শুক্রবার ঢাকা৷ রবিবার বাগদাদ৷ পবিত্র রমজান মাসে হিংসালীলার দুই ঘটনা৷ দায় স্বীকার করল তথাকথিত আইএস৷ ক্ষমতা প্রদর্শনের কোনো সুযোগই ছাড়তে প্রস্তুত নয় তারা৷
বিজ্ঞাপন
Iraqi capital rocked by ‘deadliest single attack’ this year
00:55
চরম কট্টরপন্থি সুন্নি ভাবাদর্শের প্রতি আনুগত্য না দেখালে সবাইকেই শত্রু মনে করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ ‘নরম বা উদারপন্থি' সুন্নি, শিয়া, অন্য ধর্মাবলম্বী, বিধর্মী বিদেশি – সবাই তাদের শত্রু৷ সরাসরি হামলা অথবা তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত আততায়ীদের চালানো হামলার দায় স্বীকার করে বারবার নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে বদ্ধপরিকর তারা৷ এমনকি ইসলাম ধর্মের পবিত্র রমজান মাসেও হামলা চালাতে ইতস্তত করেনা আইএস৷
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পর ইরাকের রাজধানী বাগদাদে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চেয়েছে আইএস৷ বাগদাদে হামলার পর দায় স্বীকার করতে বিলম্ব করেনি তারা৷ এক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তাদের বয়ান অনুযায়ী এই হামলার লক্ষ্য ছিল শিয়া সম্প্রদায়৷
বেশ কিছুকাল অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল ইরাকের রাজধানী বাগদাদ৷ রবিবার শহরের কেন্দ্রস্থলে কারাদা এলাকায় পবিত্র ঈদের আগে কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন মানুষ৷ সে সময় জোরালো বিস্ফোরণ ঘটে৷ সেই আত্মঘাতী হামলায় কমপক্ষে ১১৫ জন নিহত ও ২০০-রও বেশি মানুষ আহত হয়েছে৷ নিহতদের মধ্যে ১৫ জন শিশু ও ১০ জন নারীও ছিল৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ভূমিকম্পের মতো কম্পন অনুভব করা গিয়েছিল৷ শহরের অন্য একটি শিয়া প্রধান এলাকায় আরেকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে৷ তার ফলে কমপক্ষে ৫ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছে৷ এই ভয়াবহ হামলার পর ইরাকের সরকার ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে৷ প্রশ্ন উঠছে, এমন ভয়াবহ হামলা আন্তর্জাতিক মঞ্চে কতটা গুরুত্ব পাবে?
ইরাকের সরকার সাম্প্রতিককালে আইএস-এর হাত থেকে একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে সফল হয়েছে৷ বিশেষ করে ফালুজা শহর হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল আইএস. রবিবারের হামলা তারই প্রতিশোধ বলে অনেক মহল মনে করছে৷ রবিবারও ইরাকি বাহিনী মসুল শহরের দক্ষিণে ৭টি গ্রাম পুনর্দখল করেছে বলে জানিয়েছিল৷
২০১৫ সালের জুলাই মাসের পর বাগদাদে এত বড় আকারের হামলা ঘটেনি৷ তা সত্ত্বেও রবিবারের হামলার পর ইরাকের সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ বিশেষ করে রাজধানী বাগদাদে নিরাপত্তা শিথিল ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জোরদার হচ্ছে৷ বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকায় চেকপয়েন্টে বোমা শনাক্ত করার যে ব্যবস্থা রয়েছে, বহুদিন ধরেই সেগুলি অচল বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ রবিবার প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরের উপর জনতা পাথর, জুতা নিক্ষেপ করে৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷