী প্রতিষ্ঠান৷ ভারতকে স্টার্ট আপ ব্যবসায় ৩ থেকে ১-এ নিয়ে যাওয়াই কি হবে নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ?
সেবিট মেলায় জাপানের চমক
‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ বলে পরিচিত জাপান হানোফার শহরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্য-প্রযুক্তি মেলা সেবিট-এ সহযোগী দেশ৷ ‘সোসাইটি ৫.০’ বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রায় ১২০টি কোম্পানি জীবনযাত্রার উপর ডিজিটাল প্রভাবের কিছু নমুনা তুলে ধরেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
রোবট ও কঙ্কাল
‘এক্সোস্কেলিটন’ বা কঙ্কালসার রোবট কারখানার কর্মীদের ভারি জিনিসপত্র বহন করতে সাহায্য করে৷ পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষকে চলাফেরায়ও সহায়তা করতে পারে তারা৷ এর প্রস্তুতকারক নেডো নামের জাপানি কোম্পানির কর্মীরা মেলায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র জন্য অপেক্ষা করছেন৷
ছবি: DW/A. Becker
আগন্তুক, পরিচিত না বন্ধু?
এ বছরের সেবিট মেলায় অনেক রোবট তাদের কেরামতি দেখাচ্ছে৷ জাপানের ইঞ্জিনিয়াররা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করে রোবটদের আচরণ যতটা সম্ভব মানুষের মতো করে তোলার চেষ্টা করছেন৷ সেই রোবট মুখ দেখে মানুষ চিনতে পারে, ‘বন্ধু’-দের আলাদা করে খাতির-যত্ন করে৷ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জাপানে রোবটরা আরও বেশি করে বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনা ও হোটেলে পরিষেবার কাজ করছে৷
ছবি: DW/A. Becker
রূপে-গুণে লক্ষ্মী
এই রোবট ‘চিয়ারলিডার’-রা শুধু দেখতেই মিষ্টি নয় – কাজেকর্মে তারা কম যায় না৷ নানা রকম সেন্সর ও মোটর ভরা এই যন্ত্রদের যা শেখানো হয়, তা নির্ভুলভাবে করে দেখায় তারা৷ শিল্পক্ষেত্রে রোবটের প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাপান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ প্রতি ১০,০০০ কর্মীর অনুপাতে ২১১ টি করে রোবট সেখানে কাজ করে৷ শীর্ষ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, তৃতীয় স্থানে জার্মানি৷
ছবি: DW/A. Becker
অ্যাপ-সর্বস্ব জীবনযাত্রা
জাপানে সন্তানসম্ভবা মায়েদের এক তৃতীয়াংশই ‘নিম্পু টেকু’ নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করেন৷ অন্তত তার নির্মাতা হাকুহোডো কোম্পানি এমনটাই দাবি করে৷ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য, ডাক্তারদের কাছে প্রশ্ন, চেকআপ-এর সময় স্থির করা – এই সব কাজ একটি অ্যাপের মাধ্যমেই করা যায়৷ ১৯৪২ সাল থেকে জাপানে যে ‘মাদার্স পাসপোর্ট’ চালু আছে, এই অ্যাপ তারই উত্তরসূরি৷ সন্তান মানুষ করার কাজে সাহায্য করতেও আলাদা অ্যাপ রয়েছে৷
ছবি: DW/A. Becker
উড়ন্ত সঙ্গী বেশি দূরে নেই!
শক্তিশালী হাত ও মোটরের কল্যাণে ‘প্রোড্রোন’ নামের উড়ন্ত যন্ত্র বেশ ভারি জিনিসপত্র বহন করতে পারে৷ এমনকি আপনাকেও তুলে নিয়ে উড়ে যেতে পারে৷ এর আরেকটি সংস্করণের আবার চাকাও আছে৷ ফলে সেটি দেওয়াল বা সিলিং-এর উপর চলে বেড়াতে পারে, ফাটল শনাক্ত করতে পারে৷ মূল্য প্রায় ৫০,০০০ ইউরো৷ তবে ধীরে ধীরে এমন ড্রোনের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Becker
কাগজপত্র নিয়ে মাথাব্যথা
ব্যবসা বা অফিসের কাজে বাইরে গেলে খরচের দিকে নজর রাখতে হয়৷ সেই কাজে সাহায্য করতে এসে গেছে অ্যাপ৷ এক্ষেত্রে জাপানের অন্যতম প্রধান কোম্পানি এআইওয়ার্কস এমন এক অ্যাপ তৈরি করেছে, যা দিয়ে বিলের ছবি তুললেই চলবে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার বাকি কাজ করে দেবে৷ কোম্পানির মতে, জাপানের অফিস কর্মীরা গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ সময় ডেটা এন্ট্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷ এবার সেটা বদলাতে চলেছে৷
ছবি: DW/A. Becker
নিজের বাস্তব পছন্দ নয়? অন্য একটি বেছে নিন!
অদূর ভবিষ্যতে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের ব্যস্ততা ও সমস্যা ভরা জীবনযাত্রা থেকে রেহাই পেতে ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’ পরিবেশে ডুব দেবেন বলে পূর্বাভাষ শোনা যাচ্ছে৷ সেরেভো-র মতো কোম্পানি শরীরের বিভিন্ন অংশে পরার জন্য ভি-আর টুল তৈরি করছে৷ যেমন এই বিশেষ জুতো ব্যবহারকারীর পায়ের নীচে সিমেন্ট, ঘাস বা বরফের উপর চলার অনুভূতি সৃষ্টি করে৷ এর পরের ধাপে সারা শরীরের জন্য ভি-আর স্যুট তৈরির পরিকল্পনা চলছে৷
ছবি: DW/A. Becker
চারিদিকে সারাদিন কারাওকি!
‘লিরিক স্পিকার’ আসলে এক সাধারণ লাউডস্পিকার – শুধু একটি পর্দা ও বিশেষ সফটওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত, যা কোনো গান চালালেই শনাক্ত করতে পারে৷ তারপর তালে তালে গানের কথা পর্দায় ফুটে ওঠে৷ অতএব আলাদা করে কারাওকি বার-এ যাবার দরকার নেই৷ যখন খুশি, যেখানে খুশি পছন্দের গান সঠিকভাবে গাইতে পারেন৷