1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যবাংলাদেশ

ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ মে ২০২৩

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর শঙ্কা বাড়ছে৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার ডেঙ্গু গত বছরের চেয়েও প্রকট হবে৷ মৌসুমের শুরুতেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ আর বৃষ্টি শুরু হলে জুন থেকে অক্টোবরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে৷

Bangladesch | Dengue-Fieber
ফাইল ফটো৷ছবি: Mortuza Rashed/DW

এদিকে ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগে পরিণত হয়েছে৷ এর কোনো বর্ষা বা শীত নেই৷ ৩১ ডিসেম্বর তীব্র শীতে একদিনে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন৷

ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার ওপর জরিপ এবং হাসাপাতালে রোগী ভর্তির হার- দুটিই খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে৷

বিশ্লেষকরা বলছেন বাংলাদেশে এখন ১২ মাসই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে৷ কারণ বৃষ্টির বাইরেও উন্নয়নমূলক কাজসহ নানা কারণে এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে৷

ডেঙ্গু পরিস্থিতি

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১,০৮২ জন৷ মারা গেছেন ১২ জন৷

ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি৷ সারাদেশে মোট ভর্তি রোগীর ৩৯০ জনই ঢাকায়৷ মারা গেছেন ৯ জন৷

এরপরই চট্টগ্রামের অবস্থান৷ চট্টগ্রামে এই বছর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২২৮ জন৷ মারা গেছেন তিনজন৷

২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন৷ মারা গেছেন ২৮১ জন৷

২০২১ সালে মোট ভর্তি হয়েছিলেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন৷ মারা যান ১০৫ জন৷

ডেঙ্গু এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে: ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

This browser does not support the audio element.

অ্যাডিস মশার জরিপ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ বলছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার চেয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার উপস্থিতি বেশি৷

যেসব বাড়িতে এডিস মশা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ৩৯.৮ শতাংশ বহুতল ভবন এবং ৩২ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবন৷  

গত বছর এটা ছিল গড়ে শতকরা ১১ ভাগ৷ ঢাকার চার শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে৷ আর এই এডিস মশাই ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক৷

চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১০৮টি ওয়ার্ডে চালানো হয় এই জরিপ৷ এর মধ্যে উত্তর সিটির ৪০টি এবং দক্ষিণ সিটির ৫০টি ওয়ার্ডের তিন হাজার ১৫০টি বাড়িকে জরিপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷

এই জরিপের সঙ্গে যুক্ত কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘‘গতবারের চেয়ে এবার এডিস মশার ঘনত্বটাও একটু বেশি দেখা যাচ্ছে৷ তবে এই জরিপে আসল চিত্র পাওয়া যায়নি৷ কারণ ওই সময়ে বৃষ্টি ছিল না৷ আমরা এই মাসের (মে) শেষ দিকে আরেকটা জরিপ করব সেটায় আরো প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে৷’’

তার কথা, ‘‘এখন আর বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না৷ ভবন নির্মাণসহ নানা কাজে সারাবছরই পানি জমিয়ে রাখা হয়৷ তাই যখন মৌসুম নয়, তখনও এডিস মশা পাওয়া যায়৷ ডেঙ্গু এখন তাই সারা বছরের রোগে পরিণত হয়েছে৷''

মশা মারার ভুল পদ্ধতি

প্রতিবছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে মশা নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে৷ গত ছয় অর্থবছরে মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যয় করেছে প্রায় ৩৮৭ কোটি টাকা৷

তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি নিজেই স্বীকার করেছেন রাজধানীর মশা নিধনে এতদিন যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে, সেটি ভুল ছিল৷

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মায়ামি শহরে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে ঢাকায় এসে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি৷ এতে মশা ধ্বংস হয়নি, বরং অর্থের অপচয় হয়েছে৷ আমরা মায়ামিতে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তা ঢাকায় মশা নির্মূলে কাজে লাগাতে চাই৷''

২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই সিটি কর্পোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ রেখেছে ১৪৭ কোটি টাকা৷ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ ১০১ কোটি টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রেখেছে ৪৫.৭৫ কোটি টাকা৷

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এরইমধ্যে তাদের মশক নিধন পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে৷ উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কীটবিদের পরামর্শে লার্ভিসাইডিংয়ের সময় পরিবর্তন করে সকাল ৮টার বদলে ভোর ৬টা থেকে শুরু করেছি৷ কেননা সূর্যের উত্তাপ যত বাড়ে লার্ভাগুলো পানির নিচে চলে যায়, তাতে ওপরে লার্ভিসাইডিং করলে কার্যকারিতা পাওয়া যায় না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আর বায়োলজিক্যালি মশা কন্ট্রোল করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, এতে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হয় না৷ এছাড়া ডেঙ্গুর লার্ভা ধ্বংসে এলাকাগুলোর জলাশয় ও ড্রেনে গাপটি মাছও ছাড়া হচ্ছে৷’’

ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমরা সচেতনতার ওপর বেশি জোর দিয়েছি৷ আগে যেটা মাইক ভাড়া করে রিকশায় রিকশায় মাইকিং করাতাম, সেটার বদলে এখন প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য হ্যান্ডমাইক কিনে দেওয়া হয়েছে৷ সকালে যেখানে যখন স্প্রে করা হচ্ছে, সেখানে একই সময়ে মাইকিংও করা হচ্ছে৷ তারাই আবার লিফলেটও বিতরণ করছেন,'' বলে জানান এই কর্মকর্তা৷

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশন আগের পদ্ধতিতেই আছে৷

ডেঙ্গু এখন সারাবছর

কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর ডেঙ্গু এখন সারা বছরই হচ্ছে৷ এর কারণ ডেঙ্গুর যে বুনো এডিস মশা সেটাও বাড়ছে৷ এই মশা গাছের কোটরে স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নেয়৷ আবার এখন গ্রামেও উন্নয়ন কাজ হচ্ছে৷ তাই সারা বছর গ্রামেও স্বচ্ছ পানি জমিয়ে রাখা হয়৷ ফলে বর্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না৷ বর্ষায় প্রকোপ বাড়ে৷’’

‘‘আর শহরে বিশেষ করে ঢাকা সিটিতে শুধু বাসা-বাড়ি নিয়েই কথা বলা হয়৷ কিন্তু বহুতল ভবন নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজের কারণে ওইসব এলাকা এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে সারা বছরই,’’ জানান তিনি৷

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা তো এবার শীতকালেও ডেঙ্গু দেখেছি৷ ডেঙ্গু এখন শুধু শহরকেন্দ্রিক রোগ নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে৷ আসলে সবার আগে প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা৷ সারা বছরই সচেতন থাকতে হবে৷ স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা জন্মায়৷ তাই তিন দিনের বেশি পানি জমতে দেয়া যাবে না৷ তাই মশার প্রজনন ধ্বংসে প্রশাসনসহ সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে৷’’

গতবারের চেয়ে এবার এডিস মশার ঘনত্বটাও একটু বেশি দেখা যাচ্ছে: অধ্যাপক কবিরুল বাশার

This browser does not support the audio element.

তার মতে, ‘‘এর চিকিৎসা নিয়ে কোনো সংকট নেই৷ লক্ষণ দেখে চিকিৎসা করতে হয়৷ জ্বর হলে নিজ থেকে প্যারাসিটামলের বাইরে কিছু সেবন করা যাবে না৷ তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে৷ রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ তবে রোগী বেড়ে গেলে চিকিৎসার চাপ তো বাড়বে৷’’

চট্টগ্রামের ডেঙ্গু পরিস্থিতি

চট্টগ্রামেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে৷ গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৪১৭ জন৷ মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের৷

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘‘বৃষ্টি শুরু হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে৷ কারণ এখানে সিটি কর্পোরেশন মশক নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কাজ করছে না৷ অনিয়ন্ত্রিত উন্ননমূলক কাজ হচ্ছে, যা এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করছে৷ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকায় উচ্চ হারে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে৷''

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘‘এবার ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা এক গবেষণায় দেখেছি ঢাকা শহরের মানুষের ডেঙ্গু নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান আছে৷ তারা জানেন, কিন্তু সেই অনুযায়ী কাজ করেন না৷ তার গ্যারেজে পানি জমে আছে তিনি পরিষ্কার করছেন না৷’’

‘‘আসলে এই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দরকার বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা৷ শুধু ওষুধ ছিটিয়ে, ফগিং করে হবে না৷ এটা আমরা অনেক আগেই সরকারকে বলেছিলাম৷ এখন হয়তো উত্তর সিটি কর্পোরেশন বুঝতে পেরেছে৷ কিন্তু দক্ষিণ সিটি তো এখনো বোঝেনি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ