প্রতিষেধক টিকার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করা গেলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব৷ বিজ্ঞানীরা তাই এই নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরে৷ সম্প্রতি একটি প্রতিষেধকের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ওষুধ প্রস্তুতকারী ফরাসি প্রতিষ্ঠান সানোফি পাস্ট্যোর সম্প্রতি এশিয়ায় ডেঙ্গু টিকার পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে৷ শুক্রবার ‘দ্য ল্যানসেট' সাময়িকীতে প্রকাশ হয়েছে এই তথ্য৷ প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগের প্রধান জন শিভার এই বিষয়ে বলেছেন, ‘‘ডেঙ্গুকে টিকা দিয়ে প্রতিরোধ সক্ষম রোগে পরিণত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা৷''
সাধারণত কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা পেটেন্ট এবং বাজারে ছাড়ার আগে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষাকে বলা হয় তৃতীয় মাত্রার পরীক্ষা৷ ডেঙ্গু টিকার এই পরীক্ষায় অবশ্য সানোফি পাস্ট্যোর খুব বেশি সাফল্য অর্জন করেনি৷ তাদের পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দুই থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে এই টিকার সাফল্য মাত্র ৫৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ৷
রোগের নাম ‘চিকুনগুনিয়া জ্বর’
ডেঙ্গু জ্বরের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি৷ চিকুনগুনিয়া জ্বর অনেকটা তার মতোই৷ নতুন এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, কারণ আফ্রিকার এই জ্বর ইতিমধ্যে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মশাবাহিত রোগ
এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস এজিপটি নামক মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে থাকে৷ তবে কেবল নারী এডিস মশাই এই জ্বরের জন্য দায়ী৷
ছবি: picture-alliance/AP
লক্ষণ
মশার কামড় খাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে শরীরে এই রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে৷ এক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া ও শরীর বেঁকে যেতে পারে৷ জ্বর উঠতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত৷ থাকতে পারে ২ থেকে ১২ দিন৷ তবে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেঙ্গু নয়
অনেকে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর মনে করতে পারেন৷ কারণ এদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে৷ তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার মূল পার্থক্য হলো, এই জ্বরে হাড়ের জোড়াগুলো ফুলে যায়, ডেঙ্গু জ্বরে যেটা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিকিৎসা
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়৷ এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তাই চিকুনগুনিয়া সারাতে সাধারণ জ্বরের চিকিত্সা নিলেই চলবে৷ বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার ও প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে৷ তবে চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DW
ঢাকায় চিকুনগুনিয়া
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর গত বছর এই রোগের উপর একটি সমীক্ষা চালায়৷ এ সময় ঢাকার মোট ৬০১ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ এদের মধ্যে ২০৭ জনই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় জানা যায়৷ সে হিসেবে ঢাকার প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইতিহাস
১৯৫২-৫৩ সালে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় প্রথম এই রোগের আবির্ভাব ঘটে৷ বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকার দোহার ও কেরানীগঞ্জে৷ পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে নতুন করে পাবনার সাঁথিয়ায় আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ আর ঢাকায় প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালের আগস্টে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যানেলিস উইল্ডার-স্মিথ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের প্রত্যাশার তুলনায় ফলাফল অনেক কম হয়েছে৷ আমাদের ধারণা ছিল এই টিকা ৯০ শতাংশের বেশি সাফল্য দেখাতে সক্ষম হবে৷''
তবে মূল সমস্যা অন্যত্র৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু সাধারণত চার প্রকারের হয়৷ আর পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটি এই চার প্রকারের ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সমানভাবে কাজ করে না৷ ডেঙ্গু টাইপ ৩ এবং ৪ এর ক্ষেত্রে টিকাটির সাফল্যের মাত্র ৭৫ শতাংশ৷ অন্যদিকে টাইপ ১ এর ক্ষেত্র সাফল্য ৫০ শতাংশ আর টাইপ ২ এর ক্ষেত্রে সাফল্য মাত্র ৩৫ শতাংশ৷ অথচ এসব টাইপের যে কোনোটিই মানুষের শরীরে দেখা দিতে পারে৷ তাছাড়া সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ সাফল্যের অর্থ হচ্ছে, বাকি ৪৬ শতাংশের ক্ষেত্রে এই টিকা কাজ করবে না৷
উইল্ডার-স্মিথ জানান, বিশ্বের অনেক দেশে টাইপ ২ ডেঙ্গুর সংক্রমণই বেশি হয়৷ তাই সর্বশেষ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার ফলাফল তার কাছে হতাশাজনক৷
উল্লেখ্য, প্রতি বছর পাঁচ লাখের মতো মানুষ মারাত্মক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়৷ এই ভাইরাসের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে৷ ফলে এটির কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরিতে আরো গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা৷