ভারতের লাদাখ অঞ্চলে চীনের সেনাবাহিনীর একটি দল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদের রুখে দেয় ভারতীয় সেনা৷ এতে দুদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ধস্তাধস্তি ও পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার ভারতের ৭০তম স্বাধীনতা বার্ষিকীর সকালে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুবার, একবার ভোর ৬টায় ও আরেকবার সকাল ৯টায় লাদাখের প্যানগং হ্রদ বরাবর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চীনা সেনারা ভারতীয় ভূখন্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে৷ ভারতের অভিযোগ, দুটো জায়গা দিয়ে জনা ১৫ চীনা সৈন্য ফিঙ্গার-৪ এবং ফিঙ্গার-৫ পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়ে৷ দু'বারই ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী তা রুখে দেয়৷ সীমান্ত জওয়ানরা সেনা শৃংখল তৈরি করে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাঁদের বাধা দেয়৷ সে সময় দুদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি হয়৷ দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় পাথর ছোড়াছুড়ি৷ তবে গোলাগুলি চলেনি৷ পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়৷
চীন ও ভারতীয় সেনা অফিসাররা বুধবার নিজেদের মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং করেছেন৷ বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনহিং এই হাতাহাতির খবর সম্পর্কে অবহিত নন বলে জানান৷ তাঁর মতে, চীনের সেনারা স্রেফ নিজেদের ভূখন্ডেই টহল দিয়ে থাকে৷ তিনি পাল্টা দাবি করেন, ডোকলাম থেকে ভারত তার ফৌজ সরিয়ে না নিলে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা হতে পারে না৷ তাই আলোচনার পূর্বশর্ত ভারতের সেনা প্রত্যাহার৷ তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ভারত সেনা না সরালে তার ফল ভুগতে হবে৷ দিল্লির প্রত্যুত্তর, উভয় পক্ষেরই উচিত তাদের পূর্ব অবস্থানে ফিরে যাওয়া৷ তবে পরিস্থিতির স্থিতাবস্থা আপাতত বজায় আছে৷
উল্লেখ্য, লাদাখ অঞ্চলে এই দুপক্ষের হাতাহাতি লড়াই, অন্যদিকে সিকিম সেক্টরে ভারত-চীন সেনা ৫০ দিন ধরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে৷ ভারত ঐ এলাকায় চীনের সড়ক তৈরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়৷ কারণ যে জায়গা দিয়ে চীন রাস্তা তৈরি করতে চাইছে সেটা চীনের নয়৷ বস্তুত সেটা ভুটানের৷ দিল্লির আশংকা, ঐ এলাকায় চীন রাস্তা তৈরি করতে পারলে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের অন্য অংশের সংযোগ ইচ্ছা করলেই চীন বিচ্ছিন্ন করতে পারবে৷ এই ত্রিমুখী সংযোগস্থল স্ট্র্যাটিজিক্যালি বা নিরাপত্তার দিক থেকে ভারতের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ দ্বিতীয়ত, ভুটানের সঙ্গে ভারতের যে প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে তাতে ভুটানের স্বার্থরক্ষা করতে ভারত চুক্তিবদ্ধ৷
ভারত ও চীনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ কিন্তু সরকারিভাবে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ হয়নি বলে যত বিপত্তি৷ বছরে প্রায় ৪০০ বার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এই ধরণের ঘটনা লেগেই থাকে৷ সীমান্ত লংঘন নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ চলতে থাকে৷ তবে এবার ডোকলাম সংকট একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে৷ চীনের হুঙ্কারে একটা যুদ্ধ যুদ্ধভাব৷ ভারতীয় সামরিক বাহিনী ভবিষ্যত পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে নিজেদের তৈরি রাখতে লাদাখের প্যানগং হ্রদের ভারতীয় দিকে স্পীড বোট তৈরি রেখেছে, রাডার ও সেন্সর বসিয়েছে৷
মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভারত সক্ষম৷ তা সে জল, স্থল ও আকাশ সীমান্ত যেখানেই হোক৷ কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও প্রতিবেশী দেশগুলির প্রতিই যে এই বার্তা, সেটা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ গত দু মাসেরও বেশি যাবত ভারত, ভুটান ও চীন সীমান্তে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি রয়েছে তার প্রেক্ষিতে মোদীর এই মন্তব্য তাত্পর্যপূর্ণ৷ পাশাপাশি চলেছে ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন কাঠমান্ডুতে৷ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, এবার ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রতিবছর দুদেশের সেনা অফিসারদের মধ্যে যে প্রথাগত সৌজন্যসূচক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, এবছর নাথুলা সীমান্তে তা বাতিল করা হয়৷ দিল্লির কূটনৈতিক মহলের ধারণা, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের দাদাগিরি মেনে নেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করাই বেইজিং-এর আসল উদ্দেশ্য৷
ভারতকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে সৌদি আরব
স্টকহোমের আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (সিপ্রি)-র প্রতিবেদনে শঙ্কা জাগানো ইঙ্গিত৷ সারা বিশ্বে অস্ত্রের ক্রয়-বিক্রয় বেড়েই চলেছে৷ চলুন দেখা যাক ২০১৫ সালে অস্ত্র খাতে ব্যয়ে কোন দেশ কোন অবস্থানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/Xinhua/P. Thapa
অস্ত্র কেনায় ২০১৫-র সেরা সৌদি আরব
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে গণতন্ত্র নেই৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে নিয়মিত৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সৌদি আরব সরকারের উদ্যোগ এবং আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই৷ অস্ত্র ক্রয়ে ৩ হাজার ১৬১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ২০১৫ সালের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হয়ে গেছে সৌদি আরব৷ ২০১৪ সালে এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারত, সৌদি আরব ছিল দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: AFP/Getty Images
সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে ভারত
বরাবরের মতো এখনো রাশিয়ার কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ক্রয় করে ভারত৷ সিপ্রি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশও ভারত৷ ২০১৫ সালেও এই খাতে ৩ হাজার ৭৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে তারা৷ ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৪৮৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এক বছরের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশের তালিকায় সবার ওপরে ছিল ভারত৷ এবার শীর্ষে উঠে এসেছে সৌদি আরব৷
ছবি: Getty Images
অবাক করেছে অস্ট্রেলিয়া
আগের বছরের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারকদের তালিকায় অষ্টম স্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়া৷ কিন্তু ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৭৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা৷
ছবি: U.S. Navy photo/courtesy Lockheed Martin/Getty Images
চতুর্থ মিশর
মিশরও দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত৷ সে দেশে উল্লেখযোগ্য হারে অস্ত্র ক্রয়ও বাড়ছে৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে ১ হাজার ৪৭৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে সে বছরের সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে মিশর৷ এক বছর আগে ২২তম স্থানে তারা!
ছবি: dapd
পঞ্চম স্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত!
সৌদি আরব, ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ফ্রান্সের পরই আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে তাদের মোট ব্যয় ১ হাজার ২৮৯ মিলিয়ন ডলার৷ ব্যয় বাড়িয়ে এক বছরে ১১ তম স্থান থেকে এক লাফে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে তারা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Ecpad Handout
ইরাকও আছে অস্ত্র ক্রয়ের প্রতিযোগিতায়
ইরাকের মানুষ রক্তপাতহীন একটি দিন কবে পাবে কে জানে! এখন যে যুদ্ধ চলছে সেখানে ইরাকি সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ সুন্নি মুসলমানদের তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ ফলে অস্ত্র ক্রয় আরো বেড়েছে৷ ২০১৫ সালেই এই খাতে মোট ১ হাজার ২১৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ ফলে ২০১৪ সালের শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় ১৫তম স্থান পাওয়া ইরাক ২০১৫ সালে ৯ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
চীন পিছিয়েছে
২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করা দেশগুলোর তালিকার চতুর্থ স্থানে ছিল চীন৷ পরের বছর ১ হাজার ২১৪ মিলিয়ন ব্যয় করেও সপ্তম স্থানে নেমে গেছে তারা৷ এটা অবশ্য শুধু এক বছরে অস্ত্র আমদানিতে মোট ব্যয়ের হিসেব৷ চীন শুধু অস্ত্র আমদানি করে না, বিক্রিও করে৷ শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার পরই তাদের স্থান৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Color China Photo/Z. Lei
ভিয়েতনামও আছে
২০১৪ সালে এক বছরে অস্ত্রখাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল ভিয়েতনাম৷ উন্নয়নশীল এই দেশটি ২০১৫ সালে ৮৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও এক ধাপ পিছিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look
অস্ত্র ক্রয়ে সমস্যা নেই গ্রিসের!
চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে গ্রিসে৷ অন্যদিকে অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রবণতাও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে৷ ২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে ৭৬২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে গ্রিস৷ ফলে এক বছরে অস্ত্র খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর তালিকায় নবম স্থানে উঠে এসেছে তারা৷ আগের বছর ৩৩তম স্থানে ছিল গ্রিস৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
এক ধাপ পিছিয়েছে পাকিস্তান
২০১৫ সালে অস্ত্র ক্রয়ে মোট ৭৩৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে পাকিস্তান৷ বৈরি প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে দু’হাজার মিলিয়নের চেয়েও কম ব্যয় করে তারা এখন তালিকার দশম স্থানে৷ ২০১৪ সালে নবম স্থানে ছিল পাকিস্তান৷