1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডেঙ্গু ভয়াবহ হতে পারে

২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

এ বছর একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৩৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মঙ্গলবার। আর প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি মাসের ১৯ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৪ জন। যা আগের পুরো মাসের তুলনায় দুই গুণেরও বেশি।

Bangladesch | Denguefieber
ছবি: Mortuza Rashed/DW

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১২ হাজার সাতজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর এখন সারাদেশে হাসাপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী আছেন এক হাজার ৫৬০ জন।

জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৫ জন। এরমধ্যে জুন মাসে  দুই জন, জুলাই মাসে ৯ জন, আগস্ট মাসে ১১ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ দিনে ২৪ জন। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে এক জনেরও বেশি মারা যাচ্ছেন।  স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। বাড়তে পারে মৃত্যুর সংখ্যা।  মঙ্গলবার ২৪ ঘন্টায় ৪৩৮ জন ভর্তি হলেও আগের ২৪ ঘন্টায় ছিলো ৩৯২ জন।

‘গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল’

This browser does not support the audio element.

তথ্য বিশ্লেষণ

চলতি বছরে জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অল্প-বিস্তর পাওয়া যাচ্ছিল। তবে মে মাস থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৬৩ জন, জুন মাসে ৭৩৭, জুলাই মাসে এক হাজার ৫৭১, আগস্টে তিন হাজার ৫২১ জন। সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন গড়ে তিনশর বেশি রোগী  হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এটা অব্যাহত থাকলে এই  এক মাসেই হাসাপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঢাকার সরাকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে এখন ঢাকা মেডিকেল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, মুগদা হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, সোহারাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেশি। ঢাকায় বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৩৮৩ জন আর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ২৩১ জন।

ডেঙ্গু আরো বাড়বে

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম আব্দুল্লাহ বলেন,"এটা ডেঙ্গুর মৌসুম। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলো। এবার থেমে থেমে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এডিস মশাও বেশি। আক্রান্তও বেশি হচ্ছে। তবে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি।”

শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের একাংশছবি: Mortuza Rashed/DW

তিনি বলেন,"সচেতনতার অভাবেই প্রতি বছর এভাবে ডেঙ্গু হানা দেয়। শিশুদের এই সময়ে হাত পা ঢাকা জামা কাপড় পরানো উচিত। তারা দিনে ঘুমালে মশারি টানিয়ে দেয়া উচিত। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা দিনে কামড়ায়। তখন অধিকাংশ শিশু স্কুলে থাকে। স্কুল থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এখন করোনাও আছে। তাই করোনার টেস্ট করালে সাথে ডেঙ্গুর টেস্টও করাতে হবে। জ্বর হলে অপেক্ষা না করে দ্রুত টেস্ট করালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দ্রুত শনাক্ত করা যায়। ফলে ঝুঁকি কমে যায়। আর জ্বর হলে  নিজের চিকিৎসা নিজে না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরার্শ নিতে হবে। আমাদের ডেঙ্গু চিকিৎসায় কোনো সংকট নেই। তবে আবহাওয়া এবং সচেতনতার অভাবের কারণে ডেঙ্গু রোগী আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।”

‘গত এক মাসে এডিস মশা বেড়ে গেছে’

This browser does not support the audio element.

এডিস মশা চার গুণ বেশি

ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মশার ঘনত্ব নিয়ে যে প্রাক-মৌসুম জরিপ তরে তা থেকে এই সময়ে এডিস মশার ঘনত্ব চার গুণ বেড়েছে। সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এডিস মশার মৌসুমকালীন জরিপ শেষ হয়েছে। এতে ঢাকায় প্রায় ৭৭. ৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা, বাকি ২২. ১ শতাংশ এডিস মশা পাওয়া গেছে। এর আগে প্রাক-মৌসুম জরিপে ঢাকায় ৯৫ শতাংশের বেশি কিউলেক্স মশা আর পাঁচ শতাংশ এডিস মশা পাওয়া যায়। সেই তুলনায় ঢাকায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা চারগুণেরও বেশি বেড়েছে।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৮টি সাইট ও ৪০টি ওয়ার্ডে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬২টি সাইট ও ৫৮টি ওয়ার্ডে করা স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে তিন হাজার ১৫০টি বাড়ি থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

ডিএনসিসির ১৩টি ও ডিএসসিসির ১৯টি ওয়ার্ড অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুই সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডের সংখ্যা মোট ৫৯টি। ঢাকা উত্তর সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড ২৬টি  আর দক্ষিণের ৩৩টি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. আবদুল আলিম জানান,"গত এক মাসে বৃষ্টি এবং থেমে থেমে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস  মশা বেড়ে গেছে। টানা বৃষ্টিতে লার্ভা ভেসে যায়। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টিতে স্বচ্ছ পানি জমে যা এডিস মশার প্রজননের জন্য সহায়ক। সামনে আরো আরো এটা বাড়বে। কমপক্ষে আরো একমাস পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে।”

তার কথা,"যতই বলা হোক নাগরিকেরা এবং সিটি কর্পোরেশন এবং প্রশাসন এব্যাপারে সচেতন নয়। ডেঙ্গু শুরু হলে আমরা কথা বলি। কিন্তু এডিস মশার প্রজনন ঠোকাতে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সবাই জানেন স্বচ্ছ ও বদ্ধ পানিতে  এডিস মশার প্রজনন হয়। কিন্তু আগাম কোনো প্রস্তুতি থাকে না।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ