বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডিসি-এসপিদের মিটিং হয়েছে৷ ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনের কথা শোনেন না, তারা শেখ হাসিনার কথা শোনেন৷
বিজ্ঞাপন
তাই নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ বলেন, চট্টগ্রামে শুরু হওয়া আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়েসরকারের পতন ঘটানো হবে৷ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের পলো গ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত এক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন৷
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন,‘'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে দরকার ছিল বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া৷''
বিএনপির চার দশক
৪৫ বছরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত আছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ এত বছরে কী ছিল দলটির পথচলা?
ছবি: Getty Images/Keystone
প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন৷ এরপর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশে ছিল অনির্বাচিত সরকার৷ সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ পরে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে রাজনৈতিক দল গঠন করেন৷
ছবি: imago/Belga
প্রতিষ্ঠা
বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল৷ পরে তা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করে দলের যাত্রা করেন জিয়াউর রহমান৷
ছবি: imago/United Archives International
নির্বাচন ও মৃত্যু
জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে৷ তখন মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জেতে৷ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/Keystone
খালেদার রাজনীতিতে আসা
জিয়ার মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের আহ্ববানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন৷ ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন৷ ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন৷ ১৯৮৪ সালের ১০মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন৷
ছবি: AP
এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়া
জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন৷ তবে তাঁকে হটিয়ে ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন৷ বিএনপি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই আন্দোলনে বেগম জিয়া ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দু’জনই ছিলেন, যদিও আপোষহীনতার কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
সরকার গঠন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদে মাত্র ৪৫ দিন টিকতে পারে সেই সরকার৷
ছবি: AP
শেষবার সরকারে
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জিতে আবারো সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷এই সরকারই ছিল বিএনপির শেষ সরকার৷ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর নানা বিতর্ক ও ঘটনার প্রেক্ষাপটে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রায় দুই বছর৷ সে সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়কেই জেলে যেতেও হয়েছিল৷ পরে অবশ্য দু’জনই ছাড়া পান৷
ছবি: Getty Images
জোটের রাজনীতি
বিএনপি এ পর্যন্ত বারবার জোট করেছে৷ প্রথম সাতদলীয় জোট করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে৷ এরপর জামায়াতে ইসলামীসহ গড়ে চারদলীয় জোট৷ পরবর্তীতে জোটে দলের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ সেটি ঠেকে বিশ দলীয় জোটে৷
ছবি: bdnews24.com
রাজনৈতিক ভুল ও কারাগারে খালেদা
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ভুল বলে মনে করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়৷ আরো কয়েকটি মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
বিদেশে তারেক রহমান
মানি লন্ডারিংসহ নানা মামলায় বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন জিয়াপুত্র ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ নানা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না৷ এসব সংকট নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে বলে মনে করেন অনেকেই৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার ছিল, কেননা সরকারের নির্দেশেই গুম-খুন হচ্ছে৷ জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে যে এখানে গুম-খুন হয়, এখানে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়৷
সমাবেশে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আজকের সমাবেশে আসার সময় আওয়ামী লীগ হামলা করেছে, গাড়ি ভেঙেছে৷ কিন্তু তারপরও তারা লোক সমাগম ঠেকাতে পারেনি, ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না৷''
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়৷ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনি মানুষকে বলেছেন কম খান, কম বিদ্যুৎ জ্বালান৷ সামনে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে৷ তাহলে আপনি আছেন কেন? এখনই ক্ষমতা ছাড়েন, নইলে পালানোর পথ পাবেন না৷''
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার নির্বাচিত সরকার নয়, তাই সবকিছু লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে৷ দেশের মানুষ গরিব হয়ে আছে৷ শেখ হাসিনার ১০ টাকার চাল এখন ৭০ টাকা৷ চালসহ নিত্যপণ্যের দাম তিন থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে৷ সামনে বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে৷ পেট্রল, গ্যাস, পানির দামও বাড়ানো হয়েছে৷ দাম বাড়ার কারণে জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে কানাডার বেগমপাড়া ও লন্ডনে বাড়ি করছে তারা৷''
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ দেশের বিচার বিভাগসহ সবকিছু দলীয়করণ হয়ে গেছে৷
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন৷ নগরের পোলো গ্রাউন্ড মাঠ পূর্ণ হয়ে আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়৷