1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকার উন্নয়ন ও কিছু অপ্রিয় কথা

গোলাম মোর্তোজা২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

না জেনে, না বুঝে কল্পকাহিনি শুনে বিশ্বাস করবেন; কথা বলবেন; লিখবেন – তবে আপনি আশাবাদী মানুষ৷ কল্পকাহিনি বিশ্বাস না করে, একটু জেনে বুঝে লিখলে বা কথা বললে আপনি হতাশাবাদীদের দলে পড়ে যাবেন৷ কথা বলছি রাজধানী ঢাকা নিয়ে৷

Bangladesch Stau in Dhaka
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman

ধারণা করা হয় প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস রাজধানী ঢাকায়৷ যদিও এই নগরে ঠিক কত মানুষ বাস করেন, তার সঠিক সংখ্যা কারো জানা নেই৷ কত রিকশা আছে, তাও কেউ জানেন না৷ ভাঙাচোরা, রংচটা মিনিবাস ৩০ থেকে ৩৫ বছরের পুরোনো৷ পৃথিবীর সবচেয়ে অনুন্নত দেশটিতেও এমন মানের বাস চোখে পড়ে কিনা, সন্দেহ আছে৷ পৃথিবীর অন্যতম মানসম্পন্ন ভলভো দোতলা বাস কেনা হয়েছিল ৫০টি৷ যেহেতু বিএনপি সরকার কিনেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তা গ্যারেজে ফেলে রেখেছে৷ যা এখন আর চলার উপযুক্ত নেই৷ অথচ একেকটি বাসের দাম কয়েক কোটি টাকা৷ পুরোনো বাস নিয়ে নাড়াচাড়া করার চেয়ে নতুন বাস কিনলে লাভ বেশি! গত ৫-৭ বছরে হাজার খানেক বাস কিনেছে আওয়ামী লীগ সরকার৷ এর মধ্যে কয়েক'শ অত্যন্ত নিম্নমানের প্লাস্টিক বডির৷ হাজার খানেক বাসের মধ্যে ৫ থেকে ৬'শ বাস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে৷ এখন আবার নতুন বাস কেনার পরিকল্পনা চলছে!

যে রাজধানী শহরে গণপরিবহন বলতে কিছু নেই, সেই রাজধানী এখন ‘উন্নয়নের জোয়ারে' ভাসছে! ফ্লাইওভার তৈরি হচ্ছে, মেট্রোরেল তৈরি হবে৷ এই উন্নয়নের ফলে নগর ঢাকার নজিরবিহীন যানজট সমস্যার কতটা সমাধান হবে? পৃথিবীর অন্যান্য দেশ কিভাবে তার যানজট সমস্যার সমাধান করেছে, আর আমরা কী করছি? এ সব বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলার আছে...৷

ছবি: DW/A. Islam

১. যানজট সমস্যার সমাধানের জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়৷ মেট্রো রেল বা ফ্লাইওভার নির্মাণ পরিকল্পনার প্রথমদিকে সেভাবেই ভাবা হয়েছিল৷ তা করতে হলে কিছুটা সময় দরকার৷ আমাদের সরকারের হাতে তেমন সময় নেই! উন্নয়ন দৃশ্যমান করা জরুরি৷ ফলে মেট্রোরেল নয়, ফ্লাইওভার নির্মাণের দিকে সকল মনোযোগ দেয়া হয়েছে৷ তা-ও যদি সঠিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে হতো!

অপরিকল্পনার একটি উদাহরণ দেই৷ বাংলাদেশের গাড়ি ডান হাতে চালিত৷ তেজগাঁও-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে বাম হাতে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে৷ এখন ডিজাইন পরিবর্তন করতে হলে ৬০টি পিলার ভাঙতে হবে৷ যদিও প্রকল্প পরিচালক বলছেন, ‘‘আমি মনে করি এতে কোনো সমস্যা হবে না৷'' ভুল নকশায় রাষ্ট্রীয় অর্থ ধ্বংস করে তিনি ‘মনে করছেন'৷

২. এখন বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকা নিয়ে যে ‘উন্নয়ন' কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তার ফলে আরো জটিলতা বাড়বে৷ এমনিতেই ঢাকা অপরিকল্পিত শহর৷ মহা অপরিকল্পিতভাবে এখন ‘উন্নয়ন' হচ্ছে৷ দু-একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে৷ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হবে রেল লাইনের উপর দিয়ে৷ এর ফলে আর কখনোই রেল পথ সম্প্রসারণ করা যাবে না৷ সম্প্রসারণ করতে হলে উপরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ভাঙতে হবে, যা সম্ভব নয়৷ তেজগাঁও-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার তৈরির ফলে আর কখনো এই অঞ্চলে মেট্রোরেল নির্মাণ করা যাবে না৷ সামরিক বাহিনীর বাধার কারণে মেট্রোরেল জাহাঙ্গীর গেটের সামনে দিয়ে করা যায়নি৷ এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে মেট্রোরেলের ভবিষৎ কী হবে, বলা মুশকিল৷ যদি মেট্রোরেল নির্মাণ হয়ও, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এসে আটকে থাকবে৷ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের কারণে মেট্রোরেল যাত্রাবাড়ি সায়দাবাদের দিকে নেয়া যাবে না৷

গোলাম মোর্তোজা, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এবং টিভি টকশো-র মডারেটরছবি: Golam Mortoza

৩. ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল নির্মাণ পরিকল্পণার সময় বিবেচনায় নেয়া জরুরি ছিল কোনোটার সঙ্গে কোনোটা সাংঘর্ষিক হবে কিনা৷ যা আমাদের পরিকল্পনায় করা হয়নি৷ বাংলাদেশে মেট্রোরেল নাম দিয়ে যা নির্মাণ করা হবে তা আসলে মনোরেল বা স্কাইট্রেন৷ আমাদের পার্শ্ববর্তী থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়া স্কাইট্রেন, মনোরেল তৈরি করেছে৷ ফ্লাইওভারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে তারা নির্মাণ করেনি৷ তারা প্রথমে স্কাইট্রেনের একটি রুট নির্মাণ করেছে৷ পুরো শহরের সব কটি রুটের পরিকল্পনা করেছে শুরুতেই৷ বাস্তবায়ন করেছে পর্যায়ক্রমে, সময় নিয়ে৷ ব্যাংককের বেশির ভাগ অঞ্চল এবং কুয়ালালামপুরের পুরোটা এখন স্কাইট্রেনের আওতায়৷ এয়ারপোর্ট থেকে যে কোনো প্রান্তে যাওয়া যায় স্কাইট্রেনে৷ সিংগাপুর মেট্রো রেল নির্মাণ করেছে মাটির নীচ দিয়ে৷ মাটির নীচ দিয়ে মেট্রোরেল অনেক বেশি ব্যায় সাপেক্ষ৷ মাটির গুণাগুণের উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে৷ ঢাকায় তা নির্মাণ করা সম্ভব কিনা, নিশ্চিত নয়৷ পার্শ্ববর্তী কলকাতা নব্বইয়ের দশকে ঢাকার চেয়েও ভয়াবহ যানজট আক্রান্ত ছিল৷ সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে এখন তারা যানজট অনেক খানি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে৷ প্রথমে মাটির নীচ দিয়ে মেট্রোরেল নির্মাণ করেছে৷ আস্তে আস্তে বিভিন্ন দিকে তা সম্প্রসারণ করেছে, করছে৷ ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে পরিকল্পিতভাবে৷ বিশাল দিল্লি শহর পুরোটা এখন মেট্রোরেলের আওতায়৷ এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি মেট্রোরেলে দিল্লির যে কোনো প্রান্তে যাওয়া যায়৷ তাছাড়া এ সব শহর সমন্বিত ট্রাফিক নিয়ম-নীতি অনুসরণ করেছে৷ ঢাকায় যার কোনো উপস্থিতি নেই৷

ছবি: DW

৪. ঢাকায় চূড়ান্ত অপরিকল্পিতভাবে মেট্রোরেলে নামে স্কাইরেল নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে৷ এই পরিকল্পনার শুরুতে জাপানি বিশেষজ্ঞরা সরকারকে জানিয়েছিলেন, রাজধানী ঢাকা অন্যত্র সরিয়ে না নিলে সমস্যার সমাধান হবে না৷ বুয়েট-এর বিশেষজ্ঞরা আরো আগে থেকেই এ কথা বলছেন৷ আমাদের পরিকল্পনায় তা সামান্যতমও গুরুত্ব পায়নি৷ বলা হয়, ঢাকা সরিয়ে কোথায় নেয়া হবে? জায়গা নেই৷ আসলে বিষয়টি জায়গার অভাব নয়, সমস্যা আন্তরিকতার, সমস্যা পরিকল্পনার৷

রাজধানী সরানোর জন্য বন্যামুক্ত শক্ত মাটি দরকার৷ যা সাভার, ভাওয়াল গড়, পূর্বাচল অঞ্চলে ছিল৷ পুরো পূর্বাচল অঞ্চলের আয়তন ৬,৫০০ একর৷ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে পুত্রাজায়ায়, যার আয়তন ৭,০০০ একর৷ পূর্বাচলে ক্ষমতাবানরা ভাগ করে প্লট বানিয়ে নিয়েছে৷ সরকার চাইলে প্লট বরাদ্দ না দিয়ে পুরো রাজধানী পূর্বাচলে সরিয়ে নিতে পারতো৷ মালয়েশিয়া ছাড়াও আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ রাজধানী সরিয়ে সমস্যার সমাধান করেছে৷ দিল্লি থেকে নয়া দিল্লি করা হয়েছে৷ করাচি থেকে রাজধানী নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইসলামাবাদে৷ মায়ানমার, শ্রীলঙ্কাও রাজধানী সরিয়ে নিচ্ছে৷ বাংলাদেশের এ রকম কোনো পরিকল্পনাই নেই৷

৫. অপরিকল্পিত উন্নয়ন কোনো উপকারে আসে না৷ নতুন নতুন অনেক সমস্যা তৈরি করে৷ মেট্রোরেল বা ফ্লাইওভারের কারণে ঢাকার তেমন কোনো সমস্যার সমাধান হবে না৷ অপরিকল্পিত ঢাকা নগরে আরো কিছু অপরিকল্পিত অবকাঠামো তৈরি হবে শুধু৷ স্থবির রাজধানী ঢাকা প্রায় স্থায়ী ‘ডেড সিটি'-তে পরিণত হবে৷

আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ