1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকার বায়ু আবারো দূষণের শীর্ষে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ ডিসেম্বর ২০২৩

মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। তবে এটা নতুন কোনো খবর নয়৷ এর আগেও বার বার ঢাকা দূষিত শহরের শীর্ষে অবস্থান করেছে৷ বর্ষাকালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও শীতকালে আবার সাবেক অবস্থায় চলে যায়৷

ধোয়ায় আচ্ছন্ন ঢাকার একটি রাস্তা
সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনটি খাতকে চিহ্নিত করেছে (ফাইল ছবি)ছবি: Habibur Rahman/ABACA/abaca/picture alliance

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যতই কথা বলা হোক না কেন ঢাকার বায়ুমানের কোনো উন্নতি হচ্ছে না৷ তেমন কোনো উদ্যোগও দেখা যায় না৷ বর্ষাকালে বায়ুদূষণ যে কমে এর কারণ প্রাকৃতিক৷ এখানে সরকার বা নাগরিকদের কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নেই৷

সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৮৬ নিয়ে ঢাকা বায়ুদূষণের শীর্ষে অবস্থান করে৷ আর ওই স্কোর অস্বাস্থ্যকর৷ বাংলাদেশের ঢাকার পরের অবস্থানগুলো যথাক্রমে ভারতের দিল্লি, চীনের সেনইয়াং এবং বসনিয়া ও হ্যার্ৎসেগোভিনার সারায়েভোর৷ তাদের স্কোর যথাক্রমে ১৮১, ১৭৭ ও ১৭৪ একিউআই৷ ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর' বলে মনে করা হয়৷

গড় আয়ু সাত বছর কমে যাচ্ছে: ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ

This browser does not support the audio element.

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণের কারণে৷ ‘ব্রিদিং হেভি: নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পল্যিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণায় বাংলাদেশে মৃত্যু এবং অক্ষমতার দিকে নিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুঁকির কারণ হিসাবে বায়ুদূষণকে চিহ্নিত করা হয়৷ ঢাকায় সারা দিনে একজন যে পরিমাণে দূষিত বায়ু গ্রহণ করেন তা প্রায় দুইটি সিগারেটের সমান ক্ষতি করে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে৷

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বায়ুদূষণে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ ও বিষন্নতার ঝুঁকি৷ পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু, বয়স্ক ও রোগে আক্রান্তরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা শ্বাস রোগে আক্রান্তরা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ৷

দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়ষ্ক মানুষ, শিশু এবং যাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ আছে তারা৷ দূষিত এলাকার প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট৷ নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য বক্ষব্যাধিও এসব এলাকার বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে দেখা গেছে৷

বায়ুদূষণের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে৷ দূষিত এলাকাগুলোর মধ্যে বিষন্নতার রোগী দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি৷ ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে বিষন্নতার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে৷ পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি বিষন্নতায় ভোগেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত দূষণের মাত্রা থেকে এক শতাংশ দূষণ বাড়লে বিষন্নতার অশঙ্কা ২০ গুণ বেড়ে যায়৷ বায়ুদূষণের কারণে অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ প্রতিবছর জিডিপির চার দশমিক চার শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে৷

ঢাকার আসন্ন মৃত্যু, 'দায়ী নয় জলবায়ু'

07:48

This browser does not support the video element.

পরিবেশ অধিদপ্তর দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনটি খাতকে চিহ্নিত করেছে৷ এর মধ্যে আছে যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটার চুল্লি দিয়ে নির্গত কালো ধোঁয়া, শুষ্ক মৌসুমে অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতের কারণে সৃষ্টি হওয়া ধুলা ও ইটভাটার ধোঁয়া৷ বলা হয়েছে, যানজট ও নির্মাণাধীন প্রকল্পের কারণে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুমানের চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি এবং ইটভাটার কারণে যে দূষণ হয় তা ১৩৬ শতাংশ বেশি৷

ঢাকার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় বলা হচ্ছে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের মাধ্যমে৷ বায়ূদূষণের জন্য নির্মাণখাত ৩০ শতাংশ দায়ী৷ এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ূ দূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মাধ্যমে৷ যার হার ২৯ শতাংশ৷ বায়ুদূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো যানবাহনের কালো ধোঁয়া, যার শতকরা হার ১৫ শতাংশ৷ স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্যাপস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা প্রতিমাসেই ঢাকার বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করছি৷ তাতে স্পষ্ট যে বায়ুর মানের কোনো উন্নতি হচ্ছে না৷ বর্ষাকালে যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয় তার কারণ প্রাকৃতিক৷ বৃষ্টির কারণে দূষণ কম হয়৷ আমাদের উদ্যোগ বা চেষ্টার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে না৷ সরকারের কিছু উদ্যোগ আছে৷ তবে তাতে তেমন কোনো ফল আসছে না৷ এর সঙ্গে অনেক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা যুক্ত, তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই৷ পরস্পরবিরোধী নীতিও এর জন্য দায়ী৷”

শুধু ঢাকা নয়, দিল্লিসহ অনেক শহরেই হচ্ছে: মো. শাহাব উদ্দিন

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ৫০ পিপিএম সালফারের ডিজেল আমদানির নীতিমালা করেছে৷ কিন্তু সেখানে এখন ২৫০ পিপিএম সালফারের ডিজেল আমদানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে৷”

তিনি জানান, দূষিত বায়ুর মধ্যে প্রধানত আমাদের যে জাতীয় মাত্রা আছে তার চেয়ে তিন থেকে পাঁচগুণ স্মল পার্টিকেল বা ধূলিকণা পাওয়া যায়৷ এর বাইরে হেভি মোটাল সিসা ছাড়াও আছে মার্কারি, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার প্রভৃতি৷

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ বলেন, ‘‘বায়দূষণ তো চোখে দেখা যায় না তাই এর ভয়াবহ ক্ষতি আমরা বুঝতে পারি না৷ এর কারণে গড় আয়ু সাত বছর কমে যাচ্ছে৷ জিডিপির ৪.৪ শতাংশ কমে যাচ্ছে৷ তাই সরকারকে প্রথম দায়িত্ব নিতে হবে৷ তিন চারটি কারণ সর্বসম্মতভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আর এই কারণের পিছনের কারণ হলো উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন৷ তাই সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে উন্নয়ন করতে হবে৷ আর নাগরিকদের তো সচেতন হতেই হবে৷”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘এটা শুধু ঢাকা নয়, দিল্লিসহ আরো অনেক শহরেই হচ্ছে৷ শীতকালে আমাদের এখানে দূষণ বেড়ে যায়৷ আমরা চেষ্টা করছি৷ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি৷ আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷”

তার কথা, ‘‘এ ব্যাপারে ব্যক্তি এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও সচেতন হতে হবে৷ বিশেষ করে নির্মাণ এবং উন্নয়নমূলক কাজের সময় আধুনিক সংরক্ষিত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে৷ গাড়ির কালো ধোঁয়া, ইটভাটা-এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ