খাদ্য হিসেবে ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে নানা চর্চা হলেও ডিমের খোসা নিয়ে তেমন মাতামাতি হয় না৷ ইউরোপে এক গবেষণা প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ রক্ষা করে ডিমের খোসা থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি ডিম পাস্তা, কেক-রুটির মতো বিভিন্ন খাদ্যে রূপান্তরিত হয়৷ ফলে প্রতিদিন বর্জ্য হিসেবে প্রচুর ডিমের খোসা জমা হয়৷ সেই খোসা থেকে অব্যাহতি পাওয়া সহজ নয়৷ ইকোমোটিভ কেএফটি-র প্রধান টাস ওর্বান বলেন, ‘‘ডিমের মেমব্রেনের প্রোটিন সহজে পচে গিয়ে টক্সিক হয়ে যায় বলে ডিমের খোসাকে শিল্পক্ষেত্রের বিপজ্জনক বর্জ্য হিসেবে গণ্য করা হয়৷''
মেমব্রেন বা ঝিল্লির মধ্যে কোলাজ ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে৷ ডিম প্রক্রিয়াজাত করার কারখানাগুলি সেগুলি প্রসাধন ও খাদ্যশিল্পের কাছে বিক্রি করতে পারে৷ এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞানীরা সেই লক্ষ্যে এক প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন, যেটি ডিমের খোসা থেকে মেমব্রেন আলাদা করতে পারে৷ তারপর সেই মেমব্রেন শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হয়৷ শিল্পক্ষেত্রের রসায়নবিদ এনরিকো ইম্পেরি বলেন, ‘‘আমরা অতি বেগুনি রশ্মি ব্যবহার করি, যা ব্যাকটেরিয়ার ভিতরে ঢুকে তার ডিএনএ পরিবর্তন করতে পারে৷ সেটি তখন ব্যাকটেরিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে তার বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে৷''
প্রোটোটাইপ তৈরি হয়ে গেছে এবং গবেষকরা ডিম প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলিকে দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে বর্জ্যকে দামি পণ্যে রূপান্তরিত করা সম্ভব৷ বিজ্ঞানীরা তাই এবার ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন৷ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মেলিন্ডা কোজাক বলেন, ‘‘এর পরের ধাপে গোটা প্রণালীকে স্বয়ংক্রিয় করে তুলতে হবে৷ প্রক্রিয়াজাত করার প্রক্রিয়াকে তার ক্ষমতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সাজানোই আমাদের লক্ষ্য৷ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১,০০০ কিলো ডিমের খোসা নিয়ে কাজ করা সম্ভব৷''
টাস ওর্বান এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা যদি শিল্পক্ষেত্রের উপযোগী করে মেমব্রেন আলাদা করার প্রক্রিয়া গড়ে তুলি, তখন আমাদের মতো ডিম প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি উপজাত পণ্য থেকেও মুনাফা করতে পারবে৷ আগে তা খরচের কারণ ছিল৷''
তিন থেকে চার বছরের মধ্যে বাজারের জন্য উপযোগী পণ্য তৈরি হয়ে যাবে বলে গবেষকরা আশা করছেন৷ এর ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে ইউরোপের মুরগি পালন শিল্প আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে তাঁদের ধারণা৷
ডিম ‘কেন’ খাবেন?
ডিম খেলে কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়ে আর সেই সাথে বাড়ে নানা সমস্যা – এরকম ধারণা অনেকেরই৷ ডিমে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নানা ভিটামিন ও মিনারেল৷ জেনে নিন বিশেষজ্ঞরা ডিম খাওয়া নিয়ে কী বলছেন...
ছবি: Imago
ডিম খেলে কি সত্যিই কোলেস্টেরল বাড়ে?
একটি ডিমের কুসুমে গড়ে ২৫০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা কিনা ধমনীর রক্ত জমাট হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হয়৷ আর এ কথা ভেবে অনেকেই খাবারের তালিকা থেকে ডিম পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেন৷ জার্মানির ডায়েবেটিস ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. মাটিয়াস রিডল জানান, ডিম খেলে প্রতিটি মানুষেরই যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাবে তা ভাবা মোটেই ঠিক নয়৷
ছবি: Imago
ডিম ফিট রাখে
গত কয়েক বছরের গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল নিজে থেকে স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ দিনে একটি ডিম খেলে শরীরের ক্ষতি তো হয়ই না, বরং ডিম শরীরকে ফিট রাখে৷ জানান ড. রিডল৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
প্রতিদিন ডিম খান
প্রতিদিন একটি করে ডিম খেয়েছেন এ রকম এক হাজার পুরুষকে নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ইউনিভারসিটি অফ ইস্টার্ন ফিনল্যান্ডের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাদের কারোই হার্ট অ্যাটাক বা স্টোকের ঝুঁকি বাড়েনি৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Gerten
আরো গবেষণা
প্রায় একই রকম তথ্য জানা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা এপিডস্টারের কাছ থেকে৷ ১৯৮২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৫০,০০০ মানুষকে নিয়ে করা হয়েছিল গবেষণা এবং সে গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, হৃদপিণ্ডে ডিম খাওয়ার নেতিবাচক কোনো প্রভাব তো পড়েইনি বরং তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে শতকরা ১২ ভাগ৷
ছবি: Colourbox/zemgalietis
উঁচু মানের প্রোটিন
ডিমে রয়েছে উঁচু মানের প্রোটিন, যা শক্তির জোগান দেয় এবং স্লিম রাখে৷ ডিম যেমন শরীরের পেশিকে শক্ত করে, তেমনি কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
স্লিম থাকতে ডিম খান
সকালে দুটো ডিম খেলে তা প্রায় পাঁচ ঘন্টা পেট ভরা রাখে৷ শুধু তা-ই নয়, ডিম মিষ্টি জাতীয় কোনো কিছু খাওয়ার আগ্রহকে দমন করে৷ তাই ডা. রিড বললেন, ওজন কমাতে আগ্রহীদের জন্য ডিম খুব উপকারী৷
ছবি: Meghala Shree
প্রয়োজনীয় মিনারেল
ডিমে রয়েছে জিঙ্ক, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো জরুরি মিনারেল, যা প্রতিটি শরীরের জন্য প্রয়োজন৷ এই মিনারেলের একটি কম হলেই শরীর ক্লান্ত লাগে এবং মানুষ সহজে অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ তাছাড়া এসবের অভাবে শরীরে নানা ইনফেকশন, চুল পড়া বা থাইরয়েডের মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/M. Gerten
ভিটামিন ভাণ্ডার
ডিমে একমাত্র ভিটামিন ‘সি’ ছাড়া সব ভিটামিনই রয়েছে৷ ডিমে থাকা ভিটামিন এ, ডি এবং ই শরীরের ইমিউন সিস্টেম ঠিক রাখার জন্য খুবই জরুরি৷ তবে যারা ডিমের পুরো ভিটামিন পেতে চান, তাদের জন্য খাঁচায় পোষা মুরগির চেয়ে খোলা ক্ষেতে ঘুরে বেড়ানো মুরগির ডিমই বেছে নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞের৷