সেরা মগজ আকর্ষণ করতে ও দক্ষ কর্মীদের ধরে রাখতে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে৷ ‘ফেসবুক’ ও ‘অ্যাপল’ এবার এক অভিনব উপায়ে নারী কর্মীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে৷
বিজ্ঞাপন
অফিসে বিনামূল্যে খাদ্য-পানীয়, খেলাধুলা ও মনোরঞ্জনের নানা ব্যবস্থা করে থাকে গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক বা মাইক্রোসফট-এর মতো ‘টেক' কোম্পানি৷ কিন্তু দিনকাল বদলাচ্ছে৷ পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে, আরও নারী কর্মীদের আকর্ষণের চেষ্টা চলছে৷ সার্বিকভাবে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার বা কর্মীদের কাছে টানতেও অনেক ফন্দি-ফিকির ভাবতে হচ্ছে৷ কাজ ও পেশার তাগিদে অনেক নারী-পুরুষ আজকাল কম বয়সে সন্তানের কথা ভাবতে পারেন না৷ ফলে কৃত্রিম উপায়ে ডিম্বাণু সংরক্ষণ, ‘স্পার্ম ডোনেশন' বা বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে অনেকের৷ সে ক্ষেত্রে ফেসবুক ও অ্যাপল তাদের কর্মীদের জন্য ২০,০০০ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করবে বলে জানিয়েছে৷
এমন আর্থিক সুবিধা পেলে নারী কর্মীদের সুবিধা হবে বলে মনে করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক শেলি করেল৷ সংবাদ সংস্থা এপি-কে তিনি বলেন, সন্তান ধারণের সময় স্থির করার ক্ষমতা পেলে পেশাজীবী নারীদের খুব উপকার হবে৷ ফলে তাঁদের দেহের ‘বায়োলজিকাল ক্লক' ও পেশাগত জীবনের চাহিদার মধ্যে যে সংঘাত দেখা দেয়, তা দূর করতে অনেক সুবিধা হবে৷ প্রায়ই দেখা যায় চাকুরিতে নিজের অবস্থান মজবুত করার সময়টাই নারীদের সন্তান ধারণ বা গর্ভধারণের বয়স৷ কৃত্রিম উপায়ে সন্তান ধারণের বয়স কিছুটা পিছিয়ে দিতে পারলে সুবিধা হয়৷
সুস্থ পরিবেশেই গড়ে ওঠে সুস্থ জীবন
শিশুর প্রথম নিঃশ্বাস থেকে স্কুল জীবন শেষ করা এবং তারও পরে সন্তানের ভালো-মন্দের সাথে থাকেন তার বাবা-মা৷ কিভাবে ছোট্ট শিশুকে একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব, তারই গল্প এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের গর্ভ
মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই শিশুর ভালোর জন্য সব কিছু করেন বাবা-মা৷ সত্যিকার অর্থে সুস্থ পরিবেশই শিশুকে সুস্থ, সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে পারে৷ তবে সুস্থ পরিবেশ বলতে কী বোঝায়, সেটা খুব বুঝে-শুনে ঠিক করতে হয় মা-বাবাকে৷ আর এর জন্য সন্তান কী চায়, অর্থাৎ তার মন এবং শরীরকে বোঝা অত্যন্ত জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের দুধ দিয়ে শুরু
শিশুকে জন্মের সাথে সাথেই মায়ের দুধ পান করানো উচিত বলে মনে করেন বার্লিনের শিশু ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. ফ্রাংক ইয়োখুম৷ তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের দুধে আছে শিশুদের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুণ৷ শিশু মায়ের দুধ পানের মাধ্যমে মায়ের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাটিও পায়৷ এর ফলে শিশুরা নানা রকম রোগের সংক্রমণ থেকে যেমন রেহাই পায়, তেমনই বড় বয়সে ডায়বেটিস বা অতিরিক্ত ওজন সমস্যার মতো অসুখ থেকেও কিছুটা দূরে থাকে৷’’
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko
মায়ের খাবার
মা যতদিন শিশুকে দুধ পান করাবেন, ততদিন অবশ্যই তাঁর খাবার তালিকায় সব ধরনের খাবার থাকতে হবে৷ বিশেষ করে চর্বিযুক্ত মাছ, তাজা ফল ও সবজি৷ কারণ মাছের তেল শিশুদের মস্তিস্ক গঠনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ মা সব কিছু খেতে পারলেও, লক্ষ্য রাখতে হয় যে শিশুর শরীর সে খাবার কিভাবে গ্রহণ করছে৷ এছাড়া মায়ের দুধ পান করার মাধ্যমেই কিন্তু শিশুরা বিভিন্ন খাবারের স্বাদও পেতে থাকে৷
ছবি: Fotolia/WavebreakmediaMicro
শক্ত খাবার
বাচ্চাদের চার মাস বয়স থেকে প্রথম শক্ত খাবার দেয়া যায়৷ তবে শিশুদের জন্য তৈরি বিশেষ ‘বেবিফুড’ বা ঘরে রান্না করা খাবার অবশ্যই দিতে হয় ছয় মাস বয়স থেকে৷ এর কারণ, তখন আর শুধু মায়ের দুধ যথেষ্ট নয়৷ তবে সে সময় ‘‘লক্ষ্য রাখতে হবে যে শিশুর খাবারে বড়দের তুলনায় যেন মসলা এবং লবণ কম থাকে’’৷ এমনই পরামর্শ দেন ডা. ইয়োখুম৷
ছবি: Fotolia/victoria p
শাক-সবজি
অনেক সময় বাচ্চারা সবুজ-সবজি বা ফলমূল খেতে চায় না৷ তখন অনেক মা-বাবা গল্প করে, আদর করে সেগুলো তাদের খেতে বলেন, অনেকে আবার জোরও করেন৷ অথবা সালাদ বা পাতে দেয়া সবজিটুকু খেয়ে নিলে সে একটা চকলেট বা আইসক্রিম পাবে – এমন লোভও দেখিয়ে থাকেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাচ্চারা নকল করে
ডা. ইয়োখুম জানান, ‘‘মা-বাবা নিজেরা যদি নিয়মিত শাক-সবজি এবং ফলমূল খেতে অভ্যস্ত হন অথবা পছন্দ করেন, তবে সেটা খুব ছোট বয়স থেকেই সন্তানদের সামনে করা বা দেখানো যেতে পারে৷ কারণ শিশুরা বাবা-মাকে যা করতে দেখে সেটা নিজেরাও নকল করে, যা পরবর্তীতে অভ্যাসে পরিণত হয়৷’’
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
পুষ্টিগুণই যথেষ্ট
শিশুরা কোনো একটা সবজি বা ফল না খেলে জোর করার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই, বলেন ডা. ইয়োখুম৷ বরং বাচ্চারা যেসব খাবার পছন্দ করে, সেসব খাবার সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ আছে কিনা – সেদিকে লক্ষ্য রাখলেই যথেষ্ট৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
লোভনীয় মিষ্টি খাবার
বাজারে শিশুদের জন্য নানা রকম লোভনীয় মিষ্টি খাবার সাজানো থাকে, যা থেকে দূরে থাকাই ভালো৷ কারণ শিশুকাল থেকে সেসব খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বড় বয়সেও শরীর তা পেতে চায়৷ বলা বাহুল্য, ‘লো ফ্যাট’ দুধেও রয়েছে যথেষ্ট ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস, যা শিশুদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে৷ তাই বেশি মিষ্টি বা ফ্যাটের কোনো প্রয়োজনই নেই!
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বাস্থ্যকর পানীয়
বড়দের শরীরের তুলনায় বাচ্চাদের শরীরে বেশি পানি প্রয়োজন৷ তবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ট্যাপ ওয়াটার অথবা মিনারেল ওয়াটার৷ জার্মানিতে ট্যাপের পানি পান করা নিরাপদ৷ তাছাড়া ঘরে করা ফলের জুস, চা ইত্যাদি পান করা যেতে পারে৷ তবে বাজারের কেনা ‘আইস টি’, ফান্টা বা জুস নয়৷ কারণ সে সবে দেয়া থাকে প্রচুর চিনি৷ অবশ্য মাঝে মধ্যে যে এক, আধ গ্লাস পান করা যাবে না – তা কিন্তু নয়!
ছবি: Fotolia/Elenathewise
সাধারণভাবে বড় হওয়া
সারাদিন ঘরে বসে কম্পিউটারে খেলা বা টিভি দেখা নয়৷ যতটা সম্ভব বাইরে খেলাধুলা করার সুযোগ করে দেওয়া প্রয়োজন বাচ্চাদের৷ তার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন হবি বা খেলাধুলার জন্য ক্লাবে ভর্তি করে দিলে শিশুরা অন্য বাচ্চাদের সাথে মিলে-মিশে, হেসে-খেলে স্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে উঠতে পারবে৷
ছবি: SerrNovik - Fotolia
বয়ঃসন্ধিকাল
এই বয়সে কেউ যেমন আর বাচ্চা নয়, আবার সবকিছু বোঝার মতো যথেষ্ট বড়ও নয়৷ কিশোর-কিশোরীরা এ বয়সে অন্য রকম কিছু করতে চায়, দেখতে চায় বা নানা কারণে মানসিক সমস্যাও হতে পারে তাদের৷ তাই বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের মনের অবস্থা বুঝে সেভাবে বাধা না দিয়ে শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলি সুন্দভাবে বুঝিয়ে দেয়া এবং অবশ্যই একজন বন্ধুর মতো আচরণ করা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নার্ভ শক্ত রাখতে হবে
ডা. ইয়োখুমের মতে, বয়ঃসন্ধিকাল অর্থাৎ শিশুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে নানা ধরণের পরিস্থিতির জন্য বাবা-মাকে নার্ভ শক্ত রাখতে হবে এবং কিছু কিছু ব্যাপারে তাদের ‘সাপোর্ট’-ও করতে হবে৷ একমাত্র তবেই সন্তানরা বয়ঃসন্ধিকাল সহজভাবে পার করে আস্তে আস্তে দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারবে৷
ছবি: DW/Li Fern Ong
বন্ধুর মতো সহজ সম্পর্ক
সন্তান এবং বাবা-মায়ের ভেতরের সম্পর্ক যদি বন্ধুর মতো হয়, তাহলে অনেককিছুই অনেক সহজ হয়ে যায়৷ এই সম্পর্কে তৈরি করতে অবশ্য বেশ খানিকটা সময় একসাথে কাটানো খুব দরকার৷ আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে সময় পাওয়া কঠিন হলেও সময় বের করে নেওয়াটা কিন্তু খুবই জরুরি৷ কারণ শিশুর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ‘সময়’ মহা মূল্যবান!
ছবি: picture-alliance/dpa
13 ছবি1 | 13
নানা গবেষণায় দেখা গেছে, ২৭ বছরের পর নারীর ডিম্বাশয়ের ক্ষমতা, অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর ডিম্বাণু সৃষ্টির ক্ষমতা সামান্য কিছুটা কমে যেতে পারে৷ তারপর ৩৪-৩৫ বছর বয়সে তা আরও কমে যায়৷ ৪০ থেকে ৪৪ বছর বয়সে প্রথম সন্তান ধারণ করেছেন – এমন নারীর সংখ্যা গত ২০ বছরে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে৷ ফলে যাঁরা অপেক্ষা করতে চান, তাঁদের অনেকেই আগে থেকেই নিজেদের ডিম্বাণু ‘ফ্রিজ' বা সংরক্ষণ করে রাখতে চাইছেন৷ পরে ইচ্ছামতো সময়ে সেটি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মা হতে পারেন তাঁরা৷
ফেসবুক চলতি বছরেই এই আর্থিক প্যাকেজ চালু করেছে৷ এর আওতায় ‘রিপ্রোডাক্টিভ রিলেটেড কস্ট'-এর জন্য ২০,০০০ ডলার পর্যন্ত অর্থ দেওয়া হচ্ছে৷ তবে কর্মীকে প্রথমে নিজের পকেট থেকেই অর্থ দিতে হবে৷ তারপর তাঁর চাকুরির সময়কাল জুড়ে ধাপে ধাপে সেই অর্থ মিটিয়ে দেবে কোম্পানি৷ অ্যাপল আগামী বছর থেকে এই সুবিধা চালু করতে চলেছে৷ অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, অন্যান্য কোম্পানিও ধীরে ধীরে এই মডেল অনুসরণ করতে শুরু করবে৷