জাপানে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক৷ এমন মানুষদের কিছুক্ষণের জন্য আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে ‘ইটস ওকে' রেস্টুরেন্ট৷ একেক সময় একেক এলাকায় এই রেস্টুরেন্টটি খোলা হয়৷ কিন্তু এটি কীভাবে চলে?
জাপানের প্রতি সাতজন বয়স্ক মানুষের মধ্যে একজনের ডিমেনশিয়া হওয়ার শঙ্কা রয়েছেছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি পশ্চিম জাপানের নিশিনমিয়া শহরের এক রেস্টুরেন্ট এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে৷ সেখানে একটি নার্সিং হোমের বাসিন্দারা অংশ নিয়েছিলেন৷ তাদের একজন কিন-চ্যান, বয়স ১০১৷ তার স্মরণশক্তি এখন আর ভালো নেই৷
রেস্টুরেন্টে গিয়ে কাজ শুরুর বদলে তিনি প্রথমে সেখানে একটি টেবিলে অতিথির মতো বসে পড়েছিলেন! পরে বন্ধুভাবাপন্ন সহায়তাকারীরা তাকে তার কাজের কথা মনে করিয়ে দেন৷
কিছু অতিথি অপেক্ষায় না থেকে নিজেদের ছুরি-চামচ নিজেরাই নিতে পছন্দ করেন, কারণ, ওয়েটাররা সবাই ডিমেনশিয়ার রোগী৷
কিন্তু কোনো অতিথি কোন খাবার অর্ডার করেছেন সেটি এই রোগীরা কীভাবে মনে রাখেন? আসলে তারা মনে রাখত পারেন না, তাই অতিথিরা নিজেরাই সব ঠিক করে নেন৷
মাকিকো হিরাই-এর পরিকল্পনা এটি৷ বিভিন্ন এলাকায় তিনি এমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন৷ তার মায়েরও ডিমেনশিয়া আছে৷ অন্যদের মধ্যে এই অসুখের শঙ্কা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে চান তিনি৷
প্রায় তিন ঘণ্টা পর ‘ইটস ওকে' ক্যাফে বন্ধ হয়৷ শিগগিরই অন্য এলাকায় এটি খোলা হবে৷ ডিমেনশিয়া অনেককে ভোগায়৷
পশ্চিম জাপানের নিশিনমিয়ায় এক-চতুর্থাংশের বেশি মানুষের বয়স ৬৫টির উপরে৷ বয়স বাড়ার সঙ্গে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে৷
শুধু নিশিনমিয়াতেই এই রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২০ হাজার হতে পারে৷
এটি জাপানের মতো দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা, কারণ, সেখানে শুধু শিশুদের সংকট নয়, বয়স্কদের সেবা করা মানুষেরও অভাব আছে৷
ডিমেনশিয়া রোগীদের সাথে যেমন আচরণ করবেন
পরিবার থেকে সহানুভূতি পাওয়া আলৎসহাইমার বা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুবই জরুরি৷ রোগীদের এমন অনভূতি দেওয়া উচিত যাতে তাঁদের মনে হয় যে, তাঁরা আপনজনদের সঙ্গেই আছেন৷ কিছু বিষয় জানা থাকলে কিন্তু ব্যাপারটি সহজ হয়ে যায়৷
ছবি: Colourbox
গোয়েন্দারমতো হতে পারেন
ডিমেনশিয়ায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের কথার অর্থ অনেক সময় ঠিকমতো বোঝা যায় না৷ তাই পরিস্থিতি নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে হবে৷ যেমন, তিনি খেতে না চাইলে, ‘‘ খিদে নেই?’’ প্রশ্ন না করে বরং জানতে চাইতে পারেন তাঁর দাঁত ব্যথা কিনা৷
ছবি: DW/K. Brady
যেভাবে তাঁদের সাথে কথা বলবেন
রোগীর সাথে ছোট এবং স্পষ্ট বাক্য বলুন এবং তা অবশ্যই স্বাভবিকের চেয়ে ধীরে৷ আর হ্যাঁ, চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন, আর উত্তরের জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে কেন, কী বা কোথায় - এতসব জানতে চাইবেন না রোগীর কাছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Wolf
নিয়মিত টিলিফোন করুন
রোগীর সাথে পরিবারের কেউ না কেউ নিয়মিত টেলিফোনে কথা বলুন৷ তখন তিনি নিজেকে স্বাভাবিক মনে করবেন৷
ছবি: colourbox
আধুনিক প্রযুক্তি
সম্ভব হলে আধুনিক প্রযুক্তি, অর্থাৎ আইপ্যড বা ট্যাবলেট কিনে দিন এবং ভিডিওর মাধ্যমে কথা বলুন৷ এতে তাঁর অন্যদের চেহারা মনে থাকবে৷
ছবি: colourbox
অ্যালার্ম সিস্টেম
যাঁরা বাসায় একা থাকেন, তাঁদের জন্য বাসায় ব্যবহারের যন্ত্রপাতি অর্থাৎ চুলা, ফ্রিজ ইত্যাদির ব্যবহারের এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যেন অ্যালার্ম সিস্টেম থাকে৷ চুলায় কিছু পড়ে গিয়ে ধোঁয়া বেরোলে কিংবা ফ্রিজ বেশিক্ষণ খোলা থাকলে যেন অ্যালার্ম তা জানান দেয়৷
ছবি: DW/R. Breuer
যেন সহজে দেখা যায়
কাপড়ে রাখার আলমারীর দরজাটা খুলে ফেলতে পারেন, কিংবা বাথরুমের দরজায় রঙিন করে করে লিখে দিন৷ টেবিল ক্লথ সাদা হলে থালাবাসন রঙিন কিনে দিন৷
ছবি: Fotolia/Marco Desscouleurs
বিপজ্জনক জিনিস সরিয়ে রাখুন
নষ্ট খাবার, পুরনো ওষুধপত্র ফেলে দিন, কিংবা দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় যেন পড়ে না যায়, এমন ব্যবস্থা রাখুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hiekel
লিখে রাখুন
প্রয়োজনীয় সবকিছুর ওপর লিখে রাখার চেষ্টা করুন৷ যেমন বড় করে ‘চাবি’ লিখে দরজায় আটকে দিন৷ কিংবা লিখে জানিয়ে দিন, ‘লাইট’ ‘চুলা’ চেক করতে হবে৷ তাছাড়া প্রতিবেশীদেরও জানিয়ে রাখুন যে, বাড়ির মানুষটি ডিমেনশিয়া রোগী৷ পরামর্শগুলো দিয়েছেন জার্মানির ডিমেনশিয়া অ্যসোসিয়েশনের পরামর্শদাতা সুজানা সাক্সল৷