গায়ের রং যদি কালো হয়, তাহলে দৃশ্যত কোনো ডিস্কোয় ঢুকতে গেলেও গেটে ‘বাউন্সার’ বাধা দিয়ে বলে, ‘প্রবেশ নিষেধ’৷ অথচ তার আর কোনো কারণ নেই: শুধুমাত্র গাত্রবর্ণ৷ এই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে এবার মামলা করেছেন এক কৃষ্ণাঙ্গ৷
বিজ্ঞাপন
অবশ্য ডিস্কোর বাউন্সার তো আর হাল আমলে খোলাখুলি বর্ণবৈষম্য করতে পারে না৷ তাই তার নানা অজুহাত জানা আছে৷ কখনো সে বলে, প্রাইভেট ফাংশন; কখনো বলে, রিজার্ভেশন লাগবে; কখনো বলে, বাঁধা খদ্দেরদের জন্যে৷ অর্থাৎ হামাদো দিপামার ঢুকবার জো নেই৷
২০০২ সালে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান বুর্কিনা ফাসোর এই মানুষটি৷ ডিস্কোয় ঢুকতে না পারাটা তাঁর কাছে ‘‘রোজকার অভিজ্ঞতা'', বলেন ৩৯ বছর বয়সি দিপামা৷ তাঁর অপরাপর বন্ধুবান্ধবের অভিজ্ঞতাও এক৷ অনেকে তো সন্ধ্যায় কোথাও একটা যাবার চেষ্টা করাই ছেড়ে দিয়েছেন৷ কেননা তা-তে লাভ কিছুই হয় না, পড়ে থাকে শুধু অপমানবোধ৷
দিপামা ইতিমধ্যে মিউনিখ শহরের বহিরাগত উপদেষ্টা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য৷ কাজেই তিনি আর ডিস্কোর বৈষম্য মেনে নিতে রাজি নন৷ অপরাপর ছ'জন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দিপামা ২০১৩ সালের এপ্রিলে মিউনিখ শহরের ডিস্কোগুলিতে ঢোকার চেষ্টা করেন৷ বন্ধুরা ছিলেন আফ্রিকান, তুর্কি, ফরাসি, গ্রিক ও জার্মান৷ দেখা যায়, ২৫টি ডিস্কোর মধ্যে ২০টি ডিস্কোতে দিপামা ও তাঁর এক কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধুকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ এক তুর্কি বন্ধুকেও বহুবার গেট থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অপরদিকে দিপামার শ্বেতাঙ্গ সহচররা সকলেই বিনা বাধায় ঢুকতে পেয়েছেন৷
দিপামা এই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হবার সিদ্ধান্ত নেন৷ তিনি চান ক্ষতিপূরণ৷ তাঁর পক্ষে রয়েছে জার্মানির বৈষম্য বিরোধী আইন, যা কিনা বলে যে, জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, প্রতিবন্ধিত্ব বা মতাদর্শের কারণে বৈষম্য নিষিদ্ধ৷ কিন্তু জটিলতাও আছে: একটি ক্লাবের কি তার সদস্যদের বেছে নেবার অধিকার নেই? নিজের বাড়ির উপর বাড়িওলার কতোটুকু অধিকার? বৈষম্য বলে কা-কে?
গন্তব্য, পার্টি! জার্মানরা বেপরোয়া যেখানে...
সংস্কৃতি? না, ধন্যবাদ৷ অনেক জার্মানের কাছে ছুটি মানে ‘পার্টি টাইম’৷ অবশ্য মায়র্কা দ্বীপের ‘বালারমান ৬’ সমুদ্রসৈকতে মদ্যপানের উপর খানিকটা বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে৷ তাই বেপরোয়া হতে বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য অনেকে৷
ছবি: Getty Images
বিদায় ‘বালারমান ৬’?
পাব, গান এমনকি সিনেমাতেও খুঁজে পাওয়া যায় ‘বালারমান ৬’ সমুদ্রসৈকতকে৷ মায়র্কা-র এই (অ)খ্যাত সৈকত কোনো এক কারণে অধিকাংশ জার্মানের অত্যন্ত প্রিয়৷ কিন্তু সম্প্রতি এই সৈকতে মদ্যপানের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ দশটার পর মদ্যপান করা যাবেনা, ককটেল পান করতে হবে নির্দিষ্ট হারে – এসব নিয়মে হতাশ অনেকে৷ কিন্তু তাই বলে কি থেমে থাকবে পার্টি?
ছবি: picture-alliance/dpa
সকাল আটটায় পার্টি শুরু
মায়র্কা-র দক্ষিণের দ্বীপ ইবিজা৷ গত শতকের নব্বই দশক থেকেই দ্বীপটি ক্লাবের জন্য বিখ্যাত৷ এখানকার ‘স্পেস’ ক্লাবটি বিশ্বের সবচেয়ে সেরা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সংগীত বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ডিজেম্যাগ’৷ সম্ভবত ক্লাবটির অস্বাভাবিক পার্ট টাইমের জন্য এই স্বীকৃতি৷ এখানে পার্টি শুরু হয় সকাল আটটায়৷
ছবি: Getty Images
অন্য ঠিকানা
মায়র্কা এবং ‘বালারমান’ ছাড়াও স্পেনের মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন এলাকা তরুণ পর্যটকদের বিশেষ পছন্দ৷ উত্তর ইউরোপের হাজার হাজার পর্যটক কস্টা ব্রাভা’র লোরে ডে মার-এ যেতে পছন্দ করেন৷ জার্মানদের মধ্যে ১৩ শতাংশ স্পেন ভ্রমণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন পছন্দ: ক্রোয়েশিয়া
পহেলা জুলাই থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছে ক্রোয়েশিয়া৷ সেদেশের স্রচে সৈকতে প্রচুর পর্যটক ভিড় করেন৷ জার্মানরাও সেখানে নিজেদের একটি জায়গা করে নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/PIXSELL
কৃষ্ণ সাগরে বিনোদন
বুলগেরিয়ার কৃষ্ণ সাগরের সৈকতও পার্টির জন্য উপযুক্ত৷ বিকেল থেকেই এখানে জমে আড্ডা৷ আর গ্রিসেও জার্মানদের ভালো ভিড় থেকে৷ ব্রিটিশ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মানুষও এসব জায়গা পছন্দ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন নাগরিকত্বের সন্ধান?
গোটা বিশ্বের আড্ডাবাজদের আমন্ত্রণ জানায় ইউক্রেনের ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের ‘মিনিস্টার অফ গুড মুডস’৷ কাজান্ট্রিপ উৎসবের কর্মকাণ্ড অনেকটা একটি দেশের মতো পরিচালিত হয়৷ এই উৎসবের জন্য রয়েছে ভিসা, সরকারি চাকুরি এবং সংবিধান৷ প্রতি বছর এক লাখ সত্তর হাজারের মতো তরুণ-যুবা এই উৎসবে হাজির হন৷ জার্মানরা এই উৎসবের ‘নাগরিক’ হতে পারেন, এ জন্য প্রয়োজন শুধু ‘ভালো মুড’ এবং কমলা রংয়ের পোশাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উদ্যাপনে আভিজাত্য
যারা বৈচিত্রময়তার চেয়ে রুচিকে বেশি প্রাধান্য দিতে আগ্রহী, তাদের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে স্যাঁ ত্রোপে বা সেন্ট ট্রপেজ৷ দক্ষিণ ফ্রান্সের এই পার্টি গন্তব্য সেই ১৯৭০ থেকেই বিশেষ প্রসিদ্ধ৷ তবে খরচাপাতির ক্ষেত্রে হিসেবী পার্টিপ্রেমিদের জন্য এই গন্তব্য বিশেষ আকর্ষণীয় নয়৷ যদিও এখন সেখানেও দরদামের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং নির্দিষ্ট দরে অনির্দিষ্ট হারে মদ্যপানেরও সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
উত্তর সাগরের সৈকতে
জার্মানদের সবচেয়ে প্রিয় ছুটি কাটানোর গন্তব্য আপন দেশ জার্মানি৷ ফলে জার্মানির উত্তরাঞ্চলের সিল্ট দ্বীপে পার্টি করতে যান অনেক জার্মান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রঙিন এবং উষ্ণ
উত্তর জার্মানির ফিশ স্যান্ডউইচ এবং স্পার্কলিং ওয়াইন হয়ত এখানে পাওয়া যাবেনা, তবে পার্টির উপযোগী সবকিছুই আছে এখানে৷ বলছি ভারতের গোয়ার কথা৷ পার্টির খোঁজে দুনিয়া ঘোরাদের জন্য একটি পছন্দ হতে পারে এই এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মায়ামিতে স্বাগতম
মায়ামি সৈকতের অন্যতম পরিচিত এক রাস্তার নাম ‘ওশেন ড্রাইভ’৷ টেলিভিশনের কল্যাণে জার্মান পর্যটকরাও এই জায়গা সম্পর্কে পরিচিত৷ অনেক টেলিভিশন সিরিজে মায়ামিকে দেখানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শালোম, পার্টি!
তেল আভিভে এই তরুণ-যুবাদের হাতে হঠাৎ পানি পিস্তল দেখে যে কেউ হয়ত ঘাবড়ে যেতে পারেন, তবে এগুলো শুধুই মজা করার জন্য৷ রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ইসরায়েল ক্রমশ পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে৷ সে দেশে রয়েছে অসংখ্য ক্লাব, পাব, রেস্তোরাঁ এবং লম্বা সমুদ্র সৈকত৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
ডিস্কো কর্তৃপক্ষ যে সব নিরাপত্তা সংস্থাকে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের ভার দেন, তাদের যুক্তি হলো, তারা ট্র্যাকস্যুট এবং নোংরা কেডস পরা অতিথি, কিংবা মাতাল কি অপ্রাপ্তবয়স্কদেরই গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়৷ এখন তারা যে সত্যি বলছে, না মিথ্যে বলছে, সেটা প্রমাণ করবে কে এবং কিভাবে? অবশ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ আনাটা যে একেবারে অসম্ভব নয়, তার প্রমাণ: হ্যানোভারের একটি আদালত তুর্কি বংশোদ্ভূত বাদীপক্ষকে এক হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর করেন, কেননা তাঁকে একটি ডিস্কোয় ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ অনুরূপভাবে স্যাক্সনি রাজ্যেও এক সিরীয় ছাত্র ৫০০ ইউরো ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল৷
বৈষম্য শুধু ডিস্কোয় ঢুকতে দেওয়া কি না দেওয়া নিয়ে, এটা ভাবলে গোটা সমস্যাটাকে একটা খেলো এবং হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ বস্তুত জার্মানিতে যে সব মানুষ তথাকথিত ‘‘অভিবাসী পটভূমি'' থেকে এসেছেন, তাদের কর্মসংস্থান এবং চাকুরি ক্ষেত্রেও নানা বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয়৷ এই বৈষম্যমূলক মনোবৃত্তির কারণ হিসেবে সমাজতত্ত্ববিদরা দেখছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মানুষজনের অনিশ্চয়তা বেড়েছে, তারা নিজেদের বিপন্ন বোধ করছে৷ তাদের নিজেদের চোখে তাদের নিজেদের মূল্য যতটা কমছে, ততই তারা তাদের চেয়েও অসহায়, অনধিকারী মানুষদের হেয় করতে চাইছে৷
দিপামা তাঁর নিজের ও তাঁর মেয়ের জন্য একটি নতুন ফ্ল্যাটের খোঁজ করছেন৷ কোনো এক বাড়িওলার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হচ্ছে৷ ‘‘আপনি কোত্থেকে এসেছেন?'' বাড়িওলার প্রশ্ন৷ দিপামার উত্তর: ‘বুর্কিনা ফাসো৷' আর কিছু বলার দরকার হয়নি৷ বাড়িওলা সেখানেই লাইন কেটে দিয়েছেন৷