জার্মানিতে নতুন জোট সরকার গড়ার লক্ষ্যে আলোচনার প্রথম দিনেই এসপিডি, এফডিপি ও সবুজ দল স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ এর আওতায় ৬ই ডিসেম্বরের পর এসপিডি নেতা শলৎস চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নেবেন৷
বিজ্ঞাপন
২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানির সংসদ নির্বাচনে অস্পষ্ট ফলাফলের প্রেক্ষাপটে দ্রুত সরকার গড়ার আশা কার্যত লোপ পেয়েছিল৷ কিন্তু প্রাথমিক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে তিন দলের জোটের রূপরেখা অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ বৃহস্পতিবার সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, উদারপন্থি এফডিপি ও পরিবেশবাদী সবুজ দল সরকার গড়ার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে৷ নভেম্বর মাসেই সেই প্রক্রিয়া শেষ করে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎসের শপথ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে এই তিন দল৷ উল্লেখ্য, এর আগে শলৎস নিজে বড়দিনের আগে সরকার গঠনের আশা প্রকাশ করেছিলেন৷
একাধিক ক্ষেত্রে তিন দলের ভিন্ন অবস্থানের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করতে আগামী বুধবার থেকে তিন দলের বিশেষজ্ঞ রাজনীতিকদের ২২টি গোষ্ঠী কাজ শুরু করবে৷ ১০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে ঐকমত্যের খসড়া প্রস্তুত করতে হবে৷ ততদিন পর্যন্ত যে সব বিরোধের মীমাংসা সম্ভব হবে না, সেগুলির ক্ষেত্রে মতপার্থক্য দূর করতে আসরে নামবেন তিন দলের প্রধান মধ্যস্থতাকারীরা৷ সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতেই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, রাতে বা সপ্তাহান্তে সেই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবার কোনো পরিকল্পনা নেই৷ সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে নভেম্বের মাসের শেষেই কোয়ালিশন চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়ে যাবার কথা৷ তিন দলের শীর্ষ নেতাদের সেই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে হবে৷ তারপর তিন দলকেই আনুষ্ঠানিকভাবে সেই খসড়া অনুমোদন করাতে হবে৷ সবুজ দল ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে দলের সায় নিতে চায়৷ এফডিপি এক জরুরি দলীয় সম্মেলনে সরকারে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করাবে৷ এসপিডি দল আগামী সোমবার সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে৷
জার্মানিতে ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন' সরকার গড়ার লক্ষ্যে এমন পেশাদারি মনোভাব যথেষ্ট সম্ভ্রম কুড়াচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত তিন দলের নেতারা যথেষ্ট পরিণতমনস্কতা দেখিয়ে এসেছেন৷ তিন দলই বিরোধী আসনে না বসে ক্ষমতাকেন্দ্রের অংশ হয়ে আগামী চার বছর নিজস্ব নীতি যতটা সম্ভব কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের কার্যকালের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার চালানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষী কর্মসূচি গ্রহণ করতে চায় এই তিন দল৷ জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক সময়ে কার্যকর করতে পারলে ম্যার্কেল মাত্র কয়েক দিনের জন্য চ্যান্সেলর হিসেবে দীর্ঘতম কার্যকালের রেকর্ড ভাঙতে পারবেন না৷ হেলমুট কোলই সেই কৃতিত্বের দাবিদার থেকে যাবেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মানিতে ব্যালট বাক্স থেকে সরকার গঠনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া
জনগণের ইচ্ছার ন্যায্য প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে জার্মানির নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ জটিল হয়ে উঠেছে৷ অনেক নাগরিকেরও সব খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেই৷ এমনই কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Kalker
নেই আলাদা ভোটার তালিকা
জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সব মানুষকেই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নাম নিবন্ধন করতে হয়৷ তাই সেই তালিকা থেকে শুধু জার্মান নাগরিকদের বেছে নিয়ে ডাকযোগে ভোট দেবার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়৷ জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে নির্ধারিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গেলেই ভোট দেওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Güttler
ডাকযোগে ভোট দেবার সুযোগ
ভোটার হিসেবে আমন্ত্রণপত্র পেলে সশরীরে ভোট না দিলেও চলবে৷ কোনো কারণ না দেখিয়ে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগেভাগেই ভোট দেওয়া সম্ভব৷ যে সব জার্মান নাগরিক বিদেশে থাকেন, তারাও জার্মানিতে তাদের সর্বশেষ বাসস্থানের পৌরসভার মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট সংগ্রহ করতে পারেন৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/picture alliance
নাগরিকদের দুটি করে ভোট
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা দুটি করে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ প্রথমটি নির্বাচনি কেন্দ্রে সরাসরি প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের কোনো দলের জন্য৷ প্রার্থী ও দল ভিন্ন হলেও চলবে৷ দ্বিতীয় তালিকায় দলীয় সমর্থনের অনুপাতের ভিত্তিতে সংসদে অর্ধেক আসনে প্রার্থী স্থির করা হয়৷
ছবি: C. Ohde/blickwinkel/McPHOTO/picture alliance
‘বোনাস’ ভোটের জটিল হিসেব
ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯ জন স্থানীয় প্রার্থীর সরাসরি এবং দ্বিতীয় ভোটের ভিত্তিতে বাকি ২৯৯ জনের দলীয় মনোনয়ন অনুযায়ী সংসদে আসন পাওয়ার কথা৷ কিন্তু বাস্তবে সংসদে সদস্যসংখ্যা ৫৯৮ ছাপিয়ে যায়৷ কোনো দল যদি শতকরা হিসেবে দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রথম ভোট পায়, তখন জটিল এক নিয়মের ভিত্তিতে সেই দল সংসদে কিছু বাড়তি আসন লাভ করে৷ তখন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাকি দলগুলিকেও বেশি আসন দিতে হয়৷
সব দল সংসদে স্থান পায় না
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানির গণতন্ত্রের দুর্বলতা কাটাতে সংবিধান প্রণেতারা অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলির ক্ষমতা সঙ্কুচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় ভোটের কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ না পেলে কোনো দল সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগে স্থান পায় না৷ তবে নির্বাচনি কেন্দ্রে কমপক্ষে তিনটি আসন পেলেও সংসদীয় দলের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Tim Brakemeier/dpa/picture alliance
ভোটগ্রহণের দিন রোববার
জার্মানিতে ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণত রোববারের দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়৷ নাগরিকেরা ছুটির দিনে নির্বিঘ্নে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হলে গণনা শুরু হয়৷ শিল্পোন্নত দেশ হয়েও জার্মানি নিরাপত্তার খাতিরে এখনো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে না৷ কাগজের ব্যালট গণনার পর দ্রুত ফলাফল জানতে অবশ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Stratenschulte
ভোটের ফল প্রকাশের পর জনগণ ‘ক্ষমতাহীন’
নির্বাচনি প্রচারের শেষে ভোট দেবার সময় পর্যন্ত ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী ও দলকে বেছে নিতে পারেন৷ তবে জার্মানিতে সাধারণত জোট সরকার ক্ষমতা গড়ে৷ নির্বাচনের পর আসনসংখ্যার বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী দল জোট গড়ার উদ্যোগ শুরু করে৷ সাধারণত প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর নির্দিষ্ট শরিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ দলীয় কর্মসূচি নিয়ে দরকষাকষির পর জোট সরকারের ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি স্থির হয়৷