কয়েকদিন আগে অ্যামাজন জানিয়েছিল যে, তারা ড্রোনে করে বাড়ি বাড়ি পার্সেল পৌঁছে দেবে৷ অবশ্য পরিকল্পনাটা এই দশকের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রকৌশলীরা৷
ড্রোন-কে অনেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের যুদ্ধদানব বলে থাকে৷ তবে বহুদিন ধরে বেসামরিক কাজেও চালক-বিহীন বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সাধারণ ইলেকট্রনিক দোকানে ৩০০ ইউরোর কমেও এমন ড্রোন কিনতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpaচারটি প্রপেলার, দুটি ক্যামেরা, ব্যাটারিচালিত এই ড্রোনের নাম ‘কোয়াড্রোকপ্টার’৷ প্যারিসের এক কোম্পানি এটি বাজারে এনেছে৷ স্মার্টফোন-কেই রিমোট হিসেবে ব্যবহার করে এই ড্রোন ওড়ানো যায়৷ ক্যামেরায় তোলা ছবিও ফোনের পর্দায় দেখা যায়৷ অতএব বে-আইনি হলেও প্রতিবেশীর জানালায় উঁকি মারা সম্ভব৷
ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ড্রোন দিয়ে গাছের চূড়া পর্যবেক্ষণ করেন৷ গাছের থ্রিডি মডেলও তৈরি করেন৷ রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীও এই কর্মকাণ্ড দেখতে নিজে এসেছিলেন৷ অর্থাৎ, এখনো এই পদ্ধতি বেশ বিরল৷
আসলে কিন্তু বিশেষ এক জাতের পুরুষ মাছিকেই ‘ড্রোন’ বলা হতো৷ বিশাল চোখ ও হুল ফোটানোর ক্ষমতা রয়েছে সেই মাছির৷ ‘ভোঁ-ভোঁ’ করা থেকেই ‘ড্রোন’ শব্দটি এসেছে৷
মা নেই? ড্রোন তো আছে! মিউনিখ ও বোলোনিয়ার বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির সুরক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন৷ অনাথ পক্ষীশিশুদের বাঁচাতে ড্রোনই হয়ে উঠছে মা-পাখি৷
জার্মানিতে কয়েক বছর ধরেই দমকল ড্রোন ব্যবহার করছে৷ তারা বিশেষ ইনফ্রারেড ক্যামেরা নিয়ে আকাশ থেকে নিখোঁজ মানুষের খোঁজ করে৷ বিপজ্জনক এলাকায় গিয়েও ছবি তুলতে পারে এই যন্ত্র৷
এক সার কারখানায় আগুন লেগে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল৷ এমনকি বিশেষজ্ঞরাও বিপদের আশঙ্কায় দুই দিন ধারে-কাছে ঘেঁষতে পারেন নি৷ ড্রোন থেকেই প্রাথমিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল৷
জাপানে ফুকুশিমা পরমাণু দুর্ঘটনার পরেও পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল৷ কোনো ঝুঁকি নিতে হয়নি৷ সেই ছবি থেকে ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক চিত্র উঠে এসেছিল৷
ভারতেও ড্রোন নিয়ে গবেষণা চলছে৷ ব্যাঙ্গালোরের কাছে অনেক এয়ারোস্পেস সংস্থা মিনি-ড্রোন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে৷ সন্ত্রাসবাদী বা বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এই ড্রোন আকাশ থেকে এলাকার ছবি তুলতে পারবে৷
জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রোন প্রযুক্তির উন্নতির কাজ চলছে৷ যেমন ইলমেনাউ-এর গবেষকরা এমন এক কোয়াড্রোকপ্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন, যা মোবাইল টাওয়ার মেরামত করতে পারবে৷
‘ডিপ ড্রোন ৮০০০’ নামের এই যন্ত্র উড়তে পারে না বটে, কিন্তু তাতে কী এসে যায়! সংজ্ঞা অনুযায়ী ড্রোন মানব-বিহীন হলেই চলবে৷ অর্থাৎ ড্রোন ডুবুরিও হতে পারে৷ মার্কিন নৌ-বাহিনীর তৈরি এই ড্রোন ২,৫০০ মিটার গভীরে গিয়ে ডুবোজাহাজ উদ্ধারে সাহায্য করতে পারে৷
বেসামরিক ব্যবহার বাড়লেও মানুষের মূল নজর সামরিক ড্রোনের দিকে৷ সমালোচকদের চোখে এই সব ড্রোন গোয়েন্দাগিরি ও ধ্বংসের কাজেই ব্যস্ত৷ অবৈধ পথে মানুষ খুন করাও এদের কাজ৷ এই কর্মসূচির প্রতিবাদে জার্মান সংসদের সামনে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
সম্প্রতি এমন আরেকটি খবর দিয়েছে আরব আমিরাত৷ দেশটির সরকার বলছে, আগামী এক বছরের মধ্যে তারা নাগরিকদের কাছে ড্রোনে করে সরকারি কাগজপত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করছে৷ যে ধরনের ড্রোনে করে বিষয়টা সম্পাদন করা হবে তার একটা ‘প্রোটোটাইপ' সাংবাদিকদের দেখানো হয়েছে৷ দেশটির এক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল-গেরগাউই জানিয়েছেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে তা হবে বিশ্বে এ ধরনের প্রথম ঘটনা৷
আব্দুলরহমান আলশেরকাল নামে আরব আমিরাতের এক প্রকৌশলী ব্যাটারিচালিত এই ড্রোন তৈরি করেছেন৷ সাদা রংয়ের এবং আমিরাতের পতাকাশোভিত এই ড্রোনে করে পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা এই জাতীয় কাগজপত্র পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানা গেছে৷
তবে যে দেশে তাপমাত্রা প্রায় সময়ই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে এবং যেখানে প্রায়ই মরুঝড়ের আবির্ভাব ঘটে সেখানে ড্রোনের বিষয়টি কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ মন্ত্রী আল-গেরগাউই হয়ত বিষয়টা উপলব্ধি করেছেন৷ তাই তিনি বলেছেন, ‘‘আগামী ছয় মাস ড্রোনের কার্যকারিতা ও দক্ষতা বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হবে৷ তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এটা দিয়ে কি ধরনের এবং কতটুকু সেবা দেয়া সম্ভব হবে৷''
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ)
