এক বছর আগে, ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার দুই মেয়রকে সামনাসামনি বসিয়ে তাদেরকে মশা বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন৷ সেদিন ছিল দুই মেয়রের শপথ গ্রহণের দিন৷
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে শপথ পাঠ করালেন, তারপর তাদের উদ্দেশ্যে, তাদের দায়িত্ব, আশু করণীয় সম্পর্কে কিছু কথা বললেন৷ তার বক্তব্যের ভাষাটা ছিল এরকম, ‘‘আপনাদেরকে এখন মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আপনাদের এখানে মনোযোগ দিতেই হবে৷ তা নাহলে মশা আপনাদের ভোট খেয়ে ফেলবে৷ আপনারা অবশ্যই এটি দেখতে পাবেন৷ আপনাদের মনে রাখতে হবে যে, মশা ছোট (পোকামাকড়) হলেও খুব শক্তিশালী৷’’
দেশের প্রধানমন্ত্রীর উচ্চারিত এমন সতর্কবাণী কি রাজধানীর দুই মেয়র সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েছিলেন? নিয়ে থাকলে তার প্রতিফলন কি নগরবাসী উপলব্ধি করতে পেরেছে? মশা নিয়ে এই যে সাম্প্রতিক হইচই, সেটা প্রমাণ করে যে ছোট্ট এই প্রাণীটিকে নিয়ন্ত্রণে তারা তখন থেকেই ব্যবস্থা নেননি, নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি৷
কিন্তু কেন নেননি? কেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকেও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি? কী ভেবেছিলেন তারা তখন? নিশ্চয়ই কিছু একটা চিন্তা করেছিলেন৷ তাদের চিন্তাকে কি আমরা অনুরসরণ করতে পারবো? আমরা ছোট মানুষ, সাধারণ জনগণ; মাননীয় মেয়রের তুলনায় ছোট্ট মশকের চেয়েও ক্ষুদ্র৷ তাই শত চেষ্টাতেও হয়ত ওনাদের মনের কথা ঠিকঠাক ধরতে পারবো না৷ তারপরও, নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে স্মরণে রেখেও, কিছু ধারণা হয়তো করতে পারবো৷ কী সেই ধারণা? সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বরং মশা নিয়ে বর্তমানে যে সকল নাটক চলছে- এ বিষয়ে কিছু বলে নিই৷
ঢাকায় মশার উপদ্রব ঠেকাতে অভিযান
মশা নিয়ন্ত্রণে ৮ মার্চ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মোট পাঁচটি অঞ্চলে দুই সপ্তাহের জরুরি কর্মসূচি শুরু করেছে, যা চলবে ১৬ মার্চ পর্যন্ত৷
ছবি: DNCC
সব জায়গায় মশা
রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মশার কারণে তারা অতিষ্ঠ৷ গুলশান সোসাইটির মহাসচিব শুকলা সারওয়াত বলেন, ‘‘গুলশানের মতো অভিজাত এলাকাতেও মশার এই সাংঘাতিক উপদ্রব থেকে রেহাই পাচ্ছি না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পরিচ্ছন্নতা
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ মশা যেসব জায়গায় বংশবিস্তার করতে পারে, সেসব স্থান নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে৷ এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও ভূমিকা অনেক৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
গাছ কাটা কোনো সমাধান?
বৃহস্পতিবার গুলশান-বাড্ডা লেকপাড়ে ডিএনসিসির পরিছন্নতা অভিযান চলাকালে কিছু ফলজ গাছ কেটে ফেলা হয়৷ স্থানীয়রা ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘উনারা গাছের গোড়ায় ওষুধ ছিটাতে পারতেন, কিন্তু গাছ কাটবেন কেন? এরকম হলে তো দেশে সব গাছই কেটে ফেলা উচিত৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মশার রাজ্য
রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা সংযোগ সড়কের গুদারাঘাটে লেকের পানিতে অসংখ্য মশা দেখা গেল৷ স্থানীয়রা জানালেন, দিনের বেলা মশাগুলো এখানে থাকলেও সন্ধ্যা হতে না হতেই বাসাবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে৷ তাদের দাবি, আশপাশের এলাকাগুলোর খাল এবং লেকেরও একই দশা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
কিউলেক্স মশা বেড়েছে ৪ গুণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশারের (ছবি) নেতৃত্বে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এই বছর কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে ৪ গুন৷ রাজধানীর খিলগাঁও, উত্তরা, শাঁখারিবাজারসহ মোট ছয়টি এলাকার তথ্য নিয়ে এ ফলাফল পাওয়া যায়৷
ছবি: Privat
শুধু কেরোসিনের গন্ধ
রাজধানীর গুদারাঘাট এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম অভিযান চলাকালে বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমরা দেখতাম ফগার মেশিন দিয়ে একবার ওষুধ ছিটালে আর কোনো মশা থাকত না৷ আর এখন শুধু কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যায়৷”
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মনিটরিং বড় চ্যালেঞ্জ
বৃহস্পতিবার গুলশান-বাড্ডা সংযোগ সড়কে সমন্বিত অভিযান পরিদর্শনকালে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘মশক নিধনে মনিটরিং কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এজন্য ১২০০ মশক নিধন কর্মীকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা নিশ্চিতকরণ ও ট্র্যাকিং করা হবে৷ চতুর্থ প্রজন্মের এই যুগে মশকনিধনেও চালু করা হবে আধুনিক প্রযুক্তি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দাঁড়ানো যায় না একদণ্ড
দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্ধ্যা না হতেই ঘিরে ধরে হাজার হাজার মশা৷ একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে এ চিত্র কীভাবে থাকতে পারে তা ভাবতেই পারছেন না বিদেশ ফেরত এবং বিদেশি গমনেচ্ছুদের অনেকে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
কীটতত্ত্ববিদদের মতামত
একটানা ৫ বছর কোনো কীটের বিরুদ্ধে একই ওষুধ প্রয়োগ করলে প্রাকৃতিকভাবেই তা প্রতিরোধী হয়ে পড়ে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুর্শিদা বেগম জানান, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে কীটনাশকের সাথে সাইনারজিস্ট ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে৷ সুতরাং আমার মনে হয় মশক নিধনে বাংলাদেশেও এ ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কিউলেক্স মশায় নেই ভয়’
গত ৩ মার্চ এলজিআরডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘এনোফিলিস ও কিউলেক্স মশা বিপদজনক নয়, এ মশা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই৷’’ এ কথার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় অধিবাসী লিটন সরকার মশার কামড়ের কারণে তার চর্মরোগ দেখিয়ে বলেন, ‘‘তাহলে কি আমরা এভাবে মশার কামড় খেতেই থাকবো?’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
মশা মারতে ড্রোন
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, যেসব জায়গায় মানুষ পৌঁছাতে পারবে না, সেসব জায়গায় আমরা অত্যন্ত অল্প সময়ে ড্রোনের মাধ্যমে মশার ওষুধ ছিটাতে পারবো৷ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম চলেছে৷ তবে এ ব্যাপারে আরো বিস্তর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আদৌ এ পদ্ধতি কার্যকর হবে কিনা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরাম,র্শ নেওয়া হবে৷
ছবি: Private
সমন্বিত কার্যক্রম
ডিএনসিসি কর্তৃক পরিচালিত দুই সপ্তাহব্যাপী ক্র্যাশ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে মশক নিধনের পাশাপাশি অবৈধ দখল উচ্ছেদেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ৷ এরই অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুর এলাকার রামচন্দ্রপুর খালে জনৈক বেলায়েত হোসেনের অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গা মেয়রের নির্দেশে পুনরুদ্ধার করা হয়৷
ছবি: DNCC
12 ছবি1 | 12
মশা নিয়ে নাটকে অবশ্য খুব বেশি একটা বৈচিত্র্য নেই৷ প্রতি বছর প্রায় একই ঘোষণা, একই সংলাপ, এবং একই ব্যর্থতা৷ প্রথম ঘোষণাটি আসে জুলাই মাসে, বাজেট ঘোষণার সময়৷ মজার ব্যাপার হলো, মশার জীবনধারার নিয়ম অনুসারে বছরের এই সময়টিতেই নগরীতে মশার উপদ্রব থাকে সবচেয়ে কম৷ এই রকম সুবিধাজনক সময়ে, বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দের কথা বলা হয়৷ দেখা যায় আগের বছরের চেয়ে বরাদ্দ বেড়েছে৷ নতুন নতুন প্রতিজ্ঞা উচ্চারিত হচ্ছে৷ মেয়র সাহেবদের কথা শুনে মনে হয়- এবার নিশ্চিতভাবেই মশা মরবে, নয়তো নিদেনপক্ষে পালাবে৷ কিন্তু বাস্তবে সেরকম কিছুই ঘটে না৷ মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য কোনো প্রস্তুতি আর দেখা যায় না৷ সবাই যেন সবকিছু বেমালুম ভুলে যায়৷
এরপর নভেম্বর ডিসেম্বর নাগাদ ঢাকা মহানগরী পূর্ব ও পশ্চিম এলাকায় প্রথমে মশার প্রকোপবাড়তে থাকে৷ তখন থেকে আস্তে আস্তে মানুষের বিরক্তির কথা শোনা যায়৷ জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে যখন পুরো ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে মশার উপদ্রব, তখন যেন হুঁশ হয় সিটি কর্পোরেশনের কর্তাদের৷ তারা বলেন, ‘‘আমরা মশা মারার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি, আমাদের মশক নিধন কর্মীরা সকালে লার্ভিসাইডিং আর বিকালে ফগিং করছে৷'' নগরবাসী লার্ভিসাইডিং অবলোকনের তেমন একটা সৌভাগ্য অর্জন না করলেও মাসে এক-দুবার ফগিংটা দেখতে পায়৷ কিন্তু সব মিলিয়ে মশা আর কমে না৷ প্রশ্নের মুখে পড়লে তখন কর্তারা বলেন, ‘‘এবার আমরা ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাবো৷'' ক্রাশ প্রোগ্রাম বিষয়টা আসলে কী তা সিংহভাগ মানুষই বোঝে না৷ কিন্তু এতটুকু হয়তো বোঝে যে, কিছু একটা হতে যাচ্ছে৷
ক্রাশ প্রোগ্রামের প্রস্তুতি শুরু হতে হতে মার্চ মাস চলে আসে৷ এপ্রিলের শুরু অথবা মাঝামাঝি ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়৷ এর প্রথম ঝাপটাতেই মশক উড়ে যায়, বৃষ্টির পানির তোড়ে ভেসে যায় তাদের লার্ভা৷ কমে যায় মশা৷ মানুষ ভুলে যায় ক্রাশ প্রোগ্রামের কথা, কর্তা ব্যক্তিরাও আবার চলে যান মৌসুমী ঘুমে৷
মশা নিয়ে এই নাটক অনেক বছর ধরেই চলছে, খুব একটা পরিবর্তন নেই৷ মাঝে অবশ্য দু-একবার কীটনাশকের বিষয়টি আলোচনায় আসে৷ কীটনাশকের মজুত নেই, কীটনাশকের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কিংবা কীটনাশকের কার্যকারিতা নেই- মশা মরছে না, এমন সব কথা শোনা যায়৷
এডিস মশার প্রজননস্থল
বাংলাদেশজুড়ে এখন এক আতঙ্কের নাম মশা৷ এডিস মশার জীবাণুবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর ইতিমধ্যেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে৷ পুরো ঢাকা শহরজুড়েই এখনো রয়েছে মশার প্রজননস্থল৷ এডিস মশার বিস্তারে সহায়ক এমন কিছু জায়গা নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
নির্মাণাধীন ভবন
ঢাকা শহরের সব জায়গাতেই চলছে ভবন নির্মাণ৷ নির্মানাধীন এসব ভবনের বিভিন্ন অংশে জমে থাকা পানি এডিস মশা জন্ম নেয়ার উপযুক্ত জায়গা৷ বেশিরবাগ ভবনের মালিকরা এ বিষয়ে এখনো বেশ উদাসীন৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পানি
তীব্র গরমের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার৷ কিন্তু অনেক ভবনে ব্যবহৃত এসব যন্ত্র থেকে নির্গত পানি সরাসরি খোলা জায়গায় পড়ে৷ ফলে জমে থাকা এসব পরিস্কার পানিতে জন্ম নেয় এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ছাদে জমা বৃষ্টির পানি
বৃষ্টির মৌসুমে ঢাকার অনেক ভবনের ছাদে জমে থাকে বৃষ্টির পানি৷ ভবন মালিকরা এসব পানি পরিস্কার না করায় সেখানে জন্ম নিচ্ছে মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
পানির ট্যাঙ্ক থেকে নির্গত পানি
ছাদে বসানো পানির ট্যাঙ্ক অনেক সময় উপচে পড়ে ছাদে জমে পানি৷ দীর্ঘ সময় এ পানি জমে থেকে জন্ম নিতে পারে এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য
ঢাকা শহরে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হয় যত্রতত্র৷ নানা রকম প্লাস্টিক বর্জ্যে বৃষ্টির পানি জমে সেখানেও জন্ম নিতে পারে মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ডাস্টবিনে জমে থাকা পানি
পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছিল ডাস্টবিন৷ কিন্তু এগুলো তদারকি করে না কেউই৷ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে বসানো এসব ডাস্টবিনের ভেতরে প্রায়ই জমে থাকে বৃষ্টির পানি৷ এ জায়গাগুলো তাই এডিস মশা জন্মানোর উপযুক্ত জায়গা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ডাবের খোসা
ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখা হয় ডাবের খোসা৷ এসব ডাবের খোসায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতেও জন্ম নিতে পারে এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ফুলের টবে জমা পানি
ঢাকা শহরের বেশিরভাগ বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দায় শখের বশে নানা রকম গাছ লাগান বাসিন্দারা৷ এসব গাছের টবে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নিয়মিত পরিস্কার না করায় সেখানে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
ভবনের পাশের পরিত্যক্ত জায়গা
ঢাকা শহরের সবজাগাতেই বিভিন্ন ভবনের পাশের পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে৷ এসব জায়গা থেকে ভবন থেকে নির্গত পানি ছাড়াও বৃষ্টির পানি জমে থাকা৷ এসব জায়গার পানি নিয়মিত পরিস্কার না করায় সেখানে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
নোংরা হাতিরঝিল
ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তৈরি করা হাতিরঝিল এখন মশার অন্যতম প্রজনন কেন্দ্র৷ জায়গাটিতে নিয়মিত মশার ওষুধ না ছিটানোয় ঝিলের বিভিন্ন অংশে জন্ম নিচ্ছে মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
গুলশান লেক
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের লেকটিও মশা প্রজননের অন্যতম জায়গা৷ এ লেকেও দেয়া হয় না মশার ওষুধ৷ ফলে সেখানেও জন্ম নিচ্ছে মশা৷
ছবি: DW/M. M.Rahman
11 ছবি1 | 11
কীটনাশক নিয়ে অবশ্য এবারও আলোচনা হচ্ছে৷ প্রথমেই আলোচনায় এসেছে নোভালুরন নামের ওষুধটি৷ শুরুতে বলা হয়েছিল, মশা নিয়ন্ত্রণে এটি মারাত্মক কার্যকর৷ যেসকল জলাশয়ে মশা জন্ম নেয়, সেখানকার পানিতে আগে থেকেই নোভালুরন ছড়িয়ে দিতে হবে, ওষুধের প্রভাবে মশার লার্ভাই নষ্ট হয়ে যাবে, ফলে মশার বংশবৃদ্ধি আর সম্ভব হবে না৷ জন্মের আগেই মশা মেরে ফেলার এমন চমকপ্রদ কথা বলে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৪৫ লাখ টাকা খরচ করে ইংল্যান্ড থেকে ৪৮০ কেজি নোভালুরন কিনে নিয়ে আসে৷ তারা দাবি করে, গুলশান, বনানী, উত্তরা, মিরপুর এলাকার বিভিন্ন লেক ও জলাশয়ে তারা এই ওষুধ অক্টোবর মাসেই প্রয়োগ করে৷ জলাশয়ে এই ওষুধের কার্যকারিতা থাকার কথা তিন মাস৷ এই সকল দাবি সত্য হলে পুরো সিটিতে না হলেও অন্তত ওই এলাকাগুলোতে মশার প্রকোপ কম হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা৷ ওই সকল এলাকা থেকেই মশার বাড়তি উপদ্রবের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ কাজ যখন হলো না, তখন অবশ্য নানা হাইপোথিসিস পাওয়া যাচ্ছে৷ কেউ বলছেন, ওষুধটি ভালো, কিন্তু এটিকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়নি৷ আবার আরেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, নোভালুরন আমাদের পরিবেশের জন্য উপযোগী নয়, আমাদের পানিতে ময়লা-আবর্জনা বেশি, তাই পানিতে দেওয়ার পর এটি চারদিকে বেশিদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারেনি৷ এর মধ্যে কোন যুক্তি ঠিক তা বলা কঠিন, তবে সাধারণ মানুষের ৪৫ লাখ টাকা যে মোটামুটি জলেই গেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই৷
ভয়াবহ সব মশাবাহিত রোগ
ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, জিকা আমাদের কাছে খুব পরিচিত৷ কিন্তু এমন অনেক রোগ রয়েছে, যার নামও হয়ত আমরা জানি না৷ মশাবাহিত নানা ধরনের রোগ নিয়ে আজকের ছবিঘর৷
ছবি: CC/somaskanda
লাইশম্যানিয়াসিস
গর্ভবতী নারী মশাদের কামড়ে এই রোগ ছড়ায়৷ ৩০ ধরনের ভিন্ন প্রজাতির লাইশম্যানিয়াসিস জীবাণু রয়েছে৷ এর মধ্যে ১০টি মানবদেহে রোগ ছড়ায়৷ প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর ও মাথা ব্যাথা দেখা দেয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্কিন আলসার হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়৷ তবে দ্রুত ডাক্তার না দেখালে যকৃত, বৃক্কসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে লাইশম্যানিয়াসিস৷
ছবি: WHO/C.Black
সিন্ডবিস
কুলেক্স নামের নিশাচর মশা এই রোগের ভাইরাস বহন করে৷ মূলত আফ্রিকায় পাওয়া গেলেও সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে মানবশরীরে এই জীবাণুর অস্তিত্ব পেয়েছেন৷ এই মশার কামড়ে তীব্র জ্বর ও মস্তিষ্কে প্রদাহ দেখা দেয়৷ আরো ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন হাড়ের সংযোগেও প্রদাহের সৃষ্টি হয়৷ কয়েক সপ্তাহ পর এ রোগ এমনিতেই সেরে যায়৷ এর কোনো ওষুধ নেই৷
ছবি: Imago
ইয়েলো ফিভার
টাইগার মশা এবং এডিস প্রজাতির আরো কিছু মশার মাধ্যমে ইয়েলো ফিভার ছড়ায়৷ সাধারণভাবে একে ফ্লাভিবাইরাসও বলা হয়ে থাকে৷ আফ্রিকার ৩৪টি এবং দক্ষিণ ও মধ্য অ্যামেরিকার ১৩টি দেশে ইয়েলো ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি৷ শুরুতে জ্বর এলেও পরে তা বমি, এবং একসময় মেনিনজাইটিসে রূপ নেয়৷ গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হওয়া, এমনকিসম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/P. Whitaker
ডেঙ্গু
এডিস ইজিপ্টাই নামের মশার কামড়ে আক্রান্ত হলে শরীরে ব্যাথা হয়, লাল গুটি দেখা দেয়, মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়াতেও ব্যাথা হয়৷ চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে রক্তক্ষরণে মৃত্যুও হতে পারে৷ প্রথমবারের ধাক্কা সামলে উঠলেই যে মুক্তি তা কিন্তু নয়৷ ডেঙ্গু রোগে কেউ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তা প্রথমবারের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে৷
ছবি: R. Richter
জিকা
এডিস ইজিপ্টাই, টাইগার মস্কিউটো এবং এডিস আলবোপিকটাস জিকা ভাইরাস ছড়ায়৷ ২০১৫ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ৷ জিকার আক্রমণে ব্রাজিলে অসংখ্য শিশু মাইক্রোসিফেলি নামের ভয়াবহ প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জন্মায়৷ এর ফলে শিশুদের মাথার আকৃতি বিকৃত হয়ে যায়৷ বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা জিকায় আক্রান্ত হলে শিশুদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Lacerda
ওয়েস্ট নাইল ফিভার
বয়স্ক লোক বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষের ক্ষেত্রে এই রোগ ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে৷ এর ফলে মেনিনজাইটিস ও মায়োকার্ডিটিস হতে পারে৷ অন্যান্য মশাবাহী রোগের মতো কাঁপুনি, ঠান্ডা লাগা, জ্বর, মাথা ব্যাথা, ঝিমুনি এবং ব়্যাশ দেখা দিতে পারে৷ এর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়ার প্রভাবে জ্বর কাটিয়ে উঠতে তিন-চার দিন লাগে৷ কিন্তু এর পর হাড়ের জোড়ায় ভয়াবহ ব্যথা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে চামড়ায় ক্ষত দেখা দিতে পারে৷ তবে আশার কথা, একবার চিকুনগুনিয়া হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়৷
ছবি: Imago
ম্যালেরিয়া
মশাবাহী রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া সবচেয়ে বেশি পরিচিত৷ অ্যানোফিলিস নামের মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়৷ এই রোগে আক্রান্ত হলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে৷ ম্যালেরিয়ার কার্যকর ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি৷ তবে আগে থেকে সতর্ক থাকলে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কমানো যেতে পারে৷
ছবি: Cécilia Conan
8 ছবি1 | 8
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন করেছে আরেক বিচিত্র কাজ৷ আগে থেকেই মশার লার্ভা নিঃশেষ করার লক্ষ্যে তারা রমনা পার্কের লেকসহ বেশ কিছু জলাশয়ে পাতি হাঁস ছেড়ে দিয়েছে৷ কোথাও কোথাও ছেড়েছে তেলাপিয়া মাছ৷ তাদের আশা ছিল, হাঁস ও মাছ মশার সব লার্ভা খেয়ে ফেলবে৷ কিন্তু বাস্তবে তাদের এ আশাবাদ পূর্ণতা পায়নি, ফলে মশাও কিছুমাত্র কমেনি৷ এ ব্যাপারে একজন প্রখ্যাত কীটতত্ত্ববিদ বলেন, লার্ভার ধ্বংসে বিভিন্ন দেশে গাপ্পি মাছ ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে৷ কিন্তু হাঁস ও তেলাপিয়া দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংসের পরিকল্পনা নিতান্তই হাস্যকর৷ হাঁস লার্ভা নয়, শামুক খায়৷ আর তেলাপিয়া মাছ মূলত বটম ফিডার, এরা জলাশয়ের তলদেশের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত৷ তবে কর্পোরেশনের মেধাবী কর্তারা মোটেই দমে যাননি৷ এবার তারা মশা নিয়ন্ত্রণে কুনোব্যাং আমদানী ও ব্যবহারের চিন্তা করছেন! পরিকল্পনাটা হচ্ছে- হাজার হাজার কুনোব্যাং নগরীর জলাশয়গুলোতে ছেড়ে দেওয়া হবে আর কর্পোরেশনের নামীদামী কর্তাদের মানসম্মান রক্ষা করতে করতে ব্যাংগুলো অতি আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক খাদ্য কীটপতঙ্গ বাদ দিয়ে মশার লার্ভা খেতে থাকবে!
সেদিন কথা হচ্ছিল ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে৷ আজ থেকে ২২/২৩ বছর আগে এই ভদ্রলোকের সঙ্গে যখন প্রথম পরিচয়, তখন থেকেই তাকে চিনি একজন কীটতত্ত্ববিদ হিসাবে৷ কীটপতঙ্গ নিয়ে গবেষণা করতেন, এসব দমন নিয়ে কাজ করতেন৷ এর মাঝে কিছুদিন বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷ মশা এবং এটি দমনে দুই সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বললেন, "আসলে এদের সকল কার্যক্রম চলছে কমনসেন্সের ওপর ভিত্তি করে৷ একেকবার একেকজন দায়িত্ব পান, পেয়েই কিছু আনাড়ির মতামতের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন৷ এতে অর্থ ও সময়-দুইই নষ্ট হয়, মশা আর কমে না৷”
মশা ও পোকামাকড় থেকে দূরে থাকার উপায়
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপের পর মশা বা বিভিন্ন পোকামাকড়ের নাম শুনলেই কেমন যেন ভয় করে, তাই না? মশা, মৌমাছি বা এ জাতীয় পোকা থেকে নিজেকে দূরে রাখার কিছু সহজ উপায় থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Gathany
মিষ্টি খাবার দূরে রাখুন
‘মিষ্টি’ যে কোনো পোকামকড়কে কাছে টানে৷ বিশেষ করে মৌমাছিকে৷ তাই খাবার টেবিল থেকে মৌমাছিসহ অন্যান্য পোকাকে দূরে রাখতে এক গ্লাস মিষ্টি কোকাকোলা, ফান্টা বা মিষ্টি পানীয় দূরে কোথাও রেখে দিন৷ দেখবেন, পোকামাকড়ের অত্যাচার বা ঝামেলা ছাড়াই নিশ্চিন্তে খেতে পারছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
শান্ত থাকুন
মৌমাছি বা ভিমরুল আপনার কাছাকাছি ঘুরলে বা আপনাকে বিরক্ত করলে একদম চুপ বা শান্ত থাকুন৷ ওদের মারতে গেলে ওরা তখন আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে৷ কাজেই সাবধান!
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
মশার পছন্দ কালো পোশাক
মশার পছন্দ কালো বা গাঢ় রঙের পোশাক৷ তাই যেখানে মশা আছে, সেখানে হালকা রঙের পোশাক পরাই শ্রেয়৷ বিশেষ করে রাতের বেলায়৷ বাগানে বা বাইরে গরম হলেও ফুলপ্যান্ট এবং লম্বা হাতের জামা পরা উচিত৷ আর খোলা মাঠে ঘাসের ওপর বড় ছোট কেউ-ই খালি পায়ে একদম হাঁটবেন না৷
ছবি: Getty Images/S. Gosatti
পারফিউম মশাকে কাছে টানে
পারফিউম, হেয়ার স্প্রে বা সুগন্ধী প্রসাধনী ব্যবহার না করাই ভালো৷ কারণ, মানুষের মতো সুগন্ধী যে মশারও প্রিয়!
ছবি: picture-alliance/dpa/Ernesto Mastrascusa
দরজা-জানালায় নেট
দরজা-জানালায় নেট লাগিয়ে নিন৷ বিশেষকরে যেগুলো প্রায়ই খোলা থাকে সেসব দরজা-জানালায় নেট লাগাতে আর দেরি না করাই ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টমেটো ও লেবু গাছ
দরজা বা জানালার কাছে সম্ভব হলে টমেটো গাছ ও লেবু গাছ লাগাতে পারেন, কারণ, এই গাছগুলো পোকামাকড়কে দূরে রাখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
লবঙ্গ, ল্যাভেন্ডার
লবঙ্গ, ল্যাভেন্ডার বা লেবুযুক্ত তেল গায়ে মাখতে পারেন৷ যদিও এসবের স্থায়ীত্ব বেশিক্ষণ নয়, তারপরও কিছুটা কাজে লাগে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Tomas
যদি কামড় দিয়েই ফেলে
যদি মশা, মৌমাছি বা পোকামাকড় কামড় দেয় তাহলে সাথেসাথেই ভেজাকাপড় দিয়ে কামড়ের জায়গাটি মুছে নিয়ে সেখানে আয়োডিন লাগিয়ে নিন৷ ভালো হয় যদি একটি পেঁয়াজকে অর্ধেক করে তার একটি অংশ কামড়ের জায়গায় ভালো করে ঘষে দেন৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
মুখের ভেতর বা ঠোঁটে কামড়ালে
মশা বা পোকা যদি মুখের ভেতর বা ঠোঁটে কামড় দেয়, তাহলে তা ভয়ংকর আকার নিতে পারে৷ তাই এ সব জায়গায় কামড় দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷ তবে তার আগে বরফ শীতল পানি দিয়ে গার্গল করা এবং এক টুকরো বরফ মুখে পুরে লজেন্সের মতো চোষার পরামর্শও দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Gathany
চুলকাবেন না!
ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ এড়াতে কোনোভাবেই ক্ষতে চুলকাবেন না৷ কারণ, শুধুমাত্র চুলকানোর কারণেই হয়ত ক্ষতস্থান আরো ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে৷
ছবি: Colourbox/A. Gravante
10 ছবি1 | 10
তিনি বলেন, "মশা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হলে সেই টিম হতে হবে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে৷ ডাক্তার, পক্ষীবিশারদ, কিংবা ফিশারিজের লোক দিয়ে হবে না৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, এই কাজের গুরুত্বপূর্ণ যে পদগুলো, তার সবকটিতেই ওই রকম ভিন্ন খাতের লোকজন বসে আছে৷ আর সে কারণেই নানা আবোল-তাবোল প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে, টাকা ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু মশা মরছে না৷”
তার মতে, ঢাকা মহানগরকে একেবারে মশামুক্ত করা প্রায় অসম্ভব৷ কিন্তু মশার উপদ্রবকে সহনীয় পর্যায়ে আনা অবশ্যই সম্ভব৷ সেজন্য দরকার লাগসই পরিকল্পনা গ্রহণ, এবং নিয়মিত মশক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাওয়া৷
এই যে ‘নিয়মিত কাজ করে যাওয়া,' বাস্তবে ঢাকা মহানগরীতে এই বিষয়টারই অভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়৷ দুই সিটি কর্পোরেশনেই কিন্তু মশক নিধন কর্মী হিসাবে কয়েক শ' নিয়মিত কর্মচারী রয়েছেন৷ সেই সঙ্গে আছে খণ্ডকালীন আরো কয়েক শ'৷ কিছু সুপারভাইজারও আছেন৷ সারা বছর এরা কী করেন? মশা মারার জন্য সারা বছরই যে কর্পোরেশনের কাছে ওষুধপত্র মজুদ থাকে তা-ও নয়৷ কেবল মশার মওসুম এলেই ওষুধ সংগ্রহ এবং ছিঁটানোর তোড়জোর শুরু হয়৷ তাই বছরের ওই কয়েকটা মাস এই কর্মী ও তাদের সুপারভাইজারদের আসল কাজে কিছুটা ব্যস্ত থাকতে হয়৷ বাকি সময় তারা বসে বসে কিংবা কর্পোরেশনে অন্য কাজে কিংবা তদবির কর্মে ব্যস্ত থাকেন৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, মশা নিয়ন্ত্রণ আসলে সারা বছরের কাজ৷ এর জন্য কামান দাগানোর দরকার নেই, কামান বা গোলাবারুদ কেনারও দরকার নেই৷ জলাশয়গুলোতে বছরজুড়ে সকল এলাকায় নিয়মিত লার্ভিসাইডিং করা হলে, এমনিতেই মশা কমে যাবে৷ আর মওসুমের সময়, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে মার্চের শেষ অব্দি একটু জোরেশোরে অভিযান চালালে নগরবাসী মশার উপদ্রব বলতে গেলে টেরই পাবে না৷ কিন্তু সে কাজটি কখনোই করা হয়নি, এবারও করা হয়নি৷ মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ যখন চিৎকার চেঁচামেচি করে, তখনই মেয়র কমিশনারদের কানে পানি যায়৷ তখন তারা নানা নাটকীয় কর্মকাণ্ড শুরু করেন৷ এখন যা কিছু হচ্ছে সেটা ওই ধারাবাহিক নাটকেরই সাম্প্রতিকতম এপিসোড মাত্র৷
তবে নাগরিকদের অনেকেই কিন্তু এবার অন্যরকম কিছু আশা করেছিল৷ তাদের মধ্যে এই আশাবাদটির জন্ম হয়েছিল, শুরুতে যে কথাটা বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি- তারই কারণে৷ লেখার শুরুতেই কৌতূহল প্রকাশ করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রেক্ষিতে দুই মেয়র আসলে কি ভেবেছিলেন? আমার ধারণা, তারা আসলে প্রধানমন্ত্রীর কথাকে মোটেই সিরিয়াসলি নেননি৷ হয়তো নিতেন, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভোটের কথাটা বলেই বিষয়টিকে হালকা করে দিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন, "মশায় ভোট খেয়ে ফেলবে!” এটা হয় নাকি? বাংলাদেশে তো আরো হয় না৷ এই দেশে ভোট কারা খেয়ে ফেলে সেটা ভোটাররা জানেন, ভোটের নাটকের মাধ্যমে যারা ‘নির্বাচিত' হন, তারা তো আরো বেশি জানেন৷
কাজেই প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারীকে দুই মেয়র সম্ভবত সেদিন রসিকতা হিসাবেই নিয়েছিলেন৷ আর সেই রসিকতার মূল্য দিতে হচ্ছে জনগণকে৷ শতাধিক কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, বিচিত্র সব পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে, আকাশে ড্রোন উড়ছে, লেকে পাতিহাঁস জলকেলি করছে, কুনোব্যাং আসি আসি করছে, কিন্তু মশার কিছু হচ্ছে না৷ কয়েল, স্প্রে, মশারি ইত্যাদির ব্যবসা হচ্ছে৷ অর্থের লেনদেন বাড়ছে, অর্থনীতি অধিকতর গতি পাচ্ছে৷ আর এসবের বিপরীতে মশা কামড়ে চলেছে, মানুষের অর্থ যাচ্ছে, রক্ত যাচ্ছে৷