ড. ইউনূসের মামলার কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র
৫ জুন ২০২৪
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার মঙ্গলবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা মামলার কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছে৷
বিজ্ঞাপন
দুদকের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় গত ২ জুন আদালতকক্ষে লোহার খাঁচায় কাঠগড়াতে দাঁড়িয়েছিলেন ড. ইউনূস৷ এ প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারকে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের সময় প্রশ্ন করেন ভয়েস অব অ্যামেরিকার সাংবাদিক গুইতা আরিয়ান৷
গুইতা আরিয়ান বলেন, ‘‘নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার আদালতকক্ষে একটি লোহার খাঁচায় কাঠগড়াতে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন৷ তিনি উল্লেখ করেন, তিনি তার অভিশপ্ত জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ একইভাবে, হাজারো বাংলাদেশি নাগরিকও গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অভাবে এবং বড় আকারের দুর্নীতির মাঝে তাদের অভিশপ্ত জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন৷''
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশেই দারিদ্র্যমোচনে সহায়তা করছে না ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷ নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই উদ্ভাবন এখন উন্নত বিশ্বেও গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানি এক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে উদাহরণ৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images
সিলভিয়ার গল্প
বাড়িতে বাড়িতে চিঠিপত্র বিলি করতে করতেই জার্মানির সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার একটি বিষয় লক্ষ্য করেন৷ অনেক বাড়ির ছাদে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল৷ তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, এসব প্যানেল পরিষ্কার করা হয় কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণের সন্ধান পান তিনি৷
ছবি: privat
দু’হাজার ইউরো দিয়ে শুরু
সিলভিয়া আবিষ্কার করেন, সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ তেমন কেউ করছে না৷ অথচ মাত্র দু’হাজার ইউরো দিয়ে মেশিন কিনে এই কাজ করা সম্ভব৷ কিন্তু সাধারণ ব্যাংক এত কম টাকা ঋণ দিতে রাজি নয়৷ সিলভিয়া তখন ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নেন৷
ছবি: DW/G.Rueter
জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত উন্নত অর্থনীতির কারণে জার্মানিকে ক্ষুদ্রঋণের অনুপযুক্ত মনে করা হতো৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন৷ ২০১০ সালে জার্মান সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এদেশে চালু হয় ক্ষুদ্রঋণ তহবিল৷ এই তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার হার দ্রুতই বাড়ছে৷
ছবি: Fotolia/apops
ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে ৬০টি প্রতিষ্ঠান
জার্মান মাইক্রোফিন্যান্স ইন্সটিটিউটের ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে বর্তমানে ৬০টির বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দিচ্ছে৷ তাদের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ তিন হাজার থেকে ২০ হাজার ইউরোর মধ্যে৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Fotolia/Guido Grochowski
চাহিদা বাড়ছে
শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপেই ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে৷ মার্কিন পত্রিকা ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের’ এক জরিপ বলছে, ইউরোপে ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ শুধু স্পেনেই এই সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নিয়েছেন ৭৫ হাজার ব্যবসায়ী৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদের হার লাভজনক নয়
ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ দানের ক্ষেত্রে সুদের হার এখন মাত্র দশ শতাংশ৷ এই হার ঋণদাতাদের জন্য লাভজনক নয়৷ তবে সরকার এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সহায়তা দিচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সন্তুষ্ট সিলভিয়া
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ শুরু করা সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার কিন্তু সন্তুষ্ট৷ শুরুর দিকে বছরে আশিটির মতো কাজের অর্ডার পেতেন তিনি৷ এখন সেই অর্ডারের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে৷ একেকটি অর্ডার থেকে তাঁর আয় তিন থেকে চারশো ইউরো৷ ফলে ঋণের টাকা শোধ করা কোনো বিষয়ই নয়৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
ক্ষুদ্রঋণের জনক মুহাম্মদ ইউনূস
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ বিশ্বের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করে গ্রামীণ ব্যাংক৷ অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ক্ষুদ্রঋণের ধারণা কাজে লাগিয়ে আশির দশকে ব্যাংকটি গড়ে তোলেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক দেশে সাফল্য দেখিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
ম্যাথু মিলারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, আপনারা বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও পুলিশপ্রধানের বিরুদ্ধে স্যাংশন ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন৷ আপনি কি মনে করেন, এ বছরের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রহসনমূলক নির্বাচনের পর এসব উদ্যোগ এই শাসকগোষ্ঠীকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য যথেষ্ট? নাকি আপনারা গণতান্ত্রিক ও গণতন্ত্রপ্রেমী বাংলাদেশি মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পূর্ব-প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবেন?''
জবাবে মিলার বলেন, ‘‘আমরা নিবিড়ভাবে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা মামলার কার্যক্রমের ওপর নজর রাখছি৷ আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং জানিয়েছি, এসব মামলা ড. ইউনূসকে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশের শ্রম আইন অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপিত হচ্ছে৷ আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ শ্রম ও দুর্নীতি দমন আইনের অপব্যবহারের কারণে সার্বিকভাবে দেশটির আইনের শাসন পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগের আপিল প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় আমরা বাংলাদেশি সরকারকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য উৎসাহ দেওয়া অব্যাহত রাখব৷ তবে এ মুহূর্তে আমরা আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি না৷''
দুদকের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই যে, এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল বিজয়ী মামলা করেছে৷'' এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘‘এই প্রথম লোহার খাঁচায় কাঠগড়াতে দাঁড়াতে হলো, এটা একটা দেখার মতো দৃশ্য৷ এটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা যে লোহার খাঁচার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি আদালতের কাঠগড়ায়৷ এ অভিশপ্ত জীবনের একটা অংশ৷''