ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তুলনামূলক ইতিবাচক আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছে ব্রিটেন৷ এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা না গেলেও ডিসেম্বর ৪ তারিখে ব্রেক্সিট মিটিং-এর আগে এই পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার সূত্রমতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে আসার জন্য ‘ডিভোর্স বিল' বা ‘বিচ্ছেদ খরচ' নিয়ে সমঝোতার খুব কাছাকাছি ব্রিটেন৷ বিবিসি, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, গার্ডিয়ানসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য কেবিনেট মিটিং-এ ‘বিচ্ছেদ খরচ' আগের তুলনায় অনেক বাড়িয়েছে, যা ইইউ-র প্রত্যাশার প্রায় কাছাকাছি৷ তবে এ পরিমাণ কত, তা জানা যায়নি৷ ইইউ কূটনীতিকদের মতে, ২০১৯ সালে ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে দরকষাকষির পরও যুক্তরাজ্যকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড পরিশোধ করতে হতে পারে৷
ব্রেক্সিট বিষয়ক প্রধান আলোচক মিশেল বার্নিয়ে বলেন, ‘‘এ বিষয়টা নিয়ে আমরা সত্যি সত্যিই অনেক খাটছি৷ আশা করি আপনাদের জানাতে পারবো যে আমরা একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছি৷'' যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছুই জানানো হয়নি, তবে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ডিসেম্বর ৪ তারিখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ও ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুঙ্কারের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আগে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি৷
মীমাংসা ছাড়াই ব্রেক্সিট হতে চলেছে?
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছে৷ অথচ তার আগে দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার আশা কমেই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত কোনো রফা ছাড়াই এই বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হবে – এমন আশঙ্কা আরও দানা বাঁধছে৷
ছবি: Getty Images/L Neal
আগে বিচ্ছেদ, তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, যে সবার আগে ‘ব্রেক্সিট’ বা বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে দুই পক্ষকে বোঝাপড়ায় আসতে হবে৷ যথেষ্ট অগ্রগতি হলে তবেই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে৷ কিন্তু ব্রিটেন দু’টি বিষয় নিয়ে একসঙ্গে দর কষাকষি করতে আগ্রহী, যা ইইউ-র কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: Reuters/File Photo/Y. Herman
একই আলোচনা, ভিন্ন মূল্যায়ন
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তৃতীয় দফার আলোচনার শেষে ইইউ-র শীর্ষ প্রতিনিধি মিশেল বার্নিয়ে বলেন, বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেনি৷ ফলে আপাতত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে না৷ অন্যদিকে ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট অগ্রগতির উল্লেখ করেন৷
তৃতীয় দফার আলোচনার আগে ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে ব্রিটেন যে অবস্থান প্রকাশ করেছে, তাকে ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইইউ-র মিশেল বার্নিয়ে৷ বিচ্ছেদের পরেও একক বাজারে প্রভাব, ইউরোপীয় আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে ‘অবাস্তব’ প্রস্তাব নিয়ে বিরক্ত ইইউ প্রতিনিধিরা৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আয়ারল্যান্ডে ইইউ-র বহির্সীমানা
ব্রেক্সিটের পর আইরিশ প্রজাতন্ত্র ও ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত ইইউ-র বহির্সীমানা হয়ে উঠবে৷ তার ফলে দুই অংশের মধ্যে নিবিড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য যা বড় এক হুমকি৷ দুই পক্ষই একটা সমাধানসূত্র চাইলেও এখনো এই প্রশ্নে যথেষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Faith
নাগরিকদের অধিকার
ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউ নাগরিকরা ব্রেক্সিটের কারণে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন৷ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁদের সুবিচারের আশ্বাস দিলেও তাঁদের অধিকারের প্রশ্নে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না৷ ইইউ দেশগুলিতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷ জটিল এই প্রশ্নের স্থায়ী সমাধানসূত্র চাইছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’?
ব্রাসেলসে আলোচনায় অগ্রগতির অভাবে ব্রিটেন সরাসরি ফ্রান্স ও জার্মানির মতো ইইউ সদস্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিটেনের ‘দ্য ডেলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের ইঙ্গিত পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তাঁর স্পষ্ট অবস্থান: ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচনার একমাত্র সহযোগী৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
7 ছবি1 | 7
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের অন্যতম শর্ত হিসেবে যুক্তরাজ্যকে একটি নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে৷ তবে সে অর্থের পরিমাণ কত হবে, তা নিয়ে এখনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি৷ ‘ডিভোর্স বিল' নিয়ে মিমাংসার পর ব্রেক্সিট আলোচনার পরবর্তী ধাপে নাগরিকদের অধিকার এবং ইইউ-এর সদস্যদেশ স্বাধীন আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হবে৷
সব ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বর ১৪ এবং ১৫ তারিখ ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভায় সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ব্রেক্সিট আলোচনা পৌঁছাবে পরবর্তী ধাপে৷ যদিও আইরিশ সরকার ব্রেক্সিট আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অবস্থানে অসন্তুষ্ট হয়ে মিশেল বার্নিয়ের প্রতি অনাপত্তি না জানাতে অনুরোধ করতে পারে, যার অর্থ দাঁড়াবে ব্রেক্সিট বিষয়ে সমঝোতার সম্ভাবনা পেছাবে আরও৷
তবে সে সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তা জানা যাবে ডিসেম্বর ৪ তারিখে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় কমিশন প্রধানের বৈঠকের পরই৷
আরএন/ডিজি
ব্রেক্সিটের পর ইউরোপ-প্রেম বাড়ছে
ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের এক বছর পর ইইউ সম্পর্কে ব্রিটেন তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির মানুষের মনোভাব অনেক ইতিবাচক হয়ে উঠেছে৷ ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না’ – এই প্রবাদ ফলে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
শীর্ষে জার্মানি ও ফ্রান্স
ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি বলে পরিচিত দেশ জার্মানি (৬৮ শতাংশ) ও ফ্রান্সের মানুষ (৫৬ শতাংশ) কিছু সমালোচনা ও সংশয় সত্ত্বেও বরাবর ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন৷ ব্রেক্সিট গণভোটের পর সেই সমর্থন আরও ১৮ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: Reuters/H.Hanschke
ব্রিটেনের ভোলবদল
গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার রায় দেওয়ার পর ব্রিটেনের অনেক মানুষের টনক নড়েছে৷ এখন ৫৪ শতাংশ মানুষ ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন৷ অর্থাৎ এক ধাক্কায় সমর্থন ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে তার ফলে ইইউ থেকে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়ায় নড়চড় হবার সম্ভাবনা কম৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Tallis
পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি
কট্টর জাতীয়তাবাদী ও ইইউ-বিরোধী সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পোল্যান্ড (৭৪ শতাংশ) ও হাঙ্গেরির মানুষ (৬৭ শতাংশ) কিন্তু সমীক্ষায় ইইউ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন৷ বাকি অনেক দেশের তুলনায় তাঁরা বরং এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল
মন্দার ধাক্কা সামলে ইউরোপের অনেক দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যেমন নেদারল্যান্ডসের ৮৭ শতাংশ মানুষ এর ফলে সন্তুষ্ট৷ জর্জরিত অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠায় স্পেনের মানুষের মধ্যেও ইইউ সম্পর্কে উৎসাহ অনেক বেড়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
গ্রিস ও ইটালিতে হতাশা
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশ গ্রিসের মানুষ এখনো ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন৷ তাই ইউরোপ সম্পর্কে মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ তাঁদের উৎসাহ প্রকাশ করেছেন৷ ইটালির অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়৷ তবে তা সত্ত্বেও সেখানে ৫৬ শতাংশ মানুষ ইইউ-বান্ধব বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamaki
শরণার্থী সংকট
তুরস্কের সঙ্গে ইইউ-র চুক্তির কারণে শরণার্থীর ঢল কমে যাওয়ায় ইউরোপের অনেক মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন৷ তাঁদের অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু ‘পপুলিস্ট’ দল ইউরোপবিরোধী আবেগ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ পরিস্থিতির উন্নতির ফলে তাদের প্রতি সমর্থন অনেক কমে গেছে৷