ডেনমার্কে পুরো চেহারা ঢেকে চলাফেরার উপর নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে অ্যাক্টিভিস্টরা বলেছেন, এর মাধ্যমে মূলত অন্যায়ভাবে মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে৷ ডেনমার্কের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ মুসলমান৷
বিজ্ঞাপন
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন এবং দেশটির দ্বিতীয়-বৃহত্তম শহর আহাসে বুধবার প্রায় দেড়হাজারের মতো ডেনিশ দেশটিতে মুখ ঢেকে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেছেন৷ অ্যাক্টিভিস্টদের দাবি, এই আইন কার্যকরের মাধ্যমে সরকার নারীদের পোশাকের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছে৷
কোপেনহেগেনে প্রতিবাদকারীরা নেকাব পরে বিক্ষোভে অংশ নেন৷ মুসলমানদের এই ধর্মীয় পোশাক মূলত চোখ ছাড়া সারা শরীর ঢেকে রাখে৷ শহরটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণের পর মানববন্ধন করেন প্রতিবাদকারীরা৷ সবমিলিয়ে তিনঘণ্টার মতো রাজপথে অবস্থান করেন প্রতিবাদকারীরা৷ তাদের মধ্যে মুসলমান এবং অমুসলিম ডেনিশরা ছিলেন৷ ‘আমাদের সড়কে কোনো বর্ণবাদী নয়' এবং ‘আমার জীবন, আমার পছন্দ'-র মতো নানা স্লোগানও দিতে দেখা গেছে তাদের৷
নিকাব পরে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সাবিনা নামের ২১ বছর বয়সি এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমরা সরকারকে এই বার্তা দিতে চাই যে, আমরা কোন বৈষম্য এবং সুনির্দিষ্ট একটি ধর্মকে লক্ষ্যবস্তু করে পাস করা কোন আইনের কাছে নতিস্বীকার করবো না৷''
ডেনমার্কের সাতান্নলাখ বাসিন্দার পাঁচ শতাংশই মুসলমান৷ সাবিনা হচ্ছেন দেশটির দেড়শ থেকে দু'শো মুসলমান নারীর একজন যারা নিকাব অথবা বোরকা পরে চলাফেরা করেন এবং নিষেধাজ্ঞার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত৷ নতুন আইন অনযায়ী, পুলিশ চাইলে যেকোন নারীকে জনসমক্ষে তাদের মুখের পর্দা সরাতে বলতে পারবেন৷ পাশাপাশি নিকাব পরায় বা মুখ ঢেকে চলাফেরা করায় প্রথমবার তাকে শাস্তি হিসেবে ১০০০ ডেনিশ মুদ্রা ক্রোন (১৬০ ইউরো) পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন৷ তবে একজন বারংবার আইন ভঙ্গ করলে চতুর্থ দফায় তাঁকে ১০,০০০ ডেনিশ ক্রোন জরিমানা করতে পারবে৷
কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছে, বুধবার যারা নিকাব পরে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না৷ কেননা, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কেউ যদি মুখ ঢেকে বাকস্বাধীনতা চর্চাকরতে চান, তাহলে সেটা নতুন আইন অনুযায়ী অপরাধের পর্যায়ে পড়বে না৷
উল্লেখ্য, মুখোশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে ডেনমার্ক মূলত অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, নেদাল্যান্ডস, ফ্রান্স এবং জার্মানির বাভারিয়ার রাজ্যের সঙ্গে যোগ দিল৷ এসব দেশ এবং রাজ্যে প্রকাশ্যে নিকাব পরা নিষিদ্ধ৷
এআই/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷