ঢাকাকে জানিয়ে ফারাক্কার জল ছাড়া হয়েছে, দাবি ভারতের
২৭ আগস্ট ২০২৪
এবার ফারাক্কা থেকে জল ছাড়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, প্রতি বছর বর্যায় জল ছাড়া হয়। ঢাকাকে জানিয়েই জল ছাড়ার দাবি। ভুয়া ভিডিও নিয়ে উদ্বেগ ভারতের।
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, গত ২৪ অগাস্ট ফারাক্কা থেকে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। প্রথম আলো জানাচ্ছে, ফারাক্কায় ১০৯টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। কোনো গেট তিন বা চার ফুট, কোনো গেট ১০ বা ১২ ফুট খুলে দেয়া হয়েছে।
রিপোর্ট বলছে,,ফারাক্কা থেকে বাংলাদেশে যে জল আসে, তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পয়েন্ট দিয়ে পদ্মায় প্রবেশ করে। সেখানে সোমবার জলের স্তর ২০ দশমিক পাঁচ মিটার ছিল। বিপদসীমা হলো ২২ দশমিক পাঁচ মিটার।
ভারতের বক্তব্য
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ''ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া নিয়ে মিডিয়া রিপোর্ট আমরা দেখেছি। মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই গেট খোলার মাধ্যমে ১১ লাখ কিউসেক জল নিচের দিকে গঙ্গা ও পদ্মায় গিয়ে মিশেছে।''
জয়সওয়াল বলেছেন, ''বর্ষার সময়ে জল ছাড়ার ঘটনা স্বাভাবিক। গঙ্গার উপরিভাগের এলাকায় বেশি বৃষ্টি হলে ফরাক্কায় জল বেড়ে যায়।''
পানি ও ক্ষমতা: বাঁধের রাজনীতি
বাঁধ নির্মাণ করে অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যায়৷ কারও জন্য এটা মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রতীকও বটে৷ কিন্তু এর ফলে ভাটির দেশের মানুষের জীবনে কী প্রভাব পড়ে?
ছবি: Gioia Forster/dpa/picture alliance
গর্বের বিষয়
বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন না করায় ক্রাউডফান্ডিং ও সরকারি বন্ডের মাধ্যমে ৪১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ব্যয় করে বাঁধ নির্মাণ করছে ইথিওপিয়া৷ এটি প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৪৫ মিটার উঁচু হবে৷ ভাটির দেশ মিশর ও সুদানের সঙ্গে চুক্তি না করেই বাঁধ নির্মাণ করতে চাওয়ায় বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেনি৷ নিজ অর্থায়নে এই বাঁধ নির্মাণকে জাতীয় গর্ব হিসেবে দেখছেন অনেক ইথিওপিয়ান৷
ছবি: Gioia Forster/dpa/picture alliance
নীল নদের জীবন
ইথিওপিয়ার বাঁধ মিশর ও সুদানে নীল নদের ধারে বসবাসকারী মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ যদিও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ায় পানি প্রবাহে সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে ইথিওপিয়া৷ কিন্তু তাতে ভরসা পাচ্ছে না ঐ দুই দেশ৷ ইথিওপিয়া তার কৃষকদের সেচের জন্য পানি প্রবাহের দিক নিয়ন্ত্রণ করবে না - এমন নিশ্চয়তা অনুভব করছে না তারা৷
ছবি: Joerg Boethling/imago images
মেকং নদীতে চীনের কয়েকটি বাঁধ
গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে এখন পর্যন্ত মেকং নদীতে ১১ টি বাঁধ নির্মাণ করেছে চীন৷ ফলে বিশ্বের শীর্ষ পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠেছে চীন৷ কিন্তু এসব বাঁধ ভাটির দেশ হিসেবে লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার জনগণের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে৷
ছবি: Yang Zheng/Imaginechina/picture alliance
কম্বোডিয়ায় খরা
মেকংয়ে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ ও ছাড়ার সময় নিয়ন্ত্রণ করছে চীন৷ সে কারণে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় খরার সংখ্যা বেড়েছে, আর কমে গেছে মাছের সংখ্যা৷
ছবি: Heng Sinith/AP/picture alliance
বিশ্বব্যাপী চীনের বিনিয়োগ
শুধু নিজ দেশে নয় লাওস থেকে পর্তুগাল, কাজাখস্তান থেকে আর্জেন্টিনা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাঁধ তৈরিতে বিনিয়োগ করছে চীন৷ ছবিতে গিনির সুয়াপিতি বাঁধ দেখা যাচ্ছে৷ আগে এসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতো৷ কিন্তু সেজন্য একই নদীর পানি শেয়ার করা দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি থাকতে হতো৷ কিন্তু চীনা বিনিয়োগ পেতে সেরকম চুক্তির প্রয়োজন পড়ে না৷
ছবি: Sadak Souici/Le Pictorium/imago images
বাঁধের কারণে ঘর ছাড়া
সুয়াপিতি বাঁধ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে৷ গিনির জন্য তা দরকারও৷ তবে বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে আশেপাশের ১০০র বেশি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষকে ঘর ছাড়া হতে হয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
ছবি: CELLOU BINANI/AFP
কলোরাডোয় বাঁধ
প্রায় ২,৩৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী মেক্সিকো পৌঁছার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি রাজ্য পার হয়৷ এই নদীতে বেশ কয়েকটি বাঁধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এসব বাঁধ দিয়ে সেচের প্রয়োজনে পানির প্রবাহ প্রয়োজনমতো ঘুরিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র৷ ফলে কলোরাডো নদীর মেক্সিকো অংশে বাস করা মানুষের জীবনে এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: Elliot Spagat/AP/picture alliance
ম্যাক্সিকালি উপত্যকায় পানির ব্যবস্থা
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্তে অবস্থিত মরিলস বাঁধ ব্যবহার করে মেক্সিকোর ম্যাক্সিকালি উপত্যকায় পানির ব্যবস্থা করা নিয়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে৷
ছবি: GUILLERMO ARIAS/AFP/Getty Images
তিস্তা ও ফারাক্কা বাঁধ
বাংলাদেশ প্রথমে তিস্তা নদীর উপর বাঁধ দেয়৷ এরপর ভারতও পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় তিস্তায় বাঁধ দিয়েছে৷ এই বাঁধ দিয়ে ভারত পানি নিয়ন্ত্রণ করায় ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রায়ই বন্যা দেখা দিচ্ছে৷ আবার কখনও পানি না ছাড়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী শুকিয়ে যায়৷ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি করতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি৷ এদিকে ফারাক্কা নিয়ে চুক্তি থাকলেও ঐ বাঁধের কারণে এখনও বাংলাদেশ সমস্যায় পড়ছে৷
ছবি: UIG/imago images
9 ছবি1 | 9
মুখপাত্র বলেছেন, ''এটা বুঝতে হবে, ফারাক্কা কোনো ড্যাম নয়, এটা ব্যারাজ মাত্র। যখন জলের স্তর একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় চলে যায়, তখন বাড়তি যে জল আসে সেটা বের হয়ে যায়। এটা একটা কাঠামো, যা ফারাক্কা ক্যানালে ৪০ হাজার কিউসেক জলের ধারা বজায় রাখে। এটা খুবই সতর্কতার সঙ্গে করা হয়েছে। ৪০ হাজার কিউসেকের অতিরিক্ত জল যাতে বাংলাদেশে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।''
রণধীর জানিয়েছেন, ''প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তাদের সব তথ্য দেয়া হয়। ঠিক সময়ে ও নিয়মিত তথ্য দেয়া হয়। এবারও তার অন্যথা হয়নি।''
তিনি বলেছেন, ''অনেক ভুয়া ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। ভুল বোঝাবুঝি যাতে হয়, তার জন্য অনেক রটনা, ভয় দেখানোর বিষয়ও সামনে এসেছে। প্রকৃত তথ্য দিয়ে তার মোকাবিলা করা দরকার।''