মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে জার্মানি ও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাণিজ্যিক সম্পর্কের সমালোচনা করেছেন৷ দু'টি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমদানির চেয়ে বেশি রপ্তানি করে৷
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামরেকিা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় দেশীয় শিল্পকে সুবিধা দিতে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন৷ চীনের ক্ষেত্রে সেটি ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে৷ আর জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে তা আগামী মাস থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
এছাড়া ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ পাশাপাশি যেসব কোম্পানি ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করবে তারাও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে বলে জানিয়েছেন৷ জার্মান ও চীনা কোম্পানিগুলোর উপর এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে৷ কারণ ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান চুক্তির অন্যতম অংশীদার রাষ্ট্র জার্মানি ও চীন৷ ট্রাম্পের ঘোষণার পর দেশ দু'টি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই ইরান চুক্তি চালিয়ে যাবে৷ চীন সফররত জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও স্বাগতিক দেশের প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াং বৃহস্পতিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি আবারও নিশ্চিত করেছেন৷ ম্যার্কেল বলেছেন, ইরান চুক্তি পুরোপুরি নিখুঁত নয়, কিন্তু তার বিকল্প আরও অনিশ্চিত৷
চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩৩৫ বিলিয়ন ডলার৷ এটি দূর করতে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে পণ্য আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করেছে৷ পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও কিছু মার্কিন পণ্য আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করে৷ তবে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পর রবিবার চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনতে রাজি হওয়ায় দুই দেশই আপাতত আমদানি শুল্ক কার্যকরের বিষয়টি স্থগিত রেখেছে৷
জার্মানরা আজও যে সব গাড়ি নিয়ে পাগল...
এই সব মডেলের গাড়ি দেখে গাড়ি প্রেমিকদের চোখে আজও জল আসে৷ ফল্কসভাগেন থেকে বিএমডাব্লিউ, ওপেল থেকে মার্সিডিজ বেঞ্জ অবধি জার্মান গাড়ি নির্মাতারা নানা ‘কাল্ট মডেল’ তৈরি করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
ফল্কসভাগেন বিটল (১৯৩৮)
এক কথায় ‘ওল্ড ফেইথফুল’৷ সর্বসাকুল্যে দু’কোটি দশ লাখের বেশি বিটল তৈরি হয়েছে৷ ফল্কসভাগেন বিটল সম্ভবত বিশ্বের প্রখ্যাততম মোটরগাড়ি৷ ১৯৩৮ থেকে ২০০৩ সাল অবধি বিটল-এর ডিজাইন বিশেষ বদলায়নি৷ ‘হার্বি’ ফিল্মটার কথা মনে করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফল্কসভাগেন টি-ওয়ান (১৯৫০)
...বলতে বোঝায় ফল্কসভাগেন ক্যাম্পার ভ্যান, যা হিপি আন্দোলনের সময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল৷ জার্মানরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘বুলি’৷ সে-যাবৎ এক কোটির বেশি ফল্কসভাগেন বাস বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে টি-ওয়ান মডেলের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ৷
ছবি: DW/M. Reitz
মেসারস্মিট কেবিন স্কুটার (১৯৫৩)
মেসারস্মিট যে আদতে এয়ারোপ্লেন তৈরি করত, তিন চাকার এই এয়ায়োডাইনামিক গাড়িটির চেহারা দেখলেই তা বোঝা যায়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিমান তৈরি বন্ধ হয়ে যায়, কাজেই মেসারস্মিট কিছুদিন ইঞ্জিনিয়ার ফ্রিটৎস ফেন্ড-এর সঙ্গে ‘ফ্লিটৎসার’ গাড়ির মডেলটি নিয়ে কাজ করে৷ তবে ১৯৫৬ সালের মধ্যেই মেসারস্মিট আবার বিমান উৎপাদনে ফেরে৷
ছবি: picture alliance/dpa/H. Galuschka
মার্সিডিজ ৩০০ এসএল (১৯৫৪)
গাড়িটার ডাকনাম হয়েছিল ‘গালউইং’ বা ‘গাঙচিলের পাখা’, কারণ দরজাগুলো ঠিক সেভাবেই ওপরের দিকে খুলত৷ ৩০০ এসএল সিলভার অ্যারো রেসিং কার-গুলো থেকেই মার্সিডিজ বেঞ্জ আবার মোটর রেসিং-এ ফেরে৷ লে মান্সের ২৪ ঘণ্টার মোটর দৌড় আর ক্যারেরা প্যানঅ্যামেরিকানা রেসিং ইভেন্টে জেতার পর ৩০০ এসএল গাড়ির একটি রাস্তায় চলা ও চালানোর মতো মডেল বার করা হয়৷
ছবি: Daimler AG
বিএমডাব্লিউ ইসেটা (১৯৫৫)
১৯৫৫ থেকে ১৯৬২ সাল অবধি ভালোই রোজগার করেছে বিএমডাব্লিউ এই ‘বাবল কার’ বা ‘বুদবুদ গাড়ি’-টি তৈরি করে৷ সস্তার কিন্তু কাজের এই মিনিগাড়িটিতে একটি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন লাগানো ছিল৷ খুলতে হতো সামনে, ঠিক একটা ফ্রিজিডেয়ারের মতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
পোর্শে নাইন-ইলেভেন (১৯৬৩)
ভাবলেই আশ্চর্য লাগে, পোর্শে ৯১১ স্পোর্টিং মডেলটি চলে আসছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে! মোটরগাড়ির ইতিহাসে খুব কম মডেলই এতদিন ধরে চলে৷ তার উঁচু করা হেডলাইট আর পিছনদিকে নীচু বুট দেখলেই নাইন ইলেভেনকে চেনা যায়৷
ছবি: picture-alliance//HIP
মার্সিডিজ বেঞ্জ ৬০০ (১৯৬৪)
টেলিফোন, এয়ার কন্ডিশনিং আর ফ্রিজ লাগানো এই জার্মান লাক্সারি সেডানটি সত্তর আর আশির দশকে পোপ থেকে শুরু করে জন লেনন অবধি সেলিব্রিটিদের খুব প্রিয় ছিল৷ এমনকি ১৯৫৫ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানিতে আসেন, তখন জার্মান সরকার মাননীয় অতিথির জন্য একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ ৬০০ ভাড়া করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ট্রাবান্ট ৬০১ (১৯৬৪)
ফল্কসভাগেন বিটল পশ্চিম জার্মানিতে যা ছিল, পূর্ব জার্মানিতে ট্রাবান্ট ৬০১ ছিল ঠিক তাই৷ প্লাস্টিকের বডি আর টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন সংযুক্ত এই ‘ট্রাবি’ ছিল এক হিসেবে পূর্ব জার্মানির প্রতীক৷ আজও প্রায় ৩৩,০০০ ‘ট্রাবি’ জার্মানির পথেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: Imago/Sven Simon
ভার্টবুর্গ ৩৫৩ (১৯৬৬)
আইসেনাখ শহরের কাছে ভার্টবুর্গ দুর্গ, তারই নামে নাম রাখা হয়েছিল পূর্ব জার্মানির এই দ্বিতীয় আইকনিক গাড়িটির৷ তৈরি হতো প্রধানত রপ্তানির জন্য, যেমন হাঙ্গেরি অথবা ব্রিটেনে৷ তবে পশ্চিম জার্মানিতে ভার্টবুর্গ গাড়ির বিশেষ চাহিদা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Wolf
ওপেল মান্টা (১৯৭০)
সৃষ্টি হয়েছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য একটি স্পোর্টস মডেল হিসেবে – পরে সেটাই জার্মানির ‘ইয়ং ম্যান’-দের কাছে অভীপ্স বস্তু হয়ে দাঁড়ায়৷ মান্টা চালকদের নিয়ে জার্মানিতে অসংখ্য রসিকতা আছে: বিশেষ করে মান্টা চালকদের বুদ্ধি – অথবা তার অভাব নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফল্কসভাগেন গল্ফ (১৯৭৪)
১৯৭৪ সালে ফল্কসভাগেন কোম্পানি তাদের প্রথম গল্ফ মডেল বার করে – সুবিখ্যাত বিটল গাড়ির উত্তরসূরি হিসেবে৷ কমপ্যাক্ট হলেও, গল্ফ ছিল বেশ ‘স্পোর্টি’ আর তেলও খেতো কম – যা সত্তরের দশকের ‘অয়েল ক্রাইসিসে’ খুবই কাজে লেগেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
চীন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসনের এমন সব সিদ্ধান্ত জার্মানি ও চীনকে কাছাকাছি এনেছে বলে মনে করেন জার্মান কর্মকর্তারা৷
জার্মানি-চীন বাণিজ্যিক সম্পর্ক
চীনে দু'দিনের সফরে আছেন জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ ২০০৫ সালে প্রথমবার চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে ১১ বার চীনে গেলেন তিনি৷ এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গে জার্মানির ১৮ জন ব্যবসায়ী আছেন৷ আগামীকাল তাঁরা চীনের প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দু শহর শেনজেন-এ যাবেন৷
জার্মানির ব্যবসায়িক নেতা ও আইনপ্রণেতারা দীর্ঘদিন ধরে চীনে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে থাকা নানান বাধার সমালোচনা করে এসেছেন৷ বিশেষ করে চীনে বাণিজ্য করতে গেলে নাকি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তাদের ব্যবসায়িক বুদ্ধি প্রকাশ করতে একরকমের বাধ্য করা হয়৷ তাছাড়া ব্যবসা করতে গেলে চীনা কর্তৃপক্ষকে একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মালিক করতে হয়৷
এসব বিষয় নিয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল৷ এই সময় তিনি যাত্রীবহণকারী গাড়ি আমদানির উপর শুল্ক কমানোয় চীনকে ধন্যবাদ জানান৷ মঙ্গলবার এক সিদ্ধান্তে এ ধরনের গাড়ির উপর ধার্য থাকা শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেয় চীন৷
চীনা প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে চীনে জার্মানির স্বয়ংক্রিয় গাড়ি সংক্রান্ত বিনিয়োগকে স্বাগত জানান৷ বিনিয়োগকালীন সময়ে জার্মান কোম্পানিগুলো কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে চীনা আইন অনুযায়ী তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি৷
বৃহস্পতিবার রাতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে৷