বৃহস্পতিবার ডিডাব্লিউ-র মস্কো অফিস বন্ধ করার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। সংবাদমাধ্যমের সমস্ত রিপোর্টারের অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল করা হয়।
বিজ্ঞাপন
জার্মান পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টার ডিডাব্লিউ-র সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিল রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রশাসন জানিয়ে দেয়, মস্কোয় ডিডাব্লিউ-র অফিস বন্ধ করে দিতে হবে। রাশিয়ায় কর্মরত ডিডাব্লিউ-র সমস্ত সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল করা হয়েছে। যার অর্থ, তাদের আর সরকার সাংবাদিক হিসেবে দেখবে না। সরকারি অনুষ্ঠানে তাদের ডাকা হবে না। সরকার বা প্রশাসন তাদের আর কোনো খবর দেবে না। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন ডিডাব্লিউ-র ডিরেক্টর জেনারেল পিটার লিমবুর্গ। তিনি আইনি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
বৃহস্পতিবার প্রথম এ বিষয়ে ঘোষণা দেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতি দিয়ে তারা জানায়, ''রাশিয়ার ভিতরে ডিডাব্লিউ-র স্যাটেলাইট এবং সমস্ত ব্রডকাস্টিং অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।'' এরপর থেকে ডিডাব্লিউ-কে তাদের ফরেন এজেন্ট হিসেবে দেখা হবে। রাশিয়ার এই 'ফরেন এজেন্ট' আইন নিয়ে বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গত কয়েক বছরে বহু সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীকে এই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন।
সম্প্রতি জার্মানিতে রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম আরটি-র জার্মানভাষার অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিল রাশিয়া। জার্মানি অবশ্য জানিয়েছে, কিছু টেকনিক্যাল কারণে তা বন্ধ করা হয়েছে। তারপরেই রাশিয়ার এই পদক্ষেপ।
ডিডাব্লিউ-র ডিরেক্টর জেনারেল পিটার লিমবুর্গ অবশ্য জানিয়েছেন, আরটি-র সঙ্গে ডিডাব্লিউ-র বিষয়টি গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। আরটি রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম। ডিডাব্লিউ জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার। দ্বিতীয়ত, রাশিয়া যে কাজ করেছে, তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। ডিরেক্টর জেনারেলের বক্তব্য, দপ্তর বন্ধ করে, সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল করে রাশিয়া সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে রাখতে পারবে না। ডিডাব্লিউ আগের চেয়ে আরো বেশি করে রাশিয়ার খবর দেখাবে। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপের কথাও তিনি জানিয়েছেন।