রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেটের কালস্টাট গ্রামে মাত্র বারোশ' মানুষের বাস৷ প্রথাগতভাবে ওয়াইন তৈরির জায়গা৷ কি ভাবেন এখানকার মানুষ ট্রাম্প সম্পর্কে?
বিজ্ঞাপন
কালস্টাট গ্রামের ওয়েবসাইটে গেলে দেখতে পাবেন, সারা গ্রামটা নানা ধরনের ওয়াইন সেলার আর ওয়াইন স্যাম্পলিং রুমে ভর্তি৷ নামগুলো সব পুরনো জার্মান কায়দার: ‘‘ওয়াইনক্যাবিনেট'' কিংবা ‘‘সুম বাখুস''৷ স্থানীয় বাসিন্দা বা আন্তর্জাতিক পর্যটক, কালস্টাটে সকলেরই প্রিয় পানীয় হলো ওয়াইন৷ গ্রামের যতো বাসিন্দা, তার দ্বিগুণ ওয়াইন টেস্টিং-এর সিট আছে, বলে স্থানীয়েরা গর্ব করে থাকেন৷
টুরিস্ট কিংবা কৌতূহলী সাংবাদিক, যে-ই কালস্টাটে খোঁজখবর করতে যান না কেন, তাঁর প্রথম মোলাকাত হবে কালস্টাট পরিবহণ সমিতির গ্যুন্থার আন্থন-এর সঙ্গে৷ অবশ্য আন্থন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এই সব খোঁজখবর দিয়ে থাকেন৷ ট্রাম্প বা জার্মানে ‘ট্রুম্প' নামটি প্যালেটিনেট এলাকা ও বাভারিয়ায় খুবই প্রচলিত, বলে জানালেন আন্থন৷ তবে ‘মায়ার' বা ‘ম্যুলার'-এর মতো, এ নাম থাকার মানে এই নয় যে, সব ট্রাম্প বা ট্রুম্প-রাই পরস্পরের আত্মীয়৷
ট্রাম্প সম্পর্কে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন
কালস্টাট গ্রামে আজ ট্রাম্প বা ট্রুম্প নামের কেই নেই৷ তবে অনেকেরই নাকি ট্রাম্পের সঙ্গে অতীতে রক্তের সম্পর্ক অর্থাৎ যৌথ পূর্বপুরুষ ছিল৷ স্থানীয় টেলিফোন বুক ঘাঁটলে দেখা যাবে, কালস্টাটের আশেপাশে ডজনখানেক ‘ট্রুম্প' আছেন৷ কিন্তু এই ওয়াইন তৈরির গ্রামাঞ্চলে কেউই ট্রাম্পকে নিয়ে কথা বলতে রাজি নন৷ দশ-বারো বার টেলিফোন করার পর বোঝা গেল, প্যালেটিনেট অঞ্চলের ট্রুম্প-রা মার্কিন মুলুকে তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছেন৷ তারা এখন শুধু শান্তি চান৷
সমস্যাটা সম্ভবত একটু আলাদা: স্থানীয় বাসিন্দারা ডনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে কি ভাবছেন বা বলছেন, তাই নিয়ে যখন কথা চলেছে, তখন এক মাঝবয়সি মিস্টার ট্রুম্প বললেন, ‘‘তারা সত্যিই কি ভাবছে, কেউই তা বলার সাহস পাচ্ছে না৷ সেটাই হলো সমস্যা৷ অন্তত প্রকাশ্যে নয়৷ বন্ধ দরজার পেছনে কি বলা হচ্ছে, সে আরেক কথা৷'' তবে ডনাল্ড ট্রাম্প দৃশ্যত কালস্টাটের বাসিন্দাদের একটি বৈশিষ্ট্য পেয়েছেন: ‘‘আমরা আমাদের মনোভাব জোরগলায় প্রকাশ করতে ভালোবাসি'', বললেন কালস্টাটের এক অধিবাসী৷
কালস্টাটে #ড্রাম্ফ বলে কেউ নেই
ডনাল্ড ট্রাম্পের পিতামহ ১৮৮৫ সালে মার্কিন মুলুকে যাত্রা করেন, অভিবাসী হিসেবে৷ তখন তার বয়স ছিল ১৬ – কিন্তু তার নাম ‘ড্রাম্ফ' ছিল না৷ বংশের আদিনাম হলেও, ড্রাম্ফ নামটি নেপোলিয়নের আমলে, অর্থাৎ ঊনবিংশ শতাব্দী শুরু হওয়ার সময় বদলে ‘ট্রুম্প' করে নেওয়া হয়েছিল৷
সব মিলিয়ে দেখা গেল, কালস্টাটের মানুষজন ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আদিখ্যেতা করতে রাজি নন৷
ইউরোপে যেখানে ওয়াইন তৈরি হয়
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য যেমন আলাদা, তেমনই আলাদা তাদের ক্লাইমেট বা আবহাওয়া৷ সেজন্যই মোজেল থেকে বোর্দো, টাস্কানি থেকে টোকাই অবধি নানা ধরনের ও নানা স্বাদের ওয়াইন তৈরি হয়৷
ছবি: HappyAlex/Fotolia.com
রোম্যান্টিক মোজেল ভ্যালি
মধ্য জার্মানির মোজেল নদীর উপত্যকায় আঙুরচাষ শুরু হয় রোমান আমলে, কাজেই মোজেল-কে জার্মানির সবচেয়ে পুরনো ওয়াইন তৈরির এলাকা বলা চলে৷ আঙুরখেতগুলো নদীতীরের খাড়াই পাহাড়গুলোর ঢালে৷ নীচে একটির পর একটি ওয়াইন তৈরির শহর বা গ্রাম, যেমন এখানে কখেম৷ এ’রকম একশো ওয়াইন তৈরির শহর আছে মোজেল উপত্যকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যালেটিনেট এলাকার প্রখ্যাত রিজলিং ওয়াইন
জার্মান ওয়াইন রুট প্রতিষ্ঠা করা হয় আশি বছর আগে৷ আঠারো মিটার উঁচু ওয়াইন গেট তার সাক্ষী৷ ওয়াইন রুট যাবে প্যালেটিনেটের ভিতর দিয়ে, যা কিনা বিশ্বে রিজলিং ওয়াইন তৈরির সবচেয়ে বড় এলাকা৷ রিজলিং-কে বলা হয় ‘জার্মান ওয়াইনের রাজা’, সারা বিশ্বে এর কদর৷ ১৮৬৯ সালে যখন সুয়েজ ক্যানেল খোলা হয়, তখন তার ‘স্বাস্থ্যপান’ করা হয়েছিল প্যালেটিনেটের রিজলিং ওয়াইন দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur Huber
বোর্দো: শহর, এলাকা এবং ওয়াইন
পশ্চিম ফ্রান্সের একটি শহর৷ অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলের আবহাওয়া৷ বোর্দো এলাকার মাটিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে চুনাপাথরের কারণে৷ বিশ্বখ্যাত বোর্দো রেড ওয়াইনের আঙুরগুলো এই পরিবেশে স্বচ্ছন্দে বাড়তে পারে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফ্রান্সের প্রতীক মোরগটিকে, ‘শাতো লা ফ্রঁস’ ভিনিয়ার্ডের আঙুরখেতগুলোর উপর নজর রাখছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Moritz
বার্গান্ডি ওয়াইন
বার্গান্ডি ঠিক বোর্দোর মতোই একটি বিখ্যাত ওয়াইন - যেমন হোয়াইট, তেমনই রেড৷ প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এই এলাকাতেই একটি নিলাম হয়৷ সেই নিলামে গতবছর এক পিপে ‘কর্তঁ-ব্রেসন্দ গ্রঁ ক্রু’ ওয়াইন বিক্রি হয়েছে দু লাখ বিশ হাজার ইউরো মূল্যে৷
ছবি: picture alliance/dpa/J. Tardivon
ইটালির টাস্কানি অঞ্চলের কিয়ান্তি ওয়াইন
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ওয়াইন তৈরি হয় ইটালি-তে৷ টাস্কানি অঞ্চল হল সেই ওয়াইন তৈরির কেন্দ্রবিন্দু৷ পাহাড়ি জমি, নরম আবহাওয়া মিলিয়ে কিয়ান্তি ক্ল্যাসিকো, ভিনো নোবিলে দি মন্তেপুলচিয়ানো, ব্রুনেল্লো দি মন্তালচিনো-র মতো ওয়াইন তৈরি করার পক্ষে আদর্শ স্থান৷ যে সাঙ্গিওভেজি আঙুর থেকে এই সব ওয়াইন তৈরি হয়, তা শুধু ইটালিতেই পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
পর্তুগালের ডোরু এলাকার ওয়াইন
ডোরু উপত্যকার ঢালে যে ছোট্ট, মিষ্টি আঙুর ফলে, তা থেকে প্রখ্যাত পোর্ট ওয়াইনের ঘন, গাঢ় স্বাদটি আসে৷ পোর্ট আসলে খাওয়ার পরে খাওয়ার একটি ভারী ওয়াইন৷ তৈরি হবার পরে এই ওয়াইন ওক কাঠের পিপেয় পুরে পোর্ট শহরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ওকের ব্যারেলে সেই ওয়াইন রাখা থাকে অন্তত দু’বছর৷ ডোরু নদীর উপত্যকা বিশ্বের প্রথম সংরক্ষিত ওয়াইন এলাকা৷ ২০০১ সালে ডোরু ভ্যালিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Galuschka
রিয়খা: স্পেনের ওক পিপের ওয়াইন
স্পেনের রিয়খা অঞ্চলের বোডেগা ইসিওস ওয়াইনারি৷ ডিজাইন করেছিলেন স্থপতি সান্তিয়াগো কালাত্রাভা৷ সেডার কাঠের লম্বা বাড়িটার ঢেউখেলানো ছাদ অ্যালুমিনিয়ামের বড় বড় বার দিয়ে তৈরি৷ পুরোটা দেখে একটা সুবিশাল ওয়াইন পিপের কথা মনে হবে৷ ওক কাঠের পিপেতে আঙুর ফার্মেন্ট করার প্রথা শুরু হয় উনিশ শতকে৷ ‘ব্যারিকা’ নামধারী ওক কাঠের পিপেগুলো থেকেই রিয়খা ওয়াইন তার বিশেষ স্বাদটা পায়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
হাঙ্গেরির টোকাই ওয়াইন
টোকাই হাঙ্গেরির একটি শহর৷ আবার টোকাই একটি হোয়াইট ওয়াইন৷ টোকাই ওয়াইন তৈরির নিয়ম হল, এই ওয়াইনকে দশ বছর পিপেতে ‘ম্যাচিওর’ করতে হবে, অর্থাৎ ‘পাকতে’ হবে; পরে আরো পাঁচ বছর বোতলে৷ ফলে গোটা এলাকাটিতেই মাটির নীচে সুড়ঙ্গ করা আছে, যেখানে টোকাই ওয়াইন তার বিশেষ ফ্লেভার পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kisbenedek
যেখানে ওয়াইন তৈরির সূচনা: গ্রিস
ওয়াইন ও ওয়াইন তৈরির দেবতা হলেন ডায়োনিসাস, জাতিতে গ্রিক৷ খ্রিষ্টজন্মের ষোলো শতাব্দী আগে থেকেই গ্রিকরা ওয়াইন তৈরি করছিল৷ সেই ওয়াইন ‘অ্যাম্ফোরা’ বা লম্বা-গলা পাত্রে রেখে, আলেপ্পো-র পাইন গাছের রজন ‘রেটসিনা’ দিয়ে সেই পাত্র সিল করা হতো৷ এর ফলে সেই ওয়াইন একটা বিশেষ ফ্লেভার পেতো৷ আজও গ্রিসের রেটসিনা ওয়াইন ফার্মেন্ট করার সময় তা’তে রজনের ছোট ছোট টুকরো দেওয়া হয়৷