ঢাকার বেইলি রোডে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ১২ জন
১ মার্চ ২০২৪
বাংলাদেশের রাজধানীর বেইলি রোডে একটি ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৬ জন মারা গেছেন৷ চিকিৎসাধীন ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ভবনটিতে আগুন লাগে৷ ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে৷ রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷ তবে শুক্রবার সকালেও ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট সেখানে কাজ করছে।
শুক্রবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় ৪৬ জন মারা গেছেন৷’’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আগুনে দগ্ধ ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক৷। কারণ তাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। ১০ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে দুইজনের চিকিৎসা চলছে।''
তিনি জানিয়েছেন, যারা মারা গেছেন, তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালীতে ধোয়া ঢুকে যাওয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে।।
ডেইলি স্টার জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল আটটা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসাইন বলেছেন, পোড়া জায়গা থেকে এখনো আগুন লাগার ঝুঁকি আছে। তাই সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সেখানে কাজ করছে।
রাত দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ফায়ার সার্ভিস ভবনটি থেকে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে৷
ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক বলেন, ‘‘আমাদের ১৩টি ইউনিট আগুন নির্বাপণে কাজ করে। আমরা ৩ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি। ৪২ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছি এবং জীবিত অবস্থায় ৭৫ জনকে উদ্ধার করেছি।’’
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিহাবের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিরিয়ানির রেস্টুরেন্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়৷ পরে তা দ্রুত অন্য তলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে৷ এসময় অনেক মানুষ ভবনে আটকা পড়েন৷ অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হন বলে জানান তিনি৷
একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সোহেল এএফপিকে বলেন, ‘‘প্রথম যখন সিঁড়িতে আগুন দেখি তখন আমরা ছয় তলায় ছিলাম৷ অনেক মানুষ সিঁড়িতে ভিড় করেন৷ আমরা পানির পাইপ দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করি৷ উপরের তলা থেকে লাফ দিতে গিয়ে অনেকে আহত হন৷’’
ফায়ার সার্ভিস বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভবনের ভেতর থেকে তাদের কর্মীরা ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন৷ ভবনটিতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ছাড়াও পোশাক ও মোবাইল ফোনের দোকান ছিল বলে জানা গেছে৷
এফএস/এডিকে (দ্য ডেইলি স্টার, এএফপি, রয়টার্স)
২০১৯ সালের ছবিঘর দেখুন...
বাংলাদেশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও ভবন ধসের কিছু ঘটনা
ভয়াবহ ভবন ধস আর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাংলাদেশে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ এর প্রধান কারণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা৷ বাংলাদেশের কিছু ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা এখানে তুলে ধরা হল৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Hasan
নিমতলী বিস্ফোরণ, ২০১০
২০১০ সালের ৩রা জুন ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১২৪ জন মানুষ৷ একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারের বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল আশেপাশের ভবনে৷ নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/A. Abdullah
আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় আগুন, ২০১২
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর৷ আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশন ফ্যাক্টরির ৯ তলা ভবনে আগুন লেগে প্রাণ হারান ১১২ জন শ্রমিক৷ তদন্তে জানা যায়, ঐ কারখানায় আগুন দেয়া হয়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ ফ্যাক্টরির সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, যাতে শ্রমিকরা বের হতে না পারে৷
ছবি: Reuters
রানা প্লাজা ধস, ২০১৩
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে পোশাক কারখানা রানা প্লাজার ৯ তলা ভবনটি বিধ্বস্ত হয়৷ বিশ্বের ভয়াবহ শিল্পকারখানা দুর্ঘটনার একটি এটি৷ এই ঘটনায় প্রাণ হারান ১১শ’রও বেশি মানুষ৷ আহত হন অন্তত ২ হাজার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
টঙ্গীতে কারখানায় আগুন, ২০১৬
ঢাকার উত্তরে টঙ্গীতে একটি সিগারেট তৈরির কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রাণ হারান ৩১ জন৷ ঐ ভবনের নীচে ছিল রাসায়নিক গুদাম৷ ফলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com
গাজীপুরে কারখানা ধস, ২০১৭
গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানার পেছনে বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন মানুষ প্রাণ হারান, ২০১৭ সালের ৪ জুলাই৷ ভাগ্য ভালো যে, সে সময় ঈদের ছুটি থাকায় অনেক শ্রমিক কারখানায় ছিলেন না৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Hasan
চকবাজার ট্র্যাজেডি,২০১৯
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯৷ সারাদেশের মানুষ যখন একুশের ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে জেগে উঠেছিলেন, ঠিক সে সময় পুরান ঢাকার চকবাজারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে৷ দমকল বাহিনী পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও সরকারি তথ্যমতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু ঘটে।
ছবি: picture-alliance/Xinhua/S. Reza
ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুন, ২০২১
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে একটি লঞ্চে আগুন ধরে যায়। ইঞ্জিন থেকে ছড়িয়ে পড়া সেই আগুনে অন্তত ৩৮ জনের প্রাণহানি ঘটে।
ছবি: Str/REUTERS
সেজান জ্যুস কারখানা, ২০২১
নারায়ণগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জ্যুসের কারখানায় লাগা আগুনে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, আহত হন কমপক্ষে ২০ জন।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/Reuters
সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে আগুন, ২০২২
২০২২ সালের ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে মজুদ রাসায়নিকে বিস্ফোরণের ফলে চার শতাধিক কন্টেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় অন্তত ৪১ জন নিহত হন, ৪৫০ জনেরও বেশি আহত হন।
ছবি: Stringer/Reuters
বঙ্গবাজারে আগুন, ২০২৩
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্থানের বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই পুড়ে ছাই হয় প্রায় সব দোকান। বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির দাবি, এই আগুনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার।
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP/picture-alliance
বেইলি রোডের আগুন, ২০২৩
২০২৩ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডে একটি ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৬ জন মারা যান৷ ভবনটিতে কাচ্চি ভাইসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ছাড়াও পোশাক ও মোবাইল ফোনের দোকান ছিল।