ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রমিকদের ঠকিয়েছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
৩ জানুয়ারি ২০২৪
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারাদণ্ডের বিষয়ে আইন এবং শাস্তির কারণ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ শ্রমিকদের ঠকিয়েছেন বলেই আদালত তার বিরুদ্ধে এ রায় দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীরপাড়ে সিলেট-১ আসনে তার নির্বাচনি কার্যালয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
‘‘মুহাম্মদ ইউনূস একজন নোবেল লরিয়েট। আমরা তাকে অত্যন্ত সম্মান করি। পৃথিবীতে অনেক নোবেল লরিয়েটই আছেন যারা অন্যায় করেছেন, ক্রিমিনাল কাজ করেছেন, তাদের শাস্তি হয়েছে। আমাদের নোবেল লরিয়েট ক্রিমিনাল কাজ করেছেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘উনি ওনার লেবারদের পয়সা দেননি। ওদের তিনি ঠকিয়েছেন। সেই জন্য তার বিরুদ্ধে জাজমেন্ট হয়েছে। এটা কোর্টের ব্যাপার। এটা একটা প্রচলিত আইনের হিউজ প্রসেস। উনি সুযোগ পেয়েছেন আইনি লড়াই করার। উনি সুযোগ পেয়েছেন যুক্তিতর্কের। তারপর এভিডেন্সের বেসিসে তারা জাজমেন্ট করেছেন।''
ড. ইউনূসের কারাদণ্ডাদেশের ফলে বৈদেশিক সম্পর্ক অবনতি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রত্যেক দেশ আইনকে সম্মান করে। এর ফলে কোনো অসুবিধা হবে বলে আমার মনে হয় না।''
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গত সোমবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিবিসিতে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বিবিসি একটি মিডিয়া। মিডিয়া অনেক সময় ঝকমারি কিছু করে পাঠক টানতে চায়। তারা প্রায়ই এরকম করে। কিন্তু মিডিয়ার রিপোর্ট দেখে কোনো দেশই তাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করে না। সব সরকারই বিচার বিশ্লেষণ করে, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক, নিজেদের স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেয়।''
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হলো অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। এটা করতে পারলেই আমরা সফল। আমাদের দেশবাসী কী বললো সেটাই বড় কথা। দেশবাসী যদি নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য মনে করে তবেই আমরা সফল। অন্য কে কী মনে করলোসেটা সেকেন্ডারি বিষয়।''
ঢাকায় নির্বাচনি প্রচারণায় নেই আচরণবিধির বালাই
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণা চলছে জোরেশোরে৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া প্রার্থী ও প্রচারণার আচরণ বিধিমালা রাজধানী ঢাকায় যেন শুধু কাগজকলমেই সীমাবদ্ধ। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Rashed Mortuza/DW
সড়কে ক্যাম্প
নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, সড়কে বা সাধারণ চলাচলের পথে কোনো ধরনের ফটক, তোরণ অথবা ক্যাম্প নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু ঢাকার ফার্মগেট এলাকার খামারবাড়ি মোড়ে দেখা গেল এমন একটি নির্বাচনি ক্যাম্প৷
ছবি: Rashed Mortuza/DW
নেই মুদ্রণের বিস্তারিত
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত গেজেটে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত পোস্টারে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং পোস্টার মুদ্রণের তারিখ লিখে দিতে হবে। কিন্তু ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের পোস্টারে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই দেখা গেল না।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
গাছেও ব্যানার
নির্বাচন আচরণ বিধিমালাতে কোনো গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ব্রিজের পিলার, সড়ক দ্বীপ, সড়ক বিভাজক, বাড়ির ছাদে কোনো ধরনের পোস্টার, ব্যানার ইত্যাদি ঝুলানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরেজমিনে ঘুরে প্রায় প্রতিটা সড়কেই এই বিধিমালার বিপরীত চিত্র দেখা গেল।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
পথরোধ করে জনসভা
নির্বাচন আচরণ বিমিমালায় পূর্বানুমতি সাপেক্ষে পথসভা ও ঘরোয়াসভা করার কথা বলা হলেও অধিকাংশ প্রার্থীই তা মানছেন না। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে ও চলাচলের সড়ক আটকে জনসংযোগ করছেন প্রার্থীগণ৷
ছবি: Rashed Mortuza/DW
অসময়ে মাইক
অযান্ত্রিক যানবাহনে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে নির্বাচনি প্রচারে মাইক ব্যবহারের কথা নির্বাচন বিধিমালায় বলা হলেও পুরান ঢাকার এতিমখানা রোডে সকাল ১১টায় মাইকিং করতে দেখা যায়।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ক্ষতিসাধন
পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার দেওয়ালে কর্তৃপক্ষের নোটিশ অগ্রাহ্য করে ঢাকা-৭ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহম্মেদের পোস্টার লাগাতে দেখা হয়।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
ফটক বা তোরণ নির্মাণ
নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রচারণায় কোনো ধরনের স্থায়ী বা অস্থায়ী বিলবোর্ড বা তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমের নির্বাচনি প্রচারণায় এই বিধি ভঙ্গ করা হয়েছে।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
দেওয়াল ছেয়ে গেছে পোস্টারে
পুরান ঢাকার অধিকাংশ দেওয়াল নির্বাচনি পোস্টারে প্রায় ঢেকে গেছে। অথচ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বলা রয়েছে, দেওয়ালে কোনোরূপ পোস্টার লাগানো অথবা রং দিয়ে কারো প্রচারণা করা যাবে না।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
ব্যক্তিগত বাহনে পোস্টার
নির্বাচন বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারণায় বাস, কার, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ সব ধরনের যানবাহনে প্রার্থীর কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না। কিন্তু পুরান ঢাকার এতিমখানা রোডের এক সরকারি কার্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতেও পোস্টার দেখা যায়।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
ঢাকার বাইরে প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার
নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিমালায় বলা হয়েছে, পোস্টার বা ব্যানার সাদা-কালো রঙের হতে হবে এবং কাগজের পোস্টার কোনোরূপ পলিথিনে মোড়ানো যাবে না। কিন্তু ঢাকার এক প্রেসে গিয়ে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের পোস্টারে এই বিধিমালা ভঙ্গের নমুনা দেখা যায়।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
বিধি ভঙ্গের শাস্তি
নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড, অনধিক ৫০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে প্রার্থীকে দণ্ডিত করা হতে পারে।