ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান হতে চান দুই শীর্ষ নেতা৷ অথচ প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাঁদের মধ্যে মতের মিলই বেশি৷ ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়া আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে দুজনেই বদ্ধপরিকর৷ টেলিভিশন ডুয়েলে সেই মনোভাবই তুলে ধরলেন দু’জনে৷
বিজ্ঞাপন
এ এক আজব নির্বাচন৷ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়েও বড় বিষয় ভোটারদের আদৌ ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তাঁদের প্রতিনিধিদের ক্ষমতা বেড়েই চলেছে৷ অথচ পার্লামেন্টে কী হয়, সেখানে গৃহীত সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে – এ সব নিয়ে ভোটাররা তেমন মাথা ঘামান না৷ এবারের নির্বাচনে যে শিবির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তাদের নেতাই ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান নিযুক্ত হবেন৷
ইইউ অঞ্চলের বিদ্যমান সংকট নিরসনে নতুন বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ ছবিঘরে সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নির্মাণাধীন ভবন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে৷ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন৷ ভবন নির্মাণের সময় প্রচুর শব্দ হয়, ধুলাও হয় প্রচুর৷ আর্থিক দিকটা দেখে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর নির্মাণ শ্রমিকরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন, আশপাশের এলাকাবাসীর সব রকমের ঝামেলাই মেনে নিতে হয়৷
ছবি: DW
ইউরোপীয়দের আছে বিকল্প
চলমান সংকটের সময় ইইউ-র নানা কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির কার্যকারীতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে৷ মে মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে৷ গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমছিল৷ কিন্তু এবার ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ পার্লামেন্ট৷ এমনকি টেলিভিশনে বিতর্কের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপীয় বিস্ময়?
ইইউ-র সংশয়বাদী অংশগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিংবা জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – সবাই চায় ‘স্বল্প ইউরোপ’৷ প্রশ্ন হলো, তারা কি একটি স্থিতিশীল প্যান-ইউরোপিয়ান জোট গড়তে পারবে?
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
সংকট ব্যাবস্থাপনা
কয়েক বিলিয়ন বেইলআউট সংকটাপন্ন ইউরোপে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে৷ আর্থিক অনুদান এবং সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইইউ-র বিশেষ অর্থায়নের সহায়তা ছাড়াই চলতে পারছে৷ অন্য দেশগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন এবং আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিতে কঠোরতা আসার অপেক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংকট নিরসনে অলৌকিকের সহায়তা?
সংকট নিরসনের আগে কারণটা জানতে হয়৷ ইইউ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ যেসব ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের কখনোই দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে তোলার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, নাগরিকদের উচিত নয় করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে বেইলআউটের দিকে এগিয়ে দেয়া৷ প্রস্তাবিত ব্যাংকিং ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ইইউকে আগেই হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য সুখবর
ইইউ অঞ্চলের ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বেকারের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে৷ অতীতে সংকটের সময় কর্মহীনদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা না করায় কঠোর আর্থিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলস থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, সংকটাপন্ন দেশগুলোর তরুণদের সহায়তা করবে ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই আরো প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইইউ অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে৷ এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং তৃতীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷ এছাড়া ইইউ-র সংকটগ্রস্ত সদস্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে অবশ্যই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
তথ্য নিরাপত্তা ২.০
ইইউ অঞ্চলে দু’বছর পর্যন্ত সবার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তথ্যের রেকর্ড রাখা আইনসম্মত৷ তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে৷ ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস এ বছরের শুরুতেই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিচারকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়৷ তাই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: CC-BY-Verena Hornung 3.0
অভিবাসন নীতিমালা
ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় এসে ৩৬০ জন আফ্রিকান অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার পর, ইইউ-র অভিবাসন নীতিমালা পড়েছে তোপের মুখে৷ নতুন বছরে ইইউ তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূল দেশ এবং ট্র্যানজিট দেশের সঙ্গে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখিত দেশগুলোকে আরো বেশি উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
ডুয়েল বলতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যে সংঘাতের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে আসে, তার ছিটেফোঁটা উত্তেজনাও অবশ্য এ দিন দেখা যায় নি৷ দুই প্রার্থীর মধ্যে মতের মিল এত বেশি, যে তাঁদের মধ্যে কোনো রকম মতপার্থক্য বার করতে সঞ্চালকদের হিমশিম খেতে হচ্ছিল৷
আগামী ২২ থেকে ২৫ মে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন৷ যে কোনো দেশের জাতীয় নির্বাচনের মতোই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের ভোটাররা তাঁদের জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন৷ কিন্তু সেখানেই মিল শেষ৷ আজকের ইউরোপীয় ইউনিয়নের অস্তিত্ব, তাদের কাজকর্মের ধারা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, লাল ফিতের ফাঁস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ এমনকি খোদ পার্লামেন্টে বসেই সংশয়বাদী দলগুলির সদস্যরা ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলির মুণ্ডপাত করেন৷
এমন প্রেক্ষাপটেই প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও শুলৎস ও ইয়ুংকার-এর ঐক্য চোখে পড়ার মতো৷ দু'জনেই মনেপ্রাণে ইউরোপীয় সমন্বয়ের পক্ষে৷ ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ঔদাসিন্য বা বিরক্তি থেকে শুরু করে ব্রাসেলস-এর আমলাতন্ত্র সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা কাটিয়ে তুলতে চান তাঁরা৷ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্বের উচ্চ হার কমাতে এবং অ্যামেরিকার গোয়েন্দাগিরির মোকাবিলা করতে তাঁরা ইউরোপকে আরও শক্তিশালী করতে চান৷