1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকায় বিয়ে মানেই এলাহি কাণ্ড!

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গত কয়েক বছরে ঢাকা কেন, গোটা বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত ছিল রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ে৷ এলাহি কাণ্ড, বহু গণ্যমান্য অতিথির সমাগম, যা নিয়ে কথা বলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, দেন আশীর্বাদ৷ বিয়েতে দেনমোহর ধরা হয় পাঁচ লাখ এক টাকা৷

চিত্র নায়িকা মাহির বিয়ের ছবি
ছবি: bdnews24.com

ঢাকার জমকালো বিয়ে বলতে এখন প্রধানত পাঁচতারা হোটেল, সেনাকুঞ্জ, সেনা মালঞ্চ, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার বা বিজিবি-র দরবার হলের বিয়ে৷ এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কেন্দ্রেও মাঝে মাঝে শোনা যায় বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা৷ এ সব বিয়ের আয়োজনে হল ভাড়াই পড়ে যায় ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা৷ এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ তো আছেই৷ সব মিলিয়ে কোটি টাকার ব্যাপার বা তারও বেশি!

এই বছরে চিত্র নায়িকা মাহির বিয়েও ছিল বেশ জমকালো এবং আলোচিত৷ সেনা মালঞ্চের সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে নাকি হাজার দুয়েক অতিথি আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন৷ কয়েকজন চিত্র সাংবাদিকও ছিলেন নিমন্ত্রিতদের মধ্যে৷ তাঁদের একজনের মুখে শোনা, ২০শে জুলাই সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল নানা আয়োজন – ডিজে, সেলফি কর্নার, ফটো কর্নার, কফি কর্নার আরো কত কী! আর মাহি বিয়ের পরই হানিমুন করতে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে৷ এছাড়া পাত্র-পাত্রীর ছবি দিয়ে নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি মাহির বিয়ের আমন্ত্রণ-পত্রও ছিল নজর কাড়ার মতো৷

বাংলাদেশের ঢাকাসহ বড় বড় শহরে এখন বিয়ের অনুষ্ঠানেকে ঘিরে নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে৷ এই যেমন ‘ওয়েডিং প্ল্যানার'-এর ব্যবসা দারুণ জমাজমাট৷ তাদের কাজ হচ্ছে, একটি নির্ধারিত বাজেটে বিয়ের গায়ে হলুদ, রিসেপশন এবং বিয়ের পর যেসব অনুষ্ঠার থাকে – তার পরিকল্পনা এবং তা বস্তবায়ন৷

‘ওয়েডিং সলিউশন' নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধন নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) হুসাইন এ এইচ আসিফ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা বিয়ের আমন্ত্রণ-পত্র থেকে হানিমুন – সবকিছুরই আয়োজন করি৷ বিয়ের খাবার, ডান্স, ডিজে, গায়ে হলুদ, পোশাক, শাড়ি – কিছুই বাদ যায় না৷ এর বিনিময়ে আমরা মোট খরচের ওপর শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ সার্ভিস চার্জ নিই৷''

হুসাইন এ এইচ আসিফ

This browser does not support the audio element.

ঢাকায় এখন এমন অনন্ত ২০টি ‘ওয়েডিং প্ল্যানার' প্রতিষ্ঠান আছে৷ তাদের কয়েকটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ মানের বিয়েতে এখন সব মিলিয়ে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়৷ আর কোনো কোনো বড় বাজেটের বিয়ের খরচ এক কোটি থেকে দেড়কোটি ঢাকা৷

হলুদের অনুষ্ঠানও আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানের মতোই জমকালো আয়োজনে করা হয়৷ বিয়েতে হাতি- ঘোড়া-পাল্কি ছাড়াও থাকে হেলিকপ্টারের চাহিদা৷ ডিজে পার্টিতে তারকা শিল্পীদের আনেন কেউ কেউ৷ আসিফ বলেন, ‘‘আমরা পাকিস্তান ও ভারত থেকে চাহিদা অনুযায়ী শিল্পীদের নিয়ে আসি৷ বিয়ের অনুষ্ঠান অনেকসময় লাইভ সম্প্রচারও হয়৷ আমারা আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে এটা করে থাকি, যাতে স্বজনদের যাঁরা বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারছেন না তাঁরা দেখতে পারেন৷''

তিনি জানান, ‘‘বিয়েতে এখন গান, কাওয়ালিসহ নানা আয়োজন থাকে৷ থাকে নানা ধরনের কর্নার৷ গ্রাহকদের চাহিদামতো আমরা ব্যবস্থা করে দিই৷ এছাড়া বিয়ের স্টেজ সাজানোতেও এসছে নতুনত্ব৷ বিয়ের গাড়ি সাজানো এবং বরযাত্রী – সবকিছুই হয় প্ল্যানিং-এর মাধ্যমে৷ এমনকি বর-কনের পোশাকও আমরা পরিকল্পনা করি৷ ঠিক করি খাবারের মেনু৷ ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস' বলতে যা বোঝাই, এটা ঠিক তাই৷''

‘মিডিয়া ম্যানেজার' নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে জানা যায়, ‘‘চার-পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে যেসব বিয়ে হয়, তাঁরা সেটা নিজেরাই আয়োজন করেন৷ ‘ওয়েডিং ম্যানেজার' দিয়ে করাতে হলে ১০ লাখ টাকার নীচে হয় না৷ আর সেক্ষেত্রে এক থেকে দেড় লাখ টাকা দিতে হয় ওয়েডিং ম্যানেজারদের৷''

ওয়েডিং সলিউশন-এর আসিফ জানান, ‘‘এক কোটি থেকে দেড়কোটি টাকা খরচের বিয়ের আয়োজনও আমরা করি৷ মন্ত্রীদের পুত্র-কন্যা এবং বেশ কিছু কর্পোরেট ক্লায়েন্ট আছেন, যাঁরা বিয়েতে কোটি টাকার নীচে খরচ করেন না৷ সাধারণ বিয়েতে কম-বেশি ৩০০ অতিথি হলেও ওই ধরনের জমকালো বিয়েতে হাজারেরও বেশি অতিথি থাকেন৷ এমনকি পাঁচ হাজার অতিথির বিয়েও আমরা আয়োজন করেছি৷''

ঢাকায় বসবাসরত ফাতেমা আবেদিন নাজলা তাঁর অভিজ্ঞাতার আলোকে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এখন অনেক বিয়েতে খরচ কমানোর জন্য বর ও কনের পরিবার মিলে একটি যৌথ অনুষ্ঠানের করেন৷ তাতে খরচ কম পড়ে৷ তবে বিলাসী আয়োজন থাকে, সেখানে খরচের কোনো হিসেব নেই৷''

তিনি সম্প্রতি একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘‘চারদিন ধরে ওই বিবাহ অনুষ্ঠানে হাতি-ঘোড়া থেকে বানর নাচ সবই ছিল৷ মূল বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো হলুদের অনুষ্ঠানও ছিল জমকালো৷''

ফাতেমা আবেদিন নাজলা

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘উচ্চবিত্তদের বিয়ের অনুষ্ঠানে গয়না, সাজপোশাক সব কিছুতেই ব্র্যান্ডের প্রশ্ন ওঠে৷ সেখানে টাকা বিষয়টি গৌণ, কী চাই তাই মুখ্য৷ তারা বিয়ের ফটোগ্রাফির জন্যই লাখ টাকার উপরে খরচ করেন৷ আর পার্লারে কনের সাজ কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা৷''

তাঁর মতে, ‘‘নগরবাসীর ব্যস্ততার কারণে এখন অনেকেই ওয়েডিং ম্যানেজারদের বিয়ের অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়ে দেন৷ এত সময় বাঁচে, ঝামেলাও এড়ানো যায়৷ কিন্তু চার-পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে বিয়ের আয়োজন যাঁরা করেন, তাঁদের জন্য ওয়েডিং ম্যানেজারকে দায়িত্ব দেয়া কঠিন৷''

ওয়েডিং ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ঢাকার বিয়েতে হেলিকপ্টারের চাহিদাও বেশ৷ তাই এখন অনেক প্রাইভেট এভিয়েশন কোম্পানি ঘণ্টায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়৷ বর আসেন হেলিকপ্টারে বা কনেকে নিয়ে বাড়ি যাওয়া হয় এতে৷ অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল-হাসান বিয়ের পর তাঁর স্ত্রী শিশিরকে নিয়ে হেলিকপ্টারে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন৷''

ওয়েডিং সলিউশন-এর আসিফ জানান, চলতি বছরেই দু'টি বিয়েতে তারা হেলিকপ্টার দিয়েছেন৷ দেশের বাইরে থেকে শিল্পীও এনে দিয়েছেন৷ এই দু'টি বিয়ের প্রতিটিতে দুই কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে৷ তবে টাকা থাকলেই যে সবাই খরচ করেন, তা নয়৷ এটা অনেকে করেন শখ করে৷

বিয়ের দেনমোহর নিয়েও আছে অর্থের হেরফের৷ বিবাহ রেজিস্টার মাওলানা আশরাফ উদ্দিন ভুঁইয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড়-দু'কোটি টাকাও দেনমোহর ধার্য করা হয়৷ আমি ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরের বিয়ে পড়িয়েছি৷''

মাওলানা আশরাফ উদ্দিন ভুঁইয়া

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘যত টাকা দেনমোহর ধরা হয়, তার প্রতি লাখে ১২৫০ টাকা হিসেবে ট্যাক্স বা কর দিতে হয়৷ তবে চার লাখ টাকার উপরে হলে লাখে ১০০ টাকা৷''

এই দেনমোহর আদায় হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা যার যার ব্যাপার৷ তবে আদায় করা বাধ্যতামূলক৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘যাঁরা বিত্তবান, তাঁরা বেশি টাকার দেনমোহরকে সামাজিক মর্যাদার বিষয় বলে মনে করেন৷''

এদিকে বিয়ের যে খরচ, তার মধ্যে গয়নার খরচকে সাধারণত ধরা হয় না৷ এটা যে যেমন দেয়৷ নাজলা জানান, ‘‘এখন সাধারণ বিয়েতেও দু-তিন লাখ টাকা খরচ হয় শুধু গয়নাতেই৷ কারণ সোনার ভরি এখন প্রায় ৫০ হাজার টাকা৷ একটা বিয়েতে ছয় ভরি সোনার অলঙ্কার স্বাভাবিক৷ আর বিত্তবানরা তো অনেক বেশি খরচ করেন এই খাতে৷''

ওয়েডিং ম্যানেজারদের কথায়, বিয়ের অনুষ্ঠানে একটি শ্রেণির মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা দেখা যায়৷ কে কত খরচ করল, কত বেশি আয়োজন করল, কত লোক খাওয়ালো৷ আবার কেউ কেউ আছেন একমাত্র ছেলে বা মেয়ের বিয়ে বলে খরচের দিকে তাকান না৷ তাই কেউ হেলিকপ্টার চড়ে ধানমন্ডি থেকে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে যান বর বা কনেকে নিয়ে৷ আবার একই হেলিকপ্টারে ফেরেন, যাতে সময় লাগে পাঁচ মিনিট৷

এ বিষয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ