1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডিবি হেফাজতে সমন্বয়কদের কেমন নিরাপত্তা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ জুলাই ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘নিরাপত্তা হেফাজতে' নিয়ে খাওয়ানোর দৃশ্য টেলিভিশনে দেখানোকে ‘জাতির সঙ্গে মশকরা' হিসেবে বর্ণনা করেছে হাইকোর্ট।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলাকালে অনেকেই পুলিশের হাতে আটক হন৷
আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কের অভিযোগ, "ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে৷’’ ফাইল ফটো৷ ছবি: DW

সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক এর সঙ্গে সামরিক শাসনামলের মিল পাচ্ছেন৷

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক অভিযোগ করেছেন, "ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।”  তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ছয়জন সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালাতে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা এক  রিটের শুনানির এক পর্যায়ে সোমবার অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘‘টিভিতে দেখেছি, এই ছয়জন (সমন্বয়ক) কাঁটাচামচ দিয়ে খাচ্ছে।'' তখন আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘‘এগুলো করতে আপনাকে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।” বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ  মঙ্গলবার আবার রিটটি শুনে আদেশ দেবেন।

বন্দুকের নলের সামনে এই বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে: হাসিব জামান

This browser does not support the audio element.

রিটকারী আইনজীবী ও একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঞ্চালক মনজুর-আল -মতিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আন্দোলনকারীদের ওপর যাতে গুলি না ছোঁড়া হয় এবং যে ছয়জন সমন্বয়ক ডিবির কাছে আছেন, তাদের সার্বিক অবস্থা জানতে তাদের যেন আদলতে হাজির করা হয়, আমরা সেই আবেদন করেছি আদালতে।”

তার কথা, "তারা যদি স্বেচ্ছায় ডিবি অফিসে থাকেন, তাহলে আমাদের কোনো কথা নেই। কিন্তু তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিরাপত্তার কথা বলে ডিবি হেফাজতে রাখার আইনে কোনো সুযোগ নাই। তাই আমরা চাই তাদের আদালতে নিয়ে আসা হোক। তারা আদালতের সামনেই বলুক তারা সেখানে কীভাবে আছেন।” "আমরা মনে করি তাদের জোর করে সেখানে রাখা হয়েছে। এবং তাদের জোর করে বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে,” বলেন তিনি।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "আদালত শুনানির এক পর্যায়ে তাদের নিয়ে ডিবির কাজকে জাতিকে নিয়ে মশকারা বলে  মন্তব্য করেছেন।”

সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, "আমার জানা মতে, নিরাপত্তা হেফাজত বলতে কিছু নাই। এখন যদি ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ কোনো আইন আবিস্কার করে থাকে, তাহলে সেটা অন্য কথা। আর কাউকে যদি রিমান্ডেও নেয়া হয়, তাহলে তাকে কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে তা বলে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালে। তাকে পরিবার ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দিতে হবে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। কিন্তু এখানে তো কথিত নিরাপত্তা হেফাজতের নামে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না।”

ডিবি হেফাজতে থাকা নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহার রোববার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ের সামনে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলন। কিন্তু তাকে দেখা করার সুযোগ বা ডিবি কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি।ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP

হেফাজতে রেখে তাদের মাধ্যমে ভিডিও বিবৃতি দেওয়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন," এটা তো সবাই বুঝতে পেরেছে যে, তাদের নির্যাতন করে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে। এটা আমরা সামরিক শাসনের সময় হতে দেখেছি। ওয়ান ইলেভেনের সময় সমরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা রাজনৈতিক নেতাদের ধরে নিয়ে এই ধরনের বিবৃতি দিতে বাধ্য করতো। এটা তো সামরিক শাসন স্টাইল। সামরিক শাসনে তো কোনো আইন-কানুন থাকে না। তারা যা ইচ্ছা করতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তো সামরিক সরকার নয়।”

তার কথা," এটা করে সরকারের প্রতি নাগরিকদের যেটুকু আস্থা ছিল তা-ও নষ্ট করা হচ্ছে। আর কোনো আস্থা অবশিষ্ট থাকছে না। তারা ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে সরকারের মুখোমুখি করে দিচ্ছে।”

আমার জানা মতে, নিরাপত্তা হেফাজত বলতে কিছু নাই: ড. শাহদীন মালিক

This browser does not support the audio element.

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সমন্বয়কদের নির্যাতন চালিয়ে বিবৃতি আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "তারা স্বেচ্ছায় আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি দিয়েছেন, কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি। তারা বের হওয়ার পর তাদের সাথে কথা বললে আপনারা জানতে পারবেন।”

এই হেফাজতে রাখার আইনগত বৈধতা এবং সেই অবস্থায় বিবৃতির বৈধতার প্রশ্নে তিনি বলেন," আমরা তো তাদের জোর করে আনিনি। তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন, তাই আমাদের এখানে রেখেছি। এটা তো আটক বা গ্রেপ্তার নয়।”

সন্বয়কদের পরিবারের সদস্যদের জোর করে আটকে রাখা, দেখা করতে না দেয়া ও নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন," না, তারা কোনো অভিযোগ করেননি। তারাও তাদের সন্তানরা ভালো আছেন বলে বিবৃতি দিয়েছেন।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ," না তাদেরও (পরিবারের সদস্য) জোর করা হয়নি। তারা তো বাসায় আছেন।” কিন্তু সোমবার পরিবারের সদস্যদের ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের একই স্টাইলে খাওয়ানো ও বিবৃতি দেওয়ানো হয়।  তার ভিডিও ফুটেজও সংবাদমাধ্যমে ডিবি সরবরাহ করে।

এই ছয় সমন্বয়ককে বিভিন্ন সময় হাসপাতাল ও তাদের বাসা থেকে তুলে আনা হয়। তারপর কয়েকদিন তাদের খোঁজও পাওয়া যাচ্ছিল না। একজনকে আগেও  তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তারা এখনো হেফাজাতে আছেন। কবে তাদের ছাড়া হবে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন," এখানো বলতে পারছি না। এটা নিয়ে উপরে কথা বলে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর গত ২২ জুলাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম৷ ছবি: Munir Uz Zaman/AFP

এদিকে ডিবি হেফাজতে থাকা নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহার রবিবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ের সামনে গিয়েছিলেন তার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু তাকে দেখা করার সুযোগ বা ডিবি কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মমতাজ নাহার সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, " ডিবি বলছে, নিরাপত্তার কারণে তাদের কাছে রেখেছে। সন্তান মা-বাবার কাছে নিরাপদ। ডিবি অফিসে কিসের নিরাপত্তা?'

তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সে কী আদৌ ডিবি অফিসে আছে, সেটাও নিশ্চিত হতে পারছি না।আগে একবার নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এবারও মারধর-নির্যাতন করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত।'' তবে সোমবার তাকে আর মেবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি, বের হওয়ার পর তাদের সাথে কথা বললে আপনারা জানতে পারবেন: মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ

This browser does not support the audio element.

কোটা সংস্কার আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়কারী হাসিব জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন," আমাদের ছয় সমন্বয়ককে নির্যাতন করে বন্দুকের নলের সামনে এই বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সন্বয়করা আটক হওয়ার আগে বলে গিয়েছেন তাদের যদি আন্দোলন প্রত্যাহারে বাধ্যও করা হয়, তাহলেও আমরা যেন আন্দোলন চালিয়ে যাই। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।” তিনি অভিযোগ করেন," সমন্বয়কদের শুধু এখন নয়, আগেও এক দফা নির্যাতন করা হয়েছে। একজনকে স্লো পয়জন দেয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, "জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে আটক  করে উত্তরা থানায় রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেয়া হবে।”

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ