বুধবার জাহাজে বিস্ফোরণের কথা জানিয়েছিল রাশিয়া। বৃহস্পতিবার তা ডুবে গেল কৃষ্ণসাগরে।
বিজ্ঞাপন
কৃষ্ণ সাগরে ডুবে গেছে রাশিয়ার অন্যতম যুদ্ধজাহাজ মসকভা। বৃহস্পতিবার রাশিয়া একথা স্বীকার করে নিয়েছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের ছোঁড়া রকেটের আঘাতেই বিস্ফোরণ হয় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ওই যুদ্ধজাহাজে। এরপরেই ক্রমশ ডুবে যায় জাহাজটি।
ইউক্রেনের যে গ্রামের চাষিদের যুদ্ধও থামাতে পারেনি
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর দেশের সব নারী, শিশু এবং ষাটোর্ধ পুরুষদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে বলেছিল ইউক্রেন সরকার৷ কিন্তু ইয়াকভলিভকা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ যানি৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গম চাষ করছেন তারা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কৃষকদের গ্রাম
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর খারকিভের কাছে ইয়াকভলিভকা গ্রাম৷ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী৷ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ তারপর থেকে দেশ ছেড়েছেন অন্তত ৪০ লাখ ইউক্রেনীয়৷ কিন্তু ইয়াকভলিভকার অধিকাংশ মানুষ কোথাও যাননি৷ কৃষক অধ্যুষিত ছোট্ট গ্রামটির অনেকে এখনো সুযোগ পেলেই নেমে পড়েন কৃষিকাজে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
মৃত্যুঝুঁকি
হামলা শুরুর এক সপ্তাহ পর খারকিভেও বোমা ফেলতে শুরু করে রাশিয়া৷ ইয়াকভলিভকা গ্রামে বোমার আঘাতে মারা যান চার জন, আহত হন ১১ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
আতঙ্কের সেই রাত
প্রথম বোমা হামলার মনে পড়লে নিনা বোনদারেঙ্কো এখনো আঁতকে ওঠেন৷ জানালেন, সেদিন সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন তারা, ‘‘ সেদিন সেলারে বসে বসে শুধু ঈশ্বরকে স্মরণ করছি৷ বাচ্চাগুলোকে কম্বল জড়িয়ে শুইয়ে দিয়েছিলাম৷কিন্তু আমরা বড়রা ভোর তিনটা কি চারটা পর্যন্ত একটুও ঘুমাতে পারিনি৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
গ্রামে কেন হামলা?
গ্রামের স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প করেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷ধারণা করা হয়, সেখানেই বোমা ফেলতে চেয়েছিল রুশ সৈন্যরা৷ কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় স্কুল ভবনটি প্রায় অক্ষত থেকে যায়৷ রয়টার্স অবশ্য বলছে, রুশ বাহিনী ইয়াকভলিভকা গ্রামে সত্যিই হামলা চালিয়েছিল কিনা তা তারা যাচাই করে দেখতে পারেনি৷রাশিয়া দাবি, তারা বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা চালায়নি৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কৃষিপণ্য উৎপাদনে ইউক্রেন
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন৷ রুটির জন্যও বিখ্যাত দেশটি৷ইয়াকভলিভকা গ্রামে এখনো গম চাষ চলছে৷ তবে ক্ষেতে গমের বীজ বপণ করা হলেও গম শেষ পর্যন্ত ঘরে তোলা সম্ভব হবে তো? এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান ‘গ্র্যানারি অব স্লোবোদা’র পরিচালক ভাদিম আলেকসান্দ্রোভিচ৷ অথচ গত মৌসুমে ৩০০০ টন গম, ৩০০০ টন সূর্যমুখী এবং ১০০০ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছিল তার প্রতিষ্ঠান!
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অজানা ভবিষ্যৎ
আলেকসানদ্রোভিচ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ আমরা জানি না কী হতে চলেছে৷আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে কী কী হতে চলেছে তা-ও বুঝতে পারছি না৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
তবুও স্বপ্ন দেখেন ভেরা বাদেঙ্কো
যুদ্ধ শুরুর আগে ৫৩৩ জনের গ্রাম ছিল ইয়াকভলিভকা৷ ১৩৩ জন প্রাণভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন৷ কিন্তু পরে অন্য এলাকা থেকে কিছু মানুষ আশ্রয় নেয়ায় গ্রামের লোক সংখ্যা এখন ৪৩৬৷ বেঁচে থাকলে আবার নিজের গ্রামকে সুন্দর করে সাজাতে চান তারা৷ ৬৬ বছর বয়সি ভেরা বাদেঙ্কোর চাওয়া অবশ্য এত বড় কিছু নয়৷ তার ঘর এখন প্রায় ধ্বংস্তূপ৷ সুসময় এলে ঘরটা নতুন করে বানাবেন, সবার আগে ঠিক করবেন রান্নাঘরটা৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
7 ছবি1 | 7
জাহাজ ডুবে যাওয়ার পরে পেন্টাগন এবিষয়ে মন্তব্য করেছে। তাদের বক্তব্য, ইউক্রেন আগ্রাসনে রাশিয়ার এই জাহাজডুবি বড় ধাক্কা। রাশিয়া গত ৫০ দিন ধরে কৃষ্ণসাগরে ক্ষমতা প্রদর্শন করছিল। কার্যত ব্লকেড তৈরি করে রেখেছিল রাশিয়ার নৌবাহিনী। জাহাজডুবির ফলে রাশিয়া কিছুটা হলেও পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। রাশিয়া অবশ্য এখনো এবিষয়ে কোনো পাল্টা মন্তব্য করেনি।
অ্যামেরিকার সতর্কবার্তা
সিআইএ ডিরেক্টর উইলিয়াম বার্নস বৃহস্পতিবার একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছেন। তার বক্তব্য, রাশিয়া ইউক্রেনে যেভাবে অভিযান চালাতে চেয়েছিল, তা সফল হয়নি। ইউক্রেন এতটা প্রতিরোধ করবে, রাশিয়া তা ভাবতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া যে কোনো সময় কম শক্তির পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে সিআইএ প্রধান সতর্ক করেছেন।
বুচার চেয়ে বোরোদিয়াংকা শহরে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক: জেলেনস্কি
বুচা শহর ছেড়ে রুশ বাহিনী সরে যাওয়ার পর সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে৷ এবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করলেন বুচার পাশের শহর বোরোদিয়াংকায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ৷
ছবি: Jamie Wiseman/dmg media Licensing/picture alliance
কোথায় এই বোরোদিয়াংকা?
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত বোরোদিয়াংকা৷ বুচা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার৷ ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসন শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই শহরটি দখল করে রুশ বাহিনী৷ গত সপ্তাহে সেখান থেকে সরে যায় তারা৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
ধ্বংসস্তূপ
রুশ সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দারা ধীরে ধীরে শহরটিতে ফিরতে শুরু করেছেন৷ বিমান হামলা ও মর্টার শেলের আঘাতে শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ প্রায় কোনো ভবনই এখন আর আস্ত নেই৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
নিখোঁজদের সন্ধান
বোরোদিয়াংকার বাসিন্দারা ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ধ্বংসাবশেষে মরদেহ ও জিনিসপত্রের সন্ধান করছেন৷ শহর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বুচা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ অন্যদিকে বোরোদিয়াংকায় বেসামরিক নাগরিকদের বাসাবাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Vadim Ghirda/AP Photo/picture alliance
তখনও বাসিন্দারা ছিলেন
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বোরোদিয়াংকা শহরের বাসিন্দা ভাদিম জেগ্রেবেলনি জানিয়েছেন, তার মা, ভাই এবং অন্য স্বজনেরা একটি ভবনের বেসমেন্টে আশ্রয় নেয়ায় বেঁচে গেছেন৷ কিন্তু ভবনটির ওপরের তলাগুলোতেও বোমাবর্ষণের সময় মানুষ ছিলেন৷ এবং তারা আর বের হতে পারেননি৷
ছবি: Aleksey Filippov /AFP
জেলেনস্কির বক্তব্য
টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে জেলেনস্কি বুচার চেয়ে বোরোদিয়াংকার পরিস্থিতি আরো খারাপ বলে দাবি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে পরিস্থিতি আরো খারাপ৷ রুশ দখলদাররা আরো বেশি মানুষকে হতাহত করেছে এখানে৷’’ তবে হতাহতের কোনো সংখ্যা বা সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তিনি দাখিল করেননি৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনাদের ভয়ংকর নৃশংসতার জন্য অভিযুক্ত করেছেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারে স্থাপন করা নুরেমবার্গে ট্রাইব্যুনালের মতো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Jamie Wiseman/dmg media Licensing/picture alliance
6 ছবি1 | 6
বস্তুত, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন অভিযান শুরু করার পরেই ভ্লাদিমির পুটিন পরমাণু অস্ত্র ব্যবাহরকারী সেনা বাহিনীতে হাই অ্যালার্ট জারি করেছিলেন।
জুন মাসে ইউক্রেনের ফুটবল ম্যাচ
গত ২৪ মার্চ বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ালিফায়ারে খেলার কথা ছিল ইউক্রেনের। কিন্তু যুদ্ধের জন্য তারা সে ম্যাচ খেলতে পারেনি। ফিফার কাছে ইউক্রেন অনুরোধ করেছিল, ম্যাচটি যেন পিছিয়ে দেওয়া হয়। ফিফা জানিয়ছে, পরিবর্তিত তারিখ ১ জুন। গ্লাসগোয় সেই ম্যাচ খেলা হবে। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে হবে ইউক্রেনকে। সেই ম্যাচ জিতলে ৫ জুন ওয়েলসের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে ইউক্রেন।
অনাহারে মারা যাচ্ছেন মারিউপলের মানুষ
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রধান ডেভিড বিসলি অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, গ্রাউন্ড রিপোর্ট বলছে, মারিউপলে খাবার এবং জলের অভাবে মানুষ মরতে বসেছে। বহু মানবাধিকার কর্মী সেখানে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাশিয়া ওই অঞ্চল কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে। খাবারও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে সেখানকার মানুষ অনাহারে ভুগছেন।
বাইডেনের ঘোষণা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, উচ্চপদস্থ মার্কিন প্রশাসকরা কিয়েভে যেতে পারেন। সংবাদমাধ্যমকে বাইডেন জানিয়েছেন, যুদ্ধ এখন পূর্ব দিকে সরে গেছে। সে কারণেই ইউক্রেনের রাজধানীতে যাওয়ার কথা ভাবছেন মার্কিন প্রশাসকরা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে চাইছেন তারা। বাইডেন নিজেও কিয়েভ যেতে চান বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে কোনো তারিখ ঘোষণা করেননি তিনি।