বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিশদ সংস্কার পরিকল্পনা পেশ করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসের৷ চূড়ান্ত এই ডেডলাইন মেনে তিনি সেটাই করেছেন৷ কিন্তু এ প্রস্তাব রবিবার অনুমোদিত না হলে সম্ভবত – ‘গ্রেক্সিট'!
বিজ্ঞাপন
অবশেষে কর বৃদ্ধি আর অবসার ভাতায় সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস৷ অথচ বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সংসদে বক্তৃতা দেওয়া সময়ও বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না৷ এর আগে তো নয়ই৷
গত রবিবার ছিল গ্রিসে গণভোট৷ ভোটে ৬০ শতাংশ ভোটার সংস্কারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেছেন – অর্থাৎ সিপ্রাসের হাত শক্ত করেছেন৷ ইইউ নেতৃবর্গের তরফে মৌখিক প্রতিক্রিয়া – ‘‘আমরা গ্রিক ভোটারদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করে চলবো'' – ‘পলিটিক্যালি করেক্ট' হলেও, স্বভাবতই এর ফলে গ্রিসকে উত্তরোত্তর সাহায্যদানের প্রস্তুতি অনেকটা ঘা খেয়েছে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সংসদ সভাপতি মার্টিন শুলৎস থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিককে বলতে শোনা গেছে, সংস্কারের প্রস্তাব পেশ করার দায়িত্ব এখন পুরোপুরি এথেন্সের৷
গণভোটের পর পর পুরনো অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস বিদায় নিয়েছেন, তাঁর স্থলে নতুন অর্থমন্ত্রী ইউক্লিড সাকালোটোস ব্রাসেলসে হাজিরা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো নতুন প্রস্তাবের পোর্টফোলিও ছাড়া – যা বাকি ইইউ নেতৃবর্গের পক্ষে খুবই হতাশাজনক হয়েছে৷ ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ককে বলতে শোনা গেছে: ‘‘আজ রাতে আমাকে স্পষ্টভাবে বলতে হবে যে....চূড়ান্ত ডেডলাইন এ সপ্তাহেই শেষ হচ্ছে৷''
গ্রিক হওয়ার বিপদ
গ্রিসের ইউরো এলাকায় থাকা বা না থাকা নিয়ে বিতর্ক যখন চরমে, ঠিক সেই মুহূর্তে বন শহরের গ্রিক বাসিন্দারা স্বদেশবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, কোনো পক্ষ সরাসরি সমর্থন করতে গররাজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘আমি গ্রিক শিখছি’
বন-এর একটি গ্রিক রেস্টুরেন্টের এই পেপার ন্যাপকিনটির ওপর বেশ কিছু গ্রিক শব্দ ও তাদের জার্মান অনুবাদ ছাপা রয়েছে৷ যে সব জার্মান রাজনীতিক গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসকে নতুন প্রস্তাবগুলো বোঝানোর চেষ্টায় রয়েছেন, তাদের হয়ত এই ন্যাপকিনের শব্দকোষ কাজে লাগতে পারতো!
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
জার্মানিতে গ্রিকদের কোনো কমতি নেই
জার্মানিতে ৩ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি গ্রিক অভিবাসী বাস করেন৷ বিদেশি-বহিরাগতদের কেন্দ্রীয় তালিকা অনুযায়ী গ্রিকরা হলেন জার্মানির পঞ্চম বৃহত্তম বিদেশি গোষ্ঠী: তুর্কি, পোলিশ, ইটালিয়ান এবং রোমানিয়ানদের ঠিক পরেই৷
ছবি: DW
শিয়রে সংকট
গ্রিস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণেরএকটি দেড় বিলিয়ন ইউরো পরিমাণ কিস্তি সময়মতো শোধ করতে পারেনি; কাজেই গ্রিস বস্তুত দেউলিয়া হওয়ার মুখে৷ গ্রিসের পাওনাদাররা, আইএমএফ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, গ্রিক সরকারকে শ্রম বাজারের পুনর্গঠন, অবসরভাতা হ্রাস ইত্যাদি ব্যয়সংকোচ নীতি কার্যকরি করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ROPI
আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে
বন-এর সনাতনপন্থি গ্রিক গির্জার প্রধান যাজক সোক্রাটিস ন’টালিস জানালেন যে, ব্যয়সংকোচ সংক্রান্ত প্রতিটি পদক্ষেপ কার্যকরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রিকদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে৷ জার্মান আইন মন্ত্রণালয়ের একটি জরিপ অনুযায়ী, ২০১২ সালে এই সংখ্যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
এক দেশ থেকে আরেক দেশে
জার্মানিতে গ্রিক খাবারের খুব চল, বিশেষ করে এই ধরনের ছোট্ট রেস্টুরেন্ট থেকে: যেমন স্যালাড আর সাৎসিকি সহযোগে গিরোস৷ কিন্তু এথেন্সের আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বহু জার্মান অভিবাসী গ্রিক তাঁদের মতামত ব্যক্ত করতে রাজি নন৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
গ্রিকদের মনস্থির করা উচিত
গ্রিসের এলেনা আলিকি পাপিরু প্রায় দশ বছর ধরে বন-এ আছেন; অনুবাদিকা হিসেবে কাজ করছেন৷ গ্রিসের মানুষ অতীতে একের পর এক দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার নির্বাচন করেছেন; এবার নেতা নির্বাচনের সময় তাদের আর একটু সাবধান হওয়া দরকার, বলেন এলেনা৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
খাবারের সময় রাজনীতি আর কার ভালো লাগে
বন-এর গ্রিক রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকরা আর্থিক সংকট নিয়ে কথা বলতে রাজি নন৷ অতীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁদের রেস্টুরেন্টের খদ্দেরের সংখ্যাই কমে গেছে৷ যেখানে জীবিকার প্রশ্ন, সেখানে দেশ কিংবা প্রবাসের প্রতি বিশ্বস্ততা কিছুটা প্রচ্ছন্ন রাখাই বোধহয় শ্রেয়৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
গ্রিস ছাড়া ইউরোপ হয় না
বহু বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, এমনকি রাজনীতিকদের অভিমত৷ কেননা ইউরোপীয় সভ্যতার সূচনাই তো গ্রিসে৷ ইউরোপ নামটাই এসেছে ইউরোপা নামধারী এক রাজকন্যের নাম থেকে৷ প্রাচীন গ্রিসের দেবতাদের প্রধান ভগবান জিয়ুস স্বয়ং প্রেমে পড়েছিলেন ইউরোপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
বুধবার ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিয়ঁ নোইয়ে এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেন যে, এই সপ্তাহের মধ্যে কোনো ‘ডিল' বা চুক্তি সম্পাদিত না হলে গ্রিস ‘‘অরাজকতায়'' ডুবে যেতে পারে৷ ‘‘গ্রিক অর্থনীতি একটি বিপর্যয়ের মুখে৷ রবিবারের মধ্যে একটি আপোশ খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি, না হলে বড় দেরি হয়ে যাবে, যার ফলশ্রুতি হবে গুরুতর,'' ফরাসি বেতারে মন্তব্য করেন নোইয়ে৷ গ্রিসে আপাতত ব্যাংক খুললে ‘ব্যাংক রান' হবার সম্ভাবনা দেখেন তিনি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি বিষয়ক কমিশনার পিয়ের মস্কোভিচি অবশ্য এখনও আশাবাদী যে, রবিবারের মধ্যে গ্রিসের সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব৷ কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য প্রস্তাব দেওয়ার দায়িত্ব এখন গ্রিক সরকারের উপর, বলে মস্কোভিচি ফরাসি টেলিভিশনে মন্তব্য করেছেন৷ অপরদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুঙ্কার মঙ্গলবারেই জানিয়ে দিয়েছেন: ‘‘আমাদের একটি ‘গ্রেক্সিট' সিনারিও বিশদভাবে পরিকল্পনা করা আছে''৷ তবে তিনি যোগ করেন যে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি গ্রিসকে ইউরোজোনে রাখার যাবতীয় প্রচেষ্টা করতে প্রস্তুত৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-ও দৃশ্যত গ্রিসকে ইউরো এলাকায় রাখতে চান, যদিও তাঁর দল সিডিইউ-সিএসইউ-এর বহু সদস্য ইতিমধ্যে গ্রিসের জন্য কোনো নতুন ত্রাণ পরিকল্পনার কথা শুনতে রাজি নন৷ ম্যার্কেল-এর মতে গ্রিসের একটি ‘‘বেশ কয়েক বছর ব্যাপি'' ঋণ পরিশোধ কর্মসূচি প্রয়োজন৷