স্পেনের এক পাচক ডেসার্ট শিল্পে পারদর্শী৷ ডেসার্টকে তিনি শুধু একটি খাদ্য মনে করেন না৷ বরং এর মাধ্যমে বিশ্বের বয়ে আনতে চান শান্তি, সৃষ্টি করতে চান ভালোবাসার বন্ধন৷
বিজ্ঞাপন
জর্ডি রোকা-র বিশেষ ধরনের ডেসার্ট দেখলে জীবন্ত মনে হবে৷ তিনি সাধারণ প্লেটে সে সব পরিবেশন করেন না, বরং এটিকে বসিয়ে দেন প্লাস্টিকের এক কাঠামোর উপর৷ এই কাঠামোটি নড়তে থাকে, আর তখন মনে হয় ডেসার্টটি বুঝি সত্যিই জীবন্ত৷
‘এল সেলার ডে কান রোকা' রেস্তোরাঁর পাচক জর্ডি রোকা বলেন, ‘‘একটি অসাধারণ ডেসার্টকে অবশ্যই হৃদয় ছুঁতে হবে এবং সেটির স্বাদ ছাড়াও বেশি কিছু থাকতে হবে৷ ভালো ডেসার্টকে গল্প বলতে হবে৷ কী ভাবে এটি তৈরি কিংবা স্বাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটি খদ্দেরের মধ্যে কী ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি করছে৷''
শুধু স্বাদ নয়, ঘ্রাণও চাই
জর্ডি রোকা শুধুমাত্র ডেসার্টের স্বাদের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না৷ তিনি তাঁর নিজের সৃষ্টি ‘ক্লাউড অফ লেমন'-এর জন্য ব্যবহার করা উপাদানগুলো দিয়ে একটি সুগন্ধিও তৈরি করেছেন যা ডেসার্টের সঙ্গে খদ্দেরকে দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সুগন্ধিটির ঘ্রাণ অনেকটা গলে যাওয়া বাটার এবং ব্যার্গামট-এর মতো৷ কিছুটা মাগডালেনা কেকের মতো৷ কিংবা বলা যায় শুকনো লেবু, বাটার এবং আটার সম্মিলিত ঘ্রাণ৷''
গত ১৫ বছর ধরে জর্ডি রোকা এবং তাঁর ভাইয়েরা খদ্দেরদের জন্য খাবার তৈরি করছেন৷ তাদের ‘এল সেলার ডে কান রোকা' রেস্তোরাঁর অবস্থান স্পেনের বার্সেলোনায়৷ গত বছর ব্রিটেনের ‘‘রেস্তোরাঁ ম্যাগাজিন'' এটিকে বিশ্বের সেরা রেস্তোরাঁ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷
আইসক্রিম....খাবেন নাকি ?
ছেলে বুড়ো – সবারই আইসক্রিম পছন্দ৷ গ্রীষ্মকালের সাথে আইসক্রিম এমনভাবেই জড়িয়ে আছে যেন ‘বিনে সুতোর মালা’ বললে ভুল হবেনা৷
ছবি: Fotolia/line-of-sight
গ্রীষ্মকাল মানেই যেন আইসক্রিম
প্রচণ্ড রোদ আর গরমের সময় আইসক্রিমের কথা কার না মনে পড়ে? জার্মানিতে সারা বছরই কমবেশি আইসক্রিম পাওয়া যায় এবং শখ করে খাওয়াও হয়৷ কিন্তু গ্রীষ্মকালে ছেলে বুড়ো – সবারই আইসক্রিম পছন্দ৷ গ্রীষ্মকালের সাথে আইসক্রিম এমনভাবেই জড়িয়ে আছে যেন ‘বিনে সুতোর মালা’ বললে ভুল হবেনা৷
ছবি: Fotolia/line-of-sight
আইসক্রিমের জন্মস্থান চীন
এই প্রিয় খাবার আইসক্রিমের জন্ম চীনে৷ ইটালিয়ান পর্যটক মার্কোপোলো আইসক্রিম তৈরির কৌশল প্রথম চীন থেকে ইউরোপে নিয়ে আসেন৷ ১৫৩৩ সালে আইসক্রিম ইটালি থেকে ফ্রান্সে আসে৷ তারপর আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে৷ ১৯০০ সাল থেকে আইসক্রিমের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়৷
ছবি: dapd
কাঠি আইসক্রিম
‘আলে হাবেন আইস গ্যার্ন’ – অর্থাৎ ‘আইসক্রিম সবাই ভালোবাসে’ জার্মান ভাষায় বাচ্চাদের এ রকম একটি গান রয়েছে৷ কাঠি আইসক্রিম দেখলেই যেন ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়৷ আর এটা বোধহয় সব দেশের মানুষের ক্ষেত্রেই এক৷ কাঠি আইসক্রিম ১৯২৩ সালে প্রথম অ্যামেরিকাতে তৈরি হয়৷
ছবি: aboikis/Fotolia
আইসডিলে – আইসক্রিমের দোকান
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যেমন শোনা যায় আইসক্রিম বাচ্চাদের খাবার, কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে মোটেই তা নয়৷ সুন্দর আবহাওয়ায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও প্রায়ই বসেন কোনো ‘আইস ডিলে’-তে – যেখানে শুধু আইসক্রিম ও চা, কফি বিক্রি হয়৷ আর যদি ‘ওল্ড এজ হোম’-এর কাছাকাছি সে রকম কোনো আইসক্রিম খাওয়ার দোকান থাকে, তাহলে তো কথাই নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানদের পছন্দ - ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি, চকোলেট
আগে শুধু দুধ, চিনি আর পানি দিয়েই তৈরি হতো আইসক্রিম৷ আর এখন কত স্বাদের আইসক্রিমই না পাওয়া যায়! তবে জার্মানদের সবচেয়ে প্রিয় আইসক্রিমগুলোর মধ্যে রয়েছে ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি এবং চকোলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম৷ কিন্তু হতে হবে ইটালির আইসক্রিম৷ জার্মানিতে বছরে গড়ে জনপ্রতি আনুমানিক ৮ থেকে ১০ লিটার আইসক্রিম খাওয়া হয়৷
ছবি: Fotolia/Thomas Perkins
জার্মানিতে গ্রীষ্মকালের সাধারণ দৃশ্য
সুন্দর আবহাওয়া, ছুটির পর কী করা যায়? সবাই মিলে হৈচৈ করে আইসক্রিম খেতে যাওয়ার প্রস্তাবে কিন্তু সবাই এক কথায় রাজি৷
ছবি: picture-alliance/ZB
আইসক্রিম বিক্রির মাধ্যমে সমাজে অবদান
জার্মানিতে অনেক কিশোর-কিশোরী অন্য দেশের যুব সমাজের সাহায্যের জন্য ‘যুব এবং শিক্ষা প্রকল্প’-গুলোর জন্য কাজ করে থাকে৷ এই তিন কিশোরী এ রকমই একটি প্রকল্পের কাজে জার্মানির কিল শহরের একটি ‘আইস ডিলে’-তে গ্রীষ্মের ছুটিতে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বাস্থ্য সচেতনতা
জার্মানিতে আইসক্রিম বিক্রেতাদের সবসময়ই হাতে গ্লাভস পরে কাজ করতে হয়৷ তবে যত সাবধানতাই অবলম্বন করা হোক না কেন, অনেকেই এই সব মজার মজার আইসক্রিম খাওয়া থেকে বঞ্চিত৷ কারণ জার্মানিতে আনুমানিক শতকরা ২০ জনেরই রয়েছে দুধে অ্যালার্জি৷
ছবি: DW
অনাথ শিশুদের জন্য আইসক্রিম
বাবা-মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হলেও কিন্তু আইসক্রিম খাওয়া থেকে বঞ্চিত নয় এই অনাথ শিশুরা৷ ‘চিলড্রেন হোম’-এ এদের জন্য মাঝে মাঝে আইসক্রিমের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পানি ও আইসক্রিম
আহা, কী আনন্দ! সবকিছুতেই চাই ঠান্ডা পরশ৷ নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের নয়েস শহরে রাইন নদীর গা ঘেসে আইসক্রিমের স্বাদ গ্রহণ করছেন সৌখিন এক নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেশি স্বাদ
প্রচণ্ড গরম, তাপমাত্রা ছিলো ৩০ ডিগ্রির ওপরে বার্লিন শহরে৷ আইসক্রিমের স্বাদও যেন সেদিন একটু বেশিই ছিলো৷ খাওয়া শেষে ফেলে দেওয়া আইসক্রিমের বাটিগুলো দেখে অন্তত তাই মনে হয়!
ছবি: DW
11 ছবি1 | 11
রেস্তোরাঁর আরেক পাচক নাচো বাউশেলশ বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাগল হচ্ছে জর্ডি৷ ইতিবাচক অর্থেই এটা বলছি৷ সে প্রায়ই প্রচলিত নয় এমন সব আইডিয়া নিয়ে হাজির হয়৷ আমাদের জন্য সে এক বড় সম্পদ৷ তার আইডিয়া ছাড়া অনেক খাবারই তৈরি সম্ভব হতো না৷''
আইসক্রিমপার্লার
২০১২ সালে জিরানো শহরের পুরানো অংশে দ্বিতীয় একটি দোকান চালু করেছেন জর্ডি৷ এই আইসক্রিম পার্লারটি তিনি সাজিয়েছেন অনেকটা ‘চার্লি অ্যান্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি' ছবির আদলে৷ আর এখানে আসতে কোনো ‘রিজার্ভেশনের' দরকার নেই৷
জর্ডি রোকার কথায়, ‘‘আমরা সবসময় বলি, আমাদের আইসক্রিমের সঙ্গে আমরা এক টুকরা শান্তিও বিক্রি করি৷ আর এই দোকানটি একটি জানালার মতো৷ কেননা ছোট কিংবা বড় সব বয়সি মানুষই এখানে আসে৷ এবং সবাই এটা পছন্দ করে৷''
ত্রিশটির বেশি ‘টপিং' এবং সস ব্যবহার করে প্রত্যেক খদ্দের তাঁর পছন্দের আইসক্রিম তৈরি করে নিতে পারেন৷ আর এখানে অনেক অপ্রচলিত ফ্লেভারের আইসক্রিমও পাওয়া যায়৷ তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় জর্ডি রোকার তৈরি আইসক্রিম কেক৷
জর্ডি রোকাকে জিরোনা-তে অনেকে পপ তারকার মতো সম্মান করে৷ তবে ছবি তোলা কিংবা প্রেস কনফারেন্সের চেয়ে তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ডেসার্ট৷ তিন তারকা রেস্তোরাঁ কিংবা আইসক্রিম পার্লার যেটাই হোক না কেন – ডেসার্ট ভালো হওয়া চাই৷