ঢাকার আসন নির্ধারণ করবে কারা ক্ষমতায় যাবে
২৭ ডিসেম্বর ২০০৮বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এবারও চাচ্ছে রাজধানী ঢাকার আসনগুলো আগের নির্বাচনের মত নিজেদের দখলে রাখতে৷ আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট চুলচেরা বিশ্লেষণের পর মনোনয়ন দিয়েছে রাজধানীতে৷ এখন পর্যন্ত ভোটের হিসেবে রাজধানীতে মহাজোটই এগিয়ে৷ তবে শেষ মুহুর্তে এসে টাকার খেলা আর নির্বচনী কৌশলে কোন জোট ক'টি আসন নিজেদের দখলে নিতে পারে তা দেখার অপেক্ষায় রাজধানীর ভোটাররা৷
ঢাকা ৪
ঢাকা মেট্টোপলিটন এলাকার শ্যামপুর, সুত্রাপুর ও যাত্রাবাড়ি থানার কিছু অংশ নিয়ে এই আসন৷ জোট-মহাজোটের দুই প্রার্থী ছাড়াও এখানে লড়ছেন আরো ৯ জন৷ তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপির আবদুল হাই এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সানজিদা খানমের৷ আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমনিতেই নারী তার ওপর যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি৷ অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী আবদুল হাই মুন্সিগঞ্জে পরিচিত হলেও এখানে নতুন৷ এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা দু'জনেই ভোট চাচ্ছেন৷ এখানে ভোটার সংখ্যা ২,০১,৬০৮ জন৷ দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই মনে করছেন ভোটাররা৷
ঢাকা ৫
বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ শেষ মুহুর্তে এসে হয়ত আটকেই যাচ্ছেন৷ মহাজোটের দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান মোল্লা আর জাতীয় পার্টির আবু হোসেন বাবলা মাঠে থাকায় এতদিন সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন সালাহউদ্দিন৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার হাবিবুর রহমান মোল্লাকে মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে৷ তাকে সমর্থন জানিয়ে সরে যাওয়ার কথা আবু হোসেন বাবলার৷ কিন্তু বাবলার সমর্থকরা তা মানতে রাজি নন৷ তাই ৩,৬১,৮২৩ জন ভোটারের এই আসনে শেষ হাসি হাসবেন সালাহউদ্দিন এমন মনে করছেন বিএনপি সমর্থকরা৷
ঢাকা ১০
মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া এ কে এম রহমত উল্লাহ আগে দুই বার সংসদ সদস্য ছিলেন৷ তার প্রতিদ্বন্দ্বী চারদলীয় জোটের এম এ কাইয়ুম সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার, কিছু দিনের জন্য ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র৷ বাড্ডা ও খিলগাঁওয়ের কিছু অংশ নিয়ে এই আসন৷ ভোটার ৩,৪৯,১৮১ জন৷ স্থানীয় হিসেবে দুই প্রার্থীই যাচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি৷ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন৷ ফলে এই আসনে তীব্র প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেলেও অতীত রেকর্ড আর প্রচারণার কৌশলে রহমত উল্লাহই এগিয়ে থাকছেন৷
ঢাকা ১১
প্রায় তিন লাখ ভোটারের তেজগাঁও এলাকার এই আসনটিতে নোয়াখালির ভোটই বেশী৷ ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মেজর (অব.) আবদুল মান্নান নির্বাচিত হন৷ এবার সব দল থেকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নোয়াখালির বাসিন্দাদের৷ চারদলীয় জোট প্রার্থী শাহাব উদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালি৷ নতুন হিসেবে লড়ছেন তিনি৷ আর মহাজোটের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামালও নোয়াখালির বাসিন্দা৷ বিকল্প ধারার প্রার্থী হয়ে লড়ছেন মেজর (অব.) আবদুল মান্নান৷ তার ভোট ব্যাংকের বড় একটি অংশ ধানের শীষের৷ তাই মান্নান যত ভালো করবেন জয়ের পাল্লা ভারী হবে কামালের৷
ঢাকা ১৩
রাজধানীর আদাবরে লড়ছেন দুই যুবরাজ৷ একজন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং অপরজন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল৷ এই আসনে দু'জনেই নতুন৷ ২, ৮৩,১৪২ জন ভোটারের এই আসনে যেমন আছে হিন্দু ভোটার, তেমনি রয়েছে বিহারী ভোটারও৷ কাটাসুর ও রায়েরবাজার এলাকায় প্রচুর হিন্দুর বাস; তারা ঠিকমত ভোট দিতে পারলে হয়ত বের হয়ে যাবেন নানক৷ অন্যদিকে বিহারীদের ভোট পাবেন আলাল৷ তবে দুই প্রার্থীর মধ্যেই তীব্র লড়াই হবে এমনটি বলা যায়৷
ঢাকা ১৪
চারদলীয় জোটের এস এ খালেকের সঙ্গে এবার প্রথম নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগের আসলামুল হক আসলাম৷ শাহআলী ও মিরপুর এলাকার ৩,২৫,১৮৯ জন ভোটারের এই আসনে সাবেক এমপি এস এ খালেকের বিরুদ্ধে রয়েছে৷ ফলে এলাকায় পরিবর্তনের হাওয়া বইছে এমনটি মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা৷ কিন্তু প্রভাবশালী রাজনীতিক আর নির্বাচনে বিচক্ষণতা দেখানো এস এ খালেককে হারানো খুব সহজ নয়৷ এখানে বিএনপির ভোট ব্যাংকও রয়েছে৷ তাই শেষ হাসিটা খালেকই হাসবেন বলে মনে করছেন বিএনপি সমর্থকরা৷
ঢাকা ১৫
মিরপুর কাফরুল এলাকায় দীর্ঘদিন রাজনীতি করা আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রতিদ্বন্দ্বী মুন্সিগঞ্জের সাবেক এমপি হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক৷ হামিদুল্লাহ খানের ঢাকায় এই প্রথম নির্বাচন৷ এলাকাও ঠিকমত চেনেন না তিনি৷ অন্যদিকে সাবেক এমপি হিসেবে কামাল মজুমদার এলাকার উন্নয়ন করেছেন৷ অলিগলি তার চেনা৷ এসব হিসাবে তিনি এগিয়ে থাকলেও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন৷ তিনি কিছু ভোট দখল করলে শুধু ধানের শীষের ভোটেই পার হয়ে যেতে পারেন হামিদুল্লাহ খান৷
ঢাকা ১৬
মিরপুরের পল্লবী এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটার তিন লাখ৷ এর মধ্যে ৫৫ হাজার মত বিহারী ভোট৷ বিহারীদের ভোট নিজের বাক্সেই থাকবে এমন আশায় বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া৷ কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইলিয়াস আলী মোল্লাহ রাজনীতিক পরিবারের সন্তান৷ স্থানীয় বহিরাগত ইস্যুতে অনেকটাই এগিয়ে ইলিয়াস৷ অন্যদিকে কুমিল্লার নেতা হলেও সাবেক মন্ত্রী হিসেবে এলাকার উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে প্রচারণায় থাকা ব্যারিস্টার রফিকও পিছিয়ে নেই৷ ভোটারদের মতে, তীব্র লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসতে পারেন যে কেউ৷
ঢাকা ১৮
এখানেও লড়ছেন দুই প্রজন্মের দুই প্রার্থী৷ আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিক এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল৷ গত দুই বছর শেখ হাসিনার পক্ষে লড়াই করে সাধারণ ভোটারদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন সাহারা খাতুন৷ অন্যদিকে আজিজুল বারী হেলাল এই দুই বছর খালেদা জিয়ার পক্ষে আন্দোলন করেছেন, খেটেছেন জেল৷ ফলে দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাসই মিলেছে এখন পর্যন্ত৷