1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যবাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, ঝুঁকিতে নারীরা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ অক্টোবর ২০২২

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে৷ সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও৷ এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু এখন চরম আতঙ্কের পর্যায়ে পৌঁছেছে৷

Bangladesch | Denguefieber
ফাইল ছবি৷ ছবি: Mortuza Rashed/DW

দেশে অক্টোবর মাসের ১৫ দিনে  ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩৪ জন মারা গেছেন৷ গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ছয় জন৷ আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুইশ ৬৬জন৷

গত সেপ্টেম্বর মাসে ৩০ দিনে মারা গেছেন ২৪ জন৷ এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু এখন চরম আতঙ্কজনক পর্যায়ে আছে৷

বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকেরা বলছেন,  জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে৷ যা ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার প্রজননের জন্য সহায়ক৷ আর এবছর ডেঙ্গু আক্রান্তরা শক সিন্ড্রোমে মারা যাচ্ছেন বেশি৷ কারণ তারা দেরিতে হাসপাতালে যাচ্ছেন৷ মেডিক্যালের পরিভাষায়, শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণকে শক সিন্ড্রোম বলা হয়৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে  পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৪ হাজার ৩২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন৷ আর এখন সারাদেশে হাসাপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী আছেন দুই হাজার ৮৮৯ জন৷

জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮৯জন৷ এরমধ্যে জুন মাসে দুই জন, জুলাই মাসে নয় জন, আগস্ট মাসে ১১জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ২৪জন৷ অক্টোবর মাসের ১৫ দিনে ৩৪জন৷

হাসপাতালে যাওয়ার আগেই শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে: ডা. এম আব্দুল্লাহ

This browser does not support the audio element.

ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অল্প-বিস্তর পাওয়া যাচ্ছিল৷  তবে মে মাস থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ তখন থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷

মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন একশ ৬৩জন, জুন মাসে সাতশ ৩৭জন, জুলাই মাসে এক হাজার  পাঁচ ৭১জন, আগস্টে তিন হাজার ৫২১জন, সেপ্টেম্বরে নয় হাজার ৯১১জন৷ চলতি অক্টোবর মাসের ১৫ দিনে আট হাজার ২৩৪জন৷

ঢাকার বাসিন্দারাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি৷ ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে এখন ঢাকা মেডিক্যাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, সোহারাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেশি৷

জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন ১৭ হাজার ৯২৪জন আর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ছয় হাজার ৪০২জন৷

কারা আক্রান্ত হচ্ছেন, কারা মারা যাচ্ছেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ২০ বছরের বেশি বয়সিরাই ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন৷ তাদের মধ্যে মৃত্যুর হারও বেশি৷ নিহতদের ৬৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছেন৷ অন্যদিকে ডেঙ্গুতে মৃতদের মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি৷ শিশুদের মধ্যেও মৃত্যু হারও বেশি৷

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান  (আইইডিসিআর) বলছে, ডেঙ্গুর চারটি ভ্যারিয়েন্ট আছে৷ এগুলো হচ্ছে ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪৷  এই চারটি ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে এ বছর তিনটি সক্রিয়৷ এবছর ডেন-৪ ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ বেশি৷ আবার ডেন-৩ ও ডেন-১ ভ্যারিয়েন্টে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে৷ ২০১৮ সালের পর  ডেন-১ ভ্যারিয়েন্টে মানুষের আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি৷ ২০২১ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ডেন-৩ ভ্যারিয়েন্টে৷ এবার তিনটি ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রকোপ বেশি৷

যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই শক সিন্ড্রোমে মারা যাচ্ছেন বলে জানান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম আব্দুল্লাহ৷ তিনি বলেন, ‘‘দেরিতে হাসপাতালে যাওয়া বা সঠিক সময়ে না যাওয়ার কারণেই শক সিন্ড্রোম হচ্ছে৷ হাসপাতালে যাওয়ার আগেই রোগীদের শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে৷ ফলে হাসপাতালে যখন নেয়া হয় তখন তাদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে৷ দুই-তিন দিনের মধ্যেই তারা মারা যান৷’’

তার কথা, ‘‘এরজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই৷ তাই জ্বর বা সর্দি-কাশি হলেই পরীক্ষা করাতে হবে৷ প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে৷ দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷ যথা সময়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে ভয়ের কোনো কারণ নেই৷’’

সিটি কর্পোরেশন আসলে মশার উৎস ধ্বংস করছে না: অধ্যাপক কবিরুল বাশার

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘এবার ডেন-৩ এবং ডেন-৪ এ আক্রান্ত হচ্ছে বেশি৷ এটা সিরিয়াস বেশি৷ এটা শরীরে বেশি জটিলতা সৃষ্টি করে৷ আবার আগে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তারাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে৷ তাদেরও জটিলতা বেশি হচ্ছে৷ আর ঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে না যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে৷’’

এডিশ মশা চার গুণ বেশি

এবার বছরের শুরুতেই ঢাকায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার ঘনত্ব বেশি ছিল৷ আর এখন থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশা আরো বাড়ছে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ববিদ কবিরুল বাশার৷

তিনি বলেন, ‘‘এবার যে এডিস মশা বেশি হবে তা আমরা আগেই বলেছিলাম৷ তবে অক্টোবর মাসে এরকম আগে হয়নি৷ জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এবার থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে৷ স্বচ্ছ পানি জমছে যেখানে ডেঙ্গুর প্রজনন হয়৷ টানা বৃষ্টি হলে এরকম হতো না৷ তাই এবার জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ৷’’

ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মশার ঘনত্ব নিয়ে যে প্রাক-মৌসুম জরিপ করে তা থেকে এই সময়ে এডিস মশার ঘনত্ব চার গুণ বেড়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়৷

অধ্যাপক ডা. এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘এডিস মশা রাতে নয়, দিনে কামড়ায়৷ তাই দিনের বেলা সতর্ক থাকতে হবে বেশি৷ দিনে ঘুমালে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে৷ বিশেষ করে শিশুদের ব্যাপারে বাসায় ও স্কুলে সতর্ক থাকতে হবে৷ তাদের শরীর ঢেকে পোশাক পরাতে হবে৷’’

অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘‘আমরা একটা জরিপ করে দেখেছি যে, এদেশের মানুষ এডিস মশা কীভাবে হয়, প্রজননস্থল, বদ্ধ, স্বচ্ছ পানি-এই সবকিছুই জানে৷ তারপরও তারা সচেতন হন না৷ এটা একটা মানসিকতা৷ এর পরিবর্তন দরকার৷ আর সিটি কর্পোরেশন যতই বলুক তারা আসলে মশার উৎস ধ্বংস করছে না৷ উড়ন্ত এডিশ মশা থেকে যাচ্ছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ