ইরাকের বাগদাদে ড্রোন হামলার বিষয়ে সৌদি আরবের সাথে কোনো পরমার্শ করেনি যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন দাবি করেছেন সৌদি এক কূটনীতিক৷
ছবি: Picture alliance/Zumapress/S. Craighead
বিজ্ঞাপন
এদিকে উত্তেজনা নিরসনে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছেন সৌদি বাদশাহ৷
গত শুক্রবার বাগদাদের বিমান বন্দরের বাইরে ড্রোন হামলায় ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের উপর সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতেই সোলেইমানিকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি তাদের৷
তবে এ হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের দীর্ঘ দিনের সহযোগী সৌদি আরবের সাথে কোনো আলোচনা করেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন কূটনীতিক৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তাসংস্থা এএফপিকে এ কূটনীতিক জানান, ‘‘ড্রোন হামলার বিষয়ে সৌদি আরবের সাথে আলোচনা করা হয়নি৷''
এদিকে সোলেমানিকে হত্যার ভয়ংকর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান৷ আর তাই পাশের দেশ সৌদি আরব চলমান উত্তেজনায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকরা৷
তবে উত্তেজনা প্রশমনে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব৷ শনিবার সৌদি বাদশাহ সালমান ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সাথে টেলিফোনে কথা বলেন ও চলমান উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করার উপর জোরারোপ করেন৷
সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দেশটির উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমানকে চলমান বিষয়ে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন ও লন্ডনে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো৷
কে ছিলেন কাসিম সোলাইমানি
কাসিম সোলাইমানি৷ ইরানিদের কাছে তিনি নায়কোচিত এক বীর, যার জনপ্রিয়তা এমনকি প্রেসিডেন্ট রুহানির চেয়েও বেশি৷ অন্যদিকে পশ্চিমাদের কাছে তিনি জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর মদদদাতা৷ সোলাইমানি কেন এত আলোচিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: mojnews
তারকাখ্যাতি
ইরানের জনগনের কাছে কাসিম সোলাইমানির ছিল তারকাখ্যাতি৷ ইনস্টাগ্রামে সেনা বাহিনীর এই জেনারেলের রয়েছে বিপুল অনুসারী৷
ছবি: FARS
পর্দায় সোলাইমানি
২০০৩ সালে ইরান সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে আলোচনায় কাসিম সোলাইমানি৷ এসময় যুদ্ধময়দানের ছবিতে, তথ্যচিত্র, এমনকি মিউজিক ভিডিও আর অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রেও দেখা যায় তাকে৷
ছবি: Khamenei.ir
যুদ্ধময়দানে
গত অক্টোবরে সোলাইমানির বিরল একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে৷ জানান, ২০০৬ সালে তিনি লেবাননে ইসরায়েল-হেজবুল্লাহ যুদ্ধের তদারকি করেছেন৷
ছবি: ILNA
আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের স্থপতি
সোলাইমানির সমর্থকরা মনে করেন সম্প্রতি ইরানের আঞ্চলিক ক্ষমতা বিস্তারের মূল স্থপতি ছিলেন তিনি৷ তার নেতৃত্বেই মধ্যপ্রাচ্যে জিহাদী বিরোধী অভিযানগুলো পরিচালনা করেছে ইরান৷ ইরাক, সিরিয়া সহ অন্যদেশগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়েছেন তিনি৷
ছবি: ABNA24.com
শিয়াদের জেমস বন্ড?
২০১৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনের সবচেয়ে প্রভাবাশালী ব্যক্তিদের তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷ সাবেক সিআইএ অ্যানালিস্ট কেনেথ পোলাক তার সম্পর্কে সেখানে লিখেছেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের শিয়াদের কাছে কাসিম সোলাইমানি একাধারে জেমস বন্ড, আরউইন রোমেল এবং লেডি গাগার সম্মিলিত এক চরিত্র৷’’
ছবি: Farsnews
পশ্চিমাদের চক্ষুশূল
কেনেথ পোলাক আরো লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমাদের কাছে তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লব অন্যদেশগুলোতে রপ্তানি করা, সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা দেয়া, পশ্চিমাপন্থি সরকারদের সর্বনাশ করা আর বিদেশের মাটিতে যুদ্ধে ইরানের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দায়ী এক ব্যক্তি৷’’ পশ্চিমা নেতারা লেবাননে হেজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসের মত জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলেও মনে করেন তাকে৷
ছবি: picture alliance / AA
রাজনীতির ময়দানে
অর্থনৈতিক সঙ্কট, দেশজুড়ে অসন্তোষ আর বাহির থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের প্রেক্ষিতে রাজনীতিতে আসার জন্য তার প্রতি আহবান জানিয়েছিল অনেক ইরানী৷ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাড়াবেন এমন গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল৷ যদিও পরবর্তীতে তা নাকচ করে দেন কাসিম৷
ছবি: FARS
ইরাকের সরকার গঠনে
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায় তখন ইরানের ‘কুদস ফোর্সের’ নেতৃত্বে চলে আসেন তিনি৷ এই বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছেন তিনি৷ ২০১৮ সালে ইরাকের সরকার গঠনে তার ভূমিকাও এখন আর অজানা নয়৷
ছবি: Fars
রুহানির চেয়েও জনপ্রিয়
২০১৮ সালে ইরান পোল এবং ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা সোলাইমানির জনপ্রিয়তার হার ছিল ৮৩ ভাগ৷ তার চেয়ে পেছনে ছিলেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফও৷