ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে পৃথিবী রসাতলে যাবে, সম্ভবত প্রমাণ হবে যে অ্যামেরিকানরা মানসিক ভারসাম্যহীন৷ মুলধারার গণমাধ্যমের ট্রাম্পের সম্পর্কে এই ধারণা ৷ ডয়চে ভেলের ইনেস পোল জানাচ্ছেন তাঁর দশ ভিন্ন দিক৷
বিজ্ঞাপন
১. ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারি ক্লিন্টন নন
এটা কেন বলছি তার ব্যাখ্যার হয়ত প্রয়োজন নেই৷ কারণ শুধু রিপাবলিকানরা নয় অনেক স্বাধীন এমনকি ডেমোক্র্যাটরাও মনে করেন যে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ফার্স্টলেডি আসলে সমস্যায় ভরা এক প্রার্থী৷ তাঁর সবচেয়ে বড় সমস্যার কথা জানা গিয়েছিল ই-মেল কেলেঙ্কারির মাধ্যমে৷ ক্ষমতার দম্ভে তিনি নিজেই নিজের জন্য বিশেষ সুবিধা আদায় করতেন৷ ক্লিন্টন যদি আগেই তাঁর এই আচরণের জন্য পরিষ্কারভাবে ক্ষমা চাইতেন, তাহলে এটা এতদিন সমাধান হয়ে যেত৷
২. ট্রাম্প এমনভাবে কথা বলেন যা মানুষ বুঝতে পারেন
যদিও তিনি যা বলবেন তার অধিকাংশই কোনো অর্থ বহন করে না বা করবে না এবং প্রায় প্রতি লাইনেই স্ববিরোধী কথা বলেন বা বলবেন তিনি, তারপরও ইংরেজি ভাষাভাষীরা সহজেই ট্রাম্পের কথা বুঝতে পারেন৷ এ জন্য অভিধান লাগে না কিংবা জটিল কাঠামোর বাক্য বোঝার কষ্ট করতে হয় না৷ আর যেহেতু তাঁর কথাগুলো সহজে বোঝা যায়, সেহেতু সাধারণ মানুষ নিজেদের তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত মনে করে৷
৩. মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে
প্রথম প্রথম হয়ত মনে হতে পারে এটা কোনো অর্থ বহন করে না৷ কিন্তু যেহেতু তিনি নিয়মিত স্ববিরোধী কথা বলেন এবং একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত জানান, তাই অনেকে মনে করেন তিনি আসলে সৎ৷
৪. ট্রাম্পের অর্থনৈতিক সাফল্য পরিষ্কার
প্রতিদিনই ট্রাম্প সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য বের হচ্ছে, যা দিয়ে বোঝা যায় যে তিনি নিজেকে যতটা সফল ব্যবসায়ী লে দাবি করেন, তিনি ততটা সফল নন৷ তবে সেসব তথ্য এখনো তাঁর ‘সফল ব্যবসায়ী যিনি সবকিছু ঠিকভাবে করতে চান' ভাবমূর্তিটি ক্ষুণ্ণ করতে পারেনি৷
৫. ট্রাম্প শত্রু তৈরি করতে ভয় পান না
তিনি যেভাবে রাগ প্রকাশ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের অপমান করেন এবং মানুষের ভুল ধরিয়ে দেন, তাতে এটা পরিষ্কার যে শত্রু তৈরিতে ভয় পান না ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ অনেকে এই দিকটাকেই ট্রাম্পের শক্তি হিসেবে দেখেন৷ কেননা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর কাজ হবে অ্যামেরিকার স্বার্থ বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়া৷
৬. ট্রাম্পের সাহস আছে, আছে আবেগও
ট্রাম্পের কাছ থেকে চিন্তা-ভাবনা করে তৈরি সুসঙ্গত কোনো পরিকল্পনা কেউ আশা করেন না৷ বরং তিনি তাঁর সমর্থকদের উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা দূর করতে নানা ধরনের তাৎক্ষণিক পরিকল্পনার কথা বলে থাকেন৷ আসলে ট্রাম্প নিজের সমর্থকদের এক ধরনের আবেগে বেঁধে ফেলেন৷
৭. সব কিছু একইরকম থাকবে, যেমনটা আগে কখনো ছিল না
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আগের মতো মহান করে তোলার যে স্বপ্ন ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখাচ্ছেন, তা অনেককে তাঁর পক্ষে টানতে সক্ষম হয়েছে৷ বিশেষ করে যারা বর্তমান বিশ্বায়নের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না কিংবা সমাজের দ্রুত পরিবর্তনে ভীত, তারা তাঁর এই বক্তব্যে আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন৷
নির্বাচনে ব্যবহার করা কিছু গান
জনপ্রিয় বলে এই গানগুলো প্রচারের কাজে ব্যবহারের সুযোগ অনেকেই ছাড়তে চান না৷ তাই নির্বাচনি প্রচারেও ব্যবহার করা হয়েছে এ সব গান৷ ফলে বিচিত্র সব কাণ্ডও ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Kaiser
ইউ টু: বিউটিফুল ডে
আয়ারল্যান্ডের ব্যান্ড ইউ-টু’র কিছু গান বেশ রাজনেতিক বক্তব্যসমৃদ্ধ৷ ২০০৫ সালে ব্রিটেনের সংসদ নির্বাচনে লেবার পার্টি তাদের এমন একটি গানই ব্যবহার করেছিল৷ ‘বিউটিফুল ডে’ শিরোনামের সেই গানটি ব্যবহারের আগে অনুমতিও নেয়া হয়নি৷ ইউ-টু’ও তাতে বিশেষ দোষের কিছু দেখেনি৷ ক্ষতিপূরণের মামলাই করেনি তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Mayo
এমজিএমটি: কিডস
২০০৯ সালে ফ্রান্সের নির্বাচনে নিকোলা সার্কোজির নির্বাচনি প্রচারের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বাজানো হয়েছিল এমজিএমটি ব্যান্ডের ‘কিডস’ শিরোনামের গানটি৷ অনুমতি না নিয়ে প্রচার করে পরে অবশ্য প্রতিকী ক্ষতিপূরণ হিসেবে এমজিএমটি-কে ১ দশমিক ২৫ ইউরো দিয়েছিল সার্কোজির দল৷ তারপরও ঝামেলা এড়ানো যায়নি৷ ক্ষতিপূরণ মামলা জিতে ৩০ হাজার ইউরো আদায় করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের রক ব্যান্ড এমজিএমটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warzawa
রোলিং স্টোনস: অ্যানজি
রোলিং স্টোনস চাইলে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল সিডিইউ-কেও হয়ত মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হতো৷ ২০০৫ সালের নির্বাচনে রোলিং স্টোনসের ‘অ্যানজি’ শিরোনামের গানটি সিডিইউ সমর্থকদের মুখে মুখে ফিরেছে৷ কিন্তু রোলিং স্টোনস মামলা না করায় জার্মানির রাজনীতির ‘অ্যানজি’ আঙ্গেলা ম্যার্কেল বা তাঁর দলকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হয়নি৷
ছবি: Reuters
আন্দ্রেয়া ভানটিনি: মেনো মেল চে সিলভিও চে
২০০৮ সালে ইটালির নির্বাচনে অবশ্য জনপ্রিয় কোনো ব্যান্ড বা পপ স্টারের গান বাজানো হয়নি৷ সিলভিও বার্লুসকোনির গুণকীর্তনে বাজানো হয়েছিল ইটালির আন্দ্রেয়া ভানটিনির গান ‘মেনো মেল চে সিলভিও চে’৷ ‘মেনো মেল চে সিলভিও চে’ কথার অর্থ ‘সিলভিওর জন্য ঈশ্বর তোমাকে ধন্যবাদ৷’ সেবার নির্বাচনে জিতে ইটালির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বার্লুসকোনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Dal Zennaro
আডেলে: রোলিং ইন দ্য ডিপ
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আডেলের গানের ভক্ত৷ তাই ট্রাম্পের প্রতিটি নির্বাচনি প্রচারানুষ্ঠান বা ভাষণের আগে আডেলের ‘রোলিং ইন দ্য ডিপ’ গানটি বেজেছে৷ আডেলের অনুমতি ছাড়াই বাজানো হচ্ছে গানটি৷
সেই ১৯৭০ সাল থেকে রিপাবলিকান পার্টি এমনভাবে সামনে এগিয়েছে যে অনেক পুরনো ভোটার সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদেরকে ঠিক খাপ খাওয়াতে পারেননি৷ ট্রাম্পের উত্থান সেই অগ্রগতির জবাব৷ দলটির পুরোনো সমর্থকরা, মানে শ্বেতাঙ্গ মধ্যবিত্ত শ্রেণি ট্রাম্পের মাধ্যমে নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন৷
৯. শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের শেষ সুযোগ
ডেমোক্র্যাটদের কাছে শ্বেতাঙ্গ মধ্যবিত্তরা এখন আর বিশেষ কোনো গুরুত্ব বহন করে না৷ তবে রিপাবলিকানদের এ বছর জিততে হলে তাদের ভোট লাগবে৷ তাছাড়া পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ অ-শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যাগরিষ্ট হয়ে যেতে পারে, যার অর্থ হচ্ছে সামগ্রিকভাবে সাদা ভোটারদের গুরুত্ব কমে যাওয়া৷ তাই এবারের ভোট সাদা মধ্যবিত্তের জন্য এক বড় সুযোগ৷
১০. ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারি ক্লিন্টন নন
অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন ঘুরে-ফিরে আবারো সেই একই বক্তব্য কেন? আসলে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বুলি ঘুরপাক খাচ্ছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়ত জিতবেন না৷ কিন্তু হিলারি ক্লিন্টন হারতে পারেন৷
যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ‘হিরো’ খেলোয়াড়রা
রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে সে দেশের মুসলিম ‘হিরো’ খেলোয়াড় কারা, জানতে চেয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ‘ডেইলি নিউজ’ ১০ মুসলিম ক্রীড়াবিদের তালিকা প্রকাশ করেছে৷
ছবি: Getty Images/N. Barnard
মুহাম্মদ আলী
হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মুহাম্মদ আলী ১৯৬৪ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০১ সালে আলীর হাতে ‘ইউনাইটেড সেরিব্রাল পলসি হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
করিম আব্দুল-জব্বার
এনবিএ বা ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন-র ইতিহাসে অন্যতম সেরা আইকনিক খেলোয়াড়৷ তিনি এনবিএ-র ২০ মৌসুম খেলে ছ’বারই ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নির্বাচিত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Pizzello
মাইক টাইসন
মাত্র ২০ বছর বয়সে হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বে পরিচিতি পান টাইসন৷ ১৯৯২ সালে ধর্ষণের দায়ে জেলে থাকার সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷ টাইসনকে জেল থেকে বের করায় সহায়তা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
হাকিম ওলাজুওন
নাইজেরিয়ান-অ্যামেরিকান এই বাস্কেটবল খেলোয়াড় রোজা রেখেও ম্যাচ খেলতেন৷ বলা হয়, তিনি নাকি রোজার মাসে একটু বেশি ভালো খেলতেন৷ ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনবিএ-র ‘প্লেয়ার অফ দ্য মান্থ’ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ অথচ সে বছর রোজা শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Carter Smith
শাকিল ও’নিল
খ্রিষ্টান মা ও মুসলিম সৎ বাবার সন্তান ও’নিল (ডানে) একবার বলেছিলেন, ‘‘আমি মুসলিম, আমি ইহুদি, আমি বৌদ্ধ, আমি সব কিছু, কারণ আমি একজন মানুষ৷’’ ডেইলি নিউজ-এর মতে, অন্যতম সেরা এই এনবিএ খেলোয়াড় মক্কায় গিয়েছিলেন হজ পালন করতে৷
ছবি: Getty Images/K. Winter
ব্যার্নার্ড হপকিন্স
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ডাকাতির মামলায় হপকিন্সের (ডানে) ১৮ বছরের জেল হয়েছিল৷ জেলে থাকার সময় তাঁর বক্সিং ও ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহ জন্মায়৷ তাই জেল থেকে বেরিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বক্সিং শুরু করেন৷ তিনিই প্রথম বক্সার যিনি চারটি বিশ্ব মিডলওয়েট শিরোপাই জয় করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
রশিদ ওয়ালেস
২০০৪ সালের এনবিএ চ্যাম্পিয়ন ডেট্রয়েট পিসটনস-এর অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ওয়ালেস (বল হাতে)৷ তাঁর স্ত্রীর নাম ফাতিমা৷
ছবি: Getty Images/J. Daniel
মাহমুদ আব্দুল-রউফ
ক্রিস জ্যাকসন ১৯৯১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হয়ে যান মাহমুদ আব্দুল-রউফ৷ ১৯৯৩ সালে তিনি এনবিএ-র ‘মোস্ট ইমপ্রুভড প্লেয়ার’ খেতাব পেয়েছিলেন৷ তিনি এনবিএ-র নয়টি মৌসুমে খেলেছেন৷
ছবি: Getty Images/Allsport/D. Pensinger
শরিফ আব্দুর-রহিম
মা আমিনা ও বাবা উইলিয়াম আব্দুর-রহিমের ১২ সন্তানের একজন শরিফ৷ ২০০০ সালের অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল দলের সদস্য ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/J. Jacobsohn
মুহাম্মদ উইলকারসন
২৬ বছর বয়সি এই অ্যামেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়ের মা হিজাব পরেন৷ ২০১১ সালে এক এগারোর দশ বছর পূর্তিতে তিনি বলেন, ‘‘ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ মুসলিম হওয়া মানে আল্লাহর শিক্ষা গ্রহণ করা, যিনি বলেছেন, তোমরা কখনও কারও ক্ষতি করো না, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের৷’’