ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ইরানের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাদেঘ জিবাকালামকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ ইরান সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর সাহসী সমালোচনার জন্য জার্মান প্রচারমাধ্যম ডিডাব্লিউ তাঁকে এই অ্যাওয়ার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জিবাকালাম বলেন, ‘‘আমার মনে হয় আমার অপরাধ হচ্ছে, ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আমি একটি রাজনৈতিক মতামত রেখেছিলাম, যেটা সরকারের মতের বিরুদ্ধে ছিল৷''
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জিবাকালামকে এ বছরের ১৩ই এপ্রিল ১৮ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়৷ তারপর তিনি সর্বোচ্চ বিচারক সাদেঘ লারিজানিকে লিখিত একটি পত্রে অভিযোগ করেছেন যে, আদালত আসামি পক্ষের সব যুক্তি উপেক্ষা করেছেন এবং শুধুমাত্র ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে৷
জিবাকালাম ডয়চে ভেলের ফার্সি বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানে সাম্প্রতিক দেশব্যাপী বিক্ষোভ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার জন্যই তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়৷
তিনি তাঁর পত্রের শেষে মন্তব্য করেছেন, ‘‘নিষ্ঠুর সত্য হলো এই যে, ভিন্নমত পোষণ করাটা একটি দণ্ডনীয় রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়৷''
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন জিবাকালাম৷
কে এই জিবাকালাম?
সাদেঘ জিবাকালাম ১৯৪৮ সালে তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁকে ইরানের বিশিষ্টতম বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে গণ্য করা হয়৷
সংস্কার সমর্থক ও নিওলিবারাল মনোবৃত্তির চিন্তাবিদ জিবাকালাম গোঁড়া সরকারপন্থিদের সঙ্গে প্রায়ই বিতর্কে লিপ্ত হয়ে থাকেন৷ অতীতে তিনি অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতির বিভিন্ন প্রশ্নে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন, যেমন ইরানের আণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে৷
ফার্সি ভাষায় লিখিত তাঁর একাধিক বই ইরানে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যেমন ‘‘আমরা কীভাবে এমন হলাম'', ‘‘অকৃত্রিম হাশেমি'', ‘‘ঐতিহ্য ও আধুনিকতা'' কিংবা ‘‘ইসলামি বিপ্লবের উপক্রমণিকা''৷
শাহের আমলে কারাবন্দি
জিবাকালাম ইংল্যান্ডের হাডার্সফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন৷ তারপর তিনি ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐ একই বিষয় নিয়ে ডক্টরেটের পড়াশুনা শুরু করলেও, শেষমেষ তা সমাপ্ত করতে পারেননি৷ কারণ ১৯৭৪ সালে তিনি যখন দেশে গিয়েছিলেন তখন তাঁকে গ্রেপ্তার ও তিন বছরের জন্য কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
শাহের গোয়েন্দা পুলিশ জিবাকালামকে গ্রেপ্তার করে৷ পাহলভি প্রশাসনের তরফ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ‘‘রাষ্ট্রবিরোধী অন্তর্ঘাত'' ও ‘‘অপপ্রচারের'' অভিযোগ আনা হয়৷
ইসলামি বিপ্লবের পর জিবাকালাম ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করেন ও ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি কেন্দ্র থেকে স্নাতকোত্তর এবং ডক্টর উপাধি লাভ করেন৷
১৯৯০ সালে তেহরানে ফিরে, তার ঠিক দু'বছর পরে তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন৷
সেই থেকে জিবাকালাম নিয়মিতভাবে বিবিসি ও আল জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে ভাষ্যকার হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন ও সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন৷
সংসদীয় নির্বাচনে প্রার্থী
২০০০ সালে সাদেঘ জিবাকালাম উত্তর-পশ্চিম ইরানের জনিয়ান শহর থেকে সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু ইরানের প্রহরী পরিষদ তাঁর অংশগ্রহণকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে৷
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আটটি ছবি
তেসরা মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস৷ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বহু সাংবাদিক সংগ্রাম করেছেন৷ তাদেরই কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র৷
ছবি: Bild: BR/Wiedemann & Berg Film
রেজর’স এজ
২০১৬ সালে নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে ডয়চে ভেলের বব্স পুরস্কারে ভূষিত হয় এই তথ্যচিত্র৷ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ও লেখকরা বিশেষভাবে বিপন্ন: ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের আক্রমণে শুধুমাত্র গত পাঁচ সপ্তাহে এদের চারজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ ‘ক্ষুরধার’ ছবিটি সেই পরিস্থিতির দিকে নজর দিচ্ছে৷
ছবি: Nastiker Dharmakatha
ফ্রেম বাই ফ্রেম
‘এক একটি ছবি’ শীর্ষক দিয়ে চারজন তরুণ আফগান ফটো জার্নালিস্ট বা সংবাদধর্মী আলোকচিত্রশিল্পীর কাহিনি বলা হয়েছে৷ ফটোগ্রাফি বহুদিন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকার পর এই সব আফগান ফটোগ্রাফার আবার ছবি দিয়ে কাহিনি সাজাতে শিখছেন৷ কাবুলের মার্কিন দূতাবাসে ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার পর স্থানীয় টিওএলও নিউজ সংস্থার সাতজন সাংবাদিক একটি আত্মঘাতী বোমা আক্রমণে নিহত হন৷
ছবি: Film Fprout
অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন
‘প্রেসিডেন্টের সাঙ্গপাঙ্গ’ নামের ছবিটি ওয়াটারগেট কেলেংকারি নিয়ে৷ ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টাইনের খোঁজখবরের ফলে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস হয় ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন শেষমেষ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ছবিটি তৈরি করেন রবার্ট রেডফোর্ড৷
ছবি: Warner Bros./dapd
গুড নাইট অ্যান্ড গুড লাক
‘‘শুভরাত্রি, তোমার মঙ্গল হোক’’ শীর্ষক সাদা-কালো ছবিটিতে বেতার সাংবাদিকতার গোড়ার দিকের পরিবেশ ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সেনেটর জোসেফ ম্যাককার্থি ১৯৫৩ সালে তাঁর ‘লাল আতঙ্ক’ অভিযানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও সেলিব্রিটি মহলে তথাকথিত কমিউনিস্টদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন৷ সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর. বারোস ম্যাককার্থি আমলের সেই সব কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: Kinowelt
পিপল ভার্সাস ল্যারি ফ্লিন্ট
যাজক জেরি ফলওয়েল প্রাপ্তবয়স্কদের ম্যাগাজিন ‘হাসলার’-এর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে ১৯৯৬ সালের কথাচিত্র ‘সরকার বনাম ল্যারি ফ্লিন্ট’৷ পর্নোগ্রাফির প্রকাশক ল্যারি ফ্লিন্ট বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারের কোপে পড়েন৷
ছবি: dpa
ফর্বিডেন ভয়েসেস
জুরিখের চিত্র পরিচালক বার্বারা মিলার-এর ২০১২ সালে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নিষিদ্ধ কণ্ঠ’ কিউবা, চীন ও ইরানের তিন ব্লগারের জীবন তুলে ধরেছে৷ ইওয়ানি সাঞ্চেজ, জেং জিনিয়াং ও ফর্নাজ সঈফি স্বদেশে স্বৈরাচারী শাসন সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে চান৷ তাদের কাজ এতটা কৌতূহল সৃষ্টি করে যে, তারা নিজের জীবন বিপন্ন করে এই সব কাহিনি দেশের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Das Kollektiv
বার্মা ভিজে
বর্মা, অর্থাৎ মিয়ানমারে ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নামেন৷ সেই নাটকীয় ঘটনাবলী নিয়ে ডেনিশ চিত্রনির্মাতা আন্ডার্স ওস্টারগার্ড-এর ছবি ‘বর্মার ভিডিও জকি’৷ ভিক্ষুদের প্রতিবাদ দেশের সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রূপান্তরিত হওয়ায় বিদেশি সাংবাদিকদের বর্মা থেকে বহিষ্কার করা হয় ও শুধু গোপনে ছবি তোলার পথই বাকি থাকে৷
ছবি: flickr/Steve Rhodes
দ্য স্পিগেল অ্যাফেয়ার
১৯৬২ সালে জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল’ সংবাদ পত্রিকায় পশ্চিম জার্মানির সামরিক বাহিনীর দৈন্যদশা নিয়ে একটি রচনা প্রকাশিত হয়৷ ফলে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্রানৎস ইওসেফ স্ট্রাউস ‘স্পিগেল’ পত্রিকা অফিসে পুলিশি তল্লাসির নির্দেশ দেন৷ কিছু স্পিগেল সম্পাদকদের গ্রেপ্তারও করা হয়৷ জনসাধারণ এই ঘটনাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বলে গণ্য করে৷ ‘স্পিগেল কেলেঙ্কারি’ টিভি ছবিটিতে সেই মুড ধরে রাখা হয়েছে৷