দী্র্ঘদিন ফুটবল খেলে মারা যাওয়া অনেকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উঠে আসছে ডিমেনশিয়ার নাম৷ ফলে অনেক ফুটবলারের মনেই ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক৷
বিজ্ঞাপন
বুন্ডেসলিগার ইউনিয়ন বার্লিন দলের গোলরক্ষক আন্দ্রেয়াস লুঠে একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারো কাছেই পাচ্ছেন না৷ ডয়চে ভেলের কাছেও তাই জানতে চেয়েছেন, ‘‘আমার মাথায় কি টাইম-বোমার ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে ঘুরতে শুরু করেছে?'' অর্থাৎ, ফুটবল খেলেন বলে তিনি কি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন?
৩৪ বছর বয়সি ফুটবলারের মনে এমন প্রশ্ন জাগার কারণ, সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার ফল৷ সেসব গবেষণায় দেখা গেছে, ফুটবল খেললে, বিশেষ করে ফুটবল খেলায় মাথায় ঘন ঘন আঘাত পেলে এক পর্যায়ে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্য সব মানুষের চেয়ে অনেক বেশি৷
জানা গেছে, জার্মানির দুই ফুটবল কিংবদন্তি জার্ড ম্যুলার এবং হর্স্ট-ডিটার হ্যোটগেসের মৃত্যুর কারণ ডিমেনশিয়া৷
লুঠের ভয়, তারও ডিমেনশিয়া হতে পারে, কারণ, এ পর্যন্ত দুবার মাথায় বড় রকমের আঘাত পেয়েছেন তিনি৷ অন্য খেলোয়াড়ের মাথার সঙ্গে নিজের মাথা ঠুকে যাওয়ায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন একবার৷ পরে অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই খেলতে পেরেছেন সেই ম্যাচ৷ তবে আরেকবার মাথায় আঘাত পাওয়ার পর হাসপাতালে যেতে হয়েছিল তাকে৷
ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে জাতিসংঘের পরামর্শ
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আগামী ত্রিশ বছরে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা তিন গুণ হবে৷ তাই এই রোগের ঝুঁকি কমাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: Imago/epd
ডিমেনশিয়ার কারণ
মস্তিস্কের বিভিন্ন রোগের কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা ও আচরণে নানান পরিবর্তন আসতে পারে৷ সে কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হতে পারে৷ এই অবস্থাকে ডিমেনশিয়া বলে৷ হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলতা, ডিপ্রেশনের কারণে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Getty Images/T. Karibe
সংখ্যা তিন গুণ বাড়বে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমানে বিশ্বে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি৷ ২০৫০ সাল নাগাদ সংখ্যাটি তিন গুণ বেড়ে ১৫ কোটির বেশি হতে পারে৷ নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেশি বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ফলে অনেক দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে৷
ছবি: Reiner Wandler
আর্থিক বোঝা
ডিমেনশিয়ার রোগীদের দেখভালের খরচ অনেক বেশি৷ ২০১৫ সালে এই খরচ ছিল ৮১৮ বিলিয়ন ডলার৷ ২০৩০ সালে তা দুই ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: Imago/epd
ঝুঁকি কমানো
বয়স বাড়া ও পারিবারিক ইতিহাসের কারণে ডিমেনশিয়ার যে ঝুঁকি থাকে, তা এড়ানো সম্ভব নয়৷ কিন্তু জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এই রোগে ভোগা শুরুর সময়টি একটু বিলম্ব করা যায় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
কয়েকটি পরামর্শ
নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান না করা, অ্যালকোহলের ক্ষতিকর ব্যবহার এড়ানো, ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা – ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে এসব পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Breloer
সেবাকারীদের প্রশিক্ষণ
জাতিসংঘ বলছে, সাধারণ পরিবারের সদস্যরাই ডিমেনশিয়া রোগীদের সেবা করে থাকেন৷ সেজন্য তাঁদের পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়৷ সেবা করতে গিয়ে সেবাদানকারীরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন৷ তাই কীভাবে সেবা দিতে হবে সে সংক্রান্ত একটি অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ কর্মসূচির ওয়েবসাইটে যেতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Imago/epd
6 ছবি1 | 6
কিন্তু জার্ড ম্যুলার এবং হর্স্ট-ডিটার হ্যোটগেসের মতো সাবেক দুই তারকা ফুটবলারের ডিমেনশিয়ায় মৃত্যুর পরও রোগটি নিয়ে জার্মান ফুটবল কর্তৃপক্ষ এখনো সেই অর্থে নড়েচড়ে বসেনি৷
ইংল্যান্ডেসতর্কতা
১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের অন্তত পাঁচজনের ডিমেনশিয়া হয়েছিল৷ তাদের মধ্যে চারজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন৷ ফলে ফুটবলারদের ডিমেনশিয়া থেকে দূরে রাখার উপায় খুঁজতে শুরু করেছে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ), প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ, ইএফএল-এর প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লিগ কর্তৃপক্ষ এবং খেলোয়াড়দের সংগঠন পিএফএ৷ এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এখন থেকে তারা ডিমেনশিয়া নিয়ে গবেষণা, লেখাপড়া এবং সাবেক পেশাদার ফুটবলারদের সহায়তা দানের বিষয়কে গুরুত্ব দেবে৷ এছাড়া ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের সাশ্রয়ী চিকিৎসা-সেবা দেয়ার জন্য তহবিল গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ইংল্যান্ডে৷
ডিমেনশিয়া রোগীদের সাথে যেমন আচরণ করবেন
পরিবার থেকে সহানুভূতি পাওয়া আলৎসহাইমার বা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুবই জরুরি৷ রোগীদের এমন অনভূতি দেওয়া উচিত যাতে তাঁদের মনে হয় যে, তাঁরা আপনজনদের সঙ্গেই আছেন৷ কিছু বিষয় জানা থাকলে কিন্তু ব্যাপারটি সহজ হয়ে যায়৷
ছবি: Colourbox
গোয়েন্দারমতো হতে পারেন
ডিমেনশিয়ায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের কথার অর্থ অনেক সময় ঠিকমতো বোঝা যায় না৷ তাই পরিস্থিতি নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে হবে৷ যেমন, তিনি খেতে না চাইলে, ‘‘ খিদে নেই?’’ প্রশ্ন না করে বরং জানতে চাইতে পারেন তাঁর দাঁত ব্যথা কিনা৷
ছবি: DW/K. Brady
যেভাবে তাঁদের সাথে কথা বলবেন
রোগীর সাথে ছোট এবং স্পষ্ট বাক্য বলুন এবং তা অবশ্যই স্বাভবিকের চেয়ে ধীরে৷ আর হ্যাঁ, চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন, আর উত্তরের জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে কেন, কী বা কোথায় - এতসব জানতে চাইবেন না রোগীর কাছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Wolf
নিয়মিত টিলিফোন করুন
রোগীর সাথে পরিবারের কেউ না কেউ নিয়মিত টেলিফোনে কথা বলুন৷ তখন তিনি নিজেকে স্বাভাবিক মনে করবেন৷
ছবি: colourbox
আধুনিক প্রযুক্তি
সম্ভব হলে আধুনিক প্রযুক্তি, অর্থাৎ আইপ্যড বা ট্যাবলেট কিনে দিন এবং ভিডিওর মাধ্যমে কথা বলুন৷ এতে তাঁর অন্যদের চেহারা মনে থাকবে৷
ছবি: colourbox
অ্যালার্ম সিস্টেম
যাঁরা বাসায় একা থাকেন, তাঁদের জন্য বাসায় ব্যবহারের যন্ত্রপাতি অর্থাৎ চুলা, ফ্রিজ ইত্যাদির ব্যবহারের এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যেন অ্যালার্ম সিস্টেম থাকে৷ চুলায় কিছু পড়ে গিয়ে ধোঁয়া বেরোলে কিংবা ফ্রিজ বেশিক্ষণ খোলা থাকলে যেন অ্যালার্ম তা জানান দেয়৷
ছবি: DW/R. Breuer
যেন সহজে দেখা যায়
কাপড়ে রাখার আলমারীর দরজাটা খুলে ফেলতে পারেন, কিংবা বাথরুমের দরজায় রঙিন করে করে লিখে দিন৷ টেবিল ক্লথ সাদা হলে থালাবাসন রঙিন কিনে দিন৷
ছবি: Fotolia/Marco Desscouleurs
বিপজ্জনক জিনিস সরিয়ে রাখুন
নষ্ট খাবার, পুরনো ওষুধপত্র ফেলে দিন, কিংবা দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় যেন পড়ে না যায়, এমন ব্যবস্থা রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hiekel
লিখে রাখুন
প্রয়োজনীয় সবকিছুর ওপর লিখে রাখার চেষ্টা করুন৷ যেমন বড় করে ‘চাবি’ লিখে দরজায় আটকে দিন৷ কিংবা লিখে জানিয়ে দিন, ‘লাইট’ ‘চুলা’ চেক করতে হবে৷ তাছাড়া প্রতিবেশীদেরও জানিয়ে রাখুন যে, বাড়ির মানুষটি ডিমেনশিয়া রোগী৷ পরামর্শগুলো দিয়েছেন জার্মানির ডিমেনশিয়া অ্যসোসিয়েশনের পরামর্শদাতা সুজানা সাক্সল৷
ছবি: DW/Nurunnahar Sattar
8 ছবি1 | 8
সপ্তাহে১০হেড
২০২০ সালে ১১ বছরের কম বয়সি শিশুদের হেড প্র্যাকটিস না করানোর নির্দেশ দিয়েছে স্কটিশ এবং নর্দার্ন আইরিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন৷ ১৮ বছরের কম বয়সিদের প্রশিক্ষণ এবং খেলাতেও হেড-এর গুরুত্ব কমানো নির্দেশ দিয়েছে তারা৷
গত জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের এফএ, প্রিমিয়ার লিগ এবং অন্যান্য লিগ কর্তৃপক্ষও প্রশিক্ষণে হেড কমানোর পরামর্শ দিয়েছে৷ তাদেরও পরামর্শ- সপ্তাহে ১০টির বেশি হেড-এর প্রশিক্ষণ না করানোই ভালো৷