চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের শেষ টিভি বিতর্কে জেব বুশ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেছেন বটে, কিন্তু দলীয় সমর্থনের দৌড়ে এখনও ট্রাম্প-ক্রুজ-রুবিও এগিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সিএনএন সঞ্চালকদের পরিচালনায় যে আটজন রিপাবলিকান প্রার্থী টেলিভিশন বিতর্কে নামেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র জেব বুশ-ই ট্রাম্পকে সরাসরি আক্রমণের সাহস পেয়েছেন, বলে পর্যবেক্ষকদের মনে হয়েছে৷
‘‘ডোনাল্ড ভালো মন্তব্য করতে পারে৷ কিন্তু ও একজন বিশৃঙ্খল প্রার্থী এবং পরে একজন বিশৃঙ্খল প্রেসিডেন্ট হবে'', বলেছেন ৬২ বছর বয়সি বুশ৷ যার উত্তরে ৬৯ বছর বয়সের ট্রাম্প জবাব দিয়েছেন, ‘‘ ও ইয়্যা, আর তুমি হবে ‘টাফ গাই'৷'' অন্য প্রার্থীরা ট্রাম্পকে ঘাঁটানো থেকে বিরত থেকেছেন৷
সব মিলিয়ে বছরের শেষ রিপাবলিকান বিতর্ক থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়যাত্রায় কোনো বাধা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না৷ ট্রাম্প যদি বুদবুদই হন, তবুও তা ফাটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, লিখেছে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস৷
আসলে ট্রাম্প-এর যা করার ছিল, তা তিনি গত সপ্তাহেই করেছেন: মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে শুধু অ্যামেরিকা নয়, সারা বিশ্বকে সচকিত করেছেন৷
তার ফলে তাঁকে স্বদেশে ও বিদেশে রোষ থেকে শুরু করে ব্যঙ্গ অবধি সব ধরনের প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়েছে৷ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অষ্টাদশী পাকিস্তানি তরুণী মালালা ইউসুফজাই ট্রাম্প-এর মনোভাবের নিন্দা করে বলেছেন যে, রিপাবলিকান পদপ্রার্থীর মন্তব্য ‘বিদ্বেষপূর্ণ' এবং এর ফলে আরো বেশি সন্ত্রাসবাদী সৃষ্টি হবে৷
গত ৭ই ডিসেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন৷ তা-তে রিপাবলিকান পদপ্রার্থী হবার প্রতিযোগিতায় তাঁর কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না, সর্বাধুনিক রয়টার্স/ইপসোস জরিপ যার প্রমাণ৷ সেই জরিপে রিপাবলিকান ভোটারদের ৩৩ শতাংশ ট্রাম্পকে সমর্থন করেন৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন টেক্সাসের সেনেটর ৪৪ বছর বয়সি টেড ক্রুজ, যিনি কিউবান বংশোদ্ভূত; ক্রুজ-এর সমর্থন ১৫ শতাংশ৷ তৃতীয় স্থানে অবসরপ্রাপ্ত নিউরোসার্জন বেন কার্সন, যার সমর্থন ১২ শতাংশ৷ চতুর্থ: আরেক কিউবান বংশোদ্ভূত রাজনীতিক, ফ্লোরিডার সেনেটর মার্কো রুবিও, এনার বয়সও ৪৪; এবং সমর্থন ১০ শতাংশ৷ তার পরে আসছেন জেব বুশ, যার সমর্থন ৯ শতাংশ৷
ক্রুজ গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের একটি ফান্ড-রেইজিং অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তোলেন যে, মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভারের দায়িত্ব নেবার মতো বিবেচনাবুদ্ধি ট্রাম্প-এর আছে কিনা৷ মঙ্গলবারের বিতর্কে উভয়ে তা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-এর বিরুদ্ধে সামরিক পন্থা নিয়ে ক্রুজ আর রুবিও-র মধ্যে বুনিয়াদি ফারাক হলো এই যে, ক্রুজ চান আইএস-এর এলাকার ওপর ব্যাপক বোমাবর্ষণ আর রুবিও চান সেই সঙ্গে স্থলসৈন্য৷
ওদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর নয়া প্রস্তাব হলো, আইএস-এর এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হোক৷
ট্রাম্পের মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে আপনার মতামত চাই৷ লিখুন নীচের ঘরে৷
যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ‘হিরো’ খেলোয়াড়রা
রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে সে দেশের মুসলিম ‘হিরো’ খেলোয়াড় কারা, জানতে চেয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ‘ডেইলি নিউজ’ ১০ মুসলিম ক্রীড়াবিদের তালিকা প্রকাশ করেছে৷
ছবি: Getty Images/N. Barnard
মুহাম্মদ আলী
হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মুহাম্মদ আলী ১৯৬৪ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০১ সালে আলীর হাতে ‘ইউনাইটেড সেরিব্রাল পলসি হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
করিম আব্দুল-জব্বার
এনবিএ বা ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন-র ইতিহাসে অন্যতম সেরা আইকনিক খেলোয়াড়৷ তিনি এনবিএ-র ২০ মৌসুম খেলে ছ’বারই ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার’ নির্বাচিত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Pizzello
মাইক টাইসন
মাত্র ২০ বছর বয়সে হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বে পরিচিতি পান টাইসন৷ ১৯৯২ সালে ধর্ষণের দায়ে জেলে থাকার সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷ টাইসনকে জেল থেকে বের করায় সহায়তা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
হাকিম ওলাজুওন
নাইজেরিয়ান-অ্যামেরিকান এই বাস্কেটবল খেলোয়াড় রোজা রেখেও ম্যাচ খেলতেন৷ বলা হয়, তিনি নাকি রোজার মাসে একটু বেশি ভালো খেলতেন৷ ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনবিএ-র ‘প্লেয়ার অফ দ্য মান্থ’ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ অথচ সে বছর রোজা শুরু হয়েছিল ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Carter Smith
শাকিল ও’নিল
খ্রিষ্টান মা ও মুসলিম সৎ বাবার সন্তান ও’নিল (ডানে) একবার বলেছিলেন, ‘‘আমি মুসলিম, আমি ইহুদি, আমি বৌদ্ধ, আমি সব কিছু, কারণ আমি একজন মানুষ৷’’ ডেইলি নিউজ-এর মতে, অন্যতম সেরা এই এনবিএ খেলোয়াড় মক্কায় গিয়েছিলেন হজ পালন করতে৷
ছবি: Getty Images/K. Winter
ব্যার্নার্ড হপকিন্স
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ডাকাতির মামলায় হপকিন্সের (ডানে) ১৮ বছরের জেল হয়েছিল৷ জেলে থাকার সময় তাঁর বক্সিং ও ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহ জন্মায়৷ তাই জেল থেকে বেরিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং বক্সিং শুরু করেন৷ তিনিই প্রথম বক্সার যিনি চারটি বিশ্ব মিডলওয়েট শিরোপাই জয় করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
রশিদ ওয়ালেস
২০০৪ সালের এনবিএ চ্যাম্পিয়ন ডেট্রয়েট পিসটনস-এর অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ওয়ালেস (বল হাতে)৷ তাঁর স্ত্রীর নাম ফাতিমা৷
ছবি: Getty Images/J. Daniel
মাহমুদ আব্দুল-রউফ
ক্রিস জ্যাকসন ১৯৯১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হয়ে যান মাহমুদ আব্দুল-রউফ৷ ১৯৯৩ সালে তিনি এনবিএ-র ‘মোস্ট ইমপ্রুভড প্লেয়ার’ খেতাব পেয়েছিলেন৷ তিনি এনবিএ-র নয়টি মৌসুমে খেলেছেন৷
ছবি: Getty Images/Allsport/D. Pensinger
শরিফ আব্দুর-রহিম
মা আমিনা ও বাবা উইলিয়াম আব্দুর-রহিমের ১২ সন্তানের একজন শরিফ৷ ২০০০ সালের অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল দলের সদস্য ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/J. Jacobsohn
মুহাম্মদ উইলকারসন
২৬ বছর বয়সি এই অ্যামেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়ের মা হিজাব পরেন৷ ২০১১ সালে এক এগারোর দশ বছর পূর্তিতে তিনি বলেন, ‘‘ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ মুসলিম হওয়া মানে আল্লাহর শিক্ষা গ্রহণ করা, যিনি বলেছেন, তোমরা কখনও কারও ক্ষতি করো না, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের৷’’