ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যুৎ এখন বিলাসিতা
৭ এপ্রিল ২০২২
ইউক্রেনে রুশ হামলার ফলে ডিজেলের দাম বেড়েই চলছে৷ এদিকে কার্যকর কোনো পাওয়ার গ্রিড না থাকায় জেনারেটর ছাড়া উপায় নেই৷ জেনারেটর চালু রাখতে সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো ডিজেল৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির কি সেই খরচ বহনে সক্ষম?
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বাগদাদে ভোজ্য তেলের দাম দ্বিগুণহয়ে গিয়েছে৷ ইরাকের মানুষজন পথে নেমে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও শুরু করেছেন৷ ইউক্রেনে রুশ হামলার ফলে এক লাফে খাবার জিনিসপত্রেরও দাম বেড়েছে৷ কিন্তু ডিজেলের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদেরা৷ জলের পাম্প থেকে এসি এবং ফ্রিজ–সবকিছু চালাতে জেনারেটর ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু সরকারচালিত গ্রিডগুলি কাজ না করলে জেনারেটর চালাতে ডিজেলের প্রয়োজন হয়৷ তবে যে হারে ডিজেলের দাম বাড়ছে, এর ফলে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন সাধারণ মানুষ৷
বাগদাদের সাংবাদিক খলউদ রামেজি বলেন ‘‘ডিজেলের দাম বেড়েই চলেছে৷ গরমকালে সমস্যা আরো বাড়বে৷ এক অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুতের জন্য গত মার্চে দিয়েছিলাম ৮৬০ টাকা৷ এই মার্চে দিতে হল প্রায় ১৪০০ টাকা৷ গরমকালে এই বিল আরো বাড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷''
বেইরুটের স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াসিম-আল-শাব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রুটি না কিনলেও চলবে৷ অন্য কিছু খেয়ে নেব৷ যে রকম গরম, যে পরিমাণে দূষণ রয়েছে এখানে, গরমকালটা কেমন করে সহ্য করব জানি না৷ ডিজেলের দাম বেড়েই চলেছে৷ ''
যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধিতে বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে বিভিন্ন দেশে খাবারের দাম বেড়ে গেছে৷ ফলে গরিবরা তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও বিপদে পড়েছেন৷ এই অবস্থায় নাগরিকদের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসেছে কিছু দেশ৷
ছবি: REUTERS
অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক রাশিয়া, ইউক্রেন
বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৫ শতাংশ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন৷ সূর্যমুখী তেল রপ্তানিতেও শীর্ষ দেশ ইউক্রেন৷ এছাড়া বার্লি ও ভুট্টা রপ্তানিতে বিশ্ব বাণিজ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইউক্রেন৷ এদিকে রাশিয়ার গ্যাস, তেল ও সারের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল ইউরোপ৷
ছবি: Olena Mykhaylova/Zoonar/picture alliance
ক্ষুধা পরিস্থিতিতে ‘বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা
জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডাব্লিউএফপির মোট খাদ্য সহায়তার প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ইউক্রেন থেকে৷ যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে শস্য চাষে প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ায় বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পরিস্থিতিতে ‘বিপর্যয়’ নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি৷ যুদ্ধ শুরুর আগে ৩৮টি দেশের প্রায় চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়ার আশঙ্কায় ছিল বলে জানিয়েছিল ডাব্লিউএফপি৷
ছবি: Valentin Sprinchak/dpa/TASS/picture alliance
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়তে ইইউ সদস্য দেশগুলোর কৃষকদের চার হাজার ৭২৫ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ ইইউর কৃষকরা রাশিয়ার সারের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল৷ যুদ্ধের আগেই সারের দাম বেড়ে গিয়েছিল৷ এছাড়া শূকর শিল্পসহ কৃষি ও মৎস খাতেও সহায়তার প্রস্তাব করেছে ইইউ৷ আরো বেশি জমিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ফসল চাষেরও অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Jelena Djukic Pejic/DW
জার্মানি
৯০ দিনের জন্য বেশ কিছু ভর্তুকি ও ছাড়ের ঘোষণা করা হয়েছে৷ যেমন পেট্রোলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ৩০ সেন্ট এবং ডিজেলের ক্ষেত্রে লিটার-প্রতি ১৪ সেন্ট কম গুনতে হবে৷ সেই সঙ্গে তিন মাস ধরে মাসে মাত্র নয় ইউরো মূল্যে বাস-ট্রাম ব্যবহার করা যাবে৷ এছাড়া আয়করদাতারা এককালীন ৩০০ ইউরো পর্যন্ত হাতে পাবেন৷ সন্তানপ্রতি ১০০ ইউরো বাড়তি ভাতাও দেওয়া হবে৷ স্বল্প আয়ের পরিবারগুলির জন্যও ভর্তুকির ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার৷
ছবি: Sabine Kinkartz/DW
ফ্রান্স
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের বাড়তি মূল্যের ক্ষতি পোষাতে গরিবদের বিশেষ চেক দেয়ার কথা ভাবছেন তিনি৷
ছবি: John Thys/AFP/Getty Images
মিশর
মিশরে কয়েক দশক ধরে ভর্তুকি মূল্যে রুটি বিক্রি হচ্ছে৷ ফুড কার্ড থাকা ব্যক্তিরা এই দামে রুটি কিনতে পারেন৷ মোট জনসংখ্যার (প্রায় দশ কোটি ২০ লাখ) প্রায় ৬০ ভাগ এই সুযোগ নিয়ে থাকে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রুটির দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভর্তুকি ছাড়া যে রুটি বিক্রি হয় তার দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ এছাড়া মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হারও বাড়িয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture alliance/dpa
বাংলাদেশ
গত রোববার থেকে এক কোটি পরিবারের জন্য কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে৷ একটি পরিবারকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত দুইবার করে দুই লিটার সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল দুই কেজি এবং পেঁয়াজ সর্বনিম্ন দুই কেজি কেনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ তাদের কাছে সয়াবিন তেল ১১০ টাকা লিটার, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে৷ উপরের ছবিটি নারায়ণগঞ্জ থেকে তোলা৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
কিউবা
রুটি থেকে শুরু করে টুথপেস্ট - অনেক কিছু কম দামে কেনার জন্যই কিউবানদের লাইনে দাঁড়াতে হয়৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এবার কিউবানদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে জ্বালানি তেল কিনতে দেখা গেছে৷ উপরের ছবিটি সোমবার তোলা৷
ছবি: REUTERS
যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটন পোস্টের সোমবারের এক প্রতিবেদন বলছে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় ফুড ব্যাংকগুলোতে মার্কিনিদের ভিড় বাড়ছে৷ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটে সহায়তা হিসেবে ২.৬৫ বিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে সেই পরিমাণ আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা৷
ছবি: Tayfun Coskun/AA/picture alliance
9 ছবি1 | 9
সহায়তা জরুরি
ইরাক এবং লেবাননের মতো দেশে বিদ্যুতের দামের সঙ্গে ডিজেলের দামের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে৷ মানুষের বাসাবাড়িতে যে জেনারেটর আছে তার জন্য নির্ভর করতে হয় ডিজেলের উপর৷ কিন্তু জ্বালানি বন্ধ হলে সাধারণ সময়েও বিদ্যুৎ পরিষেবায় ঘাটতি দেখা যায়৷
সরকারচালিত পাওয়ার গ্রিডগুলির ক্ষমতা সীমিত হওয়ার কারণে স্থানীয়রা অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ দিনে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে৷ তাই বেসরকারি সংস্থার থেকে ডিজেলচালিত জেনারেটর নিতে হয়৷ হাসপাতাল বা আবাসনের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য৷ তাই ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই ইরাক, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেনে বিদ্যুতের দাম বেড়ে চলেছে ক্রমশ৷ এদিকে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কিত সাধারণ মানুষজন৷ ডিজেলের দামের সঙ্গে মানুষের মরা-বাঁচা নির্ভর করছে বলেই মনে করছেন তারা৷ নতুন করে এই ভূখণ্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কাও করছেন অনেকে৷
বিশ্ববাজারে কী অবস্থা?
রুশ হামলার আগে থেকেই ডিজেলের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী৷ কোভিড লকডাউন শেষ হওয়ার পর সরবরাহ সংক্রান্ত জটিলতা এবং (উৎপাদন এবং বহন) পরবর্তীতে বিপুল চাহিদার কারণে ডিজেলের দাম বেড়ে যায়৷ শক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রাবন্ধিক জাভিয়ের ব্লাসের মতে, ‘‘ইউক্রেন সংকট পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে৷''
মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আনাস আবদুন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ইরাক ডিজেল উৎপাদন করে কিন্তু তাতে স্থানীয় মানুষের চাহিদাপূরণ সম্ভব নয়৷ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্থানীয় সংশোধনাগারগুলি ঠিকমতো কাজ করে না৷সরকার কোনো কোনো দেশে ভর্তুকি চালু করলেও বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে এতে কোনোরকম লাভ হয় না৷''
লেবাননের সংকট
বাগদাদের সাংবাদিক রামেজির কথায়, ‘‘সরকার দৈনিক দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে৷ কিন্তু গরমকালে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে৷ জলের পাম্প আর এসির চাহিদা বাড়বে৷ সরকারচালিত পরিষেবার পক্ষে বিদ্যুতের বিপুল বোঝা টানা সম্ভব নয়৷ গরমকালে ধনী ব্যক্তিরা বিদ্যুতের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে পারবেন, গরিবেরা পারবেন না৷''
ইরাকের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু আলাদা৷ কতক্ষণ বিদ্যুৎ চান সেই বুঝে বেসরকারি জেনারেটর সংস্থাকে টাকা দেন সাধারণ মানুষ৷ ২৪ ঘণ্টার জন্য ১০ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুতের টাকা দিতে পারলে সারাদিন বাড়িতে এসি চালানো সম্ভব হয়৷
‘‘নিম্ন আয়ের পরিবারগুলির পক্ষে বিদ্যুতের এত খরচ বহন করা সম্ভব নয়৷ তারা খুব বেশি হলে সারা দিনে তিন অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুতের টাকা দিতে পারে৷ এর ফলে তারা দিনের বেলা ফ্যান চালাতে পারে অথবা রাতে ঘুমানোর সময়টুকুর জন্য সচল বিদ্যুৎ পরিষেবা পেতে পারে৷''–ডয়চে ভেলেকে স্পষ্ট জানান রামেজি৷
হেইনরিখ বওল ফাউন্ডেশনের তরফে অ্যানা ফ্লেইশার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, লেবাননের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ পরিষেবার প্রায় পুরোটাই বেসরকারি সংস্থার উপর নির্ভরশীল৷ অর্থাৎ বিদ্যুতের বেশিরভাগটাই জেনারেটর থেকে আসে৷ ডিজেলের সঙ্গে বিদ্যুতের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন তিনিও৷ তার কথায়, ‘‘ডিজেলের দাম যত বাড়বে৷ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে৷তারা আর জেনারেটর ব্যবহার করতে পারবেন না৷ হাসপাতালে ভর্তি রোগীরাও তো গরমে থাকতে পারবেন না৷''
ফের বাড়ল তেলের দাম, মধ্যবিত্তের মাথায় হাত
ভারত গত ছয়দিনে পাঁচবার বাড়ল পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দাম। বাড়ছে অন্য জিনিসের দামও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পেট্রোল ফের ১০০
মাসকয়েক আগে পেট্রোলের দাম একশ পার করার পর দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সোমবার ফের তা একশ ছুঁয়েছে। ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৯০ টাকায় পৌঁছে গেছে। রান্নার গ্যাস পেরিয়েছে এক হাজার টাকা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছয়দিনে পাঁচবার
গত ছয়দিনে এই নিয়ে পাঁচবার দাম বাড়ল তেলের। প্রথম চারবার দাম বেড়েছে ৮০ পয়সা করে। সোমবার বেড়েছে যথাক্রমে ৫০ এবং ৫৫ পয়সা। ফলে সব মিলিয়ে গত ছয়দিনে পেট্রোলের দাম বেড়েছে তিন টাকা ৭০ পয়সা। ডিজেলের দাম বেড়েছে তিন টাকা ৭৫ পয়সা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ভোট পরবর্তী বৃদ্ধি
গত দুই মাস ধরে পাঁচ রাজ্যে ভোট হয়েছে। সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও সরকার দেশে তেল কোম্পানিগুলিকে দাম বাড়াতে দেয়নি। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই ফের বাড়তে শুরু করেছে দাম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আন্তর্জাতিক বাজার
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। এখন ব্যারেল প্রতি তেলের দাম হয়েছে ১১৭ ডলার। কিছুদিন আগেও যা ৮০ ডলারের ঘরে ছিল। ভারতে অবশ্য করোনাকালেও তেলের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তখন তেলের দাম কমলেও ভারতের প্রশাসন ট্যাক্স বসিয়ে তেলের দাম বাড়িয়েছিল।
গাড়ি এবং বাস চালকদের অভিযোগ, তেলের দাম বাড়তে থাকলেও তাদের ভাড়া বাড়ছে না। সরকার তাদের ভাড়া বাড়াতে দিচ্ছে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উবারের নোটিস
দেশের বিভিন্ন শহরে রীতিমতো হোর্ডিং দিয়ে উবার চালকরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা গাড়িতে এসি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র চালাবেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাড়ছে ই-স্কুটার
তেলের দাম বাড়ার কারণে গত কয়েক মাসে ই-স্কুটার কেনার প্রবণতা বেড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
চলছে না বাস
কলকাতায় বিভিন্ন রুটের বেসরকারি বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মালিকদের বক্তব্য, টিকিট বেচে তেলের দাম তুলতে পারছেন না তারা। ভাড়া না বাড়লে বাস চালানো তাদের পক্ষে অসম্ভব।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাইকেলই ভরসা
দিল্লি-কলকাতার মতো বিভিন্ন শহরে ফের সাইকেলের বিক্রি বেড়েছে। এর আগে করোনার সময়েও সাইকেলের বিক্রি বেড়েছিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
বেইরুটের স্থানীয় বাসিন্দা সিরিন খৈয়াত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটা সময় গরমকালে কত বয়স্ক মানুষ কষ্ট পেয়েছেন বলে শুনেছি৷ ডিজেলের খরচ দিতে না পারায় তাদের অক্সিজেন মেশিনটা পর্যন্ত কাজ করত না৷ এমন পরিস্থিতি দেখতে চাই না৷'' ডিজেলের খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে গোটা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে৷ সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
গরমকালে গত কয়েক বছর ধরে এই কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে ইরাকে ৷ বিদ্যুৎ পরিষেবা না থাকায় একাধিক কাজ ব্যাহত হয়েছে ৷ ক্ষোভের ফলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন সাধারণ মানুষ৷ গত বছর বাসরা প্রদেশে তাপমাত্রার পারদ ৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল৷ ২০১৫ সাল থেকেই গরমকালে বিক্ষোভ বাড়ছে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে৷ ২০১৮ সালে শুধুমাত্র এই কারণে একাধিক সহিংসতার ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ইরাক৷
বাগদাদের সাংবাদিক রামেজির বক্তব্য,‘‘মারাত্মক গরম সহ্য করতে না পারলে মানুষ কী করবে?'' অথচ বাসরা প্রদেশই ইরাকের তিন চতুর্থাংশ তেল সরবরাহ করে৷
লেবাননের স্থানীয় বাসিন্দা আল শাব বলেন, ‘‘খাবার কম খেয়ে ডিজেলের জন্য, ফ্রিজের জন্য খরচ বাঁচিয়ে রেখেছিলাম গত বছরে৷ কিন্তু দাম যে হারে বেড়ে চলেছে, ফ্রিজ যদি চালু না থাকে, খাবার এমনিতেও পচে যাবে৷''
ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা৷ জ্বালানি, বিদ্যুতের ঘাটতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ রূপ নিয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে৷ জনতার ক্ষোভে জ্বলছে রাজধানী কলম্বো৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
জ্বলছে কলম্বো
বাজারে চড়া দ্রব্যমূল্য, জ্বালানি সংকট, ১৩ ঘণ্টার লোডশেডিং; শ্রীলঙ্কার মানুষ নিত্যদিন এখন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি৷ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷ গত মাস থেকেই শুরু করেছেন বিক্ষোভ৷ ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে রাজধানী কলম্বো৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
উচ্চমূল্য
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্য ২৫ শতাংশ বেড়েছে দেশটিতে৷ বাজারে দেখা দিয়েছে খাদ্যপণ্যের অভাব, নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দাম৷ মার্চে মূল্যস্ফীতি ১৯ শতাংশে ঠেকেছে৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
কারফিউ
বিরোধী দলের ডাকে সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে কারফিউ জারি করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে৷ রাস্তায় নামে সেনা সদস্যরা৷ রাজাপাকসের বাসভবনের সামনে সশস্ত্র প্রহরায় সেনা সদস্যদের দেখা যায়৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
সরকারবিরোধী আন্দোলন
সরকারবিরোধী আন্দোলনের জেরে এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন ২৬ জন মন্ত্রী৷ তবে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্র রাজাপাকসে ইস্তফা দেননি৷ জরুরি অবস্থার মধ্যেও বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন প্রতিবাদকারীরা৷ রোববার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের ছবি এটি৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
তলানিতে রিজার্ভ
কমতে কমতে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩০ কোটি ডলারে ঠেকেছে৷ ঋণ পরিশোধ, আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি৷ যার কারণে দেখা দিয়েছে জ্বালানি সংকট৷ ভেঙে পড়েছে পরিবহণ ব্যবস্থা৷ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায় দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ ঘাটতি৷ ক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় পুড়িয়ে দিয়েছেন যানবাহন৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
প্রেসিডেন্টের উপর ক্ষোভ
এই পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের দিকে অভিযোগের তীর বিরোধী দল ও আন্দোলনকারীদের৷ রাজাপাকসে ও তার স্বজনদের অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা৷ ‘গোটা গো হোম’ বা ‘গোটা বাড়ি ফিরে যাও’ এমন স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজপথ৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
সহিংসতা
বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার৷ রাজপথ ছাড়ছে না জনতাও৷ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে আহত হচ্ছে দুই পক্ষই৷ ছবিতে আহত এক পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন সহকর্মীরা৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
আন্দোলনে পোষাপ্রাণী
এক ব্যক্তি তার পোষা কুকুরকেও নিয়ে এসেছেন আন্দোলনে৷ গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে ‘বাহা মেন’ ব্যান্ডের গানের শিরোনাম ‘হু লেট দ্য ডগস আউট’ লেখা প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: Dinuka Liyanawatte/REUTERS
সরকার কী করছে
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ঋণের উৎস খুঁজছে শ্রীলঙ্কার সরকার৷ জরুরি পণ্য আমদানির জন্য গত মাসে ভারতের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে দেশটি৷ আরো ১০০ কোটি ডলারের জন্য প্রতিবেশী দেশটিকে অনুরোধ করেছে তারা৷ ২৫০ কোটি ডলার ঋণ পেতে আলাপ চলছে চীনের সঙ্গে৷ তবে পরিস্থিতি সামলাতে এই টাকাও যথেষ্ট নয়৷ তাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছে উদ্ধার তহবিলের জন্য হাত পেতেছে এখন সরকার৷